শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থ অধ্যয়ন করব কেন? (শেষ পর্ব)

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২২ | ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২২ | ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 231 বার দেখা হয়েছে

শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থ অধ্যয়ন করব কেন? (শেষ পর্ব)
ড. নিতাই সেবিনী দেবী দাসী
শ্রুতি লেখক: সজ্জন গিরিধারী দাস

কখনো কখনো আমার কাছে জিজ্ঞাসা করা হয় একাদশীর মাহাত্ম্যের কথা। একাদশীর মাহাত্ম্য কেন আমাদের জীবনে ফলপ্রসূ হয় না? সেটার কারণ হল দৃঢ় বিশ্বাস। আমরা যদি সরলভাবে অকপটে কিছু করি তাহলে এর ফলাফল অতি দ্রুত হবে। যেমন, আমরা যখন জপ করি তা সরলভাবে অকপটে জপ করি তাহলে খুব শীঘ্রই আমরা ভগবদ্ধামে ফিরে যেতে পারব।

একবার হরি নামে যত পাপ হরে
পাপীর সাধ্য নাই তত পাপ করে ॥

আমরা দেখেছি অনেক সময় ভক্তরা তাদের ভক্তিজীবন সম্পর্কে খুব সচেতন হয় না, এটার প্রভাবে আমাদের ভগবদ্ধামে যেতে বিলম্ব হতে পারে। ভৌতিক জগতের কিছু লোক অনেক পাপ করে এবং খুব দৃঢ়ভাবে কৃষ্ণ নাম জপ করে তখন তারা দ্রুত মুক্ত হয়ে যায়। আমি আপনাদের নিরুৎসাহিত করছি না, বুঝাতে চাইছি আমাদের আধ্যাত্মিক জীবন অনুশীলনে দৃঢ়তা আনতে হবে যে, “আমি এ জন্মেই ভগবানের কাছে ফিরে যাব,” তাহলেই তা সম্ভব হবে। শ্রীল প্রভুপাদ উল্লেখ করেছেন, ‘এ জীবনেই তোমার সমস্ত কাজ কর্ম ঘুচিয়ে নাও এবং ভগবদ্ধামে চলে যাও, পরবর্তী জীবনের জন্য অপেক্ষা করো না।’ ভগবদ্গীতায় অর্জুনও শুনেছিল এবং ধৃতরাষ্টও শুনেছিল। দুজনের ফলাফল কিন্তু এক নয়। ধৃতরাষ্ট শুধু তার কোন পুত্র মারা গেছে, কোন শত্রু হত হয়েছে তা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু অর্জুন দৃঢ়তার সাথে গীতার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল এবং যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হলেন। শ্রোতার মধ্যেও বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে। কিছুু লোক আছে শুনার জন্য রয়েছে কিন্তু শুনছেনা। ধরুন, আপনি একটি বালতি পূর্ণ করতে চাইছেন। কিন্তু সেটা উল্টো করে রাখা আছে অথবা তাতে ময়লাযুক্ত পানি রয়েছে, তাহলে ঐ বালতিতে পানি ঢুকবে না আর ঢুকলেও সেই পানি ব্যবহার করা যাবে না। এভাবে অনেকে ভাগবত শ্রবণের সময়ও অনেকে নিজ ব্রেইন ঠিকমত ব্যবহার করে না, তাদের শরীর উপস্থিত থাকলেও মন থাকে না। কেউ কেউ শুনে কিন্তু এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়, সেটা হল বালতিতে ছিদ্র থাকার মত। কেউ কেউ সংকল্প করে জমা রাখে, সেটাই উত্তম এবং পরিপূর্ণ। যেমন ভাগবত শোনা এবং নিজ জীবনে প্রয়োগ করা। অনেক সময় ভাগবত শুনে কিন্তু ভৌতিক বিষয়ে দৃষ্টিকটু বিষয়ে যার মস্তিক পরিপূর্ণ ঐ সব ব্যক্তিদের হৃদয়ে ভাগবত প্রবেশ করবে না।
এক ভিখারী এক থালা দুর্গন্ধ যুক্ত খাবার নিয়ে আসলে তার উপর আপনি ক্ষীর ঢাললেও তা দুর্গন্ধ যুক্তই হবে। কেউ ইস্্কনে আসেন তখন বুঝতে পারবে ইস্্কনের ক্ষীর কত সুস্বাদু হয়। এজন্য আমরা যখন গুরুদেবের সামনে যাব তখন আমাদের মস্তিষ্ক এবং হৃদয় খালি করে যেতে হবে, তাহলে গুরুদেব যা বলবেন হৃদয়ে তা স্থায়ী হয়ে থাকবে। কেউ কেউ বিচার বুদ্ধি নিয়ে ভাগবত ক্লাসে আসে। যেমন ওনি ভাবেন ঐ শ্লোকটা না বললে ভাল হত, এটা বললে ভাল হত, এভাবে শ্রবণ করলে কল্যাণ হবে না।
চিত্ত বিনোদনের জন্য ভাগবত ক্লাসে আসা উচিত নয়। প্রত্যেক শব্দ সরলভাবে শুনা উচিত। এখন নজর রাখতে হবে বক্তা আমাকে কি বলছেন, তা আমার জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। তৎক্ষণাৎ না লিখে বাসায় গিয়ে মনন করে লিখা উচিত। যেভাবে গাভী প্রথমে ঘাস খেয়ে পরে ধীরে ধীরে তা চর্বণ করে। এভাবে সরলভাবে ভাগবত শ্রবণ করলে ঐ ব্যক্তি ভগবদ্ধামে যাবেই। শ্রীল রূপ গোস্বামীর ভক্তির ৬৪ মার্গের মধ্যে যেকোন একটি যদি কেউ সরলভাবে গ্রহণ করে তাহলে সে ভগবদ্ধামে যাবেই।
শ্রীল প্রভুপাদ কত কষ্ট করে আমাদেরকে বহু গ্রন্থ দিয়েছেন, আমাদের সেগুলো পড়া উচিত। শ্রীপাদ বৈয়াসখী প্রভু বলেন, “কেউ যদি প্রতিদিন শ্রীমদ্ভাগবতের নয় পৃষ্ঠা পড়েন তাহলে পাঁচ বছরে ভাগবত সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। কেউ যদি প্রতিদিন ৪১ পৃষ্ঠা পড়েন তাহলে এক বছরে পুরো ভাগবত সম্পন্ন হয়ে যাবে। আমি মনে করি নতুন বছরে আমাদের এই প্রতিজ্ঞা করা উচিত প্রতিদিন আমি নিদিষ্ট সংখ্যক শ্লোক বা পৃষ্ঠা পাঠ করবো। আমাদের শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। তাহলে শ্রীল প্রভুপাদ কত বছর ধরে কষ্ট স্বীকার করে তা সম্পন্ন করেছেন। শ্রীল প্রভুপাদ যে ধন আমাদের দিয়েছেন তার যথাযথ সদ্ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে গাছ মরে যাবে। তেমনি আমাদের ভক্তিবীজকে সজীব রাখার জন্য জল দরকার। সেটাই হল প্রতিদিন শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ। বীজ কে দিয়েছেন? শ্রীল গুরুদেব।

