শ্রম ক্যাম্পে প্রবেশ (পর্ব – ০২)

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 36 বার দেখা হয়েছে

শ্রম ক্যাম্পে প্রবেশ (পর্ব – ০২)

সল্টেড ব্রেড অবলম্বনে কাহিনীর বক্তাঃ জ্যাজিক বুনিয়াটিয়ান

ভান্য আর আমি নিজ কক্ষে ফিরে গিয়ে আমার ভক্তি জীবনের কাহিনী বর্ণনা করছিলাম। তাকে বলছিলাম এখানে যে নিম্ন মানের রুটি দেয়া হয় তা আমার পক্ষে গ্রহণ করা খুবই কষ্টকর। কিন্তু ভান্যের মুখে শুনলাম এখানে যে জল সরবরাহ করা হয় তাও অত্যন্ত নিম্নমানের। কেননা তা সরাসরি নিকটস্থ নোংরা নদী থেকে আনা হয়। যা খেলে শরীর অসুস্থ হওয়ার আশংকা বেশি। ভান্য তখন এক অভিনব উপায়ে সে জল বিশুদ্ধ করার ব্যবস্থা করল। সে দুটি ব্লেডের মাঝখানে দুটি পেনসিল সাইজ কাট ব্যবহার করে এবং পরে ঐ দুই ব্লেডের দুইপ্রান্তে দুটি তার জড়িয়ে দিয়ে অন্য প্রান্তদ্বয়ে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়। এরপর ঐ ব্লেডদ্বয়কে জলে রাখলে জল ফুটতে শুরু করে। ভান্য বলছিল প্রথমবার ফুটানো জল না খাওয়ার জন্য কেননা তাতে ব্লেড থেকে নিঃসৃত রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো থাকতে পারে। এরপর থেকে এই উপায়ে আমি জেলে জল ফুটিয়ে খেতাম। আমি জেলে জপ করতাম যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ত। প্রতি সপ্তাহে একবার করে গার্ডরা আসত রুম চেক করার জন্য। তারা সব জায়গায় তন্নতন্ন করে খুঁজত কোন অবৈধ জিনিস আছে কিনা। তারা এমনকি সমস্ত বালিশ, ম্যাট্রেসও চেক করত। একদিন তারা আমার বালিশের মধ্যে রুটির তৈরি আমার জপমালাটি খুঁজে পায়। আর তখন তা আমার কাছ থেকে জোর করে নিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। এরপর থেকে আমাকে জপ করতে হত কোন সংখ্যাগুটি ছাড়াই। একমাত্র ভগবানই জানত আমি কতবার জপ করতাম। আমার কোন হিসাবই ছিল না। কিন্তু ভান্য আমাকে বলছিল, সে আমাকে সাহায্য করতে পারে।

পরের দিন আমরা শ্রম ক্যাম্পে গেলে সে আমাকে শিখাচ্ছিল কিভাবে একটি সেলাই মেশিন ড্রিলিং মেশিনে রূপান্তর করা যায়। সে একটি কাপড় রাখার প্লাস্টিকের হ্যাঙ্গার নেয় এবং এরপর সে সেটিকে ছোট ছোট টুকরো করে। পরে সে ফ্লোরের নিচে লুকানো এক যন্ত্র বের করে যেটিকে সে মেশিনের এক পাশে যুক্ত করে দেয়। এভাবে সেটি তখন একটি ড্রিল মেশিনের কাজ করে। সে তখন প্যাডেল চাপলে সেটি ঘুরতে থাকে এবং ঐ হ্যাঙ্গারের টুকরোগুলো মাঝখানে ফুটো করতে শুরুকরে। পরবর্তীতে ছিদ্র দিয়ে সুতা প্রবেশ করিয়ে যে জপমালাটি তৈরি করে যেটি আমার জেল জীবনের সবচেয়ে শক্ত মালা। আমি যখনই এতে জপ করতাম আমার মনে হত আমি তুলসী মালায় জপ করছি। যার জন্য আমি ভান্যের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ।

