এই পোস্টটি 240 বার দেখা হয়েছে
অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে ধন-সম্পদ, মান-যশ ও প্রতিষ্ঠা সবাইকে চিরসুখী করবে। যেখানে হতাশার কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। এজন্য বিশেষত পাশ্চাত্যবাসীদের প্রতি উপমহাদেশের লোকেদের আকর্ষণ বেশ প্রচলিত। অথচ, অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি রয়েছে যারা সবকিছু থাকা সত্ত্বেও জীবনে চরম হতাশায় জর্জরিত হয়েছেন। পাশ্চাত্যে এরকম কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের হতাশার নগ্ন উদাহরনের কিছুটা এখানে তুলে ধরা হল। এছাড়াও গত ৩০ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, বিশ্বব্যাপী অক্ষমতা ও হতাশা স্বাস্থ্যহানীর অন্যতম কারণ। WHO এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বে ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি লোক এখন হতাশার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে, যেটি ২০০৫ ও ২০১৫ সালের মধ্যে ১৮% বেড়েছে। Depression : Let’s talk নামক ঐ প্রতিবেদনে বলে হতাশা এবং অন্যান্য অদৃশ্য বিশৃঙ্খলা ও রোগ ব্যাধির মধ্যে একটি শক্তিশালী যোগসাজশ রয়েছে। এটি ডায়বেটিস, হৃদরোগের মত ঝুঁকি বাড়ায় এবং আত্মহত্যার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। দৈনন্দিন কাজকর্মেও হতাশার মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর্যন্ত অক্ষমতা প্রকাশিত হয়। শ্রীমৎ ভক্তি তীর্থ স্বামী “হতাশার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া” প্রবন্ধে হতাশা প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন এবং বৈদিক শাস্ত্রের আলোকে এ থেকে মুক্তির পন্থাসমূহও আলোকপাত করেছেন। নিম্নে সেই প্রতিবেদনটির সংকলিত রূপ তুলে ধরা হল।
বিচ্ছেদের হতাশা
দ্যা ডার্ক নাইট রাইজেস নামক এক মুভিতে জোকার চরিত্রের অভিনেতা হেথ লেজারকে অনেকেই হয়তো চিনে থাকবেন। অথচ এই ব্যক্তিই অভিনেত্রী মিচেল উইলিয়ামস এর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার হতাশা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য অত্যধিক মাত্রায় ড্রাগস, ঘুমের ঔষধ এবং পেইন কিলার গ্রহণ করে মাত্র ২৮ বছর বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন।
ব্যাধিতে হতাশা
রবিন উইলিয়ামস ‘গুড উইল হান্টিং’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ৯৭ সালে অস্কার বয়সেই করেন জিতেন তিনি। ওই ছবিতে এক থেরাপিস্টের ভূমিকায় অভিনয় করে এক ছাত্রের মানসিক সমস্যা দূর করেছিলেন রবিন। অথচ নিজের হতাশা দূর করতে পারেননি তিনি। এর সঙ্গে স্মৃতিভ্রম ও পারকিনসন্স রোগেও ভুগেছেন তিনি। শেষে ২০১৪ সালে আত্মহত্যা করেন রবিন উইলিয়ামস।
হতাশার নিদ্রা
মাইকেল জ্যাকসন, বিশ্বখ্যাত এই গায়ক, অবিশ্বাস্য ধরনের হতাশায় ভুগেছেন। যার ফলে তিনি রাতে ঘুমাতে পারতেন না। ঘুমানোর জন্য ড্রাগস নিতেন এবং তাতে অভ্যস্ত হয়ে যান। একটু নিদ্রার জন্য তাকে একসময় অনেক ড্রাগস নিতে হতো। একসময় সেই ড্রাগস তার জীবনটাই কেড়ে নেয়।
নভোচারীদের হতাশা
