এই পোস্টটি 9 বার দেখা হয়েছে

সল্টেড ব্রেড অবলম্বনে কাহিনীর বক্তা : জ্যাজিক বুনিয়াটিয়ান
প্রান দাস এবং আমার মা-বাবার কাছে জেল থেকে কিছু চিঠি লিখেছিলাম। প্রান দাসের কাছ থেকে চিঠির উত্তরে শচীসূত কোথায় আছে সেটি জানতে পারলাম। আমি এটি জেনে খুবই খুশি হই যে, সে আমার কাছেরই একটি জেলে রয়েছে। আমি তখন শচীসূতের কাছে চিঠি লিখতে শুরু করলাম এবং চিঠি পেয়ে সেও উত্তর দিচ্ছিল। আমরা ১৬ মাসে মাত্র আট বার চিঠিপত্র আদান-প্রদানের সুযোগ পেয়েছিলাম। অবশ্য আমাদের সব চিঠিই জেল কর্তৃপক্ষ খুলে দেখেই অনুমোদন দিত। শচীসূত লিখেছিল যে, সে খুব একটা ভালো নেই। সে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। মাঝে মাঝে প্রকৃতির বৈরি আবহাওয়ার জন্য সারাদিন কোন কিছু না খেয়ে এক কোণে পড়ে থাকতে হত। অন্য সময় যা আহার হত তা ছিল ঐ একই খাবার। সিদ্ধ পানি আর তিনটি রুটির সঙ্গে লবণ। এগুলো খেয়েই দিন কাটত। তার মধ্যে যারা জেলে কাজ করত না তাদেরকে নির্দয়ভাবে পুলিশ মারধর করত। শচীসূতের ক্ষেত্রেও এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এরকম প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও সে প্রতিদিন ১৬ মালা জপসহ শাস্ত্রীয় বিধানগুলো পালন করে চলত। এর মধ্যে তার যক্ষ্মা ধরা পড়ল। সে রোগের কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে প্রাণ দাসকে চিঠি লিখেছিল এখান থেকে তাকে যেকোনভাবে মুক্ত করতে। আমি আমার প্রিয় বন্ধুর সুস্থ হয়ে উঠার জন্য কৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করতে লাগলাম। যদিও আমার অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকবার ম্যালেরিয়া, জন্ডিস এবং টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছিলাম। যেহেতু আমার দিনের খাবার শুধুমাত্র তিনটি রুটি ও লবণ, তাই আমার স্বাস্থ্য দিন দিন আরও খারাপ থেকে খারাপ হতে লাগল। খুবই শুকিয়ে গিয়েছিলাম। অনেক সময় দুর্বলতার কারণে সিড়ি বেয়ে উঠাও কঠিন হয়ে যেত। একসময় তো সিড়ি বেয়ে উঠার সময় পড়েও গিয়েছিলাম এরপর ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়। লেখানকার ডাক্তারও ছিল আরও হিংস্র। রোগীদের সঠিক চিকিৎসা করতই না বরঞ্চ স্নার ভিন্ন ভিন্ন রোগের জন্য একই ঔষধ দিত। একবার একটি আসামীর রোগ ভাল হচ্ছিল না তাই অত্যধিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে সে ঐ ডাক্তারকে মারধর করে। যার ফলে সেই আসামীকে আরো কষ্টকর শ্রম ক্যাম্পে তিন বছর অধিক দণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সে সময় আমাকে কেউ একজন ধরে কর্মস্থলে নিয়ে যেত। আমার পিঠের ব্যাথার জন্য হাঁটতে কষ্ট হত। ভাবছিলাম আমার বোধহয় শেষ পরিণতি এসে গেছে। কয়েক সপ্তাহ শুয়ে শুয়ে কোন রকমে জপ শেষ করতাম আর কৃষ্ণের কাছে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করতাম। কিন্তু কৃষ্ণের অলৌকিক