গজপতি মহারাজের বিশেষ সাক্ষাৎকার

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২১ | ১:৫৬ অপরাহ্ণ আপডেট: ২৪ জুন ২০২১ | ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 359 বার দেখা হয়েছে

গজপতি মহারাজের বিশেষ সাক্ষাৎকার

গঙ্গ রাজ বংশের পুরুষোত্তমদেব নামে শ্রীজগন্নাথের একজন মহান ভক্ত ছিলেন। তিনি নিজে বিশেষ বিচক্ষণতার সঙ্গে পুরীধামে রথযাত্রার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতেন, শুধু তাই নয়, রথযাত্রার দিনে তিনি স্বহস্তে স্বর্ণের ঝাড়ু দ্বারা রথাগ্রে রাস্তা ঝাড় দিতেন এখনও সেই ধারা প্রবাহিত হয়ে আসছে। এখনও রথ টানার পূর্বে পুরীর বর্তমান রাজা শ্রীগজপতি মহারাজ শ্রী  দিব্যসিংহদেব স্বর্ণের ঝাড়ু দ্বারা পথ পরিষ্কার করে থাকেন। তারপর শুরু হয় রথযাত্রা।

গজপতি মহারাজরা শত শত বৎসর ধরে এই স্থান পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। তার উপর রাজনৈতিক বা সরকারি কোন প্রভাব বিস্তার করা হয় না। Discovery চ্যানেলের সহায়তায় তার একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার এখানে তুলে ধরা হল। Fantastic Festival of the world নামে প্রতিবেদনমূলক ধারাবাহিক অনুষ্ঠানে জগন্নাথের রথযাত্রা নিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিটের একটি ভিডিও সাক্ষাতকার তুলে ধরা হয়েছিল। নিম্নের প্রতিবেদনটি তারই অংশ বিশেষ।

