ঘুরে আসি বৃন্দাবন: জামাই বিনোদ…

প্রকাশ: ৯ এপ্রিল ২০২৩ | ৯:১৪ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৯ এপ্রিল ২০২৩ | ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 166 বার দেখা হয়েছে

ঘুরে আসি বৃন্দাবন: জামাই বিনোদ…

জামাই বিনো….

“যত্র বৃন্দাবনং নাস্ত ন যত্র যमনা নদী ।
যত্র গোবর্দ্ধনো নাপ্তি তত্র যে ন মনঃ সুখমঃ
বেদনাগক্রোশভূমিঃ স্বাধামঃ শ্রীহরিঃ স্বয়ম্।
গোবৰ্দ্ধনং চ যমুনাং প্রেষয়ামাস ভূপরি ॥”

“যে স্থানে বৃন্দাবন নেই, যমুনা নদী নেই, গিরিগোবর্দ্ধন নেই, সেই স্থানে যেতে আমার। । প্রসন্ন হয় না। অতঃপর শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং নিজধাম হতে চৌরাণীকোশ ভূমি, গোবর্ধন ও না নদী পৃথিবীতে প্রেরণ করলেন।” শ্রীমতি রাধারাণীর মন প্রসন্ন হয় না বলে প্রমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চিনুয়ধাম গোলকের অনুরূপ পৃথিবীতে যেধাম রচনা করেছেন। হল অপ্রাকৃত বৃন্দাবন। এই বৃন্দাবনধাম সর্বজীবের আরাধনার বস্তু কেননা এখানে জনন্দন মুরালীধারী ও বৃন্দাবনেশ্বরী সর্বদা অপ্রাকৃত লীলারসে মগ্ন থাকেন।

বৃন্দাবনে রাধাকুণ্ডে রামকৃষ্ণ হাসপাতালের সন্নিকটে শ্রীজামাই বিনোদ মন্দির অবস্থিত। তৎকালীন তাড়াশ ভূমি অধিপতি ও মহান বৈষ্ণব শ্রীবনমালী রায়বাহাদুর এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরকে তাড়াশালা মন্দিরও বলা হয়। এটি বৃন্দাবনের অত্যন্ত প্রসিদ্ধ মন্দির। মন্দিরের মূল আকর্ষণ শ্রী রাধাবিনোদ জীউ বিগ্রহ। শ্রী বিনোদজীউকে “জামাই বিনোদ” ও বলা হয়। এই জামাই বিনোদ হওয়ার লীলা খুবই চমকপ্রদ । তাড়াশ জেলার নবগ্রামে (বর্তমান বাংলাদেশ) শ্রীবাঞ্চারাম নামে এক পরম ভক্ত বাস করতেন। তিনি প্রতিদিনের নিয়ম অনুযায়ী একদিন স্থানীয় নদীতে স্নান করতে গেলেন। যখনই তিনি স্নান করছিলেন তখন এক দৈববাণী শুনলেন- “হে বাঞ্চারাম। তুমি আমাকে জলের ভিতর থেকে উঠিয়ে সেবাপূজা কর।” হঠাৎ তিনি তার পায়ে হাতের আঙ্গুলের স্পর্শ পেলেন। তৎক্ষণাৎ সেই অপ্রাকৃত হাত স্পর্শ করে জলের উপরে উঠতেই দেখা গেল এক অপরূপ সুন্দর বিগ্রহ। বিনোদজীউ ভক্তিতে এতটাই আকৃষ্ট যে, তিনি তার ভক্তের চরণস্পর্শ করতেও কার্পণ্য বোধ করেননি। বাঞ্চারাম তৎক্ষণাৎ জড়িয়ে ধরলেন এবং তার দেহ অষ্টস্বাত্তিক বিকার দৃষ্ট হল। তিনি বিনোপঞ্জীউকে ঘরে নিয়ে এলেন এবং পরম যত্নে প্রেমের সাথে সেবা করতে লাগলেন। বিনোদজী সর্বদা কোন না কোন লীলায় মগ্ন থাকতেন। একবার তিনি বাঞ্চারামের স্বপ্নে আবির্ভূত হয়ে বললেন যে তাকে বন্যফুলের তেল দ্বারা সবজী রান্না করে ভোগ লাগাতে হবে। এদিক ঘুম থেকে জেগে বাঞ্চারাম হতচকিত হয়ে গেলেন যে, কিভাবে তিনি তা সংগ্রহ করবেন। পরে তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, বিনোদজীর কানে এবং তার বসনে। নেই বন্যফুলগুলো সাজানো রয়েছে অর্থাৎ বিনোদজী নিজেই সেই ফুলগুলো সংগ্রহ করে। এনেছিলেন। আর একবার রাত্রিতে বাঞ্ছারামের নিকটাত্মীয় তাদের ঘরে এসেছিলেন। বাঞ্চারাম তখন ঘুমাচ্ছিলেন। বাঞ্ছারামের ঘুমে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে তাই ভগবান এক বালকরূপে তাদের সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে বললেন “হে অতিথিগণ আমার বাবা এখন ঘুমাচ্ছেন। আমি আপনাদের সেবা করব।” তখন বিনোদজী বাজারে গিয়ে কিছু মুদীবাজার করে আসতে চাইল দোকানদার তাকে বাঞ্ছারামের নামে এত মাল বাকীতে দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন বিনোদজী তার স্বর্ণের গয়না দোকানদারকে দিয়ে বললেন, “আগামীকাল আমার বাবা অবশ্যই আপনার টাকা পরিশোধ করবেন।

