ঘুরে আসি বৃন্দাবন

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ | ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ | ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 66 বার দেখা হয়েছে

ঘুরে আসি বৃন্দাবন

যোগমায়া মন্দির

ভগবানপি তা রাত্রী: শারদোৎফুল্লমল্লিকাঃ।

বীক্ষ্য রন্তুং মনশ্চক্রে যোগমায়ামু পাশ্রিতঃ ॥

ষড়ৈশ্বর্যপূর্ণ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অস্ফুটিত মল্লিকা কুসুমরাশি সুরভিত সেই শরৎকালীন রজনী অবলোকন করে তাঁর যোগমায়া শক্তির প্রভাবে তাঁর প্রেমময় লীলা উপভোগের অভিলাষ করলেন। (শ্রীমদ্ভাগবত-১০/২৯/১)

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং নিজের যে শক্তির প্রভাবে বৃন্দাবনে দিব্য লীলাবিলাস করে থাকেন তা হল যোগমায়া শক্তি। অপ্রাকৃত ধাম বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ কোথায় কি ধরনের লীলাবিলাস করবেন। তার মূল রচয়িতা হলেন শ্রীপৌর্ণমাসীদেবী তথা যোগমায়া। শ্রীপাদ রঘুনাথদাস গোস্বামীপাদ বলেছেন-“যিনি প্রতিদিন নিগূঢ়ভাবে পরম সুবিদগ্ধা ললিতাদি সখীগণদ্বারা প্রেমভরে সুষ্ঠুরূপে শ্রীরাধাকৃষ্ণের মান, অভিসারাদি পরিপুষ্ঠ করে সেখান থেকে উত্থিত সুখামৃতরস পুনঃ পুনঃ আস্বাদন করছেন, সেই ব্রজধামের নিয়ত কল্যাণকারিনী ভগবতী শ্রী পৌর্নমাসী দেবীর ভজন করি।” ভগবতী শ্রীপৌর্ণমাসীদেবী দেবর্ষী নারদের প্রিয়শিষ্যা। ভৌমলীলায় তার পুত্র ছিলেন সান্দীপনি মুনি যিনি কৃষ্ণ বলরামের শিক্ষক তথা গুরুদেব ছিলেন। নিজ অভিষ্টদের শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেমবশত এবং কৃষ্ণভজনের উদ্দেশ্য তিনি নিয়ত গোকুল এবং বৃন্দাবনে বসবাস করছেন।

শ্রীপৌর্ণমাসী দেবীর কৃপা হলে শ্রীরাধাকৃষ্ণের যুগলরূপ দর্শন করা যায় যা ব্রহ্মারও দুর্লভ। বৃন্দাবনের সেবাকুঞ্জে তথা নিকুঞ্জবনে পৌর্ণমাসীদেবীর মন্দির বিদ্যমান। এখানে ৫০০ বছরেও পূর্বের প্রাচীন দেবীর বিগ্রহ দর্শনীয়। এছাড়া বৃন্দাবনে প্রাচীন গোবিন্দদেব মন্দিরের পাশেও একটি মন্দির রয়েছে। সর্বদা রাধাকৃষ্ণের প্রেমময়ী সেবায় রত যোগমায়া হচ্ছেন সেবাকুঞ্জ তথা বৃন্দাবনের দ্বারী।

দেবী পৌর্নমাসীর কৃপা : একবার রামদাস নামক এক ভক্ত বৃন্দাবনে গিয়েছিলেন রাধাকৃষ্ণ ভজনের উদ্দেশ্যে। বৃন্দাবনে ট্রেনে যাওয়ার পথে তিনি এক বৃদ্ধার সাথে পরিচিত হলেন যিনি রামদাসকে বৃন্দাবনে গোবিন্দদেব মন্দিরে নিয়ে গেলেন। গোবিন্দদেব মন্দিরের ডানপাশের এক মন্দিরে গিয়ে, ভেতরে সংকীর্ণ পথে প্রবেশ করার সময় সেই বৃদ্ধা রামদাসকে বললেন “আসুন, এটিই আমার ঘর।” যেই মুহুর্তে রামদাস ভেতরে প্রবেশ করলেন তখনই সেই বৃদ্ধা অন্তর্হিতা হলেন এবং রামদাস ভগবতী যোগমায়ার ‘অপূর্ব শ্রীবিগ্রহ দেখতে পেলেন। যোগমায়ার কৃপা বুঝতে পেরে তখনই তিনি ভুলুন্ঠিত হলেন। আর একবার তিনি কালিয়হ্রদে কদম্ববৃক্ষের নিচে নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন। তখন তার স্বপ্নে এক দিব্য দেবীর আবির্ভাব হল যার জ্যোতি ছিল হাজার হাজার চন্দ্রের জ্যোতির মত। সেই দেবী রামদাসের কানে মন্ত্র উচ্চারণ করছিলেন। সকালে রামদাস এক ব্রজবালা কুঠিরে গিয়ে তাকে সেই বৃত্তান্ত বললে সেই ব্রজবালা তাকে বলেন যে, তিনি সাক্ষাৎ যোগমায়ার কৃপা প্রাপ্ত হয়েছেন এবং অচিরেই তার আরাধ্য ভগবান শ্রীরাধাকৃষ্ণের দর্শন হবে।

ব্রজের বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমণকালে রামদাস একবার রাধাকুণ্ড পরিভ্রমন করলেন। তিনি রাধাকুণ্ড ও শ্যামকুণ্ডের সঙ্গমস্থানের উপর এক স্থানে উপবেশন করে আছেন। হঠাৎ তিনি দর্শন করলেন যে, রাধাকুণ্ডের তীরে দুই অপূর্ব জ্যোতির্ময় গোপী দাড়িয়ে আছেন এবং পরস্পর বার্তালাপ করছেন। সেই গোপীদের অপূর্ব মুখশ্রী দর্শন করা মাত্রই রামদাসের হৃদয়ে কৃষ্ণপ্রেমের সঞ্চার হল এবং তিনি তৎক্ষণাৎ শ্রীমতি রাধারাণীর অনুগত এবং সখীতে রূপান্তরিত হলেন। ধীরে ধীরে রাত্রি নেমে এল। একসময় হাসতে হাসতে গোপীরা এলেন এবং রামদাসকে বললেন তাদের অনুগমন করতে। রামদাস তার অপ্রাকৃত মঞ্জরী দেহ নিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলেন যে, এক বটবৃক্ষে অপূর্ব সাজে সজ্জিত দোলনায় রাধাকৃষ্ণ বসে আছেন। চতুপার্শ্বে গোপীগণ সেই দোলনা অপূর্ব গীতবাদ্য সহকারে সামনে পেছনে দোলাচ্ছিল। রামদাস তথা রাধাদাসী সেই অপ্রাকৃত গোপীদেহ নিয়ে রাধাকৃষ্ণের দিব্যরূপ দর্শন করলেন। এরপর হঠাৎ সবকিছু অদৃশ্য হয়ে গেল কিন্তু রামদাসের সেই গোপীদহে মার গেল না সেটি স্থায়ীরূপ ধারণ করল।

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।