জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা ও গজ-বেশ

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২২ | ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৪ জুন ২০২২ | ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 114 বার দেখা হয়েছে

জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা ও গজ-বেশ

শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের পবিত্র স্নানযাত্রা অনুষ্ঠান প্রতি বৎসর জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ঐ দিনই জগন্নাথদেবকে গজবেশে শৃঙ্গার করা হয়। অনেকে ‘গনেশ-বেশ’ রূপেও উল্লেখ করে থাকেন। কথিত আছে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল-দশমী তিথিতে ভারতের সমস্ত তীর্থ শ্রীক্ষেত্রে সমবেত হয়। ঐ দিন পুরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের উত্তর দ্বারের শীতলা মন্দিরের সামনে অবস্থিত সোনা কুয়োয় ভারতের সকল তীর্থের জল আবির্ভূত হয়। এই কুয়ো থেকে পুরোহিতগণ জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমার পূর্বদিনে ১০৮টি নূতন কলসে করে জল সংগ্রহ করে ভোগ মণ্ডপে অধিবাস করে রেখে দেন। ঐ জলে পবিত্র চন্দন, কর্পূর, কেশর, অগুরু ইত্যাদি গন্ধ্য দ্রব্য মেশানো হয় এবং প্রতি কলসের উপর একটি করে নারকেল রাখা হয়।
স্নানযাত্রার পূর্বরাত্রে রত্ন সিংহাসনস্থ শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের মুখ-মণ্ডল কাপড়ে আবৃত করে দেওয়া হয়। তাঁকে সিংহাসন থেকে স্ন্নান বেদীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুন্দর সিঁড়ি ও পথের ব্যবস্থা করা হয়। স্নান মণ্ডপ সুন্দর চাঁদোয়া ও পুষ্প দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। স্ন্নান-যাত্রার দিন পুরোহিতগণ বিবিধ উপাচারে শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের পূজা নিবেদন করার পর বিগ্রহগণকে রেশমী দড়ির সাহায্যে বহন করে মস্তকে ছত্র ধারণ করে স্নান বেদীতে নিয়ে আসেন। প্রথমে সুদর্শনকে স্নান মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ক্রমানুসারে বলদেব, সুভদ্রা, জগন্নাথ বিগ্রহকে স্নান বেদীতে নিয়ে আসা হয়। মদনমোহনকে ব্রাহ্মণগণ এবং বিগ্রহত্রয়কে দয়িতা-পতিগণ নিয়ে আসেন। এই নিয়ে আসার অনুষ্ঠানটিকে পহণ্ডী বিজয় বলা হয়। পহণ্ডী বিজয়ের পর বিগ্রহগণের ক্লান্ত, শ্রান্ত ও ঘর্মাক্ত কলেবরকে শীতল করার জন্য রূপোর পাত্রে বাহিত সুগন্ধি জল দ্বারা বিগ্রহগণের শ্রীমুখপদ্ম প্রক্ষালণ করা হয়। অতঃপর পূজা ও আরতি নিবেদনের পর পুরোহিত বা পাত্তাগণ অধিবাস স্থল থেকে জল নিয়ে আসেন। সেই সময় ঐ পাণ্ডাদের মুখে বাঘের মুখোশ থাকে। তিনজন পাণ্ডা ষোড়শ উপচারে শ্রীশ্রীজগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাদেবীর পূজা করার পর, অপর তিনজন পাণ্ডা রূপোর পাত্রে জল বহন করে নিয়ে এসে মহাস্নানযাত্রায় তাদের সহায়তা করেন। এইভাবে সমস্ত স্ন্নানযাত্রা সমাপনের পর বিশেষ বাদ্য বাজতে থাকে। এরপর শ্রীশ্রীজগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাদেবীকে পুষ্প দিয়ে সুসজ্জিত করে পুষ্পাভিষেক করা হয় এবং পরে বিগ্রহত্রয়কে গজবেশ বা গণেশবেশে সজ্জিত করা হয়। জগন্নাথের ত্রয়োদশ যাত্রার মধ্যে এই গজবেশ বা গণেশবেশই হচ্ছে প্রথমবেশ। এই শুভবেশের প্রথমে গণেশের পূজা করা হয়। এ প্রসঙ্গে এটিই শাস্ত্রবিধি।
শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের এই গজবেশ ও গণেশবেশ ধারণের দুটি প্রচলিত কাহিনী রয়েছে। সংক্ষেপে প্রথম কাহিনীটি এরকম গণপতি ভট্ট নামে মহারাষ্ট্রে এক পরম গণেশ ভক্ত ছিলেন। তাঁর পাণ্ডিত্য ও বাগ্মীতায় মুগ্ধ হয়ে সেই সময়ের পুরীর রাজা তাঁকে সম্মান প্রদর্শন স্বরূপ পুরী-মন্দির দর্শনের জন্য অনুরোধ জানান। গণপতি ভট্ট শুনেছিলেন যে পুরীর জগন্নাথ বিগ্রহ হচ্ছেন সমস্ত দেবতার সমাহার। সেই একত্রিত রূপকেই জগন্নাথ বলা হয়। রাজার অনুরোধে গণপতি ভট্ট যেদিন পুরী আগমন করলেন, সেই দিনটি ছিল এই স্ন্নানযাত্রার দিন। স্ন্নানবেদীতে জগন্নাথদেবকে দর্শন করে সেখানে গণেশরূপ দর্শন না করে ভগ্ন মনোরথ হয়ে তিনি ফিরে যেতে লাগলেন।


চৈতন্য সন্দেশ জুন-২০২২ প্রকাশিত
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।