এক চোখা গুরু (শেষ পর্ব)

প্রকাশ: ১১ মে ২০২২ | ১০:০০ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১১ মে ২০২২ | ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 235 বার দেখা হয়েছে

এক চোখা গুরু (শেষ পর্ব)

ভারতে গত ৭০০ বছরে যা মোগল শাসন পারেনি, ২০০ বছরে ব্রিটিশ শাসন পারেনি,
তা টেলিভিশন মাত্র কয়েক দশকেই করে দেখিয়েছে।

চৈতন্য চরণ দাস ও সর্বাত্মা দাস


গত পর্বের প্রতিবেদনটির সমাপ্তি ঘটে শ্রীল প্রভুপাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি প্রদানের মাধ্যমে। উদ্ধৃতিটি ছিল “যদি আমরা কৃষ্ণ কর্তৃক সম্মোহিত না হই তবে আমরা অবশ্যই টেলিভিশনের মাধ্যমে সম্মোহিত হব।” এই পর্বে টেলিভিশনের মাধ্যমে আমরা কিভাবে সম্মোহিত হয়ে পড়ি তার কিছু দৃষ্টান্ত এবং বিবিধ সমস্যার সমাধান প্রসঙ্গে তুলে ধরা হল।
টেলিভিশনে মূলত মানুষের চিন্তা ভাবনাগুলোকে প্রদর্শন করা হয়। আর দর্শকেরা সেই ভাবনাগুলো দর্শন ও শ্রবণ করে থাকে। নিম্নে কিছু বিষয় এখানে তুলে ধরা হলো।

টিভি সিরিয়াল

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও ভারত জুড়ে টিভি সিরিয়ালগুলো বেশ বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। শোনা যায় বিশেষত নারীদের কাছে এই সিরিয়ালগুলো বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো আপনি এই সিরিয়ালগুলো থেকে কি শিক্ষা লাভ করে থাকেন। এখানে সাধারণত পারিবারিক বিষয়গুলো নিয়ে প্রজল্প করা হয় মাত্র। মানুষ জড়জগতে এমনিতেই দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে এই সিরিয়ালগুলো নতুন নতুন আরো দ্বন্দ্ব তুলে ধরে। যেমন- স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, বউ-শ্বাশুড়ীর দ্বন্দ্ব, প্রতিবেশী-প্রতিবেশী দ্বন্দ্ব, এমনকি দেশে-দেশে দ্বন্দ্ব নিয়ে মোটামুটি সবকিছু সাজানো হয়। বোকা দর্শকদের কাছে সেই দ্বন্দ্বগুলোই বিনোদনের প্রধান খোড়াক।
এখন কেউ হয়তো বলতে পারে আমরা তো শুধু আর দ্বন্দ্বগুলো দর্শন করছিনা কিভাবে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষরা এই নাটক সিরিয়ালগুলোতে সমাধান বা মোকাবেলা করে তার জন্য দেখি? কিন্তু এর উত্তরটি হলো ওরা সমাধানটি কিভাবে দিবে, নিশ্চয়ই তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ জাগতিক কোনো অস্থায়ী সমাধান দিবে। কিন্তু আপনার চরিত্রকে বা চিন্তা-ভাবনাগুলোকে সিরিয়ালগুলো আরো বিভ্রান্ত করছে মাত্র। তাই এগুলো বিনোদন নয় বরং দ্বন্দ্বের খোড়াক।
পরিচালকরা তাদের সিরিয়ালগুলোর TRP রেইট বা জনপ্রিয়তা বাড়াতে কত অদ্ভুত অদ্ভুত ধারণা তুলে ধরে যার নেতিবাচক প্রভাব সমাজে খুব ভালোভাবেই প্রতিফলিত হচ্ছে। ব্যাপারগুলো এমন হয়ে গেছে স্বাভাবিক সুস্থ চিন্তা-চেতনার পরিবর্তে মানুষ এখন একজন অন্যজনকে দেখে সন্দেহ আর নেতিবাচক ভঙ্গিতে। কারণ তার মনে যে নাটক সিরিয়ালগুলোর বিভিন্ন চরিত্র সঞ্চিত রয়েছে। গত পর্বে উল্লেখ করা হয়েছিল মানুষ যা ভাবে, তারই প্রতিচ্ছবি ঘটে সমাজে। অন্যকথায় “The world is the mirror of consciousness” অর্থাৎ “এই জগৎ হল আপনার চেতনার আয়না।

