শ্রীল প্রভুপাদের ১২৫, ১০ ও ১০ হাজার বছর (শেষ পর্ব)

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২১ | ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২১ | ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 374 বার দেখা হয়েছে

শ্রীল প্রভুপাদের ১২৫, ১০ ও ১০ হাজার বছর (শেষ পর্ব)

গত ৫০ বছরে ১ হাজার সংকীর্তন দল কর্তৃক সারা বিশ্বে প্রতি সপ্তাহে রাস্তায়-রাস্তায় সংকীর্তন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। শুধু তাই নয় এই সংকীর্তন আন্দোলন সম্পর্কে শিক্ষা প্রদানের জন্য নানামুখী কোর্সও রয়েছে। সাধারণ জনগণ হরিনামের অত্যাশ্চর্য শক্তির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এতে অংশগ্রহণ করছে। ইস্‌কনের উল্লেখযোগ্য হরিনাম সংকীর্তন উৎসবের মধ্যে অন্যতম হলো পোল্যান্ডে আয়োজিত ‘উডস্টক ফেস্টিভ্যাল’।

ইস্‌কন প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পর

কৃষ্ণভাবনামৃতের মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য বিশ্বে গড়ে উঠেছে সর্বমোট ৫৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ইস্‌কনের উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ:

• ভক্তিবেদান্ত কলেজ, রাধাদেশ, বেলজিয়াম
• রুপানুগা বৈদিক কলেজ, কানাস, আমেরিকা
• ভক্তিবেদান্ত স্বামী গুরুকুল, নব গোবর্ধন, অস্ট্রেলিয়া
• ভক্তিবেদান্ত মেনর প্রাথমিক বিদ্যালয়, লন্ডন
• জিবিসি কলেজ, মুম্বাই, ভারত
• ভক্তিবেদান্ত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, লীমা, পেরু
• শ্রী প্রহ্লাদ গুরুকুল, হাঙ্গেরি
• কৃষ্ণঅবন্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য
• টিকেজি একাডেমি, ডালাস, আমেরিকা
• হরেকৃষ্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিউজিল্যান্ড
• ভক্তিবেদান্ত একাডেমি, মায়াপুর, ভারত

ইস্‌কন ভক্তরা ১১০টি দেশের ৫২ হাজার গ্রাম পরির্দশন করে ২ লক্ষ ১০ হাজার কিলোমিটার পথ পদব্রজে পাড়ি দেন।
কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারের এ নতুন কৌশল বেশ সাড়া মেলে। এর মাধ্যমে শুধু গ্রন্থ বিতরণই নয়, সংকীর্তন কর্মসূচীসহ বিভিন্ন পন্থায় প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। শ্রীমৎ লোকনাথ স্বামী মহারাজ এ কর্মসূচী অনেক বছর ধরে দৃঢ়তার সহিত পালন করে আসছেন।
কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারের জন্য ইস্‌কন গীতা কোর্স, ইস্‌কন ইয়ুথ ফোরাম, ইস্‌কন ভক্তিবৃক্ষ, জাগ্রত ছাত্র সমাজ, ইস্‌কন নামহট্টসহ অনেক অনেক কর্মসূচী ও বিভাগ রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে গত ৫০ বছরে ভক্ত ও সাধারণ জনগোষ্ঠী কৃষ্ণভাবনার অমৃত লাভ করেছে।

২য় উদ্দেশ্য

শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতা এবং শ্রীমদ্ভাগবতের অনুসরণে কৃষ্ণভাবনার অমৃত প্রচার করা।

