বিবাহ বিভ্রাট (পর্ব-১)

প্রকাশ: ৫ নভেম্বর ২০২১ | ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৭ নভেম্বর ২০২১ | ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 243 বার দেখা হয়েছে

বিবাহ বিভ্রাট (পর্ব-১)

উপযুক্ত বয়স হলে পিতা-মাতারা পুত্র বা কন্যার বিবাহ দেওয়ার জন্য মনস্থির করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে উপযুক্ত বয়স কত? অনেক সময় পাত্র-পাত্রী অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় নানা বিভ্রাট। এক্ষেত্রে পিতা-মাতা বা অভিভাবকদের সঙ্গে পাত্র-পাত্রীর মতের অমিল হতে পারে, কিংবা অনেক সময় অভিভাকদের আড়ালে পাত্র বা পাত্রী গোপন সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পিতা মাতার কি ধরণের অসতর্ককর্তা থাকতে পারে? অনেক সময় পিতা মাতারাও সঠিক পাত্র বা পাত্রী বাছাই করতে ব্যর্থ হওয়াই পুত্র বা কন্যার জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ দূর্ভোগ। সেই ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে পাত্র বা পাত্রী কি ভাবে অনুসন্ধান করতে হয়? এছাড়াও জ্যোতিষ শাস্ত্র গণনা করতে গিয়ে হয় নানা রকম মতবাদ বা বিভ্রান্তি। সে ক্ষেত্রে কি করণীয়? বিবাহের শুরু দিকে এসব নানা বিভ্রাট বা জটিলতার সমাধান নিয়ে চৈতন্য সন্দেশের এই বিশেষ ধারাবাহিক প্রতিবেদন। এখানে ইস্কনের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ভক্তদের মাধ্যমে শাস্ত্রীয় দিক নির্দেশনা তুলে ধরা হবে। এই সংখ্যায় বিবাহের উপযুক্ত বয়স সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
যখন পিতা-মাতা বা অভিভাবকরা সন্তানের বিয়ের দায়িত্ব তাদের প্রধান কর্তব্য বলে মনে করে তখন থেকেই সন্তানের জন্য বিবাহের প্রস্তুতি ও সঠিক দিক নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। অন্যথায় পাত্র/পাত্রী কিংবা ভক্তরা নিজেরাই কাউকে পছন্দ করে নেবে যা প্রায়ই সম বা অনুপযুক্ত বিবাহের পরিণতি ডেকে আনে। বিশেষত পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্যন্য অভিভাবকরা তাদের পুত্র ও কন্যার জন্য বিবাহের আয়োজন করার অভিপ্রায় করা উচিত বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তাদের আকর্ষণের লক্ষণ প্রদর্শিত হওয়ার পূর্বে প্রথমত সন্তানরা হয়ত এ সম্পর্কে তাদের চিন্তা ভাবনা ও বাসনা পিতা-মাতাদের কাছে বলতে লজ্জা অনুভব করতে পারে। দ্বিতীয়ত, সন্তানদের বয়সন্ধি কাল প্রাপ্ত হওয়ার পরও পিতা-মাতারা তাদেরকে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কোন আকর্ষণ নেই বলে মনে করতে পারে পিতা-মাতারা এই লক্ষণগুলো প্রায়ই লক্ষ্য করে না। যদিও কিছু লোক আছে স্বভাবতই বিবাহ সম্পর্কে তাদের অনুভূতি, রোমান্ট্রিক অনুভূতি নিজের মধ্যে রেখে দিতে সক্ষম হয়। এরকম নিয়ন্ত্রণের জন্য আভ্যন্তরীন বাসনাগুলো ও মনগত বিক্ষোভ সন্তানের মাঝে বাহ্যিকভাবে প্রকাশ পায় না।
বিষয়টি যে একটি বিপদ হতে পারে সে বিষয়ে প্রভুপাদ উল্লেখ করেছেন যে, “যদি ঠিক সময়ে পিতা-মাতারা উপযুক্ত পাত্রীর অনুসন্ধান না করে তবে তাদের অনুসন্ধানের পূর্বেই একজন মেয়ে নিজে নিজে তার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি অনুসন্ধান করে নেবে। এক্ষেত্রে যদি মেয়েটি একবার সেই যুবক ব্যক্তিটির প্রতি আসক্ত হয়ে যায় তবে সেই আসক্তি পরিহার করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায় কিন্তু এক্ষেত্রে হয়ত সেই মেয়েটি এমনকি ব্যক্তির যোগ্যতা অযোগ্যতাও বিচার করবে না। একই বিপদ যুবক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও হতে পারে।” এজন্য প্রভুপাদ কম বয়সেই ছেলেমেদেরে বিবাহ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে বলেছেন এবং লিখেছেন এ বিষয়ে কিছু দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু যখন বিবাহ করেছিলেন তাঁর বয়স ছিল চৌদ্দ, গান্ধী বয়স ছিল তের, আবার ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের বয়স ছিল চৌদ্দ। বিবাহের সময় প্রভুপাদেরও বয়স ছিল বাইশ বছর। বিষয়টি হল তখনকার পিতা মাতারা কম বয়সেই তাদের এটি সন্তানদের বিবাহের আয়োজন করত।
