প্রকৃত বিনম্ৰতা

প্রকাশ: ১ জুন ২০২১ | ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১ জুন ২০২১ | ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 295 বার দেখা হয়েছে

প্রকৃত বিনম্ৰতা

এটি কী? আমরা কী এটি চাই? কীভাবে আমরা এটি অর্জন করতে পারি?

উর্মিলা দেবী দাসী

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্‌গীতায় বিনয়কে জ্ঞান অর্জনের প্রথম সোপান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং শ্রীল প্রভুপাদ লিখেছেন বিনয় ছাড়া আমরা কোনো জ্ঞান অর্জন করতে পারি না। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জানছি যে, আমি কিছুই জানি না, কেন আমাদের জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন? প্রভু যীশু মনে করতেন বিনয় পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে উদয় হয় এবং যারা নিজেকে সবার থেকে অধম মনে করে তারাই ভগবানের প্রিয়।
তবুও আমি বিনম্ৰতাকে ভয় পাই। বিনম্রতা কি আত্মঘৃণা/ বিতৃষ্ণামূলক কিছু? যারা এই বিনম্রতা অনুশীলন করে তারা কী অন্যের শিকারে পতিত হয়? তাদের জন্য কি সুযোগ ও সফলতা এড়িয়ে চলে?
যদি এরকম শোষণমূলক হয়, তবে শাস্ত্রে কেন বিনম্রতার গুণকীর্তন করা হয়েছে? ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, “সর্বগুণে গুণান্বিত ব্যক্তি বিনয়ের সাথে নত হয়, যেরকম ফলভারে একটি বৃক্ষ নত হয়ে যায়।”
তাই আমার বিবেচনায়, শুধুমাত্র বিনম্রতা কীভাবে অনুশীলন বা বৃদ্ধি করা যায় সেই বিষয়ে ভাবা উচিত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমি নিশ্চত নই যে, সত্যিকার অর্থে আমি কি বিনম্ৰতা চাই কি চাই না? কীভাবে আমি যে বিন্য্র সেটি ভাবব এবং আচরণ করব সেটিও উপলব্ধি করতে পারি না। কীভাবে এই বিনম্ৰতা অর্জন করব সে বিষয়েও কোনো ধারণা নেই। কিছুক্ষণ পূর্বে আমি অন্তত এটি ভাবছিলাম যে, শুধুমাত্র ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবায় মনোযোগী হবো এবং এই বিনম্রতার বৈশিষ্ট্যটি আপনা আপনিই জাগরিত হবে। এক্ষেত্রে কৃষ্ণ এটি উপলব্ধি ও অর্জনের জন্য কোনো পন্থা প্রদর্শন করবেন, এ বিষয়ে আমি সুনিশ্চিত ছিলাম।