হতাশা থেকে রেহাই পাননি নভোচারীরাও। ১৯৬৯ সালের তথাকথিত চন্দ্ৰজয়ী বাজ অলড্রিন যখন খ্যাতির তুঙ্গে ছিলেন তখনই বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাঁর। পারিবারিক অশান্তি এক পর্যায়ে হতাশ করে দেয় এ নভোচারীকে। ‘দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস’ এর সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, তাঁর মা ও দাদুও একই রোগে ভুগে আত্মহত্যা করেছিলেন।
লেখনীতেও হতাশা
বিখ্যাত ‘হ্যারি পটার’ এর স্রষ্টা জে কে রাওলিং লাখ লাখ শিশুকে এক তথাকথিত কল্পনার রাজ্য উপহার দিয়েছিলেন নিজের লেখনীর মাধ্যমে। অথচ তিনি বহুদিন ধরেই হতাশায় ভুগছেন। ২০১০ সালে অপরাহ উইনফ্রেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘যে এতে ভোগেনি, তাঁকে হতাশা কী, তা বোঝানো দুঃসাধ্য। এটি শুধু দুঃখবোধ নয়। অনেকটা অনুভূতিশূন্য মানসিক অবস্থা। ‘হ্যারি পটার’ এর বিভিন্ন উপন্যাসের খল চরিত্রগুলোর মধ্যে আমার হতাশা ফুটে উঠেছে।’
হতাশা পর্দার আড়ালে
জিম ক্যারি পর্দার অভিনয়ে অসংখ্য মানুষকে তথাকথিত আনন্দের খোরাক দিলেও বাস্তবে তিনিও হতাশ হয়েছিলেন। ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে জিম বলেছিলেন, ‘চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে সেরে উঠেছিলেন তিনি।’ তাঁর কথায় ‘আমি পুরো জীবনাচরণই বদলে ফেলেছিলাম। মদ দূরের কথা, কফিও খেতাম কদাচিৎ। এগুলো ছাড়া জীবন সত্যিই খুব সুন্দর।’
ক্যারিয়ারে হতাশা
পারফরম্যান্সের জোয়ারে হঠাৎ ডাটা আসলে ইংল্যান্ডের এই তারকা ক্রিকেটার জোনাথন ট্রট ভীষন হতাশ হয়ে পড়েন। এক সময় ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যান। ডাক্তাররা তখন এই বিখ্যাত ক্রিকেটারের হতাশা বা মানসিক অসুস্থতা নিবারনের জন্য বিভিন্ন ভাবে প্রচেষ্টা করেন। কিন্তু জোনাথন ট্রট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর পর পুরোদ্যমে ফিরে আসার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে অবসরই নিয়ে নেন।
নিরাপত্তায় হতাশা
হলিউড অভিনেত্রী অ্যাশলি জুড শৈশব থেকেই কিছুটা বিচ্ছিন্ন থাকায় ভুগতেন নিরাপত্তাহীনতায়। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর সেটিই অন্তহীন হতাশায় পরিণত হয়। ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন ‘কিস দ্যা গার্লস’ চলচ্চিত্রের এই অভিনেত্রী। ‘গ্ল্যামার’ ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যাশলি বলেছিলেন, ‘আমি খুব যন্ত্রণায় ছিলাম। আমার সাহায্যের প্রয়োজন ছিল’
তারুণ্যেও হতাশা
সাঁতারে অলিম্পিক সোনা জেতা আমান্ডা বেয়ার্ড তার জীবন সম্পর্কে এক সময় বলতেন ‘একজন তরুণী অ্যাথলেট হিসেবে জীবন যথাযথ ছিল না।” ১২ বছর বয়সে পিতা-মাতার বিচ্ছেদ, শরীরের পরিবর্তনের কারণে সাঁতারে ধীর গতির হওয়া এ সমস্ত বিভিন্ন হতাশার কারণে তিনিও এক সময় ড্রাগস, অ্যালকোহল ইত্যাদির আশ্রয় নেন।
গোপন হতাশা
