এই পোস্টটি 952 বার দেখা হয়েছে
গুরু প্রণাম:
ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ৷৷
গুরুপুর্নিমা একটি বৈদিক প্রথা যার মধ্য দিয়ে শিষ্য তাঁর গুরুকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। প্রাচীন আর্য সমাজে শিক্ষক বা গুরুর স্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা বোঝা যায় যখন ছাত্র-শিক্ষক বা গুরু-শিষ্য পরম্পরাকে সম্মানিত করতে একটি দিন উৎসর্গ করা হয়। সেই সময়ের সমাজব্যবস্থায় অন্য কোনও সম্পর্ক এত গুরুত্ব পেত না। গুরুকে শ্রদ্ধা জানাতে বৈদিক যুগ থেকেই আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিকে বিশেষ ভাবে নির্ধারণ করে ‘গুরুপূর্ণিমা’ উদযাপন করা হয়।
গুরু শব্দটি সংস্কৃত, ‘গু’ এবং ‘রু’ এই দুটি শব্দ দ্বারা গঠিত। গু শব্দের অর্থ অন্ধকার বা অজ্ঞতা এবং রু শব্দের অর্থ আলো। অর্থাৎ যিনি অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যান তিনিই গুরু। মনের অন্ধকারকে দূর করে শিষ্যকে আলোর পথ দেখান গুরু। কোনও কোনও সময় এই পূর্ণিমা শ্রাবণ মাসে পড়ে যায়৷ বৌদ্ধ ধর্মেও গুরুপূর্ণিমার গুরুত্ব অসীম | বলা হয়, বোধিজ্ঞান লাভের পরে আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় সারনাথে প্রথম উপদেশ দেন গৌতম বুদ্ধ। আবার হিন্দু পুরাণে আছে শিবের মাহাত্ম্য। মহাদেব হলেন আদি গুরু। তাঁর প্রথম শিষ্য হলেন সপ্তর্ষির সাতজন ঋষি – অত্রি, বশিষ্ঠ, পুলহ, অঙ্গীরা, পুলস্থ্য,
মরীচি এবং ক্রতু ( নাম নিয়ে মতভেদ আছে)। আদিযোগী শিব এই তিথিতে আদিগুরুতে রূপান্তরিত হন। তিনি এদিন ওই সাত ঋষিকে মহাজ্ঞান প্রদান করেন। তাই এই তিথি হল গুরুপূর্ণিমা |
এ পবিত্র তিথিতেই জন্ম নিয়েছেন অখিল বেদবিদ্যার ধারক, ভগবানের অবতার শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস। তিনি ছিলেন ঋষি পরাশর এবং মৎস্যগন্ধা সত্যবতীর সন্তান। জন্মের পরে তাঁকে পরিত্যাগ করেন জন্মদাত্রী সত্যবতী। এই সন্তানই মহাঋষিতে পরিণত হন। তিনি চতুর্বেদের সম্পাদনা ও পরিমার্জনা করেন, ১৮ টি পুরাণ ছাড়াও রচনা করেন মহাভারত এবং শ্রীমদ্ভগবৎ | শ্রীল ব্যাসদেব এবং তাঁর প্রতিনিধিস্বরূপ গুরুবৃন্দের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তিথি এটি৷ গুরুদেবের আবির্ভাবতিথির বিকল্প হিসেবে এ তিথি পালনীয়৷ একে ব্যাসপূর্ণিমাও বলা হয়৷ আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথি হওয়ায় এটি আষাঢ়ী পূর্ণিমা নামেও পরিচিত৷ নেপালে এই দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়৷
মায়াবদ্ধ জীবের পক্ষে স্বাভাবিকভাবে কৃষ্ণচেতনা জাগরিত করা অত্যন্ত দুষ্কর৷ তাই, পরম্পরাক্রমে শাস্ত্রজ্ঞান আচার ও প্রচারের মাধ্যমে গুরুদেব বদ্ধজীবদের যথার্থ মার্গ প্রদর্শন করে থাকেন৷ এর মাধ্যমে তাঁরা শ্রীল ব্যাসদেবের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন
মায়ামুগ্ধ জীবের নাহি স্বতঃ কৃষ্ণ জ্ঞান
জীবেরে কৃপায় কৈলা কৃষ্ণ বেদ-পুরাণ৷৷
(চৈ.চ. মধ্য)
তাই, শ্রীকৃষ্ণ মহামুনি ব্যাসদেবরূপে এত বিশাল শাস্ত্রভাণ্ডার রচনা করেছেন যা অপৌরুষেয়৷ কোন সাধারণ জীবের পক্ষে তা রচনা করা সম্ভব নয়৷ তাই, তাঁর এ মহৎকার্যকে সম্মান প্রদর্শন এবং কৃতজ্ঞতার সাথে উদযাপনের দিবস হিসেবে গুরুপূর্ণিমা সাড়ম্বরে পালিত হয়৷
শ্রীল ব্যাসদেব কী জয়!