তুলসী দেবীর মাহাত্ম্য উন্মোচন

প্রকাশ: ২ এপ্রিল ২০২২ | ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২ এপ্রিল ২০২২ | ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 240 বার দেখা হয়েছে

তুলসী দেবীর মাহাত্ম্য উন্মোচন

তুলসী মহিমা যে কতখানি বিপুল তা বিভিন্ন শাস্ত্র থেকে অবগত হওয়া যায়। কাশীরাম দাসকৃত ‘মহাভারতে আছে
তুলসী-আরাম যেই করিয়া রোপণ ।
ত্রিসন্ধ্যা স্তবন করে ত্রিসন্ধ্যা বন্দন ॥
তারে তুষ্ট হন প্রভু দেব জগৎপতি।
অর্থাৎ তুলসী গাছ রোপন করে তিন সন্ধ্যা তাঁর স্তব ও বন্দনা করলে পরমেশ্বর ভগবান সন্তুষ্ট হন। শ্রীশ্রী হরিভক্তিবিলাস (৯/১৫৬-১৫৯) গ্রন্থে গরুড় পুরাণ থেকে উল্লিখিত হয়েছে “যিনি তুলসীকানন রোপন করেন, তাঁর প্রাণিগণকে মুক্তি দান করা হয়ে গিয়েছে। পবিত্র উপবন, বন ও ভবনে যিনি তুলসী রোপন করে, হে পক্ষীন্দ্র, সত্য করিয়া বলছি তিনি সপ্তলোক সংস্থাপন করেছেন। যিনি এক মুহূর্তও তুলসী কামনে বিশ্রাম করেন, তিনি নিঃসংশয়ে কোটিজন্মকৃত পাপ হইতে মুক্ত হন। যিনি নিত্য শ্রীবিষ্ণুসহস্র নাম পাঠ করতে করতে তুলসীকানন প্রদক্ষিণ করেন, তিনি দশসহস্র যজ্ঞের ফল লাভ করেন।” তুলসী মাহাত্ম্য বিষয়ে কাশীরাম দাসের ‘মহাভারতে’ একটি কাহিনী এইভাবে বিবৃত হয়েছে যে-একবার দেবর্ষি নারদের উপদেশ অনুযায়ী সত্যভামা একটি ব্রত পালন করলেন। ব্রত পালনের শেষে বলা হয়েছিল যে শ্রীকৃষ্ণকে তুলাদণ্ডের একদিকে বসিয়ে অপরদিকে ধনরত্ন চাপিয়ে কৃষ্ণের সমান ওজনের ধনরত্ন নারদমুনিকে দান করতে হবে। কিন্তু যতই ধনরত্ন পাল্লায় চাপানো হোক না কেন তা কিছুতেই কৃষ্ণের ওজনের সমান হচ্ছে না, কম হয়ে যাচ্ছে।
এক ভিতে বসাইল দেবকীনন্দন
আর ভিতে বসাইল যত রত্নধন।
সত্যভামা গৃহে রত্ন যতেক আছিল
তুলে চড়াইল তবু সমান নহিল ॥
ক্রমে কৃষ্ণের অন্যান্য মহিষী যেমন রুক্মিনী, কালিন্দী, নাগ্নজিতী, জাম্ববর্তী প্রমুখ অন্যান্যদের ধনরত্নও দেওয়া হল কিন্তু তবুও দাড়িপাল্লায় তা কৃষ্ণের সমান হল না। এরপর দ্বারকাবাসীরাও যার যা কিছু ছিল সব কৃষ্ণের বিপরীত পাল্লায় চাপালো। কিন্তু তবুও সমান হল না, কম পড়ে যাচ্ছে।
দ্বারকাবাসীর দ্রব্য যার ছিল যথা
না হয় কৃষ্ণের সম অপরূপ কথা ॥
তখন সত্যভামা কি করবেন তা ভেবে না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে আকুল হলেন। অবশেষে উদ্ধবের কথামতো তিনি এক কাজ করলেন-