পপ তারকা লেডি গাগা ভুগেছেন হতাশা ও উদ্বিগ্নতা—এ দুই রোগেই। ‘পাপারাজ্জি’ বা ‘পোকার ফেস’-এর মতো বিখ্যাত অ্যালবামের এই সঙ্গীতশিল্পী সেরে উঠতে ওষুধ খেয়েছেন অনেক দিন। ‘বিলবোর্ড’ ম্যাগাজিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, হতাশার ব্যাপারে কথা বলতে বিব্রত হন না তিনি। বরং সব মানুষকে এ নিয়ে আরো বেশি। করে জানা উচিত। লেডি গাগার ভাষায়, “যদি নিজেদের গল্পগুলো সবাইকে জানানো যায়, তবে এর বিরুদ্ধে আমরা আরও শক্তিশালী হতে পারব।
হতাশার কারণ মানসিক ব্যাধি
মানসিক ব্যাধিসমূহ মন থেকেই গড়ে উঠে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির মনই এরকম ব্যাধির সঞ্চার করে বা এক ধরনের অসুস্থতা নিয়ে আসে। এমনকি এর মাধ্যমে একজন মানুষ অকেজো বা অকার্যকর হয়ে উঠতে পারে। সাইকো নিউরোইমিউনোলোজী হল একটি মেডিকেল ও সাইকোলোজিক্যাল বিজ্ঞান, যেটি দেহের ওপর মনের প্রভাব সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে। এই বিষয়টি হতাশার সঙ্গে কতটা সম্বন্ধীয়? সাইকোসম্যাটি ডিজিস বা মানসিক ব্যাধি মনের শক্তিমত্তা সম্পর্কে বিশ্লেষন করে এবং এ সম্পর্কে জানাও সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেননা এর মাধ্যমে হতাশার কারণ সম্পর্কে উপলব্ধি করা যায়। শুধুমাত্র চিন্তা, অনুভূতি ও ইচ্ছা সম্পর্কে পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করতে পারি, কিভাবে আমাদের চিন্তা ভাবনা কোন কার্য করার প্রতি আমাদেরকে পরিচালিত করে। যদি পুনঃ পুনঃ কোনো বিশেষ ভাবনায় মন ভাবিত হয় তখন সেটি বাক্য বা শব্দে ও কার্যে পরিণত হবে।
যেমন, যখন একজন ব্যক্তি নিজেকে ভালোবাসাহীন (অবহেলার পাত্র) বলে অনুভব করে, তখন তা মনকে প্রভাবিত করে। বিশেষভাবে এটি নিউরোট্রান্সমিটারকে ক্রিয়াশীল করে তোলে, যেটি পরবর্তীতে সমগ্র দেহে সেই বার্তাটি (অনুভবটি) পাঠিয়ে দেয় এবং দেহের কোষ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আক্রমণ করে। শরীরের অনেক ব্যাধির কারণ হলো প্রকৃতপক্ষে দেহের কোষ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্রমাগতভাবে মনের আক্রমন। মনের এরকম শক্তি রয়েছে। পক্ষান্তরে যখন কেউ নিজেকে যত্নশীল ও ভালোবাসার পাত্র হিসেবে অনুভব করে তখন তার শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক ইমিউন সিস্টেম বা মানসিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়ে উঠে। ভালোবাসা আরোগ্য বিধান করে, সুরক্ষা ও দীর্ঘজীবন প্রদান করে। পক্ষান্তরে ভালোবাসার অভাব একজন ব্যক্তিকে কার্যত মেরেই ফেলে।
জৈবিক বিষয়সমূহ
হতাশার মতো কয়েক প্রকারের মানসিক অসুস্থতা রয়েছে যেগুলোর প্রকৃতপক্ষে জৈবিক উৎস বা কারণ রয়েছে। অনেক ধরনের ব্যাধি বা সমস্যা রয়েছে যেগুলো মানসিক গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে। মাঝে মাঝে শারীরিক ভারসাম্যহীনতা যেমন সুগার ডায়বেটিস বা নিম্ন ব্লাড সুগার মানসিক স্তরের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ ধরনের ভিটামিন বা পুষ্টির অভাবে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি থাইরয়েড সমস্যাও হতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক বিষয় নিয়ে কাজ করছে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক লোকেরও প্রকৃতপক্ষে জৈবিক সমস্যা রয়েছে।
আত্মার অন্ধকার রাত