আর এটি তারা করত সন্তানদের অন্য কোন ছেলে বা মেয়ের প্রতি আসক্তি জন্মানোর পূর্বে কিংবা কোন অবৈধ সম্পর্কে জড়ানোর পূর্বে। এখানে উল্লেখ্য অপরিণত বয়সে বিবাহ সাধিত হলেও বিবাহিত দম্পতিরা পরিপক্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত একসাথে থাকতে দেওয়া হত না। এরকম বিবাহের ক্ষেত্রে শুরুতে এ ধরনের সম্পর্ক ছিল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।
আধুনিক সমাজে, প্রভুপাদ যে বয়সে বিবাহ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন যেটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবাস্তব বলে মনে হতে পারে। প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করেছেন, “তার বোনের বিবাহের বয়স থেকে তার কন্যার বিবাহের বয়স অর্থাৎ কালক্রমে ১২ থেকে ১৬ বছর হয়ে যায়। সাধারণত, বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে, পিতা-মাতারা তাদের কন্যাকে ১৬ বছরের পূর্বে বিয়ে দেওয়াটা বিবেচনা করে না, কিংবা ১৮ বছরের পূর্বে পুত্রের বিবাহের আয়োজন করে না। এক্ষেত্রে প্রায়ই কম বয়সে বিবাহ অবৈধ বলে বিবেচিত হয় এবং যৌথ পরিবারের সহায়তা ছাড়া ১৬ ও ১৮ বছরের নিচে মেয়ে ও ছেলেদের ক্ষেত্রে বিবাহের বয়স ধার্য করা অত্যন্ত দুরুহ একটি বিষয়। তাছাড়া আধুনিক সমাজে যেখানে যুবক যুবতীরা পরিবারে স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করে তারা যখন বৃদ্ধ হবে তখন তারা কিরকম হবে।
আবার, কেউ বিবাহের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে চায় না, ১৬ বছর বয়সে যদি পিতা-মাতারা তাদের কন্যাদের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তির অনুসন্ধান শুরু না করে তবে তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য কোন যুবক ব্যক্তিকে খুঁজে নেবে। যদিও তারা বাহ্যিকভাবে দৃঢ়ভাবে বলতে পারে যে বিবাহে তাদের আগ্রহ নেই বা তারা এখন বিবাহ করতে চায় না। নিজে নিজে কোন যুবক ব্যক্তির অনুসন্ধান মানে হল তারা এমনভাবে পোশাক-পরিচ্ছদ পড়বে যা অন্যকে আকর্ষন করে এবং ছেলেদের সাথে অতিরিক্ত বন্ধুসুলভ আচরণ করবে। যাতে করে কোন না কোনভাবে সূক্ষ্মভাবে কোন যুবক ব্যক্তির অনুসন্ধান তারা করতে পারে। অপরদিকে যাদের বয়স আঠার বা ১০ সে সমস্ত ছেলেরাও নিজে নিজে মেয়েদের আকর্ষন করতে শুরু করতে পারে। এ সময় একজন যুবক ব্যক্তি বিপরীত যোনীকে আকর্ষন করার চেষ্টা শুরু করতে পারে। তখন পিতা মাতাদের জন্য বিষয়টি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। তারা বুঝতে পারে যে, তাদের সন্তানের একজন উপযুক্ত পত্নীর প্রয়োজন কিন্তু সেই সন্তান এক্ষেত্রে তাদের নির্দেশনা গ্রহণ করতে আর ইচ্ছুক নয়। অতএব, পরামর্শ হল একটি মেয়ের ১৬ তম জন্মদিনের পূর্বে এবং একটি ছেলের ১৮ তম জন্মদিনের পূর্বে পিতামাতাদের একজন উপযুক্ত জীবনসঙ্গী অনুসন্ধান শুরু করতে হবে। এর আগে থেকেই যখন সন্তানের বয়স ১১ কি ১২ তখন তারা যে এ ধরনের আকর্ষন অনুভব করবে সে বিষয়ে সাবলীলভাবে ব্যাখা প্রদান করতে হবে এবং সে সাথে এও ব্যাখা করতে হবে। যে, কিভাবে পিতা-মাতারা নির্দিষ্ট সময়ে তাদেরকে বিবাহের জন্য সাহায্য করবেন। হরেকৃষ্ণ!

সূত্র: উর্মিলা দেবী দাসী কর্তৃক চৈতন্য সন্দেশে প্রেরিত উপযুক্ত স্ত্রীর সন্ধানের প্রক্রিয়াসমূহ নামক সহায়িকা গ্রন্থ যেটি পিতা-মাতাও অভিভাবকবৃন্দ যেমন পরিবারে সদস্য, মন্দির প্রেসিডেন্ট পারমার্থিক শিক্ষক বা গুরুদেব সহ অন্য আরো অনেকের জন্য প্রযোজ্য। 

বিবাহ বিভ্রাট (পর্ব-২)


 

আগস্ট ২০১৮ মাসিক চৈতন্য-সন্দেশ
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।