Discovery চ্যানেলের সাক্ষাতকারী : ‘গজপতি মহারাজ’ এর অর্থ কি?
গজপতি মহারাজ : ‘গজপতি’ মানে হল হস্তী বা হাতিদের প্রভু। কেননা এক সময় ভারতের এই অংশর রাজাদের যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করার জন্য বিশাল বিশাল হস্তী দল থাকত এবং এখনও এখানকার জনসাধারণ এ বিষয়ে বেশ সুপরিচিত এবং ‘মহারাজ’ রাজাদেরকে সম্বোধন করা হয়।
সাক্ষাতকারী : এর ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছু বলবেন?
গজপতি মহারাজ : গজপতি মহারাজাদের ঐতিহ্য হল তারা হলেন ভগবানের সেবক এবং তাই বিভিন্ন উৎসবের সময় মহারাজারা প্রত্যক্ষভাবে ভগবানের সেবায় যুক্ত হন।
সাক্ষাতকারী : পুরীধাম সম্পর্কে কিছু বলুন।
গঙ্গপতি মহারাজ : ‘পুরী’ সারাবিশ্বের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ পবিত্র স্থান হিসেবে সুপরিচিত। এটি ‘পুরুষোত্তম ধাম’ নামে সুপরিচিত। ‘পুরী’ হল এর সংক্ষিপ্ত নাম। এটি পূর্ব ভারতের মধ্যে প্রধান ধাম এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র একটি স্থান। কেননা এখানে স্বয়ং ভগবান জগন্নাথ বিরাজমান।
সাক্ষাতকারী : এই মন্দিরটি খুবই প্রাচীন…..
গজপতি মহারাজ : যে মন্দিরটি আপনারা দেখছেন সেটি তৈরি করা হয়েছে ভগবান জগন্নাথের জন্য এবং এখানে ভগবান জগন্নাথ স্মরণাতীত কাল থেকে পূজিত হয়ে আসছেন।
সাক্ষাতকারী : এখানে অনেক সংস্কৃতি রয়েছে….
গজপতি মহারাজ : ……এখানে বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি বিরাজমান। জনসাধারণও খুবই ধার্মিক এবং এই কারণে এই স্থানে সবাই খুবই শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। তারা খুবই সুখী।
সাক্ষাতকারী : দেখা যায় তিনটি বিগ্রহ কালো, হলুদ ও সাদা সহ তিন রঙের। এর রহস্য কি?
গজপতি মহারাজ : স্কলার্সদের এরকম দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যে, এই তিনটি ভিন্ন বর্ণ প্রদর্শন করছে তিনটি প্রধান মানব জাতি নিগ্রো, মঙ্গোলিয়ান এবং অ্যারিয়ান। আমরা যখন জগন্নাথকে দেখি আমরা তার অদ্ভুত রূপ সম্পর্কে অবগত হই। তার এই দিব্য রূপের সঙ্গে কোন মানবাকৃতির বা পশু আকৃতির বা এই গ্রহের কোন আকৃতির সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এর অর্থ তার এই দিব্য প্রকাশকে আমরা আমাদের মন বুদ্ধি দ্বারা অবলোকন করতে অক্ষম। ভগবান জগন্নাথ এবং সনাতন ধর্ম এই ভিত্তি প্রদর্শন করে যে, আমরা যেন ভুলে না যাই বিভিন্ন জাতির মানব সমাজের মধ্যে মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ একতা বিদ্যমান এবং তা হল, প্রত্যেকেই এক, ভগবান হল এক, আমরা সবাই এক ভগবানের আরাধনা করি। তাই ভগবান জগন্নাথের ঐতিহ্যে এই প্রধান বার্তাটি অত্যন্ত জোড়ালোভাবে প্রদর্শন করে।
সাক্ষাতকারী : রথযাত্রা উৎসব খুবই জনপ্রিয় একটি উৎসব। এই উৎসবে তিনটি রথ দেখা যায় এ সম্পর্কে কিছু বলবেন?
গজপতি মহারাজ : তিনটি প্রধান রথ এই রথযাত্রা উৎসবে প্রদর্শন করা হয়। প্রতিবারেই এগুলো নতুনভাবে তৈরি করা হয় এবং তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় দেড় মাস। সরকার এই উদ্দেশ্যে বন থেকে প্রয়োজনীয় কাঠ সরবরাহ করে থাকে। রথের প্রতিটি অংশেই বিশেষ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ক্রিয়া প্রদর্শন করা হয়। জগন্নাথ, বলদেব, সুভদ্রা রাণীকে নিয়ে যাওয়া হয় গুণ্ডিচা মন্দিরে। তারা সেখানে ৭ দিন অবস্থান করে নিত্য সেবা গ্রহণ করেন এবং ৭ দিন পরে তারা ফিরতি যাত্রা করে যেটাকে বলা হয় ‘বাহুডা যাত্রা’ যারা এই রথসমূহ তৈরি করে তার ঐতিহ্যগতভাবে বংশপরম্পরা ক্রমে এটি করে আসছে। যাদেরকে বলা হয় ‘মহারানা’।
রথযাত্রা উৎসব বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় এবং সময়ে সময়ে রথগুলো থামানো হয়। রথের দড়িগুলোকে সুবিন্যস্ত করে রথ চলার উপযোগী করা হয়।
সাক্ষাতকারী : এ রথযাত্রা উৎসব বা এর ঐতিহ্যসমূহ কবে থেকে শুরু হয়েছিল?
গজপতি মহারাজ : ভগবান জগন্নাথের পূজা ও ঐতিহ্য সর্বপ্রথম শুরু হয়েছিল এই থেকেই। এই স্থানই হল এগুলোর উৎস এবং এগুলো ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা আমাদের জানা নেই। এটি প্রবাহিত হয়ে আসছে অনাদিকাল ধরে। যেভাবে রথ তৈরি করা হয়, যেভাবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে, যেভাবে সমগ্র উৎসবাদি প্রবাহিত হচ্ছে। তা হাজার হাজার বছর ধরে প্রায় অবিকৃতভাবেই প্রবাহিত হয়ে আসছে।
সাক্ষাতকারী : আপনাকে রথে একটি বিশেষ সেবা (ঝাড়ু দেয়া) করতে দেখা যায়। এর তাৎপর্য কি?
গজপতি মহারাজ : হ্যা প্রথা অনুসারে রাজা তার প্রাসাদ থেকে রথের উদ্দেশ্যে গমন করবেন এবং রথের উপর উঠে ভগবানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সেবা যেমন ভগবানকে প্রদীপ, পুস্প, বস্ত্র ইত্যাদি নিবেদন করতে হয়। এরপর তাকে একটি বিশেষ সেবা করতে হয় তা হল ভগবান যেখানে অবস্থান করেন তার চারপাশে রথের উপর ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করতে হয়। এটি খুবই অদ্বিতীয় । কেননা আমরা সাধারণত কোন রাজাকেই এভাবে ঝাড়ু নিয়ে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে দেখি না। কিন্তু এই বিষয়টি হয়ে আসছে কেননা আমাদের পূর্বের বংশধররা এই সেবাটি হাজার হাজার বছর ধরে করে আসছে এটি প্রদর্শনের জন্যই যে, ভগবানের সম্মুখে আমাদের সবাইকে সম্পূর্ণ শরণাগত হতে হবে। আমাদের অহংকারকে সমর্পণ করতে হবে এবং আমাদের বিনয়ী হতে হবে। এটি জনসাধারণের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত-প্রদর্শিত হয় যে, স্বয়ং রাজা যদি এই তুচ্ছ সেবাকরতে পারে তবে আমাদেরও কর্তব্য ভগৰানের উদ্দেশ্যে আমাদের মন সব কার্যকলাপ উৎসর্গ করা।


 

মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, জুন-২০১২ ইং সংখ্যায় প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।