ক্রিস্টান ধর্মীয় তত্ত্বে একটি বিষয় রয়েছে তা হলো “আত্মার অন্ধকার রাত” বা একটি সিরিয়াস টেস্টিং পিরিয়ড যেটি সমস্ত একনিষ্ঠ পারমার্থিক অনুসন্ধানকারী ব্যক্তি ব্যবহার করে থাকেন। আমাদের পারমার্থিক প্রগতির সময় মাঝে মাঝে আমরা হয়তো দ্রুত প্রগতি করতে পারি যদিও এরকম ইতিবাচকভাবে প্রগতি করাটা কষ্টসাধ্য হতে পারে। আমরা যখন এভাবে জীবনের একটি পর্যায়ে উপনীত হয় তখন আমরা ভাবতে পারি যে, “আমি জপ-কীর্তন, ধ্যান, প্রার্থনা, উপবাস, শাস্ত্র অধ্যয়ন, পরিদর্শন, শাস্ত্রীয় দিক-নির্দেশনা অনুসরণ করা সত্ত্বেও আমি দুর্দশাগ্রস্থ কেন? ভগবান বলতে কি কেউ নাই?” ঐ অবস্থায় কেউ তখন কৃষ্ণের কৃপা ও মনোযোগ নিয়ে সন্দেহ পোষন করতে পারে। এমনকি ভাবতে পারে যে, ভগবান তাকে পরিত্যাগ করেছেন।
আমরা সঠিক পথেই বা চেতনায় অগ্রসর হওয়া সত্ত্বেও জীবনের নেতিবাচক অবস্থা ও চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক সময়ই আমরা হতাশাগ্রস্থ হই। প্রকতৃপক্ষে এসব প্রতিবন্ধকতার অর্থ হলো ভগবান আমাদের পূর্বকৃত কর্মফল নিঃশেষিত করছেন যাতে আমরা নতুন একটি অধ্যায় বা জীবন উন্মোচন করতে পারি। যদি আপনি আপনার জীবনের পেছন দিকে তাকান তখন দেখবেন আপনি এরকম অনেক প্রতিবন্ধকময় পরিস্থিতি পূর্বেও মোকাবেলা করেছেন এবং সেই সময় ভগবানের অস্থিত্ব বা তার বিচার নিয়ে যথাযথ সন্দেহ হয়েছিল। যা হোক এর মাধ্যমে কিন্তু আপনাকে এটুকু উপলব্ধিতে সহায়তা করেছে যে, প্রতিবন্ধকতা আপনার চেতনার উন্নয়ন ঘটিয়েছে । প্রায় ক্ষেত্রেই কোনো না কোন দুঃখ দুর্দশায় ফল হল আপনার চেতনার উন্নয়ন। এরকম দুঃখ-দুর্দশা আপনার জাগতিক চেতনার সর্বশেষ স্তরকে ভেঙে ফেলে।
সূক্ষ্ম উপকরণের প্রভাব
কিছু ক্ষেত্রে, ভিন্ন ভিন্ন সূক্ষ্ম উপকরণ প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেহকে প্রভাবিত করে। কিছু লোকের ভাবনা, কামনা ও কার্যকলাপ এতটাই অধঃপতিত ও নিম্ন শ্রেণীর হয় যে, তারা তাদের দেহে অত্যন্ত নেতিবাচক ও পাপময় প্রবৃত্তিকে আমন্ত্রণ জানায় এবং ফলে তারা চরম ভাবে নেতিবাচক কার্যকলাপের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এজন্যে যারা পারমার্থিকতায় তেমন অগ্রসর নয় তারা ক্রমান্বয়ে তাদের স্বাধীন ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে এবং চেতনার সৃজনশীল প্রকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এরকম বিভিন্ন ধরনের প্রভাবের ফলে ঐ সমস্ত লোকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং তার মাধ্যমে মানসিক অসুস্থতা দেখা যেতে পারে।
নারীরা অধিক হতাশাপ্রবন
পুরুষের চেয়ে নারীরা অধিক হতাশায় ভুগে। এর অন্যতম কারণ হলো চারপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের নিয়ন্ত্রণ কম থাকা এবং অধিকভাবে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়া। যখন একজন ব্যক্তির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা ধর্মীয় সমস্যা থাকে তবে সেগুলো তাকে কম প্রভাবিত করবে যদি সেই পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর তার কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক তথ্য অনুসারে বিশ্বের নারী জনসংখ্যার ২০% পুরুষ কর্তৃক শারীরিক অত্যাচার বা যৌন নির্যাতিত হয়েছেন। যদি কোনো নারী অতীতে কোনো নিপীড়নের শিকার হন তবে সেই স্মৃতি তার মধ্য তিরিশ ও চল্লিশের মাঝামাঝি সময়ে মানসিক বা চেতনার গোলযোগের কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে একজন পুরুষ হয়তো নারীর সে সমস্যা সম্পর্কে বুঝে উঠতে পারে না কেননা নারীর এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বহু পূর্বে।
বৈদিক ও প্রাচীন সংস্কৃতির অপব্যবহার হল হতাশার আরেকটি কারণ। কোনো সংস্কৃতি যদি এই শিক্ষা প্রদান করে যে, পুরুষ সবকিছু সরবরাহ করে এবং তাই সর্বত্র তারা কর্তৃত্ব করবে, তখন তা ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠে। পুরুষরা যদি নারীদের সুরক্ষার পরিবর্তে ভোগ্য পণ্য মনে করে তখন সেটি সমাজকে নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত করে। তখন নারীরা হতাশ হয়। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষেরা এই সমস্ত সংস্কৃতির মর্মার্থ সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবে না কিংবা নিজেদের দোষ সম্পর্কেও চিন্তা করে না।
হতাশাকে মানিয়ে নেওয়ার পন্থাসমূহ আমরা এখন হতাশা নিবারনের কিছু সমাধানের দিকে আলোকপাত করব। এক্ষেত্রে সবচেয়ে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো পারমার্থিক ভাবধারায় অধিষ্ঠিত হওয়া, পারমার্থিক সংস্কৃতিকে সমর্থন করা যদিও কিছু মানসিক প্রতিবন্ধকতা আসে জৈবিক বিষয় থেকে। আর অন্য সমস্ত মানসিক গোলযোগ বা প্রতিবন্ধকতা আসে মূলত মন থেকে। অর্থাৎ কথা বলার থেরাপী একজন মানুষকে এর সমাধানে সহায়তা করতে পারে। এক্ষেত্রে আবার কোনো থেরাপিস্টের কাছে যাওয়া মানে হিতে
বৈদিক ও প্রাচীন সংস্কৃতির অপব্যবহার হল হতাশার আরেকটি কারণ। কোনো সংস্কৃতি যদি এই শিক্ষা প্রদান করে যে, পুরুষ সবকিছু সরবরাহ করে এবং তাই সর্বত্র তারা কর্তৃত্ব করবে, তখন তা ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠে। পুরুষরা যদি নারীদের সুরক্ষার পরিবর্তে ভোগ্য পণ্য মনে করে তখন সেটি সমাজকে নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত করে।
বিপরীত বা এমনকি বিপদজনক হতে পারে, কেননা তারা পারমার্থিক জগৎকে উপলব্ধি বা সমর্থন করে না, যার ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যখন একজন সাধু ব্যক্তি বিনম্রতার গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে শুরু করে তখন প্রায় থেরাপিস্টই সেটিকে নিম্ন আত্মসম্মানবোধ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করবে। তারা বুঝতে পারে না যে, বিনম্রতা হলো একজন সাধু ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের অংশ। সাধুর কৃতজ্ঞতাবোধ ও ভগবানের সন্নিকটে আসা তাকে বিনম্র করে তোলে। এজন্যে কোনো পারমার্থিক ব্যক্তি যখন সরলতা ও অনাসক্তিতা অবলম্বন করে তখন থেরাপিস্টরা সেটিকে বিপরীত সামাজিক আচরণ হিসেবে দেখে। সাধু ব্যক্তি হয়তো ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করছে কিন্তু থেরাপিস্টরা সেটিকে হয়তো দেখবে অস্বাস্থ্যকর মৈথুন নিপীড়ন বা দমন হিসেবে এভাবে আরো অনেকভাবে থেরাপিস্টদের সাথে মতবিরোধ থেকে থাকে।