সামাজিক প্রতিফলন

ইন্টারনেটে একজন দর্শক নিন্মের তাৎপর্যপূর্ণ উক্তিটি করেছেন, “সমাজ থেকে পারিবারিক মূল্যবোধগুলো এখন হারিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ালগুলো দেখে মনে হয় যৌথ পরিবারে থাকাটা সবদিকে ক্ষতিকর। যারা এগুলো তৈরি করে তারা একটি বার্তাই প্রদান করছে যে, সুখে থাকার জন্য একক পরিবারে থাকাই উত্তম। এটি ভারতীয় (বাংলাদেশেও) সমাজকে ধ্বংস করছে। দুঃখজনকভাবে ভারতসহ ভারতের বাইরের পরিবারগুলো এমনভাবে এগুলো দেখে, যেন রস পায়, কিন্তু তারা এটি ধরতেও পারে না যে এর মধ্যে বিষ লুকিয়ে রয়েছে।
হ্যাঁ, আসলেই বিষ লুকিয়ে রয়েছে। কৃষ্ণভাবনার সঙ্গে সম্বন্ধ নয় এমন সব কিছুই বিষ । যে বিষ একটি সুস্থ পরিবারকে অসুস্থ করে দিতে পারে।
শুধু তাই নয় গত মাস দুয়েক আগে প্রথম আলোর অনলাইনে একটি সংবাদ ছিল যে, ‘কিরণ বালা’নামে একটি নাটক দেখাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের একটি জায়গায় দুই নারীর ঝগড়ার সূত্র ধরে তুমুল হট্টগোল লেগে যায়। এরকম নাটক দেখাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাবশত হত্যাও হয়েছে।

