“হ্যারি পটার” সিরিজকে হার মানিয়ে গ্রন্থ বিতরণের অনন্য রেকর্ড

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ | ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ | ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 71 বার দেখা হয়েছে

“হ্যারি পটার” সিরিজকে হার মানিয়ে গ্রন্থ বিতরণের অনন্য রেকর্ড
হলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে সাড়া জাগানো মুভি হচ্ছে “হ্যারি পটার”। “হ্যারি পটার” ছবিটি। এতটাই বিখ্যাত ছিল যে, হলিউডের ইতিহাসে বেস্ট সেলিং খেতাবটি এখন ছবিটির দখলেই রয়েছে। কিন্তু সব চাইতে অবাকের বিষয় যে, যদি “হ্যারি পটার” মুভিটির পরিবর্তে কোন পারমার্থিক গ্রন্থসমূহ সর্বোচ্চ বিক্রীর রেকর্ডটি ছাড়িয়ে যায় তাহলে? প্রকৃতপক্ষে, সারাবিশ্বে ইস্কনের উদ্যোগে যত গ্রন্থ বিক্রি হয়েছে তা “হ্যারি পটার” সিরিজ এর বিক্রির রেকর্ডটিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ধর্মীয় গ্রন্থ বিতরণের ক্ষেত্রে এটি ছিল একটি অভাবনীয় সাফল্য। এরই ফলে ভক্তদের মাধ্যমে সারাবিশ্বের এই কৃষ্ণভাবনামৃতের আন্দোলনের যে প্রসার তার সফলতার পরিচয় পাওয়া যায়। সারাবিশ্বে ইসকন প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য্য শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের রচিত কৃষ্ণভাবনামৃতের এই গ্রন্থসমূহ উত্তরোত্তর সর্বসাধারণের কাছে এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যে, বিশ্বের অনেক সম্মানিত ব্যক্তিবর্গও প্রভুপাদের এই অমৃত গ্রন্থসমূহের সুধা পান করতে দ্বিধাবোধ করছেন না। তার প্রমাণ গত কয়েক বছর যাবৎ “চৈতন্য সন্দেশ” পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিল যে, কিভাবে বিল ক্লিনটন, ভ্লাদিমীর পুতিন, টনি ব্লেয়ারের মত খ্যাতিমান ব্যক্তিরা ইস্কনের গ্রন্থসমূহ একান্তই জ্ঞান আহরণের জন্য নিজের করে নিয়েছেন। ১৯৬৫ সাল থেকে প্রায় ৪৬,০৪,০০,০০০ (৪৬ কোটি ৪ লক্ষ গ্রন্থ সারাবিশ্বে পর্যন্ত ভক্তরা বিতরণ করে এসেছেন। যা বিখ্যাত ও স্বনামধন্য লেখক ষ্টিফ্যান কিং এর রচিত গ্রন্থ বিক্রির রেকর্ডটি অতি সহজেই ছাড়িয়ে গেছে। বহির্বিশ্বের এ গ্রন্থ প্রচার জনসাধারণের কাছে সাদরে গৃহিত হচ্ছে ও প্রসার লাভ করছে। এ গ্রন্থ প্রচার কার্যক্রমটি সবচেয়ে বেশি হয় ডিসেম্বর মাসে। কেননা, ডিসেম্বর মাসটি প্রভুপাদ ম্যারাথন হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর ঠিক এ মাসেই ভক্তরা প্রতিযোগীতাই লিপ্ত হয়, যে কে কত বেশি গ্রন্থ বিতরণ করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে শুধুমাত্র এ ডিসেম্বর মাসটিই গ্রন্থ বিতরণের জন্য ভক্তদের কাছে কেন এতটা তাৎপর্যপূর্ণ? প্রকৃতপক্ষে এ মাস তথা প্রভুপাদ ম্যারাথন উৎসবের একটি মাহাত্ম্যপূর্ণ ইতিহাস বিদ্যমান। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাস, লস এঞ্জেলসের কৃষ্ণভক্তরা লক্ষ্য করলেন যে, মধ্যরাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকায় দোকানঘর গুলো খুব কর্মব্যস্ত জীবন কাটাচ্ছে। ক্রেতারা খুব আগ্রহভরেই দোকান ঘরগুলোতে ভীড় জমিয়েছিল । ঠিক তখনই ভক্তদের মনে হল এসময় ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে ক্রিস্টমাস দিবসের উপহার স্বরূপ নির্দিষ্ট মূল্য থেকে ছাড় দিয়ে পারমার্থিক গ্রন্থসমূহ বিতরণ করলে মন্দ হয় না। ভক্তদের এই পরিকল্পনা তখনি সফল হয়ে উঠল, যখন ভক্তদের উদ্দেশ্যে বিক্রি হয়েছিল সেখানে আজকে তিনি প্রায় ৬৫০টির মত ম্যাগাজিন বিক্রি করেছেন। কিন্তু তিনি মন্দিরে গিয়ে দেখলেন যে, মন্দির লাইব্রেরীর সমস্ত গ্রন্থসমূহ অনেক আগেই ভক্তরা বিতরণ করে ফেলেছে। আর এখন মন্দিরে কোন গ্রন্থই নেই। গ্রন্থ বিতরণের এই কার্যক্রম শেষ করে ভক্তরা খুবই উৎফুল্ল ছিল কেননা ভক্তদের মধ্যে অনেকেই রামেশ্বর দাসের চেয়ে অনেক বেশী গ্রন্থ বিতরণ করেছিল। সবচেয়ে মজার বিষয় এই যে, গ্রন্থ বিতরণের হঠাৎ এই সিদ্ধান্তটিই যে ইসকনের ইতিহাসে পরবর্তীতে গ্রন্থ ম্যারাথনের মাস হিসাবে সারা বিশ্বে পরিচিত লাভ করবে তা তাদের জানাই ছিল না। প্রকৃতপক্ষে ঠিক ঐদিন থেকে গ্রন্থ বিতরণের এই কার্যক্রমটি সারাবিশ্বে প্রসার লাভ করেছিল । ডিসেম্বরের ২২-২৪ তারিখ পর্যন্ত ভক্তরা প্রতিদিন প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার গ্রন্থ বিতরণ করেছিলেন। গ্রন্থ বিতরণের এ সফলতা দেখে প্রভুপাদ স্বয়ং রামেশ্বরকে লিখেছিলেন, “যে সব ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণের এ দিব্য গ্রন্থসমূহ বিতরণ করছে তারা সবাই নিশ্চিতভাবেই ভগবদধাম ফিরে যাবে।” শ্রীল প্রভুপাদের ঐ চিঠি পেয়ে ভক্তরা খুবই উৎসাহিত হয় । এতটাই উৎসাহিত হন যে, পরবর্তীতে ম্যারাথনের জন্য ভক্তরা নিজেদেরকে অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত করে নিতে শুরু করে। পরবর্তী বছরে নারী-পুরুষ সবাই এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে, যা গ্রন্থ বিতরণের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। বিশেষ করে তখন ‘ভগবদগীতা যথাযথ’ গ্রন্থটি বহির্বিশ্বে সর্বাধিক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং সে । বছর গ্রন্থটি সর্বাধিক কপি বিক্রির রেকর্ড করেছিল। এছাড়া জর্জ হ্যারিসনের বহুল আলোচিত ‘কৃষ্ণ কনসার্টে’ ভক্তরা দুই ঘন্টায় প্রায় ৬ শত গ্রন্থ বিতরণ করেছিল । ঐবছরই প্রায় ৪০ লক্ষ গ্রন্থ বিতরণ হয়েছিল যা আগের বছরের গ্রন্থ বিতরণের রেকর্ডটিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গ্রন্থ বিতরনের এই সফলতায় উদ্ভাসিত হয়ে এবং প্রভুপাদের গ্রন্থ বিতরণের নির্দেশ অনুসরণ করে ভক্তরা ধীরে ধীরে সারাবিশ্বে গ্রন্থ বিতরণের এই কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে লাগল। এতে করে সাধারণ মানুষও অতি উৎসাহ ভরে ভক্তদের সাথে গ্রন্থ বিতরণের এই কার্যক্রমে যোগ দিতে লাগল। কেননা তারা বুঝতে পেরেছিল এই দিব্য ও অপ্রাকৃত গ্রন্থ সমূহই মানব সমাজের তখনকার বিভিন্ন যুদ্ধবিগ্রহ ও হানাহানি দুর করতে সহায়ক হবে। প্রভুপাদের অন্তর্ধানের পরের বছরটিতে অর্থাৎ ১৯৭৮ সালে ভক্তরা প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ গ্রন্থ বিতরণ করেছিল এবং ঐ বছরটিতেই গ্রন্থ বিতরণের আরেকটি সফল বছর হিসাবে ধরা হয়েছিল। ২০০৭ সালে সারাবিশ্বের ভক্তবৃন্দরা প্রায় ৫০ লক্ষের মত গ্রন্থ বিক্রী করেছিল যা ইসকনের গ্রন্থ বিতরণ স্কোরের মধ্যে ৩য় তম স্থান দখল করে। গত ২০০৮ সালে এসে প্রভুপাদ ম্যারাথনের এই কার্যক্রম সাফল্যের ৩৬ বছরে পদার্পন করে। এরই মাধ্যমে ভক্তরা প্রভুপাদের দেওয়া কৃষ্ণভাবনামৃতের যে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন তা অত্যন্ত কঠোরভাবে পালন করে চলেছেন। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইসকনের সাতটি উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি হল “কৃষ্ণভাবনামৃতের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য সাময়িক পত্রিকা, গ্রন্থ এবং অন্যান্য লেখা প্রকাশ এবং বিতরণ করা।” শ্রীল প্রভুপাদের দেওয়া ইস্কনের এই আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে সকল ভক্তরা গ্রন্থ বিতরণের এই মহৎ কার্যে নিয়োজিত হয়ে প্রতিটি জীবের কল্যাণ সাধন করে চলেছেন। গ্রন্থ বিতরণের এই কার্যক্রমের বিগত বছরের রেকর্ডগুলি থেকে আমরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারি যে, প্রভুপাদের এই গ্রন্থসমূহ সাধারণ মানুষের কাছে কতটা সমাদৃত হয়েছিল এবং বর্তমানেও এই সফলতার ধারা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশেও প্রভুপাদের গ্রন্থসমূহ সুধীজনদের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনাসহ সারাদেশে গ্রন্থ ম্যারাথন উৎসব পালিত হয়। ৫ থেকে ১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় উক্ত উৎসবে প্রভুপাদের প্রচুর গ্রন্থ বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি জীবের জন্য বৈদিক শাস্ত্রের প্রথম নির্দ্দেশ হল ব্রহ্মজিজ্ঞাসা। অর্থাৎ আমি কে? আমি কোত্থেকে এসেছি? এই জগতে আমার কর্তব্য কি? ভগবান কে? এইসব প্রশ্নের অনুসন্ধান করা প্রতিটি বুদ্ধিমান জীবেরই কর্তব্য। আর এইসব প্রশ্নের যথার্থ উত্তরসমূহ পেতে হলে পরম্পরা ধারায় অধিষ্ঠিত কোন আচার্যের শরণাপন্ন হতেই হবে। কেননা তিনিই হলেন যথার্থ তত্ত্বাদ্রষ্টা গুরু। তিনিই সঠিক দিক নির্দেশনা পতিত জীবকুলদের জন্য দিতে । পারেন। অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ হলেন, পরম্পরা ধারায় অধিষ্ঠিত একজন যথার্থ তত্ত্বদ্রষ্টা আচার্য, আর তার রচিত সকল গ্রন্থসমূহ দিব্য ও অপ্রাকৃত। এই অপ্রাকৃত গ্রন্থ সমূহের জ্ঞানধারায় নিজেকে উদ্ভাসিত করে কেনই বা আপনি আপনার দুর্লভ এই মনুষ্য জীবনকে সফল করবেন না? তাই আজই শ্রীল প্রভুপাদের এই অপ্রাকৃত গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করুন এবং শ্রীকৃষ্ণের এই দিব্যজ্ঞানসমূহ (প্রভুপাদের গ্রন্থ সমূহ) অন্যজনকে বিতরণ করুন। কেননা। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং শ্রীমদভগবদ গীতায় নির্দেশ দিয়েছেন, য ইদং পরমং গুহ্যং মদ্ভক্তেৱভিধাস্যতি ভক্তিং ময়ি পরাং কৃত্বা মামেবৈষ্যত্যশংসয়ঃ ॥ (১৮/৬৮) “যিনি আমার ভক্তদের মধ্যে এই পরম গোপনীয় গীতাবাক্য উপদেশ করেন তিনি অবশ্যই পরাভক্তি লাভ করে নিঃসংশর আমার কাছে ফিরে আসবেন।”
হরেকৃষ্ণ।

০১/০১/২০০৯

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।