প্রথম প্রবচন

শ্রীল প্রভুপাদ সারা বিশ্বে শ্রীমদ্ভবদ্গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবতের দিকনির্দেশনা অনুসারে কৃষ্ণভাবনা প্রচার করে হাজার হাজার ভক্তকে কৃষ্ণভাবনামৃতে দীক্ষা প্রদান করেন। তিনি প্রথম শিষ্য গ্রহণ করেন ১৯৫৩ সালে ভারতের ঝাঁসিতে। তবে আমেরিকাতে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রীল প্রভুপাদ ১ম দীক্ষা প্রদান করেছিলেন ১৯৬৬ সালে ৮ সেপ্টেম্বর। তখন মাত্র ১১ জন আমেরিকান। ১৯৭৭ সালে শ্রীল প্রভুপাদের অপ্রকটের পূর্বে ইস্‌কনের দীক্ষিত সদস্য সংখ্যা ছিল ১০ হাজারেরও অধিক। এছাড়াও আরো বিভিন্ন পন্থায় যেমন নাটক, সঙ্গীত, নৃত্য চিত্রশিল্প ইত্যাদির মাধ্যমে দৃঢ় কৃষ্ণভাবনা অনুশীলনের জন্য নানামুখী কোর্স যেমন গীতা কোর্স, ভক্তিশাস্ত্রী কোর্স, ভক্তিবৈভব কোর্স ভক্তি সার্বভৌম কোর্স, ভক্তিবেদান্ত কোর্স, বিগ্রহ অর্চনা কোর্স, আই.এল.এস. প্রোগ্রাম, ইস্‌কন সাধু সংঘ কর্মসূচীসহ নানামুখি পন্থায় সবাই কৃষ্ণতত্ত্ব বিজ্ঞান সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করছে এবং ভক্তিযোগ অনুশীলন করছে।

ইস্‌কন প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পর

ইস্‌কনের দীক্ষিত ভক্তের সংখ্যা গত ৫০ বছরের ৭৫ হাজার। তবে দীক্ষিত ছাড়াও অনুসারী রয়েছে অগণিত। অর্থাৎ শ্রীল প্রভুপাদের অপ্রকটের প্রায় ৪০ বছরের মধ্যে আরো ৬৫ হাজার দীক্ষিত ভক্ত যোগ হয়েছে।
ইস্‌কন প্রতিষ্ঠার পর অর্থাৎ ১৯৬৬-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত শ্রীল প্রভুপাদ বিশেষত ভগবদ্গীতাশ্রীমদ্ভাগবতের ওপর ১৯১৪টি প্রবচন প্রদান করেন।
সারা বিশ্বে শ্রীমদ্ভাগবতশ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ওপর অনেক শিক্ষা কার্যক্রম প্রচলিত রয়েছে যাতে সবাই কৃষ্ণভাবনার অমৃত লাভ করতে পারে।

৩য় উদ্দেশ্য

এই সংস্থার সমস্ত সদস্যদের পরস্পরের কাছে টেনে আনা এবং শ্রীকৃষ্ণের কাছে টেনে আনা এবং এভাবে প্রতিটি সদস্য- চিত্তে, এমনকি প্রতিটি মানুষের চিত্তে, সেই ভাবনার উদয় করানো, যাতে সে উপলব্দি করতে পারে যে প্রতিটি জীবই হচেছ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন অংশ।
• ১৯৭০ সালে ২৯ আগষ্ট কলকাতায় ইস্‌কন লাইফ মেম্বারশীপ চালু হয়।
• ১৯৭০ সালেল ২৮ জুলাই সমগ্র বিশ্বের ইস্‌কন পরিচালনার জন্য শ্রীল প্রভুপাদ গভর্নিং বডি কমিশন (জিবিসি) গঠন করেন।

ইস্‌কন প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পর

৩০ হাজার ভক্ত নিয়ে গঠিত ২ হাজার ভক্তিবৃক্ষ দল সারাবিশ্বে গৃহে গৃহে প্রচারে ব্যস্ত। ৩০০ কোটি প্যাকেট কৃষ্ণপ্রসাদ সারাবিশ্বে বিতরিত হয়েছে।
এছাড়াও জড় জগতের পতিত জীবদের কৃষ্ণভাবনামৃতের সংস্পর্শে নিয়ে আসার জন্য শ্রীমৎ ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বামীর নেতৃত্বে ‘ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়া’ সারাবিশ্বে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে ইস্‌কন মিডিয়াও বিরাট ভূমিকা পালন করছে। হাজার হাজার ভিডিও, ফিল্ম, মিউজিক ইত্যাদি নির্মাণ করা হচেছ। তার মধ্যে সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র হলো শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামীর পরিচালনায় নির্মিত “অভয়চরণ”। এভাবে শুধু উপরোক্ত কয়েকটি দৃষ্টান্ত দিয়ে এই উদ্দেশ্যকে সফল করার যে সেবা ভক্তরা সারা বিশ্বে সম্পাদন করছে তা অতুলনীয়।