আমাদের বিনম্রতা বা বিনয়ের দরকার আছে? শ্রীল প্রভুপাদ অসংখ্যবার উল্লেখ করেছেন, যেসকল ব্যক্তি কৃষ্ণভাবনাকে অতি আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেছেন তাদের আলাদাভাবে সদ্গুণাবলী অর্জনের জন্য ভাবতে হয় না। যেমন : যারা প্রাকৃতিকভাবে নিরামিষাশী তাদেরকে আলাদাভাবে নিরামিষাশি সমাজে যোগ দিতে হয় না। কৃষ্ণভক্তরা কৃষ্ণের প্রীতি বিধান করার জন্য এমন সব খাবার নির্বাচন করেন যেগুলো মাছ, মাংস, ডিম বর্জিত। ভক্তরা ভগবানের সেবার জন্য এমনিতেই নিরামিষাশি হয়ে উঠেন।
তদ্রুপ যেহেতু আমরা নিজেদের ভগবানের শ্রীচরণে নিবেদন করছি, তাই পরীক্ষা করা উচিত নিজের মধ্যে কোনো অহংকার আছে কিনা। পারমার্থিক অগ্রগতির জন্য আমাদের মনকে শুদ্ধ করতে হবে যাতে করে হৃদয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্য মন্দির গড়ে উঠে।
একদিন আমি অন্ধকারে প্রসাদ পাচ্ছিলাম এবং সে সাথে ভক্তিমূলক ভিডিও দেখছিলাম। চমৎকার নৈশভোজ কিন্তু তাতে কিছু দুর্গন্ধযুক্ত ডুমুর চাটনী ছিল, যখন আমি তা চোখে দেখলাম তখন বিরক্ত হলাম এবং সব খাবার ফেলে দিলাম। শুধু দুর্গন্ধযুক্ত ডুমুর চাটনির কারণে পুরো খাবার বাতিল!! অহংকার হলো দুর্গন্ধযুক্ত ডুমুরের চাটনির মতো। আমি কৃষ্ণকে সত্যি সত্যি বলতে পারি, “হে কৃষ্ণ আমাকে তোমার দাস হিসেবে গ্রহণ কর।” কিন্তু আমার মধ্যে যখন মিথ্যা অহঙ্কারের বসবাস তখন কি আমি তা করতে বা বলতে বা চিন্তা করতে পারি?
আমি বিনয়ী হতে অনুপ্রাণিত হয়েছি কারণ কৃষ্ণ তা দাবি করেন এবং আরেকটি কারণ হল মিথ্যা অহঙ্কার থাকলে তা দুর্দশার কারণ। শ্রদ্ধা ভক্তি অতি মূল্যবান। কেউ আমাদের প্রশংসা বা হিংসা করতে পারে কোনো হীন উদ্দেশ্যে। আমাদের ভালোগুণের কারণে কেউ আমাদের শ্রদ্ধা করতে পারে কিন্তু এগুলোর কারণে যদি আমরা অহঙ্কার করি তবে আমরা ঘৃণিতই হবো। শ্রদ্ধার মতো মধুর আচরণে আমরা আনন্দিত হই। অপমানের মতো কর্কশ আচরণে আমরা ব্যথিত হই। কৃষ্ণ বলেছেন, “মানির অপমান মৃত্যু থেকেও ভয়ঙ্কর।“
সুতরাং আমি একটি কাছাকাছি সম্ভাব্য সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাকে বিনীত হতে হবে। আমি অন্তত এটি বুঝতে পেরেছি যে, ভগবানের প্রতি অসীম, অনন্ত, শাশ্বত আনন্দময় ভালোবাসা অর্জনের জন্য আমাকে বিনীত হবে, যেটা আমি চাই। কিন্তু বিনম্ৰতা বা বিনয় আসলে কী?