চলচ্চিত্র

প্রতি মাসেই হলিউড, বলিউড, টালিউড, ঢালিউড ব্যস্ত হয়ে পড়ে রঙরঙা সব চলচ্চিত্র বের করার জন্য। মূলত দুই ধরনের ছবি সবসময় দর্শকদের তালিকায় শীর্ষে থাকে সেগুলো হল ১. নারী-পুরুষের ভালোবাসার চলচ্চিত্র ২. সহিংসতামূলক চলচ্চিত্র।
এ সমস্ত চলচ্চিত্রগুলো বিশেষত নতুন প্রজন্মের জন্য একটি অত্যন্ত লোভনীয় বিনোদন বা আলোচনার বিষয়। ইদানিং দেখা যাচ্ছে শিশু কিশোররাও পিতা-মাতার প্রশ্রয়ে সিরিয়াল, নাটক, চলচ্চিত্র দেখার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। নারী-পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে এ পর্যন্ত হাজার হাজার চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। নতুন প্রজন্ম শিখছে কিভাবে এ ধরনের সম্পর্ক করতে হয় এবং এ জন্যে রয়েছে কত বিনোদনমূলক ধারণা। তারা শিখছে পোশাক পরিচ্ছদ ও আচরণের সমসাময়িকতা সম্পর্কে। এসব চলচ্চিত্রগুলোর মাধ্যমে শিখছে সমস্যার সমাধানস্বরূপ অকল্পনীয় ও সহিংসতামূলক পদ্ধতি।
পূর্বের প্রজন্ম ও নতুন প্রজন্মের চিন্তা-চেতনা পার্থক্য খুব সহজেই সমাজে প্রদর্শিত হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে দয়া-ভাব সহনশীলতা, ক্ষমা ইত্যাদি গুণের পরিবর্তে আগ্রাসী, অসষ্ণুিতা, নির্দয় মনোভাব বর্ধিত হচ্ছে। অশালীন চলচ্চিত্র দর্শনের মাধ্যমে কামার্ত হয়ে অস্থিরমতি ও উত্তেজিত হয়ে সমাজে উৎপাত সৃষ্টি করছে। অথচ আজ থেকে বিশ-ত্রিশ বছর পূর্বেও যুবক-যুবতীদের মধ্যে ধর্মীয় মানসিকতার কারণে সমাজের জন্য সৃজনশীল চিন্তার প্রতিফলন ঘটত।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকার বক্স অফিসে প্রতি বছর যতগুলো ছবি মুক্তি পেয়েছে সেগুলোর শীর্ষ ২৫টি মুভিতে দেখা যায় ৮৫% এরও বেশী ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শিত হয়েছে। আবার আর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ১৯৯৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আমেরিকার বক্স অফিসে হিট করা ১০০টি মুভিতে সিগারেটের ব্যবহার প্রবলভাবে দৃশ্যায়িত হয়েছে। একজন বিশেষজ্ঞ ড. জেমস সার্জেন্টের গবেষণায় উঠে এসেছে শিশুদের চলচ্চিত্রে প্রতি পাঁচটি ফিল্মের মধ্যে একটিতে সিগারেটের ব্র্যান্ডের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। বিশেষত সেগুলো অভিনেতাদের মাধ্যমে যখন প্রদর্শিত হয় তখন সেটি সিগারেটের বিজ্ঞাপনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এই ছবিগুলোর মধ্যে বিখ্যাত ‘হোম এলোন টু’ও রয়েছে। ১৯৯০ সালের পূর্বে টোবাকো কোম্পানিগুলো ফিল্ম স্টারদের হাতে সিগারেট ধরিয়ে দেয়ার জন্য হাজার পাউন্ড অর্থ ব্যয় করেছে। যাদের লক্ষ্য এ সমস্ত ফিল্মস্টারদের মাধ্যমে তাদের ভক্তরাও বিশেষত যুবক গোষ্ঠীগণ আসক্ত হয়ে পড়বে।
বিবিসি নিউজের একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় টিনেজাররা তাদের প্রিয় মুভি স্টারদের অনুসরণ করে ধূমপানে অগ্রসর হয়। ইংল্যান্ডের একটি এলাকায় ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৬৩২ জন যুবকদের ধূমপান অভ্যাসের পেছনের কারণ গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে তারা প্রিয় মুভি স্টারদের চালচলন গভীরভাবে অনুসরণ করে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, যে সমস্ত প্রিয় অভিনেতারা ধূমপানের বিষয়টি দৃশ্যায়ন করে না তাদেরকে অনুসরণ করার চেয়ে যে সমস্ত অভিনেতা ধূমপায়ী তাদেরকেই বেশী তারা অনুসরণ করে। একজন অভিনেতা যত বেশী ধূমপান করবে তত বেশী তার ভক্তদের বদভ্যাস গাঢ় থেকে গাঢ় হয়।
শুধুই কি হলিউডে, বলিউড, টালিউড, ঢালিউড যাই বলেন না কেন যে কোনো চলচ্চিত্রে নামী দামী অভিনেতারা ধূমপান, মদ্যপান কিংবা নারী সঙ্গের দৃশ্য চিত্রায়ন করে তা ভক্তদের কাছে একটি ফ্যাশন বা আধুনিকায়নে রূপ দেয়। কোনো একজন প্রিয় অভিনেতা/অভিনেত্রীর আদর্শ বা চালচলন যেন আজকের সমাজেই প্রতিফলিত হচ্ছে। ফ্যাশনের নামে কুরুচিপূর্ণ বস্ত্র পরিধান, কথা বলার ধরণ, এমনকি খাদ্যাভাসেও ক্ষতিকর প্রভাব রাখছে। যা একটি সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমনকি ছোটদের কার্টুনেও কিছু কিছু চরিত্রে ধূমপানের ব্যবহারের ফলে কোমলমতি শিশুদের মাঝেও ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। যা পরবর্তী জীবনে তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

