শ্রীনৃসিংহ চতুর্দশী

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২২ | ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২২ | ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 106 বার দেখা হয়েছে

শ্রীনৃসিংহ চতুর্দশী

কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্‌কন) ভক্তগণ দ্বারা অভিনীত ‘হিরণ্যকশিপু-বধ’ নাটকটি দর্শন করার পর প্রবচনটি প্রদান করেন।


নাস্তিক ও ভগবৎ বিশ্বাসীদের মধ্যে এক সংগ্রাম চলছে। যদি কেউ ভগবৎ-ভাবনাময় বা কৃষ্ণভাবনাময় হয়ে ওঠে তবে তার অনেক শত্রু থাকবে। কেননা, পৃথিবীটা দানবে পূর্ণ। কৃষ্ণ ভক্তদের আর কি কথা, স্বয়ং কৃষ্ণও যখন এই ধরাধামে অবতরণ করেছিলেন কত দানবকে হত্যা করতে হয়েছিল। তাঁর মধ্যে ছিল তার মামা, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন। তবুও সে কৃষ্ণকে হত্যা করতে চেয়েছিল। যখনই দেবকীর কোন সন্তান জন্ম নিত, তখনই সে তাকে মেরে ফেলত, কেননা সে জানত কৃষ্ণ কে হবেন । ভবিষ্যদ্বাণী ছিল যে তার দেবকীর অষ্টম সন্তান কংসকে বধ করবে। তাই সে সমস্ত শিশুকে বধ করতে শুরু করল। শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণ আগমন করলেন। কিন্তু সে কৃষ্ণকে বধ করতে পারল না। বরং কৃষ্ণের দ্বারা সে নিহত হল । অতএব কেউই ভগবানকে হত্যা করতে পারে না। দানবেরা, ভগবৎ-বিহীন সমাজ কেবল ভগবানকে হত্যা করতে চায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভগবান কখনই নিহত হন না, বরং দানবই ভগবান দ্বারা নিহত হয়। এটি প্রকৃতির নিয়ম । প্রহ্লাদ মহারাজের জীবন থেকে আমরা এই শিক্ষাই প্রাপ্ত হই। আমরা জানি যে, ভগবদ্‌গীতাতেও এই কথাটি বর্ণনা করা হয়েছে । ভগবদ্‌গীতায় বলা হয়েছে যে, “তোমার যা কিছু আছে সবকিছুই আমি মৃত্যু রূপে হরণ করি।” জাগতিক অর্জন, জাগতিক বস্তুর অধিকারী রূপে আমরা খুবই গর্বিত হই, কিন্তু যখন কৃষ্ণ মৃত্যুরূপে এসে সবকিছু হরণ করেন, তখন আর সেই গর্ব থাকে না। প্রহ্লাদ মহারাজের পিতা হিরণ্যকশিপুও নৃসিংহদেবকে দর্শন করেছিলেন। ঠিক যেভাবে প্রহ্লাদ মহারাজ হিরণ্যকশিপুকে দর্শন করেছিলেন, সেইভাবে। হিরণ্যকশিপু ছিল অত্যন্ত চতুর, ঠিক যেমন বস্তুবাদীরা, বৈজ্ঞানিকরা হয়, তেমনি। চতুরতার সঙ্গে তারা অনেক কিছু আবিষ্কার করে। তাদের ধারণাটি হল, “আমরা চিরদিন বাঁচব এবং আরও, ইন্দ্রিয়সুখ উপভোগ করব।” একেই বলা হয় নাস্তিক সভ্যতার অগ্রগতি। তাই হিরণ্যকশিপু ছিল বস্তুবাদীদের প্রতীক। ‘হিরণ্য’ অর্থ ‘সোনা’, আর ‘কশিপু’ অর্থ ‘নরম বিছানা’ বা শয্যা’। আর বস্তুবাদী ব্যক্তিরাও স্বর্গ ও ইন্দ্ৰিয় উপভোগের