এই পোস্টটি 70 বার দেখা হয়েছে

বেদে কি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা আছে?
বেদে কি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা আছে? বেদে তো ভগবানকে ব্রহ্ম বলা হয়েছে! ‘বেদ’ কথাটির অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। সৃষ্টির আদিতে প্রজাপতি ব্রহ্মা সেই জ্ঞান প্রাপ্ত হন শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে। অথর্ব বেদে সেই কথা বলা হয়েছে- যো ব্রহ্মা বিষয়াতি পূর্বং যো বৈ বেদাংশ্চ গাপয়তি স্ম কৃষ্ণঃ। অর্থাৎ, “ব্রহ্মা, যিনি পূর্বকালে জগতে বৈদিক জ্ঞান প্রদান করেন, সেই জ্ঞান তিনি সৃষ্টির আদিতে যাঁর কাছ থেকে প্রাপ্ত হন তিনি হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ।” মহর্ষি ব্যাসদেব শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার পুরুষোত্তম যোগ অধ্যায়ে (১৫/১৫) ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উক্তি বিবৃত করেছেন।
বেদৈশ্চ সর্বৈঃ অহমের বেদ্যো বেদান্তকৃদ্ বেদবিদের চাহম্ ॥ “আমিই সমস্ত বেদের জ্ঞাতব্য বিষয়, আমি সমস্ত বেদান্ত কর্তা ও বেদবেত্তা।” ঋক্ বেদে বলা হয়েছে- ওঁ কৃষ্ণো বৈ সচ্চিদানন্দঘনঃ কৃষ্ণ আদিপুরুষঃ কৃষ্ণঃ পুরুষোত্তমঃ কৃষ্ণো হা উ কর্মাদিমূলং কৃষ্ণঃ স হ সর্বৈকার্যঃ কৃষ্ণঃ কাশংকৃদাদীশমুখপ্রভুপুজাঃ কৃষ্ণোহনাদিত্তমিল্ল জাণ্ডান্তর্বাহ্যে যন্মঙ্গলং তল্লভতে কৃতী ॥ অর্থাৎ, “শ্রীকৃষ্ণই সৎ, চিক্ ও আনন্দঘন শ্রীবিগ্রহ, শ্রীকৃষ্ণই আদি পুরুষ, শ্রীকৃষ্ণই পুরুষোত্তম, শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত কর্মের মূল, সর্বকার্যের উৎস। শ্রীকৃষ্ণ সকলের একমাত্র প্রভু, শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব ইত্যাদি ঈশ্বর প্রমুখ দেবগণের প্রভু এবং পূজ্য। শ্রীকৃষ্ণ আদিরও আদি (অনাদি)। ব্রহ্মাণ্ডের অন্তরে ও বাইরে যত মঙ্গল, কৃষ্ণসেবক কৃতী ব্যক্তি সেই সমস্ত মঙ্গল শ্রীকৃষ্ণেই লাভ করে থাকেন। এই রকম ভুরি ভুরি শাস্ত্রবাক্যের মাধ্যমে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর রূপে বেদে উল্লেখ থাকলেও বর্তমান কলিযুগের দুবুদ্ধি ও হীনবুদ্ধি মানুষেরা পরম নিয়ন্তা পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান না বলে নাকি ‘জীবই ভগবান’, ‘মানুষই ভগবান’, ‘বৈজ্ঞানিকই ভগবান’, ‘কালী দুর্গা ভগবান’, ‘নিরাকার ব্রহ্মই ভগবান’, ‘অমুক বাবা ভগবান’, ‘তমুক যোগী ভগবান’, ‘আমি ভগবান’।এইভাবে অসংখ্য মনগড়া গাদা গাদা ভগবানকে আবিষ্কার করে চলেছে। এমন কি কলিযুগের মানুষের মনে সন্দেহ হচ্ছে যে, বেদে শ্রীকৃষ্ণের কথা নাও থাকতে পারে। এখনও কলির বাবা ঠাকুর অনেক গজিয়েছেন। তাদের কথাও নাকি বৈদিক শাস্ত্রে রয়েছে বলে অনেকে দাবিও করছেন যে, সেই বাবাগুলি নাকি ভগবান এবং তারা নাকি শ্রীকৃষ্ণের বিশেষ নম্বরের অবতার। অর্থাৎ কৃষ্ণকে ভগবান রূপে স্বীকার করলেও কতকগুলো যোগীবাবার অন্যতম তাদের দেখা বাবাকে ভগবান বলে মানুষের বদ্ধ ধারণা আছে, যতই সেই বাবা অভক্ত হন না কেন। প্রকৃতপক্ষে সর্ববেদে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ^র ভগবান বলা হয়েছে। অন্য কাউকে নয়। ব্রহ্ম হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানের অঙ্গজ্যোতি মাত্র।
নারায়ণ থেকে কৃষ্ণের প্রকাশ, না কি কৃষ্ণ থেকে নারায়ণের প্রকাশ?