কৃপায় কিভাবে যেন আমি ধীরে ধীরে সেড়ে উঠলাম। এমনকি এখনও আমি ভাবতে পারি না কিভাবে ঐরকম নরকময় পরিস্থিতি থেকে নিজেকে আবার জীবিত ফিরে পেলাম। আমি আমার ডায়েরীতে লিখেছিলাম, “জানি না, এই ভয়ংকর স্থান থেকে আমি জীবিত ফিরতে পারব কিনা, তবুও আমি যেন কৃষ্ণের নিত্য ধামে ফিরে যেতে পারি।” আমি তিনবার একটা কথা লিখেছিলাম। “এই স্থানে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল। এই রকম জীবনের কিইবা মূল্য রয়েছে?” ইতোমধ্যেই পুলিশের কাছ থেকে জানতে পারলাম বাইরে থাকা অন্য বন্ধুরাও জেলবন্ধী হয়ে পড়েছে। আমি তখন সত্যিই অসহায় অনুভব করছিলাম। মায়া যেন আমার কানে চুপিচুপি বলছিল, “তুমি এখানে কি করছ? তুমি কি মনে করে যে, এভাবে কৃষ্ণের জন্য ক্ষুধার্ত থেকে নানারকম কষ্ট সহ্য করতে করতে তোমার মৃত্যু হওয়া ভালো হবে? না, তুমি এখনও যুবক এবং বেশ শক্তিমান। বেশী দেরী হওয়ার পূর্বেই এই নরক থেকে বের হয়ে যাও, না হলে এখানেই তোমার মৃত্যু হবে। বের হয়ে যাও এবং জগতের অন্য সবার মত তুমি তোমার জীবনকে উপভোগ কর। এরকম অপদার্থ হয়ো না এখনই এই প্রকার পারমার্থিক জীবনধারা পরিত্যাগ কর।” এটি এত বাস্তব ছিল যে, আমি আমার মুখের উপর তার (মায়াদেবীর) শ্বাস-প্রশ্বাস অনুভব করতে পেরেছিলাম। এরপর আমি অনেকবার কিছু অর্থের জন্য আমার মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধবদের কাছে খবর পাঠানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু তাতে সফল হইনি। একসময় আমি উপলব্ধি করলাম যে, কৃষ্ণ হয়ত তার উপরই নির্ভর হওয়ার জন্য চাচ্ছেন। যেমনটি দ্রৌপদী কৃষ্ণের উপর ঘোরতর বিপদে নির্ভর করেছিলেন। আমি সেটি স্মরণ করছিলাম। তা ভেবে আমার ভাগ্য তার চরণে সঁপে দিলাম। এরপর থেকে আমি মহামন্ত্র জপের প্রতি বাস্তবিক শক্তি খুজে পেয়েছিলাম এবং আমার অনুশীলন চালিয়ে যেতে লাগলাম। একদিন কৃষ্ণ আমার স্বপ্নে দৃশ্যমান হলেন এবং তিনি তখন তার চিন্ময় বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। তিনি আমার হাত ধরলেন এবং মৃদুস্বরে সুমধুর কন্ঠে বলছিলেন, “উদ্বিগ্ন হয়ো না; তুমি আমার ভক্ত। শুধু তুমি যা করছ তা চালিয়ে যাও এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে তোমার প্রতি যত্ন নেব।” ঠিক এর পরের দিন আমার একজন ঘনিষ্টজন Science and religion নামে রাশিয়ান ভাষায় লেখা একটি ম্যাগাজিন নিয়ে এসেছিল। সেখানে শ্রীল প্রভুপাদ এবং কিছু ভক্তের একটি সুন্দর ছবি ছাপানো। আমি এটি কেটে স্বযত্নে আমার ড্রয়ারে রেখে দিলাম। সেখানে ইস্কন সম্পর্কে যা লেখা হয়েছিল তা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছিল। কেননা তারা নেগেটিভ লিখছিল, যদিও কিন্তু তা ছিল ইতিবাচকই বা অপ্রিয় সত্য কথা।
আগামী সংখ্যায় থাকছে-অধ্যায় ১৫-The special mercy of krishna।
হরে কৃষ্ণ।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, ফেব্রুয়ারি ২০১১ইং