প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট, তারা তা ভালোবসে। সেটিই তাদের কাজ। হিরণ্যকশিপু হচ্ছে বস্তুবাদী ব্যক্তিদের এক খাঁটি উদাহরণ । আর প্রহ্লাদ মহারাজ হচ্ছেন প্রকৃষ্ট রূপেন আহ্লাদ। ‘আহ্লাদ’ অর্থ হচ্ছে ‘চিন্ময় আনন্দ’। আনন্দ-চিন্ময়-রস-প্রতিভাবিতাভিঃ। জীবের প্রকৃত পরিচয়ই হচ্ছে প্রহ্লাদ, আনন্দময়তা। কিন্তু জাগতিক সঙ্গের জন্য আমরা জীবনের এই দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছি।
হিরণ্যকশিপু অমর হতে কঠিন তপস্যা করতে লাগলো, এতটাই কঠিন যে সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড কম্পিত হতে লাগলো। আর স্বয়ং ব্রহ্মা তাকে শান্ত করতে ছুটে এসে ব্রহ্মা হিরণ্যকশিপুকে বললেন, “তুমি কি চাও?” সে অমর হতে চাইলো। ব্ৰহ্মা বললেন যে, “যদিও আমি অতি দীর্ঘ সময়ের জীবন পেয়েছি।” ভগবদ্‌গীতায় (৭/১৭) ব্রহ্মাজীর আয়ু সম্বন্ধে বলা হয়েছে সহস্রযুগপর্যন্তমহর্ষদ ব্রহ্মণো বিদুঃ। সহস্রযুগ, একটি যুগবন্দ হচ্ছে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি—সব মিলিয়ে প্রায় ৪৩ লক্ষ বৎসর হচ্ছে এর সময়কাল। এখন এই ৪৩ লক্ষকে এক হাজার দিয়ে গুণ করলে যে সময়টি পাওয়া যায়, সেটিই হচ্ছে ব্রহ্মার এক দিনের ১২ ঘন্টা মাত্র। কিন্তু সহস্রযুগপর্যন্তমহর্ষদ ব্রহ্মণো বিদুঃ। অতএব স্বয়ং যিনি কোটি কোটি বৎসর বেঁচে থাকেন- তবু, তাঁরও মৃত্যু হয়। জন্ম মৃত্যু জরা ব্যাধি দুঃখ দোষাদর্শনম্। এই জড় জগতের যেখানেই তুমি যাও না কেন, তা সে ব্রহ্মলোকেই হোক বা পাতাল লোকই হোক, তোমাকে মরতেই হবে। এটিই হচ্ছে একটি সমস্যা। কৃষ্ণ ভগবদ্‌গীতায় বলছেন, “মূল সমস্যাটি হল জন্ম, মৃত্যু, জরা, ব্যধি।” বুঝে দেখ, হিরণ্যকশিপু জাগতিক উপায়ে এই সমস্যাগুলির সমাধান করতে চেয়েছিল, কিন্তু সেটি সম্ভব নয়। অপরপক্ষে, প্রহ্লাদ মহারাজ ছিলেন ভগবানের নিত্য সেবক। তাই তিনি শ্রীকৃষ্ণের বিনম্র সেবক রূপেই ছিলেন। সুতরাং তার কোন ভয় ছিল না। তার যদি বিপদ হয়ও, তিনি রক্ষিত হবেন। কৃষ্ণ ভগবদ্‌গীতায় বলছেন, কৌন্তেয় প্রতিজানীহি ন মে ভক্তঃ প্রণশ্যতি। ‘কৌন্তেয় প্রতিজানীহি’ অর্থাৎ, “হে অর্জুন, তুমি সারা বিশ্বে একথা ঘোষণা করতে পার, যে আমার পাদপদ্মে আশ্রয় গ্রহণ করে, আমার ভক্ত হয়, সে কখনই পরাজিত হয় না।” অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ। সেটিই হচ্ছে নিশ্চয়তা প্রদান। কিন্তু হিরণ্যকশিপুর মতো ভগবানে অবিশ্বাসী লোকেরা এই কথাটি বুঝতে পারে না। সেটিই হচ্ছে তাদের ত্রুটি তারা সবসময় ভগবানকে চ্যালেঞ্জ জানায়। পিতা ও পুত্রের মধ্যে মতভেদটি ছিল এই যে, পুত্র হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি বিশ্বাসী কিন্তু পিতা তা নয়। তাই অন্তিমে পিতা ভগবানকে দর্শন করল সাক্ষাৎ মৃত্যু রূপে। সেই সময়ে সে নিজেকে রক্ষা করতে পারল না। এই হচ্ছে ভগবান বিশ্বাসী ও ভগবানে অবিশ্বাসীদের মধ্যে পার্থক্য। ভগবানে অবিশ্বাসীরা সর্বদাই চ্যালেঞ্জ জানায়, “কোথায় ভগবান? আমাকে কি তাঁকে দেখাতে পার?” ঠিক আছে, তুমি দেখবে। তবে এখন নয়। যখন তোমার সকল পাপকর্মের পরিণতির সময় আসবে যখন মৃত্যু আসবে, তখন তুমি তাঁকে দর্শন করবে। অতএব প্রহ্লাদ মহারাজের এই দৃষ্টান্তটি অত্যন্ত শিক্ষণীয়। প্রহ্লাদ মহারাজ হচ্ছেন আমাদের গুরু-বর্গের একজন। দ্বাদশ মহাজন বা গুরু রয়েছেন।
স্বয়ম্ভুর্নারদঃ শম্ভুঃ কুমারঃ কপিলো মনুঃ।
প্রহ্লাদো জনক ভীষ্মো বলির্বৈয়াসকির্বয়ম্ ॥
প্রকৃতপক্ষে আমরা যদি পারমার্থিক জীবনে উন্নতি লাভ করতে চাই তাহলে আমাদের অবশ্যই মহাজনগণকে অনুসরণ করতে হবে। তাঁদের কথা শাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। পিতা মাতা ব্যতীত, যিনি প্রকাশিত হয়েছিলেন, তাঁর নাম হচ্ছে স্বয়ম্ভু। অবশ্যই তাঁর পিতা হচ্ছেন নারায়ণ, কিন্তু যেভাবে একজন পিতা হন সেভাবে নন। তাই তাঁর নাম হচ্ছে স্বয়ম্ভু। নারদমুনিও মহাজনগণের একজন এবং শম্ভু অর্থাৎ ভগবান শিব । কপিল হচ্ছেন দেবহুতি পুত্র কপিলদেব। প্রহ্লাদ মহারাজ হচ্ছেন আমাদের গুরু শিষ্য পরম্পরার গুরু। তাই বলা হয়েছে- মহাজনো যেন গতঃ স পন্থাঃ। ধর্মস্য তত্ত্বং নিহিতং ধর্মের পথটি কি সেটি আমরা পরিকল্পনা করতে পারি না। অনেক দার্শনিক রয়েছেন আর অনেক বিভিন্ন শাস্ত্র রয়েছে, তাই ধর্মের পথটি বের করা অত্যন্ত কঠিন। নাসৌ মুনিস্য মতং ন ভিন্নম্ । বিভিন্ন দার্শনিকের বিভিন্ন মত। তাহলে প্রকৃত পথটি আমরা প্রাপ্ত হব কি করে? শাস্ত্রে তাই বলা হয়েছে যে, মহাজনো যেন গতঃ স পন্থাঃ। তোমাকে মহাজনগণের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে। আর প্রহ্লাদ মহারাজ হচ্ছেন তাঁদের একজন।
সেই প্রহ্লাদ মহারাজ দৈত্য কুলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা ছিল একজন দানব। প্রহ্লাদ মহারাজ তাঁর বাবাকে সম্বোধন করতেন “অসুর-বর্য” অর্থাৎ “দানব শ্রেষ্ঠ” বলে । তোমরা নাটকটিতে দেখেছ যে সে তার পুত্রকে শাসন করছে, “হে পুত্র, এটা কর। ওটা কর। তুমি ভালো কি শিখলে সেটা আমায় বল।” আর প্রহ্লাদ মহারাজ বললেন, তৎ সাধু মন্যেহসুর-বর্ষ দেহিনাম। তিনি কখনও বলেননি “আমার প্রিয় পিতা।” পক্ষান্তরে বললেন, “হে দানব শ্রেষ্ঠ।” তৎ সাধু মন্যে। হিত্বাত্মপাতং গৃহমন্ধকূপং বনং গতো যদ্ধরিমাশ্রয়েত। অর্থাৎ “এই জাগতিক জীবন, বস্তুবাদী জীবনটি হচ্ছে ‘অন্ধকূপং’ আত্মহত্যার মতো। তাই