এই পোস্টটি 506 বার দেখা হয়েছে
এক ভাগবত-আসরে বহু লোক সমবেত হয়েছিল। রাজ্যের রাজা সাধারণ মানুষের বেশে এসেছিলেন। নিজের পরিচয় ঢেকে রাখার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। শ্রোতাদের পেছেনের দিকে মাটিতে তিনি বসেছিলেন, কিন্তু শ্রোতারা অনেকই মনোযোগ সহকারে শুনছিল না। কেউ ঘুমাচ্ছিল। কেউ তাদের ঘরের মেয়ে-জামাই সম্বন্ধে গল্প করছিল। কেউ পাশাপাশি অন্য শ্রোতাদের দিকে তাকাচ্ছিল। এরকম দেখে রাজা অসন্তুষ্ট হয়ে আসরের বাইরের চলে এলেন। মন্ত্রীকে রাজা জানালেন, আগামীকাল ভাগবত আসরে সবচেয়ে মনোযোগী শ্রোতাকে স্বর্ণহার পুরস্কৃত করবেন। যথারীতি ব্যবস্থাও হয়ে গেল। মন্ত্রী পরদিন এক বিশেষ পন্থা অবলম্বন করবেন। এক ঘোষককে পাঠিয়ে ভাগবত পাঠের আগেই ঘোষণা করা হলো, ‘একটি বিশেষ ঘোষণা, রাজা নির্দেশ, ভগবত প্রবচন কালে কেউই চাঞ্চল্য প্রকাশ করবেন না। স্থিরভাবে হরিকথা না শুনলে অবশ্যই সিপাহীর লাঠির আঘাত খেতে হবে। মন দিয়ে শুনলে স্বর্ণহার পুরস্কার দেওয়া হবে।’ লাঠি ধরা সিপাহী কয়েকজন আসরের পিছনের দিকে দাঁড়িয়ে থাকল। ভাগবত পাঠক প্রসঙ্গে একটি ভক্তিমূলক গান গাইতে লাগলেন। অমনি একজন শ্রোতা গানের তালে তালে মাথা দুলাতে লাগল। অন্য শ্রোতারা একে অন্যকে ইঙ্গিতে জানাতে লাগলো, ওর মাথায় পড়বে। কেউ কেউ অতি সাবধানে পেছেনের দিকে আড়চোখে তাকাতে লাগল, সিপাহীরা আছে কিনা? আবার কেউ পুরস্কারে কথা করতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ পরে ভাগবত প্রবচন শেষ হলো। শ্রোতাদেরকে নিজ নিজ আসনেই বসে শ্রোতাকে রাজার কাছে ডেকে আনা হলো। মন্ত্রী সেদিনকার পাঠের প্রসঙ্গ থেকে প্রশ্ন করতে লাগলেন। কেউই উত্তর দিতে পারছিল না। অবশেষে যে ব্যক্তি সব কথা সব চিন্তা বাদ দিয়ে মাথা দুলিয়ে হরিকথা শুনেছিল, সে সঠিক উত্তর দিতে পেরেছিল। তাকেই রাজা স্বর্ণহার দান করলেন।
হিতোপদেশ
যে কোনও মঙ্গলকর কর্মে মনোযোগী হলে ভগবান তাকে পুরস্কৃত করবেন। ঐকান্তিক ভক্ত অকুণ্ঠিত চিত্তে নিরলস সাধনা করেই চলেন। যারা ঐকান্তিক নয়, তারা কেবল অন্যের সমালোচনা করেই দিন অতিবাহিত করে। কিন্তু জীবনে কোনও লাভ জুটাতে পারে না।