বাস্তু শাস্ত্র (পর্ব-৩)

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২১ | ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২১ | ৯:০১ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 390 বার দেখা হয়েছে

বাস্তু শাস্ত্র (পর্ব-৩)

কক্ষ তৈরীর পরিকল্পনা যেভাবে করবেন

রাগমঞ্জুরী দেবী দাসী

রান্নাঘর:

রান্নাঘর তৈরীর জন্য মৌলিক বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো উচ্চ মাপের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, খাদ্য প্রস্তুত করণের জন্য বড় স্থান নির্ণয় করা এবং সে সাথে রান্নার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গৃহের দক্ষিণ পূর্ব কোণটি অগ্নিদেবের নির্দেশনায় পরিচালিত হয় এবং এটি রান্না ঘরের জন্য আদর্শ স্থান। রান্না করার জন্য বেসিন ও জলের ট্যাপ রাখার সর্বোত্তম স্থান হল উত্তর-পূর্ব কোণ এবং আহারের বাসন পত্র রাখা উচিত দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলো স্থাপন করা উচিত দক্ষিণ-পূর্বকোণে। ফ্রিজ রাখার আদর্শ স্থান হলো উত্তর-পশ্চিম দিকে। স্টোভ ও চলা রাখা উচিত পূর্ব দিকে বা উত্তর দেওয়ালের দিকে, এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে দক্ষিণ ও পশ্চিম দেওয়াল স্পর্শ না করে। পূর্ব দিকে মুখ করে রান্না করা সর্বোত্তম হিসেবে বিবেচ্য। প্রসঙ্গত ঐতিহ্যগতভাবে রান্নাঘরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য কখনো রান্নাঘরে আহার করা উচিত নয়।

শয়ন কক্ষ :

অধিকাংশ লোকই তাদের জীবনের এক তৃতীয়াংশ বিছানায় শুয়ে কাটায় তা শয়ন কক্ষ যথাযথ হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু দক্ষিণ দিকটি মঙ্গল গ্রহ (স্বামীর শাসক হিসেবে পরিচিত) দ্বারা পরিচালিত তাই প্রধান শয়ন কক্ষগুলো দক্ষিণ দিকে, পশ্চিম বা দক্ষিণ পশ্চিম দিকে হওয়া উচিত। উত্তর পশ্চিম দিকে অতিথি কক্ষ রাখা যেতে পারে।
সর্বোত্তম নিদ্রা যাপনের জন্য বাস্তু শাস্ত্রানুসারে আদর্শ হলো মস্তক পূর্বে রেখে নিদ্রা যাপন করা। উত্তর দিকে মস্তক রাখলে তা পৃথিবীর উত্তর মেরুর সঙ্গে বিকর্ষণ সৃষ্টি করে। যার ফলে দুঃস্বপ্ন ও নিদ্রা গোলযোগ সৃষ্টি হয়। পত্নী সাধারণত পতীর বাম পাশে নিদ্রাযাপন করে কেননা বাম পার্শ্বটি পুরুষ শক্তি এবং ডান পার্শ্বটি নারী শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শয়ন বিছানা পূর্ব ও উত্তর দেওয়াল স্পর্শ করা উচিত নয়। বুকশেলফ বা পড়ার ডেক্স রাখার আদর্শ স্থান হলো শয়ন কক্ষের দক্ষিণ-পশ্চিম বা পশ্চিম পার্শ্বে।

ভোজন কক্ষ :

ভজন কক্ষ থাকে মধ্য পশ্চিম দিকে যা সাধারণত শনিগ্রহের তত্ত্বাবধানে থাকে। উল্লেখ্য শনিগ্রহ ইতিবাচক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।

অধ্যয়ন কক্ষ

কেউ চাইলে যথাযথভাবে শিক্ষা লাভের জন্য উত্তর পূর্ব দিকে মুখ করে অধ্যয়ন করতে পারে।

শৌচাগার

ঐতিহ্যগতভাবে শৌচাগার সাধারণত গৃহের বাহিরে হয়ে থাকে। তখনকার দিনে সেগুলো গৃহের পূর্ব দিকে স্থাপন করা হত, যাতে করে প্রত্যুষে লোকেরা স্নান করে বের হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব দিকে উদিত সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে প্রণতি নিবেদন করতে পারে। বাস্তু শাস্ত্রানুসারে বাথরুম বা শৌচাগার স্থাপন করা উচিত পূর্বদিকে। স্নান করার ঝর্ণা, নল ইত্যাদি কক্ষের উত্তর পূর্ব দিকে স্থাপন করা উচিত। বেসিন হওয়া উচিত পশ্চিমে এবং কাভার্ড রাখা উচিত দক্ষিণ-পূর্ব দিকে।

সাজসজ্জা কক্ষ

মূল্যবান জিনিসপত্র রাখার আদর্শ স্থান হলো গৃহের উত্তর পার্শ্বে। কেননা ঐ পার্শ্বটি বিষ্ণুর পত্নী লক্ষ্মীদেবীর তত্ত্বাবধানে থাকে, যিনি হলেন ধন সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই দিকে বা এই স্থানে মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষণ করলে তা সুরক্ষিত হবে এবং সে সাথে আরো প্রাচুর্য নিয়ে আসার জন্য প্রভাবিত করে।

স্টোর কক্ষ ও গ্যারেজ

গৃহের অন্যন্য জিনিসপত্র যেমন সিঁড়ি, কার ও গৃহ রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ভারী জিনিস পত্র রাখার সর্বোত্তম স্থান হলো দক্ষিণ-পশ্চিম দিক ।

পূজা বা প্রার্থনা কক্ষ

পরম সৃষ্টিকর্তা অবস্থান করেন গৃহের উত্তর পূর্ব দিকে। তাই ঐদিকে গৃহ প্রার্থনা কক্ষ গড়ে তুললে পারমার্থিক আশির্বাদ ও দিক নির্দেশনা সঞ্চারিত হয়। ধ্যান, পারমার্থিক সংস্কারাদি ও প্রাত্যহিক অনুশীলন সম্পাদন করা হয় বিশেষত প্রত্যুষে এবং উত্তর-পূর্ব দিকে। ঔষধ রাখা উচিত প্রার্থনা কক্ষের নিকটে উত্তর দিকের কোন কক্ষে।

গৃহপালিত পশুর কক্ষ :

পশুদেরকে গৃহের উত্তর-পশ্চিম দিকে কোন স্থানে রাখা যেতে পারে।

বাস্তু শাস্ত্র (পর্ব-৪)


 

চৈতন্য সন্দেশ ফেব্রুয়ারী – ২০১৭ প্রকাশিত
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।