এই পোস্টটি 31 বার দেখা হয়েছে
শ্রীশ্রী গিরিরাজ
স্পৃশতি যদি কদাচিচ্ছদ্ধয়া হেলয়া বা সকৃদপি গিরিরাজস্যৈকমূর্তিঃ কুচিদ যঃ।
দ্বিজসুরনরঘাতী তস্করো বান্তকালে ব্রজতি স হরিলোকং স্বেষ্টদাসত্বমাপ্য ॥
গর্গ সংহিতা-গিরিরাজ খণ্ড ১০ম অধ্যায়
যে কোন ব্যক্তি যদি শ্রদ্ধাপূর্বক অথবা অশ্রদ্ধা করে শ্রীগিরিরাজ মহারাজের এক মূর্তির কখনও কোথাও একবার মাত্র স্পর্শ করে, সে ব্যক্তি যদি ব্রহ্মঘাতী, দৈবঘাতী, নরঘাতী বা চৌর্য্যকর্মে রত হলেও অন্তকালে স্বীয় উপাস্যদেবের দাসত্ব লাভ করে বৈকুন্ঠে গমন করবেন।
শ্রী নারদ বললেন-এ বিষয়ে এক প্রাচীন ইতিহাস দৃষ্টান্তরূপে পাওয়া যায়। তা শ্রবণমাত্র মহাপাপ বিনষ্ট হয়। গৌতমীতীরে বিজয় নামে এক ব্রাহ্মণ বাস করতেন, তিনি নিজ ঋণগ্রহণার্থ পাপনামিনী মথুরায় আগমন করেন। হে মৈথিল! তিনি নিজ কাজ সেরে ঘরে যেতে যেতে গোবর্দ্ধনতটে উপস্থিত হন এবং সেখান থেকে বর্তুলাকার একখণ্ড শিলা গ্রহণ করত বনপথে ব্রজমণ্ডল হতে ধীরে ধীরে বহির্গমন করেন। তিনি সামনে এক ভয়ংকর রাক্ষস দেখলেন; ঐ রাক্ষসের বুকে মুখ, তিনটি পা, ছয়টি হাত, ঠোটগুলো খুব পুরু, নাক এক হাত লম্বা, লম্বা লম্বা কেশ, চোখ রক্তিমবর্ণ, দাতগুলো বাঁকানো এবং ভয়ংকর। হে রাজন তা দেখে পালাতে অপারগ ব্রাহ্মণ বসে পড়েন, তাকে ভক্ষণ করার জন্য রাক্ষস ঘুঘুর শব্দ করে সামনে আসল। ব্রাহ্মণ গোবর্দ্ধনজাত সেই পাষাণ দ্বারা তাকে প্রহার করলেন। সে গিরিরাজশিলাঘাতে রাক্ষস তনু ত্যাগ করে পদ্মপত্রবৎ আয়তনেত্র শ্যামসুন্দর দেহ মুকুট কুণ্ডলমণ্ডিত বংশীধর সৌন্দর্য্যে দ্বিতীয় কামদেবেরমত হয়ে করজোড়ে প্রণাম করল। সিদ্ধ বললেন,-হে মহামতে তুমি পরিত্রাণপরায়ণ, অতএব ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ ও ধন্য, আমি তোমা কর্তৃক রাক্ষসত্ব হতে মুক্ত করতে কেউ সমর্থ নহে।
তারপর নারদমুনি গোবর্দ্ধন পরিক্রমায় যে ফল লাভ হয় তার বর্ণনা করলেন। মানব গন্ধমাদন যাত্রায় যে ফল লাভ করে, গিরিরাজ গোবর্দ্ধন দর্শনে তার কোটিগুণ বেশী ফল লাভ হয়।
কেদারে পাঁচহাজার বছর তপস্যায় যে ফল লাভ হয়, তা ক্ষণমাত্রে গোবর্দ্ধনে লাভ করতে পারে। মলয়াচলে স্বর্ণ দানে যে ফল, গোবর্দ্ধনে একমাস মাত্র বাস করলে তার কোটিগুণ ফল লাভ হয়। ঋষভ পর্বত, কূটক পর্বত ও কোলক পর্বতে যে ব্যক্তি স্বর্ণ সহ কোটি গাভী দান করে এবং যত্ন সহকারে বিপ্রগণের পূজাতে যে মহাপূণ্য হয় তার থেকেও লক্ষগুণ পূণ্য গোবর্দ্ধন গিরিতে লাভ হয়। ঋষ্যমুখ, সহ্য এবং দেবগিরি এমনকি সমস্ত পৃথিবী পরিক্রমায় যে পূণ্য ফল হয় একমাত্র গিরিরাজ গোবর্দ্ধন পরিক্রমায় তার কোটিগুণ ফল লাভ হয়। শ্রীরামনবমী দিনে চিত্রকূটের পয়স্বিনীতে, বৈশাখের শুক্ল তৃতীয়ায় পারষাত্রে, দ্বাদশীদিনে নীলাচলে এবং সপ্তমীতে ইন্দ্রকালে যে স্নান, দান ও তপস্যাদি ক্রিয়া, ভারতের এইরূপই পূণ্যপ্রভাব যে, সমস্ত কোটিগুণ ফল লাভ হয় গোবর্দ্ধন পর্বতে সেসমস্ত ফল লাভ হয়। যে ব্যক্তি কৃষ্ণভক্ত হয়ে গোবর্দ্ধনের বিশাল গোবিন্দকুণ্ডে স্নান করে, তার কৃষ্ণসারূপ্য লাভ হয়, সংশয় নাই। সহস্র অশ্বমেধ ও শত রাজসূয় যজ্ঞফল গোবর্দ্ধনের একমাত্র মানসীগঙ্গার পুণ্যফলের সমান নহে। তাই গিরিরাজের সমান তীর্থ নাই, হবেও না।
প্রতিবছর বৃন্দাবনের মত ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র তীর্থ স্থান দর্শনের জন্য ইস্কনের উদ্যোগে তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। তাই আপনারা যদি এসব তীর্থস্থান সমূহ দর্শনের অভিলাষ করেন তবে নিকটস্থ ইস্কন মন্দিরে যোগাযোগ করুন।
হরে কৃষ্ণ।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , নভেম্বর – ২০১০ ইং