এই পোস্টটি 35 বার দেখা হয়েছে
ভক্তিরসামৃত স্বামী মহারাজ
যম মানে হল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং নিয়ম মানে হল নিয়ম নীতিসমূহ। তাই ব্রহ্মা তার অবস্থানে রয়েছে কিছু কঠোর নিয়মনীতি অনুসরণের মাধ্যমে। এবং তাই তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। তিনি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি কার্য সম্পন্ন করেন যিনি জীবদের মধ্যে উচ্চতর স্থলে অবস্থিত। শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, ‘কেউ একটি উচ্চতরে অধিষ্টিত হতে পারে না যদি না সে যে স্তরে অধিষ্টিত হতে চাই তবে তাকে খুব কঠোরভাবে বৈদিক শাস্ত্রে প্রদত্ত নিয়ম নীতিসমূহ অনুসরণ করতে হবে। এটিই হচ্ছে বৈদিক সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শ্রীমদ্ভাগবত হতে দেখা যায় যে, পুরাকালে রাজারা তাদের সন্তানদের এবং প্রজাদেরকেও নিয়ম- নীতিসমূহ কঠোরভাবে অনুসরণ করার বিধান রয়েছে। আমরা দেখতে পাই দক্ষ প্রজাপতি যদিও তারা ভক্ত ছিলেন না কিন্তু কর্মকাণ্ডীয় বিধান অনুসারী। তিনি তার দশ হাজার পুত্রকে পরবর্তীতে এক হাজার পুত্রকে পাঠিয়েছিলেন তপস্যা করার জন্য। একইভাবে শ্রীমদ্ভাগবত অনুসারে অনেক রাজাই তাদের সন্তানদের কঠোর নিয়ম-নীতি অনুসরণের মাধ্যমে তপস্যাই ব্রতী হওয়ার জন্য নির্দেশ দিতেন। এমনকি ভগবান শ্রীকৃষ্ণও নিজেই একটি উৎকৃষ্ঠ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। যখন তিনি দ্বারকায় বাস করতেন তখন তিনি ব্রাহ্ম মুহুর্তে শয্যা ত্যাগ করতেন এবং পরে তার দৈনন্দিন কার্যকলাপ সমূহ শুরু করতেন। তিনি ঠাণ্ডা জলে স্নান করতেন এবং তিনি একজন গৃহস্থ এবং ক্ষত্রিয় হিসেবে প্রয়োজনীয় যা যা বৈদিক নিয়ম-নীতিসমূহ অনুসরণ করা প্রয়োজন তিনি সেগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করতেন। ব্রাহ্মণদের দান করতেন ইত্যাদি।
অপরপক্ষে কেউ তার জীবনের যে কোন পরিস্থিতিতেই থাকুক না কেন তাকে অবশ্যই নিয়ম-নীতিসমূহ (তপস্যা) বা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। কেউ হয়ত বলতে পারে ও আমি উন্নত স্তরে যেতে চাই না তা হলেও উত্তর হবে যে আপনি ইতোমধ্যেই একটি উন্নতস্থর অর্থাৎ মানব শরীরে অবস্থান করছেন। এ মানব শরীর হল এই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উন্নত স্তরের আর তাই এটিকে যোগ্য সহায়তা দেয়ার জন্য অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের তপস্যা নিয়ম-নীতিসমূহ অনুসরণ করতে হবে। ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্যাখ্যা করেছেন,
রাগদ্বেষবিমুক্তেস্ত বিষয়ানিন্দ্রিয়ৈশ্বরন ?
আত্মবশ্যৈবিধেয়াত্মা প্রসাদম ধিগচ্ছতি৷৷ ২/৬৪॥
সংযতচিত্ত মানুষ প্রিয় বস্তুতে স্বাভাবিক আসক্তি এবং অপ্রিয় বস্তুতে স্বাভাবিক বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হয়ে, তাঁর বশীভূত ইন্দ্রিয়ের দ্বারা ভগবদ্ভক্তির অনুশীলন করে ভগবানের কৃপা লাভ করেন।”
এমনকি তিনি যদিও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ে নিয়োজিত তবু তিনি বিশেষভাবে তার ইন্দ্রিয়গুলিকে উপভোগ করেন। কিন্তু আত্মবশ্যৈবিধেয়াত্মা, তিনি কিছু বিধি বা নিয়মকানুন অনুসরণ করেন। শ্রীল প্রভুপাদ এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করছেন। তিনি মুক্তির নৈমত্তিক বিধি বা নিয়মসমূহ অনুসরণ করেন এবং তাই তিনি তার ইন্দ্রিয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। আত্মবশ্যে এখানে বশৌ মানে বশীভূত করা। আত্ম মানে ইন্দ্রিয়গুলোকে বোঝানো হয়েছে। তিনি ইন্দ্রিয়গুলোকে বশীভূত করেন। প্রসাদমদিগচ্ছতি এভাবে তিনি নিজেকে যোগ্য করে তোলেন ভগবানের অপ্রাকৃত কৃপা লাভ করার জন্য। এখানে একটি খুব সুন্দর বিষয় হল যদি তুমি সত্যিই মুক্ত হতে চাও। যদি কেউ মুক্ত হতে চাই তবে আমাদের স্বাধীনতাকে প্রতিরোধ করার শিক্ষা জানতে হবে। পারমার্থিক স্তরে থেকে প্রকৃত মুক্তি কি সে সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা জড়জগতের তথাকথিত মুক্তি জড়জাগতিক দিকে পরিচালিত করে। বৈদিক শাস্ত্রানুসারে নিয়ম-নীতিসমূহ অনুসরণ করলে তখন তাকে বলা হয় পারমার্থিক অগ্রগতি। এভাবে কেউ ভগবানের অপ্রাকৃত কৃপা লাভ করেন। প্রসাদমবিগচ্ছতি শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করেন, “কৃপা’ অর্থ হল ভক্ত সর্বদা প্রস্তুত ভগবানের সন্তুষ্টিবিধানের জন্য কর্ম করার জন্য এবং ভগবান প্রদত্ত নিয়ম-নীতির আদর্শসমূহ অনুসরণ করার জন্য এবং তার নিজের সন্তুষ্টিবিধানের জন্য কোন কিছুই করেন না’। তাই শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করেন, এই প্রকার ভক্ত সর্বদা এমন কর্ম করতে ইচ্ছুক যার মাধ্যমে শ্রী ভগবানের সন্তুষ্টি বিধান হয়। এমনকি সে প্রকার কর্ম ভক্তের কাছে অনাকাঙ্খিত মনে হলেও অপরপক্ষে এই প্রকার ভক্ত এমনকিছু পরিত্যাগ করে যা শ্রীভগবান আদেশ করেছেন। এই প্রকার পরিত্যাগ সেটি যে কোন পরিস্থিতিতেই করার জন্য ভক্ত সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। এটিই হচ্ছে ভগবানের ‘কৃপা’। এ ধরনের দৃঢ়তা, মানসিকতা, এই মনোভাব হল ভগবানের ‘কৃপা’।
হরে কৃষ্ণ।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , আগস্ট ২০১০ ইং