প্রত্যেকেরই এই জীবন ত্যাগ করা উচিত। সেটিই হচ্ছে জীবনের শ্রেষ্ঠ পথ।” তাই তাঁর বাবা খুব রেগে গেল । অতএব, ভগবৎ বিশ্বাসী ও ভগবৎ অবিশ্বাসীরা কখনই একমত হন না। কিন্তু ভগবৎ-বিশ্বাসীগণ কখনও ভগবৎ-অবিশ্বাসীদের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেন না। এটিই হচ্ছে রীতি। তাঁর বাবার দ্বারা প্রহ্লাদ মহারাজ বহু বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু তিনি কখনই ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় জপ করতে ভোলেন নি। তাই এই কাহিনি থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যে, পরম বিপদের সময়েও আমাদের কৃষ্ণকে ভুলে যাওয়া উচিত নয় । কৃষ্ণ আমাদের রক্ষা করবেন এ কথা ভগবদ্‌গীতায় বলা হয়েছে—
যং লব্ধা চাপরং লাভং মন্যতে নাধিকং ততঃ।
যস্মিন্ স্থিতো ন দুঃখেন গুরুণাপি বিচাল্যতে ॥
কৃষ্ণভাবনামৃত এতই চমৎকার যে, যদি কেউ একবার কৃষ্ণভাবনামৃত প্রাপ্ত হয়, যং লব্ধা চাপরং লাভম্, অপরং লাভম্ অর্থাৎ অন্য কোন লাভ বা কল্যাণকে সে কর্তব্যের মধ্যেই আনে না। এটি এতই চমৎকার। আমরা এটা, ওটা, সেটা কতকিছু পাওয়ার জন্য লালায়িত। দেহি, দেহি, দেহি, দেহি। কিন্তু কৃষ্ণভাবনামৃত পাওয়া মাত্র, তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। যেমন ধ্রুব মহারাজ বলছেন, স্বামীন্ কৃতার্থোহস্মি বরং ন যাচে। ঠিক প্রহ্লাদ মহারাজের মতোই তাকে সকল বর প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছিলঃ “হে প্রহ্লাদ, তুমি যা ইচ্ছা কর, তাই চাইতে পার।” কিন্তু তিনি কখনও কিছু চাননি। তবু তিনি এতটাই দয়ালু ছিলেন। পরিবারে এক বৈষ্ণব সন্তানের এ এক আদর্শ উদাহরণ। তাঁর পিতা এতখানি দুঃখ কষ্ট দেওয়া সত্ত্বে তিনি নৃসিংহদেবের কাছে প্রার্থনা করলেন, “হে প্রভু, আমার পিতা অনেক অপরাধ করেছেন। তবু দয়া করে তাঁকে মুক্তি প্রদান করুন।” তিনি নিজের জন্য কিছু চাইলেন না। তাই নরহরি, নৃসিংহদেব তৎক্ষণাৎ বললেন, কেন তুমি তোমার পিতার কথা বলছ? যেহেতু তোমার মতো এক পুত্র এই পরিবারে রয়েছেন তাই, তোমার পিতার পিতা, তার পিতা এইভাবে চৌদ্দ পুরুষের সকলেই মুক্ত হয়েছে।”
জীব তার স্বাধীনতার অপব্যবহার করার জন্যই দুঃখ পাচ্ছে। যখন জীব স্বাধীনতার সদ্ব্যবহার করবে, তখন সে কৃষ্ণের দাসত্ব স্বীকার করবে। “জীবের ‘স্বরূপ’ হয়-কৃষ্ণের “নিত্যদাস’।” তখনই সে প্রকৃত সুখ প্রাপ্ত হবে। পক্ষান্তরে বলা যেতে পারে যে, সে স্বরূপ স্থিতিতে রইলে প্রকৃত সুখ পাবে।