৪র্থ উদ্দেশ্য : শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তিত সমবেতভাবে ভগবানের দিব্য নাম কীর্তন করার সে সংকীর্তন আন্দোলন, সেই সম্বন্ধে সকলকে শিক্ষা দেওয়া এবং অনুপ্রাণিত করা।

জনসমক্ষে ইস্‌কনের প্রথম সংকীর্তন :

১৯৬৬ সালে আগষ্ট মাসে শ্রীল প্রভুপাদ এক দল নবীন ভক্তদের নিয়ে নিউইয়র্কের ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কে জনসমক্ষে ইস্‌কনের প্রথম সংকীর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এর মধ্য দিয়ে শ্রীচেতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তিত সমবেতভাবে ভগবানের দিব্য নাম কীর্তন করার যে সংকীর্তন আন্দোলন সেটি সারাবিশ্বে প্রসারিত হওয়ার জন্য অগ্রগামী একটি ধাপের সূচনা ঘটল।

ইস্‌কন প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পর

গত ৫০ বছরে ১ হাজার সংকীর্তন দল কর্তৃক সারা বিশ্বে প্রতি সপ্তাহে রাস্তায়-রাস্তায় সংকীর্তন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। শুধু তাই নয় এই সংকীর্তন আন্দোলন সম্পর্কে শিক্ষা প্রদানের জন্য নানামুখী কোর্সও রয়েছে। সাধারণ জনগণ হরিনামের অত্যাশ্চর্য শক্তির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এতে অংশগ্রহণ করছে। ইস্‌কনের উল্লেখযোগ্য হরিনাম সংকীর্তন উৎসবের মধ্যে অন্যতম হলো পোল্যান্ডে আয়োজিত ‘উডস্টক ফেস্টিভ্যাল’। ১৫টিরও বেশি দেশের ভক্তরা সমবেত হয়ে প্রতি বছর ৪ লক্ষ দর্শককে মাতিয়ে রাখেন। এই হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রের মাধ্যমে। এছাড়াও প্রতি বছর রথযাত্রার বিশাল বিশাল সংকীর্তন দল সংকীর্তনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণদের উদ্ধুদ্ধ করে রাখে। মায়াপুর কীর্তন মেলা উৎসবও সম্প্রতি সবার আকর্ষণে রূপ নিয়েছে।
এভাবে ইস্‌কনের ৪র্থ উদ্দেশ্যটি সফলভাবে বিভিন্ন উপায়ে পালন করা হচ্ছে।

৫ম উদ্দেশ্য : সংস্থার সকল সদস্যদের জন্য এবং সমস্ত সমাজের জন্য একটি পবিত্র স্থান নির্মাণ করা, যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর নিত্য লীলাবিলাস করবেন এবং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে তা নিবেদিত হবে।

প্রথম ইস্‌কন মন্দির:

মে ১৯৬৬ সালে শ্রীল প্রভুপাদ মাত্র দু’জন ভক্তের সাহায্যে নিউইয়র্কের ২৬ এভিনিউর একটি দোকানঘর ভাড়া নেন। যেটির পূর্ব যেটির পূর্ব নাম ছিল অনুপম উপহার। এই ছোট্ট ঘরটিতেই ১৯৬৬ সালের জুলাই জুলাই মাসে শ্রীল প্রভুপাদ প্রথম ইস্‌কন প্রতিষ্ঠা করেন।

