৭ই ফেব্রুয়ারি শ্রীশ্রী নিত্যানন্দ ত্রয়োদশী মহোৎসব

প্রকাশ: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৯:১১ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১২:৩১ অপরাহ্ণ

এই পোস্টটি 3887 বার দেখা হয়েছে

৭ই ফেব্রুয়ারি শ্রীশ্রী নিত্যানন্দ ত্রয়োদশী মহোৎসব

শ্রীশ্রী নিত্যানন্দ ত্রয়োদশী মহোৎসব আসছে ৭ই ফেব্রুয়ারি’২০২০, সোমবার শ্রীশ্রী নিত্যানন্দ ত্রয়োদশী মহোৎসব দুপুর দুপুর পর্যন্ত (অর্ধবেলা)উপবাস ।

১৪৭৩ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারীতে অবির্ভাব হয় শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্যতম পরিষদ,
অন্তরঙ্গ সঙ্গী ও পঞ্চতত্ত্বের শক্তিমান সংগঠক এবং কলিযুগের বলরাম খ্যাত শ্রী নিত্যানন্দ প্রভুর।

শ্রীমৎ নিত্যানন্দ প্রভুর জন্মস্থান বীরভূম জেলার একচক্রা গ্রামে । শাক্ত বৈষ্ণব উভয়ের মিলনভূমি “বীরভূম” জেলা । তাঁর পিতার নাম হাড়াই পণ্ডিত, মাতার নাম পদ্মাবতী । গৃহস্থ আশ্রমে শ্রী নিত্যানন্দ প্রভুর নাম ছিলো কুবের।বাল্যকালে এক সন্ন্যাসী তাঁহাকে তাঁহার পিতামাতার থেকে ভিক্ষা নিয়ে তীর্থে তীর্থে গমন করেন। খুব সম্ভবত সেই সন্ন্যাসী তাঁকে ‘নিত্যানন্দ’ নাম প্রদান করেন ।
তিনি সকলের নিকট অবধূত নামে পরিচিত । তান্ত্রিক সন্ন্যাসীদের অবধূত বলা হয় । শ্রীলা কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী মহাশয় – “শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত” গ্রন্থে নিত্যানন্দ প্রভুর মহিমা ব্যক্ত করেছেন ।
নিত্যানন্দ প্রভু মহাপ্রভুর নির্দেশে বিবাহ করেছিলেন । ‘অবধূত’ সম্প্রদায় প্রবজ্যা নিয়ে যেমন যথা ইচ্ছা বিচরণ করতে পারেন, তেমনি ইচ্ছা হইলে বিবাহ করে সংসার ধর্ম পালন করতে পারেন । মহাপ্রভুর এই লীলার পেছনে আর একটি কারন যে মহাপ্রভুর দেখাদেখি ভগবান প্রাপ্তির জন্য সকলে সন্ন্যাস নিতে থাকলে গৃহস্থ আশ্রম ধ্বংস হতে পারে। “গৃহে থেকেও যে ভগবানের সাধন ভজনা সম্ভব- এবং ভগবান প্রাপ্তি সম্ভব” সেই জীব শিক্ষা দেবার জন্যই মহাপ্রভু এমন লীলা করেছিলেন ।
নিত্যানন্দ প্রভুর বাল্যলীলা ও তীর্থযাত্রা:
শ্রীশ্রী নিত্যানন্দ প্রভু যিনি স্বয়ং শ্রীবলদেব, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশে তাঁর আবির্ভাবের পূর্বেই ১৩৯৫ শকাব্দে মাঘী শুক্লা ত্রয়োদশী তিথিতে শ্রীহাড়াই পণ্ডিত ও পদ্মাবতীদেবীর পুত্ররূপে রাঢ়দেশে যা বর্তমান বীরভূম জেলার বীরচন্দ্রপুর গ্রাম বা একচক্র গ্রামে আবির্ভূত হন। তাঁর আবির্ভাবের সাথে সাথেই রাঢ়দেশে সমস্ত প্রকার অমঙ্গল দূর হয়। তিনি রূপে ও গুণে অতুলনীয়।
যেদিন নবদ্বীপে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আবির্ভূত হলেন, সেদিন একচক্র থেকে শ্রী নিত্যানন্দ প্রভু আনন্দে এক হুঙ্কার দেন। সেই হুঙ্কারের শব্দ সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডে ছড়িয়ে পড়ল, সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড মূর্চ্ছা প্রাপ্ত হল, কেউ বলতে লাগলেন বজ্রপাত হল, আবার কেউ মনে করল কোন অমঙ্গল হবে। বিভিন্ন লোক বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা করতে লাগল। এইভাবে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু নিজেকে গুপ্তরেখে শিশুগণের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকারের বাল্যলীলা করতে লাগলেন।
