শ্রীনিবাস আচার্যের অধ্যয়নের ব্যাকুলতা

প্রকাশ: ৩ মে ২০২২ | ১২:১৬ অপরাহ্ণ আপডেট: ৩ মে ২০২২ | ১২:১৬ অপরাহ্ণ

এই পোস্টটি 194 বার দেখা হয়েছে

শ্রীনিবাস আচার্যের অধ্যয়নের ব্যাকুলতা

শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী: শ্রীনিবাস আচার্য্য, তিনি ছিলেন একজন প্রচারক। প্রাথমিকভাবে তাঁর কোন মন্দির ছিল না। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কৃপা লাভের জন্য তিনি অত্যন্ত ব্যাকুল ছিলেন। তাই তিনি বঙ্গ পরিত্যাগ করে সম্পূর্ণ পথ পায়ে হেঁটে চলে গেলেন। বঙ্গদেশে যখন তিনি ভক্তদের সম্মুখে উপস্থিত হলেন তাঁরা তাঁকে বলেছিল যে, “তোমাকে উড়িষ্যা যেতে হবে। যেখানে চৈতন্য মহাপ্রভু রয়েছেন।” তাই তিনি সমস্ত পথ হেঁটে হেঁটে উড়িষ্যা গিয়েছিলেন। এতে কিছু সময় লেগেছে এবং যেতে যেতে অবশেষে তিনি জগন্নাথ পুরী পৌঁছালেন। তিনি দেখলেন যে সেখানে সবখানেই কোলাহলপূর্ণ জনসাধারণের ভিড়। মন্দিরের বাইরে লোকজন ভিড় করছিল এবং মন্দিরের দরজা ছিল বন্ধ। তিনি এসে জিজ্ঞেস করলেন, “চৈতন্য মহাপ্রভু কোথায়? আমি তাঁর দর্শন লাভ করতে চাই।” এতদূর হাঁটবার পর লোকজন বলতে লাগল, “তুমি কি জানো না? তুমি কি জানো না? চৈতন্য মহাপ্রভু অন্তর্হিত হয়েছেন। তিনি মন্দিরে প্রবেশ করলেন। আর বের হলেন না। আর সেজন্যই এতসব লোকজন এখানে। এটি তাঁর তিরোধান উৎসব। তিনি এই ধরাধাম ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর লীলার অন্ত হয়েছে। তাই আমরা আর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর দর্শন লাভ করতে পারবো না ভেবে সবাই কান্না করছি এবং বিলাপ করছি।” শ্রীনিবাস আচার্য, তিনি শোকে বিহ্বল হয়ে পড়লেন। তিনি অচেতন হয়ে পড়লেন। তারপর তিনি চলে গেলেন এবং খুঁজতে লাগলেন, “কে আমাকে উপদেশ প্রদান করতে পারে? কে পারে? আমি ভাগবত অধ্যয়ন করতে চাই।” তাঁরা বলল, “ঠিক আছে, গদাধর পন্ডিত রয়েছে, তুমি তাঁর কাছ থেকে শিখতে পারো।” গদাধর পণ্ডিত বললেন, “তোমায় ভাগবত শিক্ষা দিতে পারলে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হবো। কিন্তু অত্যন্ত আনন্দিত হবো। কিন্তু আমাদের ভাগবত আর নেই। ভাগবত অধ্যয়নের সময় ভগবানের লীলাসমূহ পাঠ করে আমাদের নয়ন হতে যে অবিরাম ধারায় অশ্রু বর্ষিত হয়েছে তাতে ভাগবত সম্পূর্ণ ধুয়ে গেছে। তাই, আমরা মূলত হৃদয় থেকে বিষয়টি জানি কিন্তু আমরা শিক্ষা দিতে পারবো না। বুঝতে পারছ। তাই, তোমার এখন নবদ্বীপে যাওয়া উচিত এবং সেখানে তাঁরা ভাগবত পুনর্বার লিপিবদ্ধ করতে পারেন। সেখান থেকে একটি ভাগবত এখানে নিয়ে এসো তারপর আমি তোমায় শিক্ষা দিব।” কেননা, সে সময় নবদ্বীপে বহু পন্ডিত ছিল, সমস্ত বড় বড় ব্রাহ্মণগণ নবদ্বীপে ছিল। চিন্তা কর, শুধু একটি ভাগবত পাওয়ার জন্য তোমাকে শুধু হেঁটে হেঁটে নবদ্বীপ যেতে হত আর তারপর লিখিত পাওয়ার জন্য কয়েক মাস অপেক্ষা করা এবং তারপর হেঁটে ফিরে আসতে হত। বেশ সুবিধাজনক! (ভক্তদের হাসি) আপনি সহজেই উপলব্ধি করতে পারেন যে, যাঁরা ভাগবত পাঠ করতেন, তাঁরা ছিলেন মহাত্মা। তো শ্রীনিবাস আচার্য নবদ্বীপে ফিরে গেলেন এবং কয়েকজন ব্রাহ্মণকে নিযুক্ত করলেন এবং তাঁরা তাল-পাতাতে ভাগবত এর ১৮০০০ শ্লোক লিপিবদ্ধ করলেন। তারপর সেই তাল-পাতা গুলো নিয়ে আবার তিনি পুরীর উদ্দেশ্যে রওনা হন। যখন তিনি আবার জগন্নাথ পুরী পৌঁছালেন তিনি দেখলেন সেখানে বিশাল উৎসব, কিন্তু সবাই কান্না করছে। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “এসব কি?” এবং তাঁরা বলল, “তুমি জানো না? গদাধর পন্ডিত অন্তর্হিত হয়েছেন।” তিনি পুনরায় সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়লেন। তিনি সারা পথ আসলেন এবং ঠিক পৌঁছানোর পূর্ব মুহূর্তেই গদাধর পন্ডিত তাঁর ইহলীলা সংবরণ করলেন। তারপর তিনি অন্বেষণের চেষ্টা করলেন যে, “কে আছেন যিনি আমায় নির্দেশনা দিতে পারেন?” তাঁরা বললেন, “এখন তো সকলেই গত হয়েছেন। যদি তুমি বৃন্দাবনে যাও সেখানে রূপ এবং সনাতন গোস্বামী রয়েছেন, তুমি যদি তাঁদের কাছে যাও তাঁরা তোমায় নির্দেশনা দিতে পারেন।” তারপর শ্রীনিবাস আচার্য তাঁর ভাগবত নিয়ে হেঁটে হেঁটে বৃন্দাবনের দিকে চললেন। বৃন্দাবনে তিনি দেখলেন মন্দিরের বাইরে আরেক বিশাল জনসমাগম, কীর্তন হচ্ছে, লোকজন কান্না করছে। রূপ এবং সনাতন, তাঁরা অপ্রকট হলেন। তখন তিনি সম্পূর্ণ পাগলের মত হয়ে গেলেন, বিলাপ করতে লাগলেন, কান্না করতে লাগলেন, “কীভাবে আমি ভাগবত শিক্ষা লাভ করবো? সবাই চলে গেল, সবাই চলে গেল।” তিনি অচেতন হয়ে ভূমিতে পড়ে গেলেন। তিনি চেতনা ফিরে পেলেন এবং তিনি জীব গোস্বামীর বাড়িতে ছিলেন। জীব গোস্বামী তাঁকে ভাগবত শিক্ষা দিলেন।


 

চৈতন্য সন্দেশ মে -২০২২ প্রকাশিত
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।