কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন এই জগতের ত্রুটিগুলি ধরিয়ে দিচ্ছে

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 27 বার দেখা হয়েছে

কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন এই জগতের ত্রুটিগুলি ধরিয়ে দিচ্ছে

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ১৯৭৬ সালের ২জুলাই ওয়াশিংটনে ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ও তাঁর কতিপয় শিষ্যের সঙ্গে কথোপকথনের অংশ বিশেষ।

শ্রীল প্রভুপাদ: রাশিয়ার একসময় ক্রশ্চেভ ছিল ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রনায়ক। কিন্তু এখন সে কোথায় ? শেষ হয়ে গেছে। কেউ তার খবর রাখে না। কেউ জানে না সে কোথায় ?

হরিশৌরি: তারা তাকে অবসর নিতে বাধ্য করেছে। তারা তাকে মস্কোর বাইরে একটা ছোট্ট জায়গা দিয়েছে।

শ্রীল প্রভুপাদ: তুমি সেটা জানো ?

হরিশৌরি: হ্যাঁ, এরকম বলা হয়ে থাকে যে পাঁচ বৎসর চলার পর তারা তাকে অফিস থেকে প্রায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দিয়েছে। এখন সে কিছুই করছে না, কেবলমাত্র একা একা বেঁচে আছে।

শ্রীল প্রভুপাদ: আর সে কি করছে ? কিচ্ছু না। কি করেছে সে?

বৃষাকপি: তারা কৃষ্ণকে পুজো করতে চায়, কিন্তু তারা জানে না, কেমন করে সেটি করবে ?

শ্রীল প্রভুপাদ: না। তারা কাউকেই পূজো করতে চায় না। কেবল তারা তাদের ইন্দ্রিয়ের আরাধনা করতে চায়। সেটিই সব। ইন্দ্রিয় সন্তুষ্টি। ইন্দ্রিয়ের দ্বারা যা নির্দেশিত হবে তারা সেটিকে আরাধনা করতে সম্মত হবে। ইন্দ্রিয়ের দাস। এই জড় জগতে কেউই কাউকে পূজো করে না। প্রত্যেকেই তাদের নিজের নিজের ইন্দ্রিয়ের সেবা করছে। “আমি এটা পছন্দ করি।” সেটিই সব। বাংলায় একটি গান রয়েছে “চোখে যদি লাগে ভালো কেন আমি দেখব না।” অর্থাৎ “আমার চোখ যদি সন্তুষ্ট হয়, তাহলে আমি কেন দেখব না? আমি দেখব।” এই হচ্ছে গানটির সারমর্ম। সকলেই ইন্দ্রিয়ের সন্তুষ্টি বিধান করতে চেয়ে, ইন্দ্রিয়ের দাস হতে চায়। যদি ইন্দ্রিয় বলে “এটা কর।” সে সেটি করবে। কৃষ্ণ যা বলেন। ঠিক বিপরীত। যতদিন পর্যন্ত আমি ইন্দ্রিয়সমূহের নির্দেশ বহন করব, ততদিন পর্যন্ত আমি এই জন্ম, মৃত্যু, দেহান্তরের সঙ্গে যুক্ত থাকব। আজকে আমি এখানে একটি সুন্দর গাড়িতে চড়ছি। পরবর্তীতে আমি হয়ত এখানে একটি গাছ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকব। কে এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? মৃত্যুর পর তুমি সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতির আইনের অধীন। তোমার জীবনও সম্পূর্নরূপে প্রকৃতির আইনের অধীন। এ ব্যাপারে কোন আলোচনা, কোন উপলব্ধি, কোন জ্ঞান মানুষের নেই। পরবর্তীতে আমরা কি ধরনের দেহ লাভ করতে চলেছি কেউই – তা জানি না। তথা দেহান্তরপ্রাপ্তি। আমাদেরকে এই দেহের পরিবর্তন করতেই হবে। তাই আমাদের বর্তমান জীবনটিই সবকিছু। এই দেহটিই সবকিছু। অত্যন্ত বিপজ্জনকও। কেউই অনুসন্ধান করে না কোথা থেকে আমাদের এই দেহটি এলো? তারাও জীবন যাপন করছে। তারাও আহার করছে। বৃক্ষসমূহ, তারাও জল খাচ্ছে।

বিপিন: অল্প কিছুদিন আগে বিমান-বন্দরে আমাদের এক গ্রন্থ- বিতরণ করেছে যিনি সম্প্রতি ‘দ্য ফোর্থ ডাইমেশন’ নামে একটি বই লিখেছেন।

তিনি আমাদের গ্রন্থ পাঠ করে ভক্তদের সঙ্গে কথা বলে মুগ্ধ হয়েছেন। আর মাঝে মাঝে আমাদের মন্দিরে আসছেন। তিনি আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য আসতে চাইছেন।

শ্রীল প্রভুপাদ: তুমি কি কোন দিন ঠিক করেছ?

বিপিন: হ্যাঁ। যদি আপনি অনুমোদন করেন, তাহলে তিনি আসবেন। তিনি অত্যন্ত ভদ্র, কিন্তু মিশ্র- ধারণা যুক্ত।

শ্রীল প্রভুপাদ: প্রত্যেকের ধারণাই মিশ্র ধারণা, কেননা তারা যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত নয়। তারা কিছু ধারণা লাভ করেছে, তাদের কিছু প্রশ্ন রয়েছে, কিন্তু যতক্ষন পর্যন্ত না সে সঠিক ব্যক্তির কাছে আসছে, সে সঠিক জ্ঞান লাভ করবে না। তদ্‌ বিজ্ঞানার্থং স গুরুমেবাভিগচ্ছেৎ। তাই যথার্থ গুরুর কাছে আসা আবশ্যক।

বিপিন: সকলেই ভ্রান্ত তত্ত্ববেত্তাকে গ্রহণ করছে।

শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। কারণ তারা ইন্দ্রিয় সন্তুষ্টির দ্বারা ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। এমনকি তারা যদি গুরুর কাছে যায়ও এবং গুরু যদি তাদের সন্তুষ্ট করতে না পারে তাহলে তারা সেই গুরুকে পছন্দ করবে না। কেননা তারা ইন্দ্রিয়সমূহের বশে রয়েছে। তারা আশা করে যে, সেই গুরুও তাঁর ইন্দ্রিয়সমূহকে সন্তুষ্ট করবে তাহলেই সে গুরু। যদি গুরু তাঁর ইন্দ্রিয় সন্তুষ্টির বিরুদ্ধে কিছু বলে তাহলে, “ওহ, সে গুরুই নয়।” (হাস্য) গুরুকেও এমন একজন ব্যক্তি হতে হবে যে তাদের ইন্দ্রিয়গুলোকে সন্তুষ্ট করবে।

বিপিন: ঐ লেখক ভদ্রলোক ঐসব গ্রন্থগুলি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পড়ে দেখে মনে করেছেন যে, আপনি অত্যন্ত উন্নত বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ব্যক্তি। এ ব্যাপারে তিনি আমাদের একটি চিঠি লিখেছেন। তিনি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। দেখা যাক,তিনি হয় শুনতেও পারেন।

শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ, আমরা এই জগত সম্বন্ধে কিছু বলছিনা, কেবলমাত্র এই জগতের ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিচ্ছি। “এই জগত” এর অর্থ হচ্ছে ইন্দ্রিয় সন্তুষ্টির জগত।

হরে কৃষ্ণ ,


মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , আগস্ট ২০১০ ইং

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।