কাটা বনাম ফুল (পর্ব -২)

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২০ | ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৫ জুন ২০২০ | ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 445 বার দেখা হয়েছে

কাটা বনাম ফুল (পর্ব -২)

মন্দির ভাঙ্গন

১৬৬৯ সালে ঔরঙ্গজেব মথুরায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব স্থলে থাকা ২৫০ ফিট উচু শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরটি ধ্বংস করেন যা তাঁর নিষ্ঠুরতা প্রকাশ করে। এটি পুরোপুরি ধ্বংস করার পর তিনি সেই পবিত্র স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এরপর ১৬৭০ সালে তিনি মথুরার কেশব রাই মন্দির ধ্বংস করার জন্য নির্দেশ দেন এবং সেই একই স্থানে মসজিদ নির্মাণ করেন। শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে (মধ্য ১৭/১৫৬) তে বলেন —
“এক সময় ঔরঙ্গজেব কেশবজীর মন্দির আক্রমণ করে সেখানে এত বড় একটা মসজিদ নির্মাণ করে যে, কেশবজীর মন্দিরটি প্রায় তার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। ”
মাসির-ই-আলমগিরি, একটি ইসলামিক ইতিহাস গ্রন্থ, যেখানে উল্লেখিত আছে, কেশবজী মন্দিরের বিগ্রহসমূহকে বহন করে আগ্রা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং একটি মসজিদের সিড়ির নিচে সমাহিত করা হয় যেন সেগুলো বহুকাল সকলের পায়ের নিচে থাকে। (উৎস: পার্শিয়ান মাসির-ই-আলমগিরি যা রাজস্থানের বিকানের মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে) মথুরার একসময়কার ম্যাজিস্ট্রেট ও ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ এফ. জি. গ্রোস উল্লেখ করেছিলেন যে, ঔরঙ্গজেব শুধুমাত্র মন্দির ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি বহু প্রাচীন পবিত্র নামসমূহের পরিবর্তন সাধন করেন। তিনি আদেশ জারি করেন মথুরার নাম পরিবর্তিত হয়ে হবে ইসলামাবাদ।” (উৎস: “এফ.এস.গ্রোস” গ্রন্থের পৃষ্ঠা নং ৩৫, যদিও ঔরঙ্গজেবের কড়া নির্দেশ ছিল তথাপিও সাধারণ জনগণ মথুরা নামেই সম্বোধন চালু রাখেন)
১৬৭০ সালে আগ্রায় তার কেল্লায় অবস্থানকালে তিনি লক্ষ্য করেন কিছুদূরে একটি উজ্জ্বল দীপশিখা জ্বলছে। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন এটি ৩৪ মাইল দূরে বৃন্দাবনের রাধা গোবিন্দ মন্দিরের ঘৃতপ্রদীপ। এই ব্যাপারটি জানতে পেরে তিনি অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন, কেন একটি হিন্দু মন্দির এত উঁচু থাকবে মুসলমান সাম্রাজ্যর মধ্যে। তাই তিনি নির্দেশ দিলেন অবিলম্বে যেন মন্দিরটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। সৌভাগ্যবশত, বৃন্দাবনের ভক্তগণ আগাম সর্তকবার্তা পেলেন এবং ঔরঙ্গজেবের সৈন্যেরা আসার আগেই বৃন্দাবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিগ্রহসমূহ নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। ঔরঙ্গজেবের সৈন্যেরা গোবিন্দজী মন্দিরের চূড়া ভেঙ্গে ফেলে, গর্ভমন্দির পবিত্রতা ভঙ্গ করে এবং মন্দিরের সকল পাথরের খোদাই করা মূর্তিসমূহ ধ্বংস করে দেয়।
ঔরঙ্গজেব যথারীতি এই মন্দিরটিও মসজিদে পরিণত করে। মন্দির ধ্বংস হওয়ার কাজ শেষ করার পর তিনি সেখানে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। ঔরঙ্গজেবের সেই অতিরিক্ত বিল্ডিংটি ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট গ্রোস অপসারণ করেন এবং মন্দিরটি পুনরায় সংস্কার করে ১৮৭১ সালে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের নিকট ফেরত দেন। (স্থানটি প্রফুল গোরাদিয়া, হিন্দু মসজিদ)
ইতিপূর্বে ১৬৮৮ সালে ঔরঙ্গজেব পুনরায় তাঁর সৈন্য পাঠিয়ে বৃন্দাবনের ১ হাজারটি মন্দির ধ্বংস করেন। শুধুমাত্র গোবিন্দজী মন্দিরই নয়, ঔরঙ্গজেবের সৈন্যগণ সনাতন গোস্বামীর মদনমোহন মন্দিরসহ আরো বহু বিখ্যাত মন্দির ধ্বংস করেন। বৃন্দাবনের বহু বিখ্যাত বিগ্রহ যেমন রাধা গোপিনাথ, মদনমোহন, গোপাল, যিনি শ্রীনাথজী নামে বিশ্ববিখ্যাত, রাধা দামোদর প্রভূতি বিগ্রহ রাজস্থানের বিভিন্ন স্থানে গমন করেন।

মাসিক চৈতন্য সন্দেশ ও ব্যাক টু গডহেড এর ।। গ্রাহক ও এজেন্ট হতে পারেন

প্রয়োজনে : 01820-133161, 01758-878816, 01838-144699

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।