শরীর ও মন উভয়ের প্রতিফলন
মাঝে মাঝে আমরা ভাবি, কোন ধর্মীয় সংস্কারাদির মাধ্যমে হয়তো আমরা জীবনের সব সমস্যার সমাধান করতে পারব। এক্ষেত্রে এই প্রকার ধর্মীয় সংস্কারসমূহ যদি পর্যাপ্ত গভীরতা ও শুদ্ধতার সহিত পালন করা হয় তবে তা সহায়ক হতে পারে। যা হোক যেহেতু এক্ষেত্রে অনেকের মধ্যে এরকম ধর্মীয় গভীরতা বিরল, তাই অনুশীলনকারীর জন্য অন্য আরো সহায়তার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে যেটি প্রয়োজন তা হল শরীর ও মনের সঠিক প্রতিফলন। পরম বৈষ্ণব শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর ব্যক্ত করেছেন, আমাদেরকে নিম্নোক্ত ৪টি প্রয়োজনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
১। শরীরের যত্ন গ্রহণ করা।
২। মনকে সঠিকভাবে তৈরি করা।
৩। সামাজিক কল্যাণকামী জীব হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা ।
৪। শাস্ত্র অধ্যয়ন করা।
ভক্তিপথে অগ্রসর হওয়ার সময় কিংবা জীবনের যে কোনো প্রতিবন্ধকতার সময় এমন কোনো ব্যক্তির অনুসন্ধান করা যেতে পারে যার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক সহায়তা পাওয়া যেতে পারে।
মনের শত্রুরা
এমন একটি পরিস্থিতির কথা ভাবুন তো যখন একই সাথে আপনার ছয় শত্রু আপনাকে ঘিরে ধরেছে এবং আপনাকে যথাসময়ে আক্রমণ করার জন্য সুযোগের প্রতীক্ষা করছে। বিষয়টি তখনই হয় যখন আপনাকে যে গার্ড দেবে সে যদি উপস্থিত না থাকে। এই ছয় শত্রু হল কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য। এসবের মাধ্যমে মন হতাশা, উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতার দ্বারা আক্রান্ত হয়। যা হোক আমরা যদি জানি যে, মায়া দুর্বল স্থানগুলোতে আক্রমণ করবে। তখন আমাদেরকে আমাদের দুর্বল স্থানগুলোকে সবল করার জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি আমরা শত্রুর গুপ্ত স্থান মন সম্পর্কে জানি তবে আমরা শত্রুর কাছ থেকে নির্দিষ্ট দুরত্বে নিরাপদে অবস্থান করব যাতে আক্রমন করতে না পারে।
অনেক মানসিক ভেঙে পড়ার ক্ষেত্রে কামই দায়ী কেননা অতৃপ্ত কাম ক্রোধে পরিণত হয়ে মোহ ও ভ্রান্তিতে পর্যবসিত হয়। আমরা এক্ষেত্রে হতাশাকে ক্রোধরুপে ভাবতে পারি। অপরদিকে ঈর্ষাপরায়ণতা নিজের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের হওয়া উচিত পর দুঃখ-দুঃখী-কৃপং বুদ্ধির অর্থাৎ, আমাদেরকে অন্যের দুঃখকে বা সুখকে অনুভব করতে হবে। যখন অন্য কারো জীবনে ইতিবাচক কিছু ঘটে তখন তার জন্য আমাদের সুখ অনুভব করা উচিত। প্রকৃতপক্ষে ঐ পরিস্থিতিতে থাকলে আমরা যেরকম সুখ অনুভব করতাম তেমনি অন্যের সুখের ক্ষেত্রে সে পরিমাণ সুখ অনুভব করা উচিত। এই ধরনের মানসিকতা হতাশা ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিরসনে সহায়তা করে। যদি আমরা জানি যে কিভাবে নেতিবাচক মনোভাবগুলো উৎপাঠন করতে হয়, তখন আমরা দেখব সেটি খুব সুন্দর এক পরিস্থিতির দিকে আমাদেরকে পরিচালিত করছে।
স্বার্থপরতা পরিত্যাগ করা