তো এই হচ্ছে লাভ বা কল্যাণ। যদি কোন সন্তান শুদ্ধ বৈষ্ণব, ভক্ত হতে পারে সে চৌদ্দ পুরুষকে উদ্ধার করতে পারে। এটি হচ্ছে একটি বিশেষ অধিকার কেননা তিনি সেই পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অতএব, পরিবার, দেশকে জাগতিকভাবে আমরা কি সেবা প্রদান করতে পারি? আমরা যদি ভক্ত হই, তাহলে মানবতার প্রতি, পরিবারের প্রতি, দেশের প্রতি আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ সেবা প্রদান করতে পারব। এটিই হচ্ছে দর্শন। অতএব, আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন এই দর্শন প্রচার করছে যে, “আপনি কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করুন, আপনার জীবন পূর্ণ হবে।” আর পন্থাটিও খুব সহজ। এখানে গোপন ব্যাপার কিছু নেই। আজকে সন্ধ্যাতেই যেমন একটি ছেলের সঙ্গে আমি কথা বলছিলাম। সে একটি মন্ত্র প্রাপ্ত হয়েছে। সেটি খুব গোপন কথা ৷ কিন্তু আমরা বলি যে, আমাদের কোন মন্ত্র নেই । আমাদের মন্ত্র হচ্ছে হরেকৃষ্ণ, তা সকলের জন্যই উন্মুক্ত। সেটি গোপন হতে যাবে কেন? আমরা যদি হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করার মাধ্যমে পরমেশ্বর ভগবানের কাছে যেতে পারি, তাহলে সেটি গোপন হতে যাবে কেন? সেটি তো যে কোন কিছুরই মতো বিতরিত হতে পারে যাতে প্রত্যেকেই পেতে পারে। তাই এখানে কোন গোপনীয়তা নেই। কোন গোপন মন্ত্র আমরা অনুমোদন করি না। অবশ্যই সেটি মুক্ত হওয়া চাই। এই কলিযুগে, কলি মানে হচ্ছে কলহের যুগ, ভুল বোঝার যুগ, মতানৈক্যের যুগ। তাই এই যুগে দর্শন বা অন্যান্য পন্থার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা খুবই কঠিন। সুতরাং শাস্ত্রে খোলাখুলিভাবে ঘোষণা করা হয়েছে—
হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্ ।
কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতির্ন্যথা ॥

তিনবার বলা হয়েছে । তিন বারে অর্থ হচ্ছে যজ্ঞ দান-তপঃ-ক্রিয়া। আরও অনেক কিছু রয়েছেঃ ধ্যান,যজ্ঞ, মন্দির অর্চনা। কিন্তু এই কলিযুগে এই সমস্ত জিনিস সম্পাদন করা অসম্ভব। কিন্তু একটি শিশুও হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করতে পারে। সেটি এখানে প্রমাণিত। যখনই হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন বা জপ হয় সেখানে শিশুরা এবং বৃদ্ধরাও অংশগ্রহণ করতে পারে। আর এটিই হচ্ছে ভগবৎ উপলব্ধি একমাত্র পন্থা। এতে কোন ব্যয় নেই, বরং রয়েছে লাভ। এটিই হচ্ছে শ্ৰীপ্ৰহ্লাদ মহারাজের শিক্ষা আর আমরা তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। আমরা যেন তাঁর নীতিতে মহাজনো যেন গতঃ স পন্থা, অবিচল থাকি আর এইভাবে কৃষ্ণভাবনামৃতে আরও অগ্রগতি লাভ করব।


 

জানুয়ারী-মার্চ  ২০১৮ ব্যাক টু গডহেড

 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।