“ব্রহ্মাণ্ড ভ্রমিতে কোন ভাগ্যবান জীব।
গুরু কৃষ্ণ প্রসাদে পায় ভক্তি লতা বীজ॥”

প্রতিনিয়ত জল সিঞ্চন করতে হবে ভাগবত পাঠ করার মাধ্যমে, মন্ত্র জপ করার মাধ্যমে। আমি আপনাদের অনুরোধ করবো, প্রতিদিনের একটা রুটিন তৈরী করুন যে নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্লোক বা পৃষ্ঠা পাঠ করবেন। শ্রীমদ্ভাগবত অত্যন্ত শক্তিশালী গ্রন্থ। যার জীবনে ভাগবত প্রবেশ করবে তার সবকিছু মঙ্গলময় হয়ে যাবে এবং জ্ঞান চক্ষু খুলে যাবে। সবকিছু বোঝার ক্ষমতা আসবে, ভগবানের কৃপা প্রাপ্ত হবেন। জড় বাসনা কমে যাবে। ভগবানের উপর প্রীতি বর্ধিত হবে। এই হলো ভাগবতের মহৌষধী গুণাবলী। হরে কৃষ্ণ।

শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থ অধ্যয়ন করব কেন? (পর্ব-০১)

শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থ অধ্যয়ন করব কেন? (পর্ব -0২)

শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থ অধ্যয়ন করব কেন? (পর্ব – ০৩)


চৈতন্য সন্দেশ জানুয়ারি-২০২২ প্রকাশিত
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।