আমরা যদি নিজেদেরকে হতাশার স্তরে দেখি, তবে এক্ষেত্রে আমাদের আত্মকেন্দ্রিকতার পরিধি কতটুকু তাও পরীক্ষা করতে হবে। নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণকারী ভাবার দুটি পন্থা রয়েছে। প্রথমটি হলো নিজেদেরকে উত্তম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে দেখা। অন্যটি হলো, নিজেদেরকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও দুর্ভাগা ব্যক্তি হিসেবে চিন্তা করা। অনেকে আবার নিজেদেরকে সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে দেখে। তাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, “আপনি কেমন আছেন?” তারা বলবে, “জিজ্ঞেস করার জন্য আমি আনন্দিত।আমার মাথাব্যাথা, পেট ব্যাথা ও পা ব্যাথা রয়েছে। আমার পুত্র আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিচ্ছে।” নিজেদের দুর্ভাগ্য সম্পর্কে খুব বেশি। মনোযোগী হওয়ায় সমস্যাগুলো বর্জনের চেয়ে বরং আরো ঝেঁকে বসে। অপরপক্ষে, যদি আমরা কাউকে সহায়তা করার চেষ্টা করি এবং আমাদের আসন্ন পরিস্থিতির ঊর্ধ্বে যাওয়ার চেষ্টা করি তখন আমরা দেখব কৃষ্ণ আমাদের প্রয়োজন অনুসারে সহায়তা প্রদান করছেন এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করছেন। হতাশা মানে হলো আমরা কেবল নিজেদের সমস্যা নিয়ে অনেক বেশি মনোযোগ দিচ্ছি এবং পক্ষান্তরে অন্যের প্রতি আমাদের ভালোবাসা পরিত্যাগ করছি।
বিশ্বাস হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
বিশ্বাস ছাড়া আমরা অধ্যবসায় করার সক্ষমতা প্রাপ্ত হব না। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশ্বাসের ভান করা চলে না। যখন কোনো ব্যক্তির জীবন ভালোভাবে চলছে না, তখন বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়ে। সাধারণত আমাদের বিশ্বাস আমাদের অতীত (কী ঘটেছিল), বর্তমান (কি ঘটছে) এবং ভবিষ্যৎ (কি ঘটতে যাচ্ছে)। এর সঙ্গে সম্বন্ধীয় যদি আমাদের অতীত ভালো না হয় এবং বর্তমান এলোমেলো হয় তখন ভবিষ্যতের প্রতি আমাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়ে। যা হোক যদি আমরা আমাদের চারপাশের সবকিছুকে ইতিবাচক হিসেবে দেখি তবে আমরা ভারো অনুভব করব এবং দৃঢ় বিশ্বাস অর্জন করব। যদিও যাদের কঠিন অতীত ও দুরুহ বর্তমান রয়েছে তাদের মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। আমাদের সমাজে আমরা এমন পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই যা আমাদের শক্তি যোগাবে এবং বিশ্বাস দৃঢ় করবে।
জীবন চলার পথে কৃতজ্ঞতা
মাঝে মাঝে আমাদের মানসিক চ্যালেঞ্জগুলো এক জায়গায় আটকে যায় কেননা আমরা সেগুলোর মধ্য দিয়ে যাই না, আমরা অতীতকে স্বীকার করি না। কিন্তু যদি আমাদের মধ্যে কৃতজ্ঞতা বোধ থাকে তবে আমরা ভবিষ্যতে একটি মঙ্গলময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারি । মাঝে মাঝে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের কিছু দেয় আবার নিয়েও যায়। ভগবানের ভক্ত হিসেবে আমাদের এমন কৃতজ্ঞতা বোধ থাকা উচিত যে, যখন কৃষ্ণ আমাদেরকে অনেক সম্পদ দিবেন তখন তার জন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাতে পারি। আর যখন ভগবান সেই সম্পদ কেড়ে নেয় এবং একটি প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যে রাখেন তখন আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাতে পারি এই জন্যই যে, তিনি আমাদেরকে আমাদের মিথ্যা অহংকার থেকে সুরক্ষা প্রদান করছেন। আমরা তাঁকে জীবনের যে কোন পরিস্থিতির জন্য ধন্যবাদ জানাতে পারি যার মাধ্যমে আমাদের জীবন হয়ে উঠে সরল ।