কখনও তিনি কৃষ্ণলীলার অনুকরণে দেবতাদের সভায় পৃথিবী কর্তৃক আসুরিক অত্যাচারের বর্ণন, কংসের কারাগারে কৃষ্ণজন্ম লীলা, পুতনা বধ, শকট ভঞ্জন, মাখন চুরি, কালীয় দমন, ধেনুকাসুর বধ, অঘাসুর বধ, বৎসাসুর বধ, গোবর্ধন ধারণ, গোপীবস্ত্র হরণ, যজ্ঞপত্নীদের দর্শন, অক্রুর কর্তৃক কৃষ্ণ-বলরামকে মথুরায় আনয়ন, কংসবধ ইত্যাদি লীলা অভিনয় করতেন। কখনও বা রামলীলার অনুকরণে সেতুবন্ধন, লক্ষ্মনের শক্তিশেল, ইন্দ্রজিৎ বধ। আবার কখনও শ্রীবামনরূপে বলির সর্বস্ব হরণ ইত্যাদি যাবতীয় লীলা শিশুগণের সঙ্গে করতেন।
একদিন শ্রী শ্রী নিত্যানন্দ প্রভু লক্ষ্মনের ভাবে শক্তিশেলে অজ্ঞান হয়ে গেলেন, শরীরে কোন চেতনার চিহ্ন নেই। খবর পেয়ে পিতামাতা ছুটে এলেন এবং পুত্রের এই দশা দেখে ক্রন্দন করতে শুরু করলেন। সাথীরাও এই ঘটনায় ভুলে গিয়েছিলেন তারপর কি করতে হবে। হঠাৎ কারো কাছে হনুমানের কথা শুনে একজন হনুমান সেজে গন্ধমাদন পর্বত নিয়ে এলেন এবং আরেকজন কবিরাজ হয়ে শ্রীরাম স্মরণ করে ঔষধ শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর নাকে ধরলেন এবং সাথে সাথে তিনি উঠে বসলেন। পিতামাতা আশ্বস্ত হলেন। জিজ্ঞাসা করলেন এই লীলাগুলি কে শিখিয়েছে। শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু জানালেন এগুলি তাঁর নিত্যলীলা। কিন্তু বিষ্ণু মায়াবশে কেউ তার অর্থ বুঝতে পারলেন না। এইভাবে বার বৎসর তিনি পিতামাতার নিকটে থেকে বাল্যলীলা করলেন।
তারপর কুড়ি বৎসর বয়স পর্যন্ত (দক্ষিণ ও উত্তর ভারতের) উত্তরে বদ্রীনাথ থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত যত তীর্থ রয়েছে সব তীর্থে ভ্রমণ করলেন। ভ্রমণ পথে দৈবযোগে একদিন শ্রীল মাধবেন্দ্রপুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হল। তাঁর সঙ্গে কিছুদিন কৃষ্ণকথারসে অতিবাহিত করলেন। তারপর রামেশ্বর হয়ে শ্রীনীলাচল জগন্নাথ পুরীতে আসেন এবং সেখান থেকে বৃন্দাবনে ফিরে আসেন। এইভাবে যতদিন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নিজেকে প্রকাশ করলেন না ততদিন তিনি গুপ্তভাবে থাকলেন।
“শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত” গ্রন্থে নিত্যানন্দ প্রভুর মহিমা ব্যক্ত করেছেন ।
নিত্যানন্দ প্রভু মহাপ্রভুর নির্দেশে বিবাহ করেছিলেন । ‘অবধূত’ সম্প্রদায় প্রবজ্যা নিয়ে যেমন যথা ইচ্ছা বিচরণ করতে পারেন, তেমনি ইচ্ছা হইলে বিবাহ করে সংসার ধর্ম পালন করতে পারেন । মহাপ্রভুর এই লীলার পেছনে আর একটি কারন যে মহাপ্রভুর দেখাদেখি ভগবান প্রাপ্তির জন্য সকলে সন্ন্যাস নিতে থাকলে গৃহস্থ আশ্রম ধ্বংস হতে পারে। “গৃহে থেকেও যে ভগবানের সাধন ভজনা সম্ভব- এবং ভগবান প্রাপ্তি সম্ভব” সেই জীব শিক্ষা দেবার জন্যই মহাপ্রভু এমন লীলা করেছিলেন । প্রভু নিত্যানন্দকে দয়ার, করুণার সাগড় বলা হয় । তিনি দয়াল । তিনি করুণা না করলে গৌর কৃপা প্রাপ্তি হয় না । তাই সব্রাগ্রে নিতাইচাঁদের ভজনা আবশ্যক । নিত্যানন্দ প্রভু তান্ত্রিক অবধূত সন্ন্যাসী ছিলেন বলে বলা হয় । তাঁহার পূজিত নীলকণ্ঠ শিবলিঙ্গ ও তারা যন্ত্র এখনও তাঁর বংশধরগণ পূজা করে আসছেন খড়দহে । বস্তুত মহাপ্রভু ও নিত্যানন্দ প্রভু এঁনারা কোনদিনই শাক্ত উপাসনার বিরোধিতা করেন নি, সাধারণ মানুষ যারা ধর্মীয় তত্ত্ব জানে না- তাদের কাছে ধারনা হবে সত্যি মহাপ্রভু, নিত্যানন্দ প্রভু শক্তি উপাসনার বিরোধী ছিলেন ।