কৃষ্ণই আদিপুরুষ।কৃষ্ণের প্রকাশ হচ্ছেন চতুর্ভূজ নারারণ।
কৃষ্ণের প্রকাশ নারায়ণ শাস্ত্রে কহে।
নারায়ণ হইতে কৃষ্ণ-হেন বাক্য নহে ॥
(শ্রীচৈতন্যমঙ্গল মধ্য ২/৫৪)
শ্রীমদ্ভভাগবতম দশম স্কন্ধে বর্ণিত হয়েছে, বৃন্দাবনে লোকপিতামহ ব্রহ্মা এসে শ্রীকৃষ্ণের স্তব করছেন।
নারায়ণং ন হি সর্বদেহিনা
মাত্মাসাধীশাখিললোকসাক্ষী।
নারায়ণোহঙ্গং নরভূজলায়নাং
তচ্চাপি সত্যং ন তবৈব মায়া॥
হে সর্বেশ্বর, আপনি সর্বজীবের আশ্রয় স্বরূপ নারায়ণ। আমি আপনার থেকে উদ্ভূত হয়েছি। হে অধীশ, আপনার নারায়ণত্বের আরও কারণ রয়েছে, আপনি অখিল লোকসাক্ষী এবং ত্রিকালজ্ঞ। ‘নার’ অর্থাৎ জলে অয়ন অর্থাৎ শয়ন যাঁর, সেই নারায়ণ হচ্ছেন আপনারই অংশ প্রকাশ। আপনার বিলাস-মূর্তি মাত্র। এ সমস্ত আপনার অচিন্তা শক্তির পরিচয় এবং পরম সত্য। এ মায়া নয়।
(শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩৮/৩৮)
জলশারী অন্তর্যামী যেই নারায়ণ।
সেহো তোমার অংশ, তুমি মূল নারায়ণ
(চৈতন্যচরিতামৃত আদি ৩/৬৯)
কৃষ্ণ যদি পরমপিতা আদিপুরুষ হন, তবে তাঁর মা-বাবা থাকা কিভাবে সম্ভব?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, জন্ম কর্ম চ মে দিব্যম্ (গীতা ৪/৯) ‘আমার জন্ম এবং কার্যকলাপ সবই দিব্য অপ্রাকৃত।’ ভগবান কারও বা কোন কিছুর অধীন নন। তাঁর ইচ্ছায় সব কিছুই হতে পারে। তাই কারও পুত্ররূপে কিংবা সখারূপে তিনি লীলাবিলাস করতে পারেন। মায়াবদ্ধ জীব আমরা জন্ম-মৃত্যু গ্রহণ করতে বাধ্য হই। কিন্তু মায়াধীশ শ্রীকৃষ্ণ কোনও কিছুতে বাধ্য নন। নরলীলা প্রকাশ করবার জন্য তিনি পিতামাতার কোলে শিশুরূপে আবির্ভূত হতে পারেন। শ্রীকৃষ্ণ উল্লেখ করেছেন, যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্ (গীতা ৪/১১) যে যেভাবে আমার প্রতি আত্মসমর্পণ করে, প্রপত্তি করে, আমি তাকে সেই ভাবেই পুরস্কৃত করি।’ পরমেশ্বর ভগবানকে পুত্ররূপে লাভ করবার জন্য শ্রীনন্দ-যশোদা ও শ্রীবসুদেব-দেবকী জন্মজন্মান্তরে কঠোর সাধনায় ব্রতী হয়েছেন। এইরূপ ঐকান্তিক ভক্তের সন্তোষ বিধান করতে ভগবানও তাঁদের পুত্ররূপে লীলাবিলাস করতে অভিলাষ করেন। আর এই জন্ম ও কর্মলীলা আমাদের জড়বুদ্ধির বিচার্য বিষয় নয়। ভগবান সর্ব অবস্থাতেই ভগবান। মানুষরূপে কিংবা অন্য যে কোনও রূপে আবির্ভূত হলেও তাঁর ভগবত্তা লাঘবের কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
‘কৃষ্ণ’ শব্দটির ব্যাখ্যা কি?
শ্রীল শ্রীধর স্বামী ‘কৃষ্ণ’ শব্দের ব্যাখ্যায় লিখেছেন- কৃষিভূর্বাচকঃ শব্দো নশ্চ নিবৃতিবাচকঃ।
‘কৃষ্’ ধাতু আকর্ষণ বাচক এবং ‘ণ’ পরমানন্দ বাচক। অর্থাৎ, যিনি জীবদেরকে মায়ার কবল থেকে আকর্ষণ করে নিজ নিত্য দাস্যে নিয়োগ পূর্বক পরমানন্দ প্রদান করেন, তিনিই কৃষ্ণ।