বলরাম জয়ন্তী

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২১ | ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২১ | ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 226 বার দেখা হয়েছে

বলরাম জয়ন্তী

বলরাম হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জ্যেষ্ঠভ্রাতা এবং প্রথম প্রকাশ। তিনি সৎ-চিৎ-আনন্দের প্রতিমূর্তি। তিনি বলদেব, বলভদ্র হলায়ুধ, সঙ্কষর্ণ ও শেষনাগ নামেও পরিচিত।

সর্ব অবতারী কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান
তাহার দ্বিতীয় দেহ শ্রী বলরাম ॥

নামকরণ: অমিত বলশালী ও ভক্তদের শক্তি প্রদান করেন বলে তার নাম বলরাম, গর্ভসঞ্চার স্থানান্তরের ফলে জন্ম হয়েছিল বলে তার নাম সঙ্কষর্ণ, উন্নত চরিত্রের ছিলেন বলে তার অপর নাম বলভদ্র। আর বয়সে কৃষ্ণের চেয়ে বড় ছিলেন বলে তাকে বলা হয় অচ্যুতাগ্রজ। কৃষ্ণের প্রতীক ‘হাল’ তার সঙ্গে থাকে বলে তিনি হলায়ুধ, তাই তিনি সর্বদা নিলাম্বরধারী। পরিশেষে, বলদেব নামকরণ করেন গর্গমুনি
আর্বিভাব: বসুদেবের ঔরসে দেবকীর সপ্তম গর্ভসঞ্চার হলে যোগমায়া সে গর্ভ সঙ্কষর্ণ করে (স্থানান্তর) রোহিণী নামক অপর এক নারীর গর্ভে এই সন্তান স্থাপন করেন। পরিশেষে, শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে (রাখী পূর্ণিমা) মাতা রোহিণীর গর্ভে জন্ম নেন এক বলশালী পুত্র সন্তান। এই পুত্রই হচ্ছেন বলরাম।
বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য: কৃষ্ণের থেকে বলরামের চরিত্র ছোটবেলা থেকেই ভিন্ন। শান্ত প্রকৃতির বলরাম রেগে গেলে মারাত্মক রূপ ধারণ করতেন। কৃষ্ণ যেমন মিষ্টি কথা ও মুখের হাসিতে সবার মন জয় করে নিতেন, বলরামের প্রকৃতি তা নয়। গঠনগত দিক থেকেও, দুই ভাই ভিন্ন প্রকৃতির। কৃষ্ণ যেমন কালো, কৃষ্ণবর্ণ তবে বলরাম ফর্সা। কৃষ্ণের পছন্দ হলুদ বর্ণের কাপড়, কিন্তু বলরাম সর্বদাই নীল বস্ত্র পরিধান করতেন। কৃষ্ণ শ্যামবর্ণ হলেও দাদা বলরাম কিন্তু গৌরবর্ণধারী।
বলরাম পূর্বজন্মে ছিলেন শ্রীরামচন্দ্রের অনুজ ভ্রাতা লক্ষণ, কিন্তু কলিকালে তিনি নিত্যানন্দ মহাপ্রভু হিসেবে শ্রীচৈতন্যদেবের হরিনাম আন্দোলনে সঙ্গী হতে আর্বিভূন হন।