ইস্‌কন প্রতিষ্ঠান ৫০ বছর পর

১৯৬৬-৬৮ পর্যন্ত শ্রীল প্রভুপাদ নিউইয়র্ক, লস এঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিসকো সিউল, মন্ট্রিল, সান্তা ফে, নিউকেক্সিকোতে ইস্‌কন মন্দির গড়ে তোলেন। এরপর ১৯৬৯-১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ইউরোপ, কানাডা, দক্ষিণ আমেরিকা, মেক্সিকো, আফ্রিকা ও ভারতসহ সারাবিশ্বে প্রায় ১০৮টি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭০-১৯৭৭ সালের মধ্যে মায়াপুর, বৃন্দাবন ও মুম্বাইয়ে বিশাল বিশাল মন্দির গড়ার মাধ্যমে ইস্‌কনের প্রধান প্রধান কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইস্‌কন প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পর বিশ্বে ইস্‌কনের ৬৫০টি মন্দির রয়েছে। অর্থাৎ প্রভুপাদ অপ্রকটের প্রায় ৩৯ বছরের মধ্যে ইস্‌কনের ভক্ত ও অনুসারীরা প্রতিষ্ঠা করেছে আরো ৫৪২টি মন্দির। সে হিসেবে গত ৫০ বছরে প্রতি বছর গড়ে ১৩টি মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বের প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ১টি করে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয় ইস্‌কনের কেন্দ্রগুলোতে গত পঞ্চাশ বছরে পরিদর্শন করে ৭০ লক্ষ দর্শনার্থী এসব দর্শনার্থী ইস্‌কন আয়োজিত উৎসবাদিতে অংশগ্রহণ করেন।
ইস্‌কনের উৎসবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো রথযাত্রা উৎসব। ১৯৬৭ সালের ৯ জুলাই প্রভুপাদ ইস্‌কনের প্রথম রথযাত্রা উৎসবের সূচনা করেন। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে এখন এই উৎসব উদ্‌যাপিত হয়। এভাবে রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী, গৌর-পূর্ণিমা, নৃসিংহ চতুর্দশী, রামনবমীসহ প্রায় ৬ হাজার উৎসব গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে পালিত হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বের কোনো না কোনো প্রান্তে প্রতিদিন গড়ে ১০টি করে বছরে ৩৬৫০টি উৎসব পালিত হয়েছে।

ইস্‌কনের উল্লেখযোগ্য মন্দিরসমূহ:

১) মায়াপুর চন্দ্রোদয় মন্দির (শ্রীধাম মায়াপুর,ভারত)
২) শ্রীশ্রী রাধা-রাধানাথ মন্দির (ডারবান, দ. আফ্রিকা)
৩) শ্রীশ্রী কৃষ্ণ-বলরাম মন্দির (বৃন্দাবন, ভারত)
৪) শ্রীশ্রী রাধা-গোবিন্দ মন্দির (ব্রুকলিন, আমেরিকা
৫) জুহু মন্দির (মুম্বাই ভারত)

এ মন্দিরগুলোর মধ্যে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে গড়ে উঠছে মায়াপুর বৈদিক প্ল্যানেটেরিয়াম। ১১৩ মি. (বিশ্বের ২য় সর্বোচ্চ) উচ্চতা বিশিষ্ট গম্বুজসহ এতে থাকবে আশ্চর্যকর অনেক কিছু। উল্লেখ্য, স্বয়ং নিত্যানন্দ প্রভু এই অদ্ভুত মন্দির সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন।

৬ষ্ঠ উদ্দেশ্য: একটি সরল এবং অত্যন্ত স্বাভাবিক জীবনধারা সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়ার জন্য সদস্যদের পরস্পরের কাছে টেনে আনা।

প্রথম বৈদিক কমিউনিটি

১৯৬৮ সালে শ্রীল প্রভুপাদ আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার পাহাড়ে নব বৃন্দাবন নামক বৈদিক কমিনিটি গড়ে তুলেন। সেখানে ভক্তরা প্রকৃতি নির্ভর সরল ও অত্যন্ত স্বাভাবিক জীবনধারার মধ্যে বসবাস করতে থাকেন, যা বিশ্ববাসীর জন্য এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
১৯৭৩ সালে সেটি শ্রীল প্রভুপাদের সাধারণ একটি গৃহ ছিল। ১৯৭৭ সালে প্রভুপাদের অপ্রকটের পর ভক্তরা নিজেরাই সেখানে প্রভুপাদের গৃহটিকে গড়ে তোলেন আমেরিকার তাজমহল খ্যাত ‘প্রভুপাদের স্বর্নপ্রাসাদ’ হিসেবে। স্বর্ণ, রৌপ্য, মার্বেল, অনিক্স, স্টেইন্ড গ্লাস ও সেগুণ কাঠের সমন্বয়ে প্রাসাদটি তৈরি হয় ৬ বছরে। আর এভাবে এটি বিশ্বের নজড় কেড়ে নেয়।