প্রাচীন টিভি প্রোগ্রাম
চৈতন্য চরণ দাস

প্রত্যেক আধুনিক গৃহে টেলিভিশন একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। বলা হয় যে, অধিকাংশ আধুনিক লোকেদের অতি আবশ্যকীয় চাহিদার মধ্যে টেলিভিশন অন্যতম যা আধুনিক গদবাঁধা যান্ত্রিক জীবনধারার একঘুঁয়েমি ও দুঃশ্চিন্তা থেকে কিছুটা বিরতি প্রদান করে। যদিও টেলিভিশনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে এখানে সেখানে কিছুটা কানাঘুষা হয়, কিন্তু সেগুলো টেলিভিশনের উপভোগ্যতার প্রবল হট্টগোলের নীচে ঢাকা পড়ে যায়। সমাজকর্মীদের মাধ্যমে দর্শকদের কল্যাণের আগ্রহে টেলিভিশন চালানো হয় না, বরং টেলিভিশন চালায় ব্যবসায়ীরা। যারা ব্যবসায় লাভের জন্য যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত। যদিও লোকেরা টেলিভিশনের বিভিন্ন প্রোগ্রামের স্বাদ গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়, কিন্তু তারা খুব কমই অবগত যে, তাদের মনের মধ্যে কিরকম মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করে। প্রায় কোনোরকম ব্যতিক্রম ছাড়া টিভি প্রোগ্রামগুলো যেস্তরের ঐশ্বর্য ও উপভোগ্যতা প্রদর্শন করে তা সাধারণ মানুষরা ঠিক সেভাবে অর্জন করতে পারে না। এ সমস্ত প্রোগ্রামগুলোর মাঝে মাঝে প্রলুব্ধ করা হয় বিভিন্ন জমকালো প্রসাধনীর বিজ্ঞাপন, যা শ্রোতাদর্শকদের হৃদয়ে অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিসীম বাসনা ও আনন্দ লাভের উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ফলাফল হলো লোকেদের আচরণটা রীতিমত প্রোগ্রাম করা রোবটের মতো হয়ে যায়, যারা যে কোনো উপায়ে হোক টিভিতে প্রদর্শিত উপভোগ্য জীবন লাভের জন্য অর্থ আয়ের তাগিদে কঠোর পরিশ্রম করে। এখানে যে বিষয়টি উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ যে, টিভি ক্ষতিবিহীন নিষ্কলুষ বিনোদন প্রদান করে না। এটি লোকেদের মূল্যবোধ ও লক্ষ্যও নির্ধারণ করে দেয়। টেলিভিশন আধুনিক লোকেদের গুরু হয়ে উঠেছে। এটি শিক্ষা দিচ্ছে, কিভাবে পোশাক পড়তে হয়, হাঁটতে হয়, খেতে হয়, কথা বলতে হয়। অর্থাৎ টিভি একটি শিক্ষাগুরু। পরিসংখ্যান বলছে, তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশে টিভির সূচনা’র দুই বছরের মধ্যেই অপরাধের হার দশগুণ বেড়ে গিয়েছে। গড়ে ১জন আমেরিকান শিশু ১০ বছর বয়সে পৌঁছার পূর্বেই হাজার হাজার খুন, দর্শন ও অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম টেলিভিশনে দর্শন করে। টিভির মাধ্যমে এরকম সহিংসা কার্যক্রমের সংস্পর্শে এসে সন্তানরা যখন বিদ্যালয়ে বন্দুক নিয়ে তাদের শিক্ষক ও সহপাঠীদের হত্যা করে তখন আমেরিকান পিতা-মাতারা কি হতবুদ্ধি অনুভব করেন না? অনেক বুদ্ধিমান আমেরিকান যেমন ফিল্মস্টার, সমাজসেবী ও জাতীয় নেতারা এখন হাতে হাত মিলিয়ে ‘নো টিভি’ ক্যাম্পেইন গঠন করেছে। তারা এবং তাদের