এত বলি আনি এক তুলসীর দাম
তাহে দুই অক্ষর লিখিল কৃষ্ণনাম
তুলের উপরে দিল তুলসীর পাত
ভারী হইল তুলসী উঠিলা জগন্নাথ ॥
অর্থাৎ তখন সেই তুলা দণ্ডে একটি তুলসী পাতার মধ্যে কৃষ্ণনাম লিখে দিতেই পাল্লা নড়ে উঠে কৃষ্ণের সমান হল । এ থেকেই বোঝা যায় যে তুলসীর মাহাত্ম্য কতখানি। তুলসীর মঙ্গলজনক প্রভাবের জন্যই বৈশাখমাসে নিয়মিত তুলসী বৃক্ষে জলদান ও কার্তিকমাসে তুলসীবৃক্ষ নিয়ে প্রদীপ নিবেদনের রীতি রয়েছে।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর মহিষী সত্যভামাকে বলেছিলেন
দারিদ্রদুঃখ-রোগার্তি-পাপানি সুবহুন্যপি।
হরতে তুলসীক্ষেত্রং রোগানিব হরীতকী ॥
হে সত্যভামা তুমি স্থির জানিও যে এক হরীতকী যেমন রোগসমূহ দূর করে, তদ্রুপ তুলসীদেবীও দারিদ্র-দুঃখ, রোগ, শোক ও সর্ববিধ পাপ আশু ধ্বংস করিয়া দেন।” তাই ‘তুলসী-গীতা’ (অবন্তী খণ্ড) নামক শাস্ত্রগ্রন্থে ও বলা হয়েছেÑঅর্থাৎ “যাঁকে দেখলে নিখিল পাপসমূহ ধ্বংস হয়, যাঁকে স্পর্শ করলে দেহ পবিত্র হয়, যাঁকে অভিনন্দন করলে রোগরাশি বিদূরিত হয়, যার সিক্তজল স্পর্শ করিলে অন্তকভয় বিদ্যমান থাকে না, যাকে রোপন করিলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণে প্রত্যাসক্তি জন্মে, যাঁকে শ্রীকৃষ্ণচরণে অর্পণ করিলে মুক্তিফল লাভ হয়-সেই তুলসী দেবীকে নমস্কার।”অগস্তসংহিতায় বলা হয়েছে “যেমন জনকনন্দিনী সীতা ত্রৈলোক্যনাথ রামচন্দ্ররূপী বিষ্ণুর প্রেয়সী, সেইরূপ সর্বলোকৈকপাবনী তুলসীদেবীও বিষ্ণুর অত্যন্ত বল্লভা। যেখানে বিবিধ ফুলগাছ পরিবৃত তুলসীবন থাকে, শ্রীরামচন্দ্র তথায় সীতাসহ বাস করেন। গঙ্গার চারিদিকের একক্রোশ স্থান যেমন পবিত্র, তেমনই তুলসীকাননের চতুর্দিগস্থ একক্রোশ স্থানও পবিত্র। যাঁহারা তুলসীসন্নিধানে প্রাণত্যাগ করেন, তাদেরকে আর নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না, তারা শ্রীবিষ্ণুর পরমপদ প্রাপ্ত হন। প্রভাতে গাত্রোত্থান করিয়া অন্যবস্তু দেখবার পূর্বেই যাঁরা অগ্রে তুলসী দর্শন করেন, তাদের অহোরাত্রকৃত পাপ তৎক্ষণাৎ বিনষ্ট হয়।এছাড়াও শাস্ত্রে বলা হয়েছে যেÑ“অন্তিমশয়নে (মৃত্যুকালে) যে মানুষ গণ্ডুষ মাত্র তুলসীপত্রের জল পান করতে সক্ষম হন, তিনি সকল পাপ থেকে বিমুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে গমন করেন।” শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর তুলসী সেবন লীলাও ছিল অতি অপূর্ব চৈতন্য ভাগবতে (অন্ত ৮/১৫৪-১৬২) শ্রীল বৃন্দাবন দাস ঠাকুর তার বর্ণনা করেছেন
“তুলসীর ভক্তি এবে শুন মন দিয়া
যেরূপে কৈলেন লীলা তুলসী লইয়া ॥
এক ক্ষুদ্রভাণ্ডে দিব্য মৃত্তিকা পূরিয়া।

তুলসী দেখেন সেই ঘটে আরোপিয়া ॥
প্রভু বলে-আমি তুলসীরে না দেখিলে।
ভালো নাহি বাসোঁ যেন মৎস্য বিনে জলে
যবে চলে সংখ্যানাম করিয়া গ্রহণ
তুলসী লইয়া অগ্রে চলে একজন ॥
পশ্চাতে চলেন প্রভু তুলসী দেখিয়া
পড়য়ে আনন্দধারা শ্রীঅঙ্গ বহিয়া ॥
সংখ্যা নাম লৈতে যেস্থানে প্রভু বৈসে।
তথাই রাখেন তুলসীরে প্রভু পাশে ॥
তুলসীরে দেখেন, জপেন সংখ্যানাম।
এ ভক্তিযোগের তত্ত্ব কে বুঝিবে আন ॥
পুনঃ সেই সংখ্যানাম সম্পূর্ণ করিয়া।
চলেন ঈশ^র সঙ্গে তুলসী লইয়া ॥
শিক্ষাগুরু নারায়ণ যে করায়েন শিক্ষা ।
তাহা যে মানয়ে, সে-ই জন পায় রক্ষা ॥”
শ্রীল বৃন্দাবন দাস ঠাকুর মহাপ্রভুর এই তুলসীভক্তি লীলা বর্ণনা করে এই বার্তাই প্রদান করতে চেয়েছেন যে তুলসীকে ঐকান্তিক রূপে ভক্তি ও শ্রদ্ধা করার মহাপ্রভুও এই শিক্ষাকে যারা অনুসরণ করবেন, তারা সর্বপ্রকার মঙ্গললাভ করবেন এবং পরমেশ^র ভগবান দ্বারা সুরক্ষিত থাকবেন।


চৈতন্য সন্দেশ এপ্রিল-২০২২ প্রকাশিত

 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।