***নিত্যানন্দ প্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত তিনটি ভজন***

নিতাই-পদ-কমল, কোটি-চন্দ্র-সুশীতল
যে ছায়ায় জগত জুড়ায়
হেন নিতাই বিনে ভাই, রাধা-কৃষ্ণ পাইতে নাই
দৃঢ করি’ ধর নিতাইর পায়

সে সম্বন্ধ নাহি যা’র, বৃথা জন্ম গেল তা’র
সেই পশু বর দুরাচার
নিতাই না বলিল মুখে, মজিল সংসার-সুখে
বিদ্যা-কুলে কি করিবে তার

অহঙ্কারে মত্ত হৈয়া, নিতাই-পদ পাসরিয়া
অসত্যেরে সত্য করি মানি
নিতাইয়ের করুণা হবে, ব্রজে রাধা-কৃষ্ণ পাবে
ধর নিতাই-চরণ দু’খানি

নিতাইয়ের চরণ সত্য, তাহার সেবক নিত্য
নিতাই-পদ সদা কর আশ
নরোত্তম বড় দুখী, নিতাই মোরে কর সুখী
রাখো রাঙ্গা-চরণের পাশ

** হা হা প্রভু নিত্যানন্দ প্রেমানন্দ সুখী
কৃপাবলোকন কর আমি বড় দুঃখী।।**

** আর কবে নিতাই চাঁদের করুনা হইবে।
সংসার বাসনা মোর কবে তুচ্ছ হবে।।**

নিতাই-গৌর নাম, আনন্দের ধাম, যে জন নাহি লয়
তারে যমরায়, ধরে লয়ে যায়, নরকে ডুবায় তায়।

তুলসীর হার, না পরে যে ছার, যমালয়ে বাস তার
তিলক ধারণ, না করে যে জন, বৃথায় জনম তার।

না লয় হরিনাম, বিধি তারে বাম, পামর পাষন্ড মতি
বৈষ্ণব সেবন, না করে যে জন, কি হবে তাহার গতি।

গুরুমন্ত্র সার, কর এইবার, ব্রজেতে হইবে বাস
তমোগুণ যাবে, সত্ত্বগুণ পাবে, হইবে কৃষ্ণের দাস।

এ দাস লোচন, বলে অনুক্ষণ, (নিতাই)-গৌর গুণ গাও সুখে
এই রসে যার, রতি না হইল, চুন কালি তার মুখে।

জয় জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য কৃপাসিন্ধু।
জয় জয় নিত্যানন্দ অগ্রগতির বন্ধু।।১।।
নিত্যানদে যাহার তিলেক দ্বেষ রহে।
ভক্ত হইলেও সে কৃষ্ণের প্রিয় নহে।।১৮৬।।
যদ্যপিহ নিত্যানন্দ ধরে সর্ব্ব শক্তি।
তথাপিহ কা’রেহ না দিলেন বিষ্ণুভক্তি।।২১
চৈতন্যের কৃপায় হয় নিত্যানন্দে রতি।
নিত্যানন্দে জানিলে আপদ্ নাহি কতি।।২২০।।
(শ্রীচৈতন্য ভাগবত, আদিলীলা, নবম অধ্যায়)
“প্রভু নিত্যানন্দকে দয়ার, করুণার সাগড় বলা হয় ।” তিনি দয়াল । তিনি করুণা না করলে গৌর কৃপা প্রাপ্তি হয় না । তাই সব্রাগ্রে নিতাইচাঁদের ভজনা আবশ্যক ।

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।