বিনয় হচ্ছে সততা

আমি জানি যে, বিনয় মিথ্যা নয়, কারণ কৃষ্ণ আরেকটি সদ্গুণের কথা বলেছেন, সেটা হচ্ছে সত্যবাদিতা। আমি ধনী হওয়া সত্ত্বেও গরিব, সুন্দর হওয়া সত্ত্বেও কুৎসিত বলে দাবি করা কোনো নম্রতার লক্ষণ হতে পারে না অথবা আমার গুণের অভাব আছে বলাও কোনো বিনম্ৰতা নয়, একি শুধু মুখের কথা। বিনয় এবং স্বীকৃতি দীর্ঘদিন বজায় রাখার জন্য নিজের প্রশংসা এবং গুণাবলি কমিয়ে অন্যকে কৃতিত্ব দেয়া বিনম্ৰতা হতে পারে না। এরকম মিথ্যা মেকি বিনম্ৰতা মিথ্যার সমান, আর একজন মিথ্যাবাদীকে লোকেরা কদাচিৎ বিশ্বাস করে। যারা ঐ তথাকথিত বিনম্রতার মুখরোচক কথা শ্রবণ করে তারা সেসব খুব কমই বিশ্বাস করে।
প্রকৃত বিনয় হচ্ছে প্রকৃত সত্যটাকে গ্রহণ করা যেরকম আমরা বলতে পারি : কৃষ্ণের কৃপায় আমার ক্ষমতা, গুণ এবং অর্জন হচ্ছে। তিনি যেমন দিয়েছেন তেমনি আবার নিয়েও নিতে পারেন। এমনকি আমি যদি বলি যে, ভগবান শুধু কর্মের আইন পরিচালনার মাধ্যমে পূর্বকৃত কর্মানুসারে এগুলো তিনি আমাকে দান করেছেন এবং কৃষ্ণ যদি চান তবে আমি এক মুহূর্তও সেই অর্জনসমূহ আর ধরে রাখতে পারব না। যদি আমার সম্পদ কৃষ্ণের হয় তবে আমার অহঙ্কার শুধু কৃষ্ণের জন্য হওয়া উচিত। আমার উচিত তাঁর চতুরতা, সম্পদ এবং মেধার জন্য গর্ব অনুভব করা, যার কিছু অংশ তাঁর পক্ষ হয়ে প্রদর্শন করার সুযোগ আমাকে দিয়েছেন। (অবশ্যই আমি তাঁর পক্ষ হয়ে এগুলো ব্যবহার করছি। এক্ষেত্রে এটি ঠিক নয় যে, তিনি দিয়েছেন বলে সেগুলো শুধুমাত্র নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য ব্যবহার করব)।
তিনি যদি চান তবে সামর্থ্যেরও উর্ধ্বে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন, কিংবা দৈহিক, মানসিক, আবেগীয়, নৈতিক, আধ্যাত্মিক সব ধরনের শক্তি তিনি হরণ করতে পারেন।
কৃষ্ণভক্ত অর্জুন অনুধাবন করেছিলেন যে, যা কিছুর জন্য তিনি গর্বিত অনুভব করেন, তার প্রকৃত মালিক হলেন কৃষ্ণ। অর্জুন ছিলেন একজন রাজকুমার এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্ধারী। তিনি একাই সমস্ত শত্রুদের পরাজিত করতে পারতেন। তাঁর ধনুক ছিল ইন্দ্রের এবং তাঁর তীর কখনো শেষ হতো না। দেবরাজ ইন্দ্রের কৃপায় তিনি অন্য গ্রহে ভ্রমণ করেছিলেন। কৃষ্ণের কৃপায় তিনি জড় জগৎ অতিক্রম করে চিন্ময় জগতে ভ্রমণ করেছিলেন, তিনি চৌকশ, শক্তিশালী, বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী ছিলেন। বর্তমান যুগের ধনকুবের যারা আছেন তাদের থেকে অনেক বেশি ধনবান ছিলেন। তাঁর পত্নী দেবীতুল্য এবং পুত্র অভিমন্যু ছিল মহাবীর।
তারপর কৃষ্ণ অন্তর্ধান লীলা শেষে, তাঁর ধামে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং অর্জুন তাঁর সেই বিখ্যাত ধনুক দিয়ে এমনকি তীর নিক্ষেপ করতেও পারছিল না, অথচ এ আশ্চর্য শক্তিসম্পন্ন গাণ্ডীব ধনুক দিয়েই তিনি যেকোনো শত্রুকে পরাজিত করেছিলেন। অজেয় অর্জুন ক্ষীণপ্রাণ, অপ্রশিক্ষিত যোদ্ধার দ্বারাও পরাজিত হতে লাগলেন। তখন অর্জুনের উপলব্ধি


একজন বিনয়ী ব্যক্তি সবকিছুকে কৃষ্ণকেন্দ্রিক দর্শন করে। এক্ষেত্রে কে কীভাবে সেটি গ্রহণ করছে বা তিনি নিজে কি পাচ্ছেন সেসব নিয়ে ভাবেন না। সব অবস্থায় তিনি সন্তুষ্ট এবং আনন্দিত থাকেন ৷


