ষটকোণ: পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন প্রতীক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ৯:০৯ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ৯:০৯ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 44 বার দেখা হয়েছে

ষটকোণ: পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন প্রতীক

ছয়টি কোণের সমন্বয়ে গঠিত চিহ্ন বা প্রতীককে ষট্কোণ বলে। দুইটি ত্রিভূজ একটির উপর একটি স্থাপিত হয়ে এ ষট্কোণ গঠিত হয়। ত্রিভুজ দুটির একটি উর্ধ্বমুখী। যেটি বৈদিক দর্শন অনুসারে ‘পুরুষ’ হিসেবে নির্দেশিত। উপরোক্ত এ গঠন সম্বলিত প্রতীককে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মূলত এ প্রতীক জীবের নিত্য আলয় গোলকধামেরই মানচিত্র হিসেবে ব্যবহৃত। বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে চিন্ময় ধাম বা গোলক ধাম এ চিহ্নের উপর অধিষ্ঠিত। অর্থাৎ গোলকধামের প্রতীক হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। এর উপরেই পদ্মফুল এবং পাঁপড়ি চারদিকে বিস্তৃত। এই চিহ্নের ঠিক মধ্যখানে ভগবান শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ অবস্থান করেন। ব্রহ্মসংহিতায় এই ষটকোণ সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। ব্রহ্মসংহিতায়  অধ্যায় ৫ এর ৩নং শ্লোকের অনুবাদ, “সেই চিন্ময় পদ্মের কেন্দ্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আলয়। এটি গঠিত ষটকোণ সম্বলিত অদ্ভুদ চিহ্ন দিয়ে”। ষাণ সম্বন্ধে আরো বর্ণিত রয়েছে অধ্যায় ৫ এর ৩ এর পরবর্তী শ্লোকেও।

সাধনার স্তরে ষটকোণের সহযোগিতায় মন্ত্রের কৃপায় একজন ভক্তের হৃদয়ে গোকুলে কৃষ্ণের মধুর লীলাবিলাস প্রকাশিত হয়। সিদ্ধির স্তরে অবস্থিত একজন ভক্ত গোলকে কৃষ্ণের লীলাবিলাস উপলব্ধি করতে পারে। বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে মহান গৌড়িয় বৈষ্ণব আচার্য শ্রী ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর ব্রহ্মসংহিতায় বর্ণিত কৃষ্ণের আলয় সম্পর্কে বর্ণনায় অনুপ্রাণিত হয়ে গৌড়ীয় মঠের প্রতীক হিসেবে এ ষটকোণকে অন্তর্ভূক্ত করেন। যার ছয়টি কোণে যশ, শ্রী, জ্ঞান, বৈরাগ্য, ঐশ্বর্য এবং বীর্য অবস্থিত। তিনি মধ্যবিন্দুতে নাম এবং ওঁম কে অন্তর্ভূক্তি করেছিলেন।

এমনকি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈদিক যন্ত্র যেমন বিষ্ণু যন্ত্র, লক্ষ্মী যন্ত্র, গোপাল যন্ত্র, রাধা যন্ত্র, সুদর্শন যন্ত্র এবং গায়ত্রী যন্ত্রে এ পবিত্র চিহ্ন মুখ্য অঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

যদিও এ চিহ্নের উৎপত্তি ভারতবর্ষেই কিন্তু পরবর্তীতে তা সারা বিশ্বে বহুল প্রচলিত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র চিহ্ন হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতের মন্দির থেকে সোলোমনের আংটি, কার্তজিনিয়ান থেকে গ্রীক, রোমান, খ্রীষ্টান, এলকেমিস্টরা এর প্রচলন শুরু করে।

এই চিহ্ন আবার জিউসদের চিহ্ন হিসেবেও প্রচলিত হয়। বিশ্বে এই চিহ্ন ডেভিডের তারকা বা Star of David নামেও প্রসিদ্ধ। এখন প্রশ্ন হল Star of Goloka থেকে এটি কিভাবে Star of David হল নামে কেন অনেকে এটিকে ব্যবহার করে তার একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। যা এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হল।

সোলোমোন নামে এক বিখ্যাত রাজা একটি অলৌকিক আংটির অধিকারী ছিল। সেই আংটির ছিল আশ্চর্য সব ক্ষমতা। তখন সেই আংটির উপরে তিনি এই গোলক চিহ্ন ষটকোণ ব্যবহার করেন। যা ডিউসদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠে তবে সোলোমান, এই আংটি পেয়েছিলেন তার পিতা রাজা ডেবিডের মাধ্যমে। ডেবিড পূর্বে সৈনিক ছিলেন পরবর্তীতে কোন কারণবশত রাজা হলে ঈশ্বর তাকে এই আংটি উপহার দেয়। আংটির উপর এই চিহ্ন ধর্মপ্রাণ অভিজ্ঞ জিউসরা এটি প্রবর্তন করেন। কেননা তারা পূর্ব থেকেই অবগত যে এটি অত্যন্ত পবিত্র ও শক্তিশালী প্রতীক। এভাবে জিউসদের কাছে এই পবিত্র চিহ্ন এখনও Star of David হিসেবে প্রচলিত।

ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্যে এই ষটকোণ দুটি ত্রিভুজ। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে একটি মেয়ে অ একটি ছেলে হিসেবে অভিহিত করে। এলকেমিস্টরা এটিকে আগুন এবং জলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে। তারা ৬টি কোণকে ৬টি গ্রহ এবং মধ্যখানে সূর্যকে অন্তর্ভূক্ত করেন। তৃতীয় ও ষষ্ট শতাব্দীতে এই প্রতীক বিশ্বে আরো বেশি জনপ্রিয় ও প্রচলিত হয়ে উঠে। সারা বিশ্বে এর ব্যবহারের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী তুলে ধরা হল।

১। বার্লিনের বর্গরাসিয়াটিসকোণ যাদুঘরে খ্রিষ্টপূর্বে ২৫০০ শতাব্দির ব্যবহৃত ষটকোণ সম্বলিত কতিপয় সিলিন্ডার সীল রয়েছে।

২। কার্থেজ-এ (উত্তর আফ্রিকার আধুনিক তিউনিশিয়া) ৫ম শতাব্দিতে ব্যবহৃত কয়েন আবিষ্কৃত হয় যেখানে ষকোণ প্রতীক ব্যবহার করা হয়েছে।

৩। শ্রীলংকায় কাতারাগ্রামে একটি ষটকোণ যন্ত্র আবিষ্কৃত হয় যা তৃতীয় শতাব্দিতে ব্যবহৃত হত।

৪। রোমান সাম্রাজ্যে দশটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয় যেখানে ষটকোণের ব্যবহার রয়েছে। যেগুলোর অনেকগুলো একসময় আগ্নেয়গিরি ভলকানের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

ষটকোণ সম্বলিত বিভিন্ন মোজাইকে আবিষ্কৃত হয়-গল, হাঙ্গেরী, গ্রীস, সিরিয়া, তুর্কি, তিউনিশিয়ায়। এভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন প্রতীক হিসেবে ষটকোণ পরিচিত বিশ্বে ষকোণের বিস্তৃতি ইঙ্গিত বহন করে সনাতন ধর্মের অস্থিত্ব কতটা প্রামাণিক ও প্রাচীন।
হরে কৃষ্ণ।


মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , ডিসেম্বর – ২০১০ ইং 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।