যদি আমরা এই চেতনায় নিজেদের গড়ে তুলতে পারি এবং সে সাথে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য ভগবানকে ধন্যবাদ প্রদান করি তবে যে কোনো পরিস্থিতি থেকে আমরা শিখতে এবং সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সমর্থ হব। এভাবে আমরা কোনো পবিত্র পরিস্থিতিকে আরো পবিত্র বা মঙ্গলময় করতে পারি এবং কোনো অমঙ্গল পরিস্থিতিকে পবিত্র বা মঙ্গলময় করে তুলতে পারি। এটি তখন একটি শেখার অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে এবং যেহেতু আমরা যে কোনো অবস্থার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব তখন স্বাভাবিকভাবেই কৃষ্ণ আমাদের জন্য আরও উত্তম কিছুর আয়োজন করবেন।
পরিশেষ : মন আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হলেও তাকে সর্বশ্রেষ্ট বন্ধু করা যায়। তা নির্ভর করে আমাদের মনোভাবের ওপর। কোনো প্রতিষ্ঠানে, পরিবারে, কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে তবে সেক্ষেত্রে আমাদেরকে খুব বেশি হতাশ, নিরুৎসাহিত ও বিষন্ন হওয়া পরিত্যাগ করতে হবে। আমাদের বর্তমান যে কোনো পরিস্থিতির জন্য ভগবানকে ধন্যবাদ দেওয়া ও সেখান থেকে কিছু শেখার চেষ্টা করতে হবে। নিজেদের জন্য কোনো কিছু করার চেয়ে অধিক বেশি ভগবানের জন্যে করার চেষ্টা করতে হবে। এজন্যে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ও অধ্যবসায় থাকা প্রয়োজন। আমরা একে অপরকে সেই বিশ্বাস অর্জনের জন্য উৎসাহিত করতে পারি এবং তখন সেই বিশ্বাস বিস্তৃত হয়ে অপরকে সাহায্য করতে অনুপ্রাণিত হবে। এভাবেই আমরা একসময় আমাদের নিত্য আলয় ভগবদধামে প্রত্যাগমন করতে সমর্থ হব।
লেখক পরিচিতি : শ্রীমৎ ভক্তি তীর্থ স্বামী আমেরিকার ক্লেবল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই ধর্ম প্রচারক হওয়ায় তিনি ছিলেন আমেরিকান টেলিভিশনের বেশ পরিচিত মুখ। তিনি যুবক বয়সে ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর সিভিল রাইট মুভমেন্টের একজন নেতা হিসেবে কাজ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হন। তিনি মূলত সাইকোলজিতে ডিগ্রি লাভ করলেও রাজনীতি, আফ্রিকান স্টাডিজ ও আন্তর্জাতিক আইনসহ অনেক বিষয়ে তিনি দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তার রচিত অনেক গ্রন্থ রেফারেন্স গ্রন্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তিনি একসময় জাতিসংঘের উচ্চ পদস্থ সদস্যদের জন্য পারমার্থিক কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন। নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গেও বিশ্ব শান্তির জন্য তার দর্শন বিনিময় করতেন। উল্লেখ্য তিনি হলেন শ্রীল প্রভুপাদের অন্যতম প্রিয় শিষ্য। ২০০৫ সালের ২৭ জুন তিনি অপ্রকট হন।