অন্যান্য বৈদিক গ্রাম : গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে সারাবিশ্বে গড়ে উঠে এরকম ৬৫টি খামার। পরিবেশ বান্ধব গ্রাম। অর্থাৎ প্রতি বছর প্রায় একটিরও অধিক বৈদিক গ্রাম সারাবিশ্বে গড়ে উঠেছিল। বৈদিক গ্রামগুলোর মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত হলো হাঙ্গেরির ‘নব ব্রজধাম’। ৪৫০ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই গ্রামটি সারাবিশ্বের জন্য এখন মডেল স্বরূপ। প্রতি বছর এটি দর্শন করার জন্য ২৫ থেকে ৩০ হাজার দর্শনার্থী জড়ো হয়। এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ৫০ হাজার দর্শনার্থী এটি ভ্রমন করে।
ইস্‌কনের প্রধান কেন্দ্র শ্রীধাম মায়াপুরে রয়েছে এরকম বৈদিক গ্রাম। সারাবিশ্বে গো-পালন, গো-দুগ্ধ আহরণ, বায়োগ্যাস উৎপাদন ইত্যাদি সফল প্রয়োগের মাধ্যমে সারাবিশ্বের সরকার কর্তৃক স্বীকৃত ও পুরস্কৃত হচ্ছে। বিশেষত গো-রক্ষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে ইস্‌কন অগণী ভূমিকা পালন করেছে। এজন্য সারাবিশ্বে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ইস্‌কন বৈদিক গ্রাম/খামার

১. নব ব্রজধাম (হাঙ্গেরি)
২. নব গোলাক (হিলস্বোরো)
৩. নব বর্ষাণা (অকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড)
৪. নব রমনরেতী (আলাচুয়া, আমেরিকা)
৫. ইস্‌কন বৈদিক ফার্ম (মরিশাস)
৬. নব গোকুল র্ফাম (লন্ডন)
৭. নব গোকুল ফার্ম (অস্ট্রেলিয়া)
৮. নব গোকুল হরে কৃষ্ণ ফার্ম (সাও পাওলো, ব্রাজিল)

৭ম উদ্দেশ্য

পূর্বোল্লিখিত উদ্দেশ্যগুলি সাধন করার জন্য সাময়িক পত্রিকা, গ্রন্থ এবং অন্যান্য লেখা প্রকাশ এবং বিতরণ করা।

প্রথম ছাপাখানা

১৯৬৬ সালে প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা হয়।

ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট

১৯৭২ সালের ২৯ জুলাই প্রভুপাদ প্রথম ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট (বিবিটি) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৬-১৯৭৭ পর্যন্ত বিবিটি প্রায় ৬৬ মিলিয়ন গ্রন্থ মুদ্রণ করে। ১৯৭৭ সালের দিকে প্রভুপাদ থাকাকালীন ১.৫ মিলিয়ন শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা মুদ্রিত হয় ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্টের গ্রন্থ শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রতি ৫ সেকেন্ড ১টি করে বিক্রি হয়। ১৯৯৫ সালে পৃথিবী জুড়ে সর্বোচ্চ গ্রন্থ বিক্রির রেকর্ড হিসেবে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ গিনেজ বুকে স্থান পায়। ১৯৯১ সালে নাস্তিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে অস্বাভাবিকভাবে দশ লক্ষ কপি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ গ্রন্থ বিক্রির অনন্য নজির স্থাপিত হয়। বর্তমানে ৬০টিরও বেশী ভাষায় ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে বিবিটি কর্তৃক প্রকাশিত ও বিতরিত হয়েছে ৫১ কোটি ৬০ লক্ষ গ্রন্থ। অর্থাৎ সারা বিশ্বে প্রতি বছরের গড়ে ১ কোটি ৩ লক্ষ ২০ হাজার গ্রন্থ বা প্রতি মিনিটে প্রায় ২১টির মতো গ্রন্থ বিতরিত হয়েছে। এছাড়াও শ্রীল প্রভুপাদের অনেক গ্রন্থ বিভিন্ন ভাষায় বিতরিত হয়।