হল যে, তাঁর যত ক্ষমতা কৃষ্ণের অন্তর্ধানের সাথে সাথে সবই লোপ পেয়েছে, একসময় যেগুলো তাঁর অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।
আমার যেসব আছে তা সবই কৃষ্ণের দান। আমি উপলব্ধি করি এই সত্যটি ভক্তির সোপান নয় কিন্তু ভক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে এ ধরনের উপলব্ধি ধারণ করা মিথ্যা অহঙ্কারের চেয়েও অনেক মধুর।

বিনম্রতা হচ্ছে কৃতজ্ঞতা

সাধারণ মানের উপলব্ধি থেকেও বিনয়ের স্থান ওপরে, যেরকম উচ্চস্তরের শুদ্ধ ভক্তরা প্রায়ই নিজেদের মূল্যহীন ও দুর্ভাগা বলে থাকেন। আমি নিজের ভুলগুলোকে দেখি, সাক্ষাৎ করি, করমর্দন করি, ভুল সংশোধন, অন্তত আমার ক্রোধ এবং খারাপ দিকগুলো অন্যদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করি। আমি বেদনা অনুভব করি যখন কাউকে কোনো ব্যথা দিয়ে থাকি এবং আমি অসৎ কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা এবং প্রতিশোধ স্পৃহা সম্পর্কে জানি। নিজেকে নিয়ে বিশ্লেষণ করা কঠিন। এগুলোর মধ্যে থেকে আমরা বন্ধু, পরিবার এবং ভগবান থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারি। “এই পাপীর ওপর কৃপাবর্ষণ করুন!” যখন আমরা নিজেদের প্রতি বিরাগের বশবর্তী হয়ে নিজেরা ধ্বংস হয়ে যাই, সে ধরনের শ্রদ্ধা নরক যন্ত্রণার মতই বেদনাদায়ক।
ভগবানের প্রতি যদি প্রেমপূর্ণ ভক্তি থাকে তাহলে তা অতি আনন্দদায়ক এবং প্রতি মুহূর্তে রোমাঞ্চ অনুভূত হয়। প্রকৃত বিনয় অবশ্যই সত্য হতে হবে এবং আনন্দদায়ক হতে হবে। স্পষ্টত, বেদনাদায়ক আত্মত্যাগও (self abnegation) বিনয়ের সামান্য নিদর্শন বা ছায়া বলা যায়।
আমরা তখনই আঘাত পাই, যখন মিথ্যা অহংকার এবং নিজেদের ইন্দ্রিয়তৃপ্তি কার্যকলাপ থেকে আগত পাপময় প্রকৃতিকে দর্শন করি। আমরা চিন্তা করি আমরা মহান, কিন্তু আমাদের দোষ ত্রুটিসমূহ নিজেদেরকে লজ্জা দেয়। থমাস মার্টিন লিখেছেন, “যারা সত্ত্বগুণে অধিষ্ঠিত তাদের যখন পাপকর্মের কথা স্মরণ হয়, তখন তারা পাপ করে না। কিন্তু তারা ভগবানের মহিমা কীর্তন করে এবং এমনকি তাদের অতীত জীবনের পাপ তাদের আনন্দে