এভাবে বিনোদজী গ্রামবাসীদের কাছ থেকে ছল ছাতুরী দ্বারা কখনও পোশাক, কখনো মিষ্টিদ্রব্য গ্রহণ করতে লাগলেন। আর একদিন সরিষাপাতার শাক গ্রহণ করবেন, তাই নিজেই চুরি করে পোশাকে লুকিয়ে রাখলেন। শ্রীবিগ্রহ কথা বলে, চুরি করে এই সব ঘটনা | চারিদিকে প্রচারিত হলে প্রতিদিন বিগ্রহ দর্শনে বহু ভক্তের আনাগোনা দেখা গেল। তাড়াশ জেলার রাজা শ্রীবনমালী রায় বাহাদুর তার ১০ বৎসরের কন্যা রাধাকে সঙ্গে করে শ্রীবিনোদজীকে দেখতে গেলেন। এইদিকে রাধার সাথে বিনোদজী কথা বলতে লাগলেন তখন রাধা বিনোদজীকে নিজেই সেবা করতে চাইলেন। এদিকে স্বপ্নাদেশে বিনোদজী বাঞ্চারামকে বললেন, “হে বাঞ্চরাম, আমি বহুদিন তোমার সেবা গ্রহণ করেছি এবার আমাকে রাজগৃহে প্রেরণ কর আমি তাদের সেবা গ্রহণ করব। সেজন্য তুমি মনে কোন দুঃখ করিও না দেহান্তে তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে। বনমালী রায় বাহাদুরের কন্যা রাধা ছিলেন লক্ষ্মী অংশ সম্ভূতা। রাধা অত্যন্ত প্রেমের সাথে বিনোদজীর সেবা করতে লাগলেন। বিনোদজী রাধার সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে সাক্ষাৎ লীলাবিলাস করতেন। একদিন রাত্রে স্বপ্নে বিনোদজীউ রাণীকে জানালেন “হে মহারাণী। তোমার কন্যাকে আমি আমার পার্শ্বে অঙ্গীকার করেছি, কাজেই সে আর জীবিত থাকবে না। অতএব তোমাদের বাগানে যে শুকনো নিমগাছ আছে তার দ্বারা এক রাধামূর্তি তৈরি করে আমার বাম পাশে স্থাপন কর। শ্রীবিনোদজীউর আদেশ অনুসারে রাধামূর্তি তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজকন্যা রাধার প্রাণ বহির্গত হয়ে রাধামূর্তিতে প্রবেশ করে। এরপর শ্রীবিনোদজীউ এর সাথে শ্রীরাধা। বিবাহ কার্য সমাপ্ত করা হয়। তখন থেকে শ্রীবিনোদজীউ শ্রীজামাই বিনোদ নামে জগতে পরিচিত হয়ে আছেন। মহারাজা স্বয়ং এই বিগ্রহের সেবা করতেন। পরবর্তীতে তিনি বৃন্দাবনে রাধাকুণ্ডের নিকটে উক্ত বিশাল মন্দির নির্মাণ করে শ্রীরাধাবিনোদজীউকে স্থাপন করেন। বর্তমানে এই মন্দির রাজবাড়ী নামে পরিচিত। অতএব, অপূর্ব মনোহর এবং নিত্য আনন্দময় লীলাবিলাসে মগ্ন শ্রী রাধা জামাই বিনোদকে দর্শন করার জন্য বৃন্দাবনে তীর্থ দর্শনের পরিকল্পনা করুন এবং মানবজীবনকে

চৈতন্য সন্দেশ অ্যাপ ডাউনলোড করুন :https://play.google.com/store/apps/details?id=com.differentcoder.csbtg


Hare Krishna Thanks For Reading

কৃষ্ণপ্রেম তথা হরিনাম গ্রহনের মাধ্যমে সার্থক করুন। হরে কৃষ্ণ। 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।