আমরা যে রুমে কাপড় সেলাই করতাম সেটি ছিল খোলামেলা। জানালাগুলি সার্বক্ষণিক খোলা থাকত। সেজন্য শীতের সময়টাতে আমাদের অনেক কষ্ট পেতে হত। যখন আমরা সেলাই করতাম তখন আমাদের হাতগুলো শীতে জমে যেত। কিন্তু তবুও আমাদের প্রত্যেকেই প্রতিদিনের বরাদ্দকৃত কাপড় সেলাই করতেই হত। যদি কেউ তা করতে না পারত তবে তাকে গার্ডরা মারত। আমরা যে কাপড় সেলাই করতাম তারা তাতে একটি গার্মেন্টেসের সিল লাগিয়ে দিত। অথচ সেগুলো জেল থেকেই সরবরাহকৃত ছিল।

প্রতিদিন তিন সিফ্ট কাজ করতাম। সবচেয়ে খারাপ সিফ্ট হল রাতের। কেননা তখন সারা দিনের পরিশ্রমের ফলে ঘুম চলে আসত। একরাতে আমি যখন রাতে কাজ করছিলাম তখন পাশ থেকে চিৎকারের শব্দ শুনছিলাম। একজন আসামী ঘুমের কারণে কখন যে তার তিনটি আঙ্গুল একত্রে সেলাই করেছে সে বুঝতেই পারেনি। তার মধ্যে একটি আঙ্গুলে সুইয়ের অর্ধেক অংশ ঢুকে আছে। তা দেখে আমিও সাবধান হয়ে প্যাডেল আস্তে আস্তে চালাতে লাগলাম।

কিন্তু তাতেও বিপদ এড়াতে পারিনি। কেননা একদিন ঘুমের ঘোরে আমার আঙ্গুলেও সুঁই ঢুকে যায়। তখন তাড়াতাড়ি নিকটস্থ একটি ড্রয়ার থেকে যন্ত্র নিয়ে অনেক কষ্টে ভগ্নাংশ সুইটিকে আঙ্গুল থেকে বের করি এবং কিছু আয়োডিন ও একটি ব্যান্ডেজ মোড়ানোর পর আবার কাজ শুরু করতে হয়। অবশ্য শীতের কারণে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিল।

এদিকে কোন পুষ্টিকর খাবার না খাওয়ার দরুন এবং অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার দরুন আমার দাঁতগুলো প্রতিদিন দুর্বল থেকে দুর্বল হতে লাগল। যেটি আমার দাঁতের মাড়ির ও ক্ষতি করেছিল এবং আমার দাঁতগুলো বৃদ্ধ মানুষের দাঁতের মত নড়বড়ে হয়ে যায়। আমি জিহ্বা দিয়ে সেগুলোকে নাড়াতে পারতাম। মাঝে মাঝে আমি যখন রুটি খেতাম সেগুলো নড়ত।

ভান্য বলছিল আমাকে কিছু রসুন খেতে যদি আমি দাঁতগুলো হারাতে না চাই। প্রথমদিকে আমি বিরুদ্ধে ছিলাম কেননা প্রভুপাদের নির্দেশ ‘কোন পেঁয়াজ রসুন খাওয়া যাবে না’। একদিন খাওয়ার সময় আমি কখন যে আমার একটা দাঁত গিলে ফেললাম বুঝতেই পারিনি। কয়েক সপ্তাহ পর আরেকটি দাঁত গিলে ফেললে আমি বাধ্য হয়ে কিছু রসুন খাওয়া শুরু করি। আমি তার কিছু রুটির সঙ্গে খেতাম এবং কিছু দাঁত এবং দাঁতের মাড়িতে মার্জন করতাম। (চলবে….)

[আগামী সংখ্যায় পার্ট-৩-এ কিভাবে শচীসূত যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় এবং জ্যাজিকও বিভিন্ন কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও তাদের উপর KGB এর অমানবিক নির্যাতন চলতে থাকে সে মর্মস্পর্শী কাহিনীসমূহ প্রকাশ করা হবে।
হরে কৃষ্ণ।


মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, জানুয়ারী – ২০১১ ইং 

পর্ব – ০১ এর লিংকঃ https://csbtg.org/%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae-%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a7%87-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b6-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b0/

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।