পরিণত হয়। তারা ভগবানকে মহিমান্বিত করতে সেবা করে। ভগবান আমাকে এসব থেকে দূরে রেখেছেন এখন। যদি আমাদের মনে প্রকৃত বিনয় উদিত হয় তবে আমাদের দুর্দশাগ্রস্থ জীবন সুখময় ও আনন্দে ভরে উঠে এটি দেখে যে, কৃষ্ণ আমার ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও আমাকে কৃপা করছেন।
যদিও আমি জানতাম আমার বিগত বছরের জন্মদিন উপলক্ষে কিছু আয়োজন চলছিল। আমি নিজের পুত্র ও পুত্রবধূর নিকট থেকে শুধু একটি কেক আশা করেছিলাম। আমাকে চমকে দেয়ার জন্য আমি যে কমিউনিটিতে বসবাস করি সেখান থেকে কিছু ভক্ত উপহার নিয়ে হাজির হয়েছিল এবং আমার সাথে ভোজন করেছিল। তাদের এই ভালোবাসা আমার কাছে আনন্দের ন্যায় তরঙ্গের মতো বর্ধিত হচ্ছিল কারণ অন্তত আমি কৃতজ্ঞতা অনুভব করছি যে, আমি যা প্রত্যাশা করিনি তাই হয়ে গেল। আমাদের যা গুণাবলি রয়েছে তা হয়তো সন্তুষ্টজনক নাও হতে পারে। কিন্তু যদি আমরা মনে করি যে আমাদের কোনো মেধাই নেই, তাহলে এমনকি কেউ যদি আমার জন্য ক্ষুদ্র একটি কাজও করে তা আমাকে খুব সন্তুষ্ট করবে।
শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে আমরা মাধাইয়ের কাহিনি পড়েছি, যে এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও অপরাধীতে পরিণত হয়েছিল। সে এবং তার ভাই শুধু সম্ভাব্য সকল ধরনের অপরাধ করতো তা নয়, এমনকি ধার্মিক ব্যক্তিদের প্রতি অশোভন আচরণও করতো।
একদিন নিত্যানন্দ প্রভু নিজেই দুই ভাইকে সংশোধন হতে এবং পবিত্র কৃষ্ণ নাম নিতে বললে, মাতাল মাধাই নিত্যানন্দ প্রভুকে হত্যা করার চেষ্টা করে। তারপরও তিনি মাধাইকে কৃপা এবং ক্ষমা করে দিলেন। এরপর বিস্মিত মাধাই বদলে গেল। যখন তারা নিত্যানন্দ প্রভুর কৃপা ও প্রেম গ্রহণ করল, তখন পূর্বকৃত পাপ স্মরণে তার সে ব্যাথা অপ্রাকৃত আনন্দে পরিণত হল। ভগবান এমন একজন ব্যক্তির ওপর কৃপা প্রদর্শন করেছিলেন, যিনি ছিলেন নিচু প্রকৃতির।
বিনম্র ব্যক্তিরা সবসময় মনে করে তার সমস্ত ধন ভগবানের দান এবং তারা মনে করে এসব কিছু ভগবান তাঁর প্রতি শুদ্ধপ্রেমের ফলে প্রদান করেছেন, তার মানে এই নয় যে, তারা সেগুলো চায় ।