সন্তানরা অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া টিভি দেখা কমিয়ে দিয়েছে। তাদের এই উদ্বিগ্নতা অবশ্যই জাগতিক। অতিরিক্ত টিভি দেখার ফলে সৃজনশীলতা নষ্ট করে, উদ্যমহীনতা সৃষ্টি করে এবং সময় নষ্ট করে। কিন্তু অপরপক্ষে ভারতের প্রেক্ষাপটে যেখানে রয়েছে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে মহিমান্বিত সংস্কৃতিমূলক ও পারমার্থিক ঐতিহ্য সেখানেই টিভির প্রতিক্রিয়া অধিক ছলনাপূর্ণ। ভারতে গত ৭০০ বছরে মোগল শাসন যা পারেনি, ২০০ বছরে বৃটিশ শাসন যা পারেনি তা টেলিভিশন মাত্র কয়েক দশকেই করে দেখিয়েছে। টেলিভিশন মারাত্মকভাবে বৈদিক সংস্কৃতিকে অকল্পনীয় ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। অতীতে ভারতের প্রায় সবাই সন্ধ্যায় স্থানীয় মন্দিরে যেতো অথবা নিকটস্থ বটবৃক্ষতলে বসে ভজন কীর্তন গাইতো এবং ভগবানের মহিমা শ্রবণ করতো কিংবা আত্মা ও ভগবানের সম্পর্ক সম্বন্ধীয় ভগবদ্গীতার বার্তা শ্রবণ করত। তখন তাদের মন ও হৃদয় চিন্ময় শব্দতরঙ্গে উদ্ভাসিত হতো। এরপর লোকেরা সানন্দে ঘুমাতে যেতো এবং পরদিন প্রত্যুষে উৎসাহের সহিত জাগ্রত হতো এবং জীবনের পরম লক্ষ্য ভগবদ্ধামে প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে অগ্রগতি সাধনের প্রয়াস করত। আজকাল একত্রে ভগবানের মহিমা কীর্তন করতে আসার পরিবর্তে লোকেরা এখন একত্রে আধুনিক বিগ্রহ টিভির সম্মুখে এসে উপস্থিত হয়। তারা একত্রে বসে কলুষময় প্রবৃত্তিতে লিপ্ত হয়, কামনা বাসনার আগুনে প্রজ্বলিত হয়, অসন্তুষ্টতা ও হতাশ হয় এবং ইডিয়ট বক্স প্রদত্ত তথাকথিত আনন্দের মাঝে সুখের অলীক কল্পনা করে।
যেখানে ভারতীয়রা পারমার্থিক পাণ্ডিত্য ও সংস্কৃতি দিয়ে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে সেটাতো দূরের কথা শ্রীল প্রভুপাদ শোক করেছেন যে, ভারতীয়রা রত্নের ওপর বসে থেকে ভাঙা কাঁচের ভিক্ষা মাগছে। টিভির মাধ্যমে পশ্চিমা সংস্কৃতির ক্রমাগত আক্রমনের শিকার হওয়ার পরিবর্তে তাদের সুযোগ রয়েছে তাদের হৃদয়ে সুপ্তভাবে বিরাজিত চিন্ময় প্রেম ও সুখের যে ঐশ্বর্য রয়েছে তা সমগ্র জগতে বিতরণ করা। টেলিভিশনের প্রকৃত অর্থ হলো “দূর থেকে দর্শন করা” যেটি সঞ্জয় হস্তিনাপুর থেকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ দর্শন করে ধৃতরাষ্ট্রকে যুদ্ধের বর্ণনা শুনিয়েছিলেন। এভাবে ভগবদ্গীতার বার্তা হলো ভারতের প্রাচীন টিভি প্রোগ্রাম চলুন আমরা সবাই দেখি, শ্রবণ করি ও উপলব্ধি করি সেই প্রকৃত অলৌকিক টেলিভিশন থেকে আগত চিন্ময় বার্তাসমূহ। চলুন আমরা সম্মিলিতভাবে সমগ্র বিশ্বে গীতার অগাধ পাণ্ডিত্য প্রচার করি এবং তার ফলে আমরা নিজেরা সুখী হই এবং সেসাথে সারা বিশ্বকে একটি চিরস্থায়ী সুখের পথে পরিচালিত করি।


 

অক্টোবর – ডিসেম্বর ২০১৬ ব্যাক টু গডহেড
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।