এই পোস্টটি 39 বার দেখা হয়েছে
গত মার্চ-এপ্রিল ২০১০ ‘চৈতন্য সন্দেশ’ সংখ্যায় তিমি মাছকে গিলে খেতে পারে সেরকম একটি প্রাণীর অস্থিত্ব ছিল বলে একটি প্রতিবেদন ছাপানো হয়েছিল। বৃহদাকার এই মাছটিকে একসময় বৈদিক শাস্ত্র মতে ‘তিমিঙ্গিল’ নামে অভিহিত করা হত। যেটিকে আধুনিক বিজ্ঞানিরা নাম দিয়েছিল ‘মেগালডন’। তবে সেক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা সন্ধান পেয়েছিল শুধুমাত্র এ প্রাণীর বড় বড় দাঁতের। তা থেকেই তারা অনুমান করেছিল নিশ্চয়ই একসময় একটি জলচর বৃহদাকার প্রাণী বাস করত। কিন্তু ‘চৈতন্য সন্দেশে’ এ প্রাণীটির সমস্ত বৈশিষ্ট্য আগে থেকেই বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছিল। যদিও তখনও এ প্রাণীর বড় কোন ফসিল আবিষ্কৃত হয়নি। সেক্ষেত্রে গত মাসে বিবিসি ও সিএনএন যৌথভাবে একটি গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পরিবেশন করে। তাতেই উঠে এসেছে পৃথিবীতে এই প্রাণীটির অস্থিত্ব থাকার জোড়ালো দাবী। এক্ষেত্রে ‘চৈতন্য সন্দেশ’ নতুন এই ফসিল আবিস্কারের অনেক আগেই এ বিষয়ে পাঠকদেরকে অবহিত করেছিল। বিষয়টি সবার জন্যই খুবই আনন্দের, এ কারণে যে, আরো একবার প্রমাণিত হল বৈদিক শাস্ত্রের সকল তথ্য অভ্রান্ত। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে বিবিসি ও সিএনএন অবলম্বনে প্রচারিত খবরটি তুলে ধরা হল।
পেরুর মরুভূমিতে একদল গবেষক ‘সাগর দানব’-এর ফসিল আবিস্কার করেছে, যা আকারে মহাসাগরে বিচরণকারী এখনকার তিমির চোয়ালের চেয়ে তিনগুণ বড়। গবেষকরা ওই সাগর দানবের নাম রেখেছেন ‘লেভিয়াথান মেলভিল’। যার দাঁত দেখে মনে হবে, এট বুঝি প্রাগৈতিহাসিক কোনো হাতির দাঁত। তবে পেরুর উপকূলীয় অঞ্চলের পিসকো-আইকা মরুভূমিতে ফসিল আবিস্কারক গবেষক দলের নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞানী মেল রিউমার স্পষ্টতই জানিয়েছেন, ৩০ লাখ বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকায় কোনো হাতি ছিল না। আবিষ্কৃত প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল ১২০ থেকে ১৫০ লক্ষ বছর আগে। কাজেই ওটা হাতির দাঁত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।’
পেরুর রাজধানী লিমা থেকে ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ওই অঞ্চলে গবেষক দল এখন অন্য ধরনের তিমির ফসিল খুঁজে বেড়াচ্ছে। রটারডামে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের পরিচালক অধ্যাপক রিউমার জানান, যেখানে ফসিল পাওয়া গেছে, সেখান থেকে সবচেয়ে কাছের গ্রামের দূরত্ব হলো ২০ কিলোমিটার। জোরালো বাতাসে উড়ে আসা বালুতে আচ্ছন্ন ফসিলের খুলি লম্বায় ৩ মিটার। যদিও এখনকার নীল তিমির খুলিই এ পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া সব প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বড় লম্বায় প্রায় ৬মিটার।
চোয়ালের একটি হাড় ও কয়েকটি দাঁতসহ পেরুতে ওই ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রতিটি দাঁত ১২ সেন্টিমিটার ব্যাস এবং সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৩৬ সেন্টিমিটার। দাঁতের আকারই বলে দেয়, ওটা স্তন্যপায়ী ও অন্যান্য জীব শিকারে অভ্যস্ত কোনো প্রাণীর। সম্ভবত ব্যালিন বা টাকরার হাড়যুক্ত তিমির। ১২০ থেকে ১৫০ লক্ষ বছর আগে মাইওসিন যুগের মধ্যভাগে পৃথিবীতে যার অস্তিত্ব প্রচুর পরিমাণে ছিল বলে অধ্যাপক রিউমার জানান। কেন তাদের বিলুপ্তি ঘটল তার কারণ এখনও জানা না গেলেও ওই ডাচ গবেষক মনে করেন ‘বিরূপ জলবায়ু’ তার জন্য দায়ী। অধ্যাপক রিউমার জানান, আবিষ্কৃত ফসিলের সঙ্গে এখনকার রাক্ষুসে তিমির সবচেয়ে বেশি মিল রয়েছে। রাক্ষুসে তিমি সাগরের হাঙর, সিল, মাছ, পাখি এবং কখনও অন্যান্য তিমি খেয়ে বেঁচে থাকে। বিলুপ্ত ‘লেভিয়াথান মেলভিল’রাও জীবন ধারণের জন্য তাই করে বেড়াত। অন্যদিকে এখনকার স্পার্ম তিমির খাবার-দাবার সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের। সমুদ্রপৃষ্ঠের এক কিলোমিটার বা তারও নিচের স্কুইড বা শামুক জাতীয় ছোট ছোট মাছই তাদের মূল খাবার। ছোট দাঁত ও নিচু চোয়ালের জন্য তাদের পক্ষে বড় কিছু শিকার করে খাওয়া সম্ভব নয়।
পেরুর মরুভূমিতে খুঁজে পাওয়া তিমির ফসিলের নামকরণ করা হয়েছে হিব্রু ভাষায় ‘লিভিয়াথান’ এবং ‘মবিডিক’ উপন্যাসের লেখক হেরম্যান মেলভিলের নামের সঙ্গে মিলিয়ে। হিব্রু রূপকথায় সাগর দানবকে লিভিয়াথান বলা হয়। আবিষ্কৃত ‘লেভিয়াথান মেলভিল’-এর ফসিল পেরুর লিমা মুসিও হিস্টোরিয়া ন্যাচারালে সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তবে তার তিনটি দাঁত রটারডামের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে প্রদর্শন করা হবে। রিউমার জানান, ওই ধরনের আরেকটি ফসিলের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এই ফসিল আবিস্কার নিয়ে ‘দ্য সায়েন্টিফিক জার্নাল ন্যাচার’-এর ১ জুলাইর সংখ্যায় বিস্তারিত তথ্যসহ একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্রঃ সিএনএন ও বিবিসি
হরে কৃষ্ণ
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , অক্টোবর – ২০১০ ইং