বিনম্ৰতা আনন্দদায়ক

প্রভুপাদ বিনম্রতাকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন, অন্যের কাছ থেকে শ্রদ্ধা প্রত্যাশা না করা হিসেবে। তখনই শ্রদ্ধা পাওয়ার প্রত্যাশা পরিহার করা যাবে যখন আমাদের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির বাসনা দূরীভূত হবে। খ্রিস্টান লেখক সি.এস.লুই বলেছেন, “মানুষ শুধু দুর্ভাগ্যের কারণে রেগে যায় না, কিন্তু দুর্ভাগ্য আঘাত হিসেবে প্রতীত হয়ে বলেই সে রেগে যায়। আঘাতের অনুভূতি নির্ভর করে অনুভবের ওপর। জীবনে যত বেশি চাহিদা তত বেশি দুঃখ অনুভূত হয় এবং যার ফলে মেজাজ বিগড়ে যায়।”
একদিন আমি এই প্রবন্ধটি লেখার পরিকল্পনা করেছিলাম। প্রকৃতপক্ষে আমি সপ্তাহ ধরে কোনো রবিবারে এই লেখাটি লেখার পরিকল্পনা করছি যা ব্যস্ততার জন্য সহজ ছিল না। সেসময় সকালে একটি জরুরি ফোন পেলাম। তখন পুরোদিনের সিডিউল ছিল বাচ্চার রান্না, পরিষ্কার এবং ময়লা কাপড় পরিষ্কার করা। যখন আমি স্মরণ করি, আমার সময় এবং জীবনট; সর্বস্ব তোমারই ভগবান। আমি শুধু দাসানুদাস, যে কিনা তোমার ইচ্ছাকে অনুসরণ করছি মাত্র। তখন আমি আনন্দ অনুভব করি এবং সব পরিকল্পনা বাদ দিয়ে এ প্রতিবেদন লেখার সেবায় যুক্ত হই। এমনকি ভক্তিমূলক অন্যান্য সেবাও বাদ দিয়েছিলাম ।
একজন বিনয়ী ব্যক্তি সবকিছুকে কৃষ্ণকেন্দ্রিক দর্শন করে। এক্ষেত্রে কে কীভাবে সেটি গ্রহণ করছে বা তিনি নিজে কি পাচ্ছেন সেসব নিয়ে ভাবেন না। সব অবস্থায় তিনি সন্তুষ্ট এবং আনন্দিত থাকেন।
সর্বোপরি একজন বিন্য্র সেবক তার প্রভুর জন্য যেকোনো দুর্ভোগ গ্রহণ করে সম্মানিত অনুভব করে। আমরা কি শুধু কারো সুসময়ে সেবা করব নাকি দুঃসময়েও সেবা করব? যদি কৃষ্ণসেবার ক্ষেত্রে তাঁরই ইচ্ছায় কোনো অপ্রীতিকর কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু এসে থাকে তবে সেটিই আমার সুখ হওয়া উচিত। এতে তারা গৌরব অনুভব করে এই ভাবে যে, তারা শ্রমের মাধ্যমে দেশের ঋণ পরিশোধ করছে। এ ধরনের অহংকার বিনম্রতা থেকে আগত সুখ। জড় সম্মান থেকে উত্থিত যে সুখ তা পরম সন্তোষজনক নয়। পক্ষান্তরে ভগবানের সেবক হওয়ার মাধ্যমে যে গর্ব অনুভূত হয় তা বহু গুণ সন্তুষ্টি প্রদান করে। যারা এই পৃথিবীতে ‘আমার’ হিসেবে সবকিছু গ্রহণ করে তারা শুদ্ধ ভক্তের হৃদয়ে যে আনন্দ অনুভূত হয় তা বুঝতে পারে না।
কিছু গবেষণার পর আমি মনে করি, আমার একটি উত্তম ধারণা হয়েছে বিনম্রতা আসলে কী। এটি হলো সততা: সবকিছুই কৃষ্ণের, তাই আমি যা করি অথবা আমার যা আছে সবকিছুর জন্য একমাত্র তাঁরই কৃতিত্ব প্রাপ্য। এটি হলো কৃতজ্ঞতা: আমি অধম হিসেবে তিনি যাই দেন তা আমার জন্য অনেক কিছু। এটি হলো আনন্দ: কৃষ্ণসেবক হওয়াটা এত সুন্দর যে, আমি তার সন্তুষ্টির জন্য যা করি তার জন্য আমি সুখ অনুভব করি। (সংক্ষেপন)


ড. এডিথ ই. বেস্ট (উর্মিলা দেবী দাসী) আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটি থেকে এডুকেশনাল লিডারশীপ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি শ্রীল প্রভুপাদের শিষ্যা। তিনি বর্তমানে আন্তর্জাতিক ব্যাক টু গডহেড ম্যাগাজিনের সহ- সম্পাদক রূপে সেবা করছেন। এছাড়াও তিনি ইসকন শিক্ষা বিভাগের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে চলেছেন।


 

 

ত্রৈমাসিক ব্যাক টু গডহেড, জুলাই – সেপ্টেম্বর ২০১৪

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।