ব্রজেন্দ্রনন্দন যেই , শচীসুত হৈল সেই
বলরাম হইল নিতাই ॥

বলরাম রাজা রৈবতের কন্যা রেবতীকে বিবাহ করেন। রেবতীর গর্ভে দুই পুত্রের জন্ম হয়। একজনের নাম নিষাদ এবং অন্যজনের নাম উল্মুক।
অতঃপর, কংসের হত্যার পর সান্দীপন মুনীর কাছে বলরাম ও কৃষ্ণ বেদ, কলা, ধনু, ধর্ম ও নীতিশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। শিক্ষা সমাপ্তির পর কৃষ্ণ-বলরামকে গুরুকে গুরুদক্ষিণা দিতে চাইলে সান্দীপন মুনি তার পুত্রকে উদ্ধার করে দিতে বলেন।
উল্লেখ্য, পঞ্চজন নামক এক দৈত্য সান্দীপন মুনীর পুত্রকে হরণ করেছিলেন। কৃষ্ণ-বলরাম এই দৈত্যকে হত্যা করে গুরুপুত্রকে এনে গুরুদক্ষিণা দেন।
বলরামের অস্ত্র বিশাল এক লাঙল। এ কারণে তিনি হলধারী নামেও পরিচিত। তাঁর আরেক অস্ত্রের নাম মুষল। অস্ত্রবিদ্যায় তিনি অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। ভীম ও দুর্যোধন তার কাছে গদাচালনা শিখেছিলেন। তবে তার মধ্যে দুর্যোধন বলরামের কাছে শিষ্যত্ব বরণ করার লীলা রয়েছে সেটা শ্রবণ করুন।

দুর্যোধনেরশিষ্যত্বগ্রহণ:
দুর্যোধনের কন্যা লক্ষ্মণার স্বয়ংবর সভায় কৃষ্ণের পুত্র শাম্ব উপস্থিত হলে কৌরবরা তখন শাম্বকে বন্দী করলেন। এই সংবাদ পেয়ে বলরাম সেখানে উপস্থিত হয়ে কৌরবদের কাছে শাম্বকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। এতে কৌরবরা রাজি না হলে তিনি তার হলের অগ্রভাগ দ্বারা কৌরবপুরীকে গঙ্গায় নিক্ষেপের উদ্যোগ নেন। তার হলের আকষর্ণে কৌরবপুরী আন্দোলিত হতে থাকলে কৌরবরা তখন শাম্বকে বলরামের কাছে সমপর্ণ করেন। বলরামের এই বীরত্বপূর্ণ কার্যের জন্যই দুর্যোধন ভয় পায় এবং তার কাছে গদাযুদ্ধ শেখার জন্য শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

যমুনাদেবীর অগ্রাহ্যতা:
একদা শ্রীবলরাম বৃন্দাবনে গোপীগণের (এরা শ্রীকৃষ্ণের নিত্যপার্ষদ গোপীদের থেকে ভিন্ন) সাথে লীলা করছিলেন। এমন সময় তারা নিকটস্থ একটি গাছের কোটর থেকে ক্ষরণশীল মধু পান করেন এবং কিঞ্চিৎ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
অতঃপর শ্রীবলরাম যমুনা দেবীকে ডেকে তাঁর সুশীতল জলে স্নানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। কিন্তু যমুনাদেবী নেশাগ্রস্ত দেখে কোন সাড়া দিলেন না। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে বলরাম তাঁর হলায়ুধ দিয়ে যমুনাকে সহস্র ধারায় বিভক্ত করবেন, এমন সময় অবস্থা বেগতিক দেখে যমুনা দেবী নদী থেকে উত্থীত হয়ে শ্রীবলরামের স্তুতি করেন এবং তার সুশীতল জলে অবগাহনের অনুমতি দিলেন।

শ্রী শ্রী বলরামের প্রণামমন্ত্র:

নমস্তে তু হলগ্রাম, নমস্তে মুষলায়ুধ
নমস্তে রেবতীকান্ত, নমস্তে ভক্ত-বৎসল
নমস্তে বলিনাং শ্রেষ্ঠ, নমস্তে ধরণিধর
প্রলম্বারে! নমস্তে তু ত্রাহি মাং কৃষ্ণ-পূর্বজ ॥

আজ পূর্ণতিথিসমূহ-
* ঝুলনযাত্রার ৫ম দিনের আজ সর্বশেষ দিন।
* ভগবান শ্রীবলরামের ৫২৪৮ তম আর্বিভাব তিথি। (দুপুর ১২:০৪ পর্যন্ত নির্জলা উপবাস)
* রাখী পূর্ণিমা তিথি।
* কালীয় দমন লীলা (আজকের তিথিতেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ একাই কালীয় দমন করেছিলেন)
* আজ থেকে চাতুর্মাস্যের দ্বিতীয় মাস আরম্ভ। (দই বর্জন)

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।