ব্যাক টু গডহেড ম্যাগাজিন

১৯৪৪ সালে (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে) শ্রীল প্রভুপাদ প্রথম ব্যাক টু গডহেড প্রকাশ করার পর সারাবিশ্বে মিলিয়ন মিলিয়ন কপি ব্যাক টু গডহেড প্রকাশনা শুরু হয়। এর মধ্যে শ্রীল প্রভুপাদের অপ্রকটের পর ১৯৮২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্যাক টু গডহেড এর গ্রাহক হয়েছে ৬ লক্ষ ২৩ হাজার।

বিখ্যাত ব্যক্তিদের গ্রন্থ গ্রহণ

সারাবিশ্বের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থ গ্রহন করেছেন। গত ৫০ বছরে বিভিন্ন প্রজন্মের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রন্থ গ্রহণের একটি উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান:

উপরোক্ত তালিকার বাইরেও বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তি শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থ গ্রহন করেন।
শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থাবলী ছাড়াও তাঁর শিষ্য ও প্রশিষ্যগণ শ্রীল প্রভুপাদের শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে অনেক গ্রন্থ প্রণয়ন। এর মধ্যে বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন এমন গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে শ্রীমৎ রাধানাথ স্বামীর The Journey by home শ্রীল প্রভুপাদের বিজ্ঞানী শিষ্য দ্রুতকর্মা দাসের একটি জনপ্রিয় গ্রন্থসহ অন্যান্য আরো জনপ্রিয় গ্রন্থ।
এছাড়াও সারাবিশ্বে অজস্র সাময়িকিও বের হয়। Sastradana, ISKCON Padayatra newsletter সহ বিশ্বের এরকম অনেক সাময়িকী। বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ ইস্‌কন থেকে প্রকাশিত পত্রিকা, ম্যাগাজিন যেমন মাসিক চৈতন্য সন্দেশ (চট্টগ্রাম), মাসিক হরে কৃষ্ণ সমাচার (ঢাকা), গুরুবাক্য (নরসিংদী) এবং ম্যাগজিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ত্রৈমাসিক অমৃতের সন্ধানে (ঢাক)
১৯৯০ সালে শুরুর দিকে ইস্‌কনের বিভিন্ন ইন্টারনেট প্রজেক্ট চালু হয়। যাদের মধ্যে রয়েছে krishna.com, iskcon.org অন্যান্য ওয়েবসাইট। অনলাইনের মাধ্যমে শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থসহ অন্যান্য গ্রন্থ, ম্যাগজিন প্রচারিত হচেছ। পাঠকরা এসব গ্রন্থ আইপড, আইফোন, অ্যান্ড্রয়েড, ফোন, আমাজন কিন্ডলফায়ার কিংবা সনি রিডার ছাড়াও বিভিন্ন স্মর্টফোনে এসব গ্রন্থ ক্রয় করে অধ্যয়ন করার সুযোগ লাভ করছে।
বর্তমানে ইন্টারনেটে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারের জন্য রয়েছে হাজার হাজার ওয়েবসাইট, তন্মধ্যে ইস্্কন বানীপেডিয়া, বানীমিডিয়া, বানীসোর্স, বিশ্বের ৮৫টির বেশি ভাষায় শ্রীল প্রভুপাদের রচনাবলী কিংবা কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার আন্দোলন করে চলেছে। ইতোমধ্যে বাণীসোর্স লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে যে ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১০৮টির অধিক ভাষায় শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতা সূচনার অনুবাদ প্রকাশিত হবে। এ সময় অনলাইনে সেবারত আছেন হাজার হাজার ভক্ত। এভাবে ৫০ বছর ধরে ইস্‌কন প্রতিষ্ঠার সপ্তম উদ্দেশ্যটি সফল করে তুলেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।