এই পোস্টটি 283 বার দেখা হয়েছে
রামায়নে রাম লীলার সুপ্রসিদ্ধ কাহিনীসমূহ শুধু বর্তমান ভারতবর্ষেই সীমাবদ্ধ ছিল না পক্ষান্তরে শ্রীলঙ্কা এবং ইন্দোনেশিয়ায় এ রাম লীলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিষয়টি হয়ত আপনারা আগে থেকে অবগত কেননা গত কিছুদিন আগে ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কার সরকার জনসমক্ষে প্রচার করেছিল যে রামায়নের প্রামাণিক লীলাস্থলী এসব দেশেও রয়েছে। চৈতন্য সন্দেশ’ পত্রিকায়ও এ বিষয়টি খুব ঢালাওভাবে বিশ্লেষণ করেছিল। তার সূত্র ধরে আরও একটি সনাতন ধর্মের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রামাণিক নিদর্শন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল। তবে এক্ষেত্রে আমাদের এবারের বিষয় ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত সবচেয়ে পুরানো ও দেশটির সবচেয়ে বড় মন্দির ‘পরমবনাম মন্দির’। মন্দিরটিকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সুবিশাল মন্দির হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এটি তৈরি করেছিলেন রাখায় পিকাতন নামের এক রাজা। মন্দিরটি অনেক পুরাতন হলেও ২০০৬ সালের ইন্দোনেশিয়ায় সংঘটিত প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের কারণে অনেকাংশেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এর সংস্কার করা হয় এবং জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। পরমবনাম মন্দিরটির পুরো কাঠামো তিনটি বলয় দ্বারা গঠিত। মধ্যবর্তী যে বলয়টি রয়েছে সেটি ২২৪টি পৃথক পৃথক ছোট মন্দিরের ৪টি সারি দ্বারা গঠিত। এই মন্দিরগুলোকে ‘চান্দি পারওয়ারা’ বলে ডাকা হয়। বলা হয়ে থাকে যে এ চারটি পৃথক সারি দ্বারা সনাতন ধর্মে বর্ণিত ৪টি জাতি/বর্ণকে বোঝানো হয়েছে। যাতে করে প্রত্যেক বর্ণের লোকেরা এ মন্দিরে প্রবেশ করতে পারে। এই তিনটি বলয়ের মধ্যে সবচেয়ে পবিত্রতম তিনটি প্রধান মন্দির রয়েছে যাদেরকে একত্রে ‘ত্রিমূর্তি’ নামে অভিহিত করা হয়। এই ত্রিমূর্তি দ্বারা ব্ৰহ্মা, বিষ্ণু ও দেবাদিদেব মহাদেবকে বোঝানো হয়েছে।
শিব মন্দিরটিতে ৫টি পৃথক কক্ষ রয়েছে। সবচেয়ে পূর্বদিকের যে কক্ষটি রয়েছে তাতে তিন মিটার উঁচু একটি অতি প্রাচীন শিব মূর্তি রয়েছে। অপর কক্ষগুলোতে শিবসহ তার সহধর্মিনী দুর্গাদেবী, ঋষি অগস্ত্য এবং গণেশের প্রাচীন মূর্তি রয়েছে। ব্রহ্মা মন্দির ও বিষ্ণু মন্দিরগুলোতে পৃথক পৃথকভাবে যথাক্রমে ব্রহ্মা ও শিবের প্রাচীন মূর্তি বিদ্যমান। এই তিনটি মন্দিরের সম্মুখে কিছু ছোট ছোট মন্দির রয়েছে। এই ছোট মন্দিরগুলো উৎসর্গ করা হয়েছে যথাক্রমে বাল নন্দি (শিবের ভক্ত), অংস (ব্রহ্মার ভক্ত) এবং বিষ্ণুর বাহন গরুড় পক্ষীকে। ইন্দোনেশিয়ায় গরুড় পক্ষিকে সে দেশের বিমান সংস্থায় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ‘গরুড় এয়ারওয়েজ’ নামে একটি বিমানও রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়।
মন্দির কাঠামোর গায়ে প্রাচীন রামায়নের কাহিনীসমূহ খোদাইকৃতভাবে প্রদর্শিত রয়েছে। রামায়নের মহাকাব্যিক ঘটনাসমূহ রামায়ন ব্যালট নামক প্রোগ্রামের সহায়তায় দর্শনার্থীদের মাঝে তুলে ধরা হয়। তবে তা প্রতি পূর্ণিমায় পরমবনাম মন্দিরের ত্রিমূর্তি মন্দিরে উন্মুক্ত পর্দার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন লীলাসমূহের উপর ভিত্তি করে প্রামাণিক চিত্র ও কাহিনীসমূহ বিষ্ণু মন্দিরটিতে জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) এ প্রাচীন ও সুবিশাল মন্দিরটিতে বিভিন্ন পারমার্থিক কার্যাবলী প্রদর্শনের মাধ্যমে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করে থাকে। গত কিছুদিন আগে ‘রামায়ন গীতিনাট্য’ নামক একটি নাটক মঞ্চস্থ হয় যা পরমবনাম মন্দিরটির দর্শনার্থীদের খুব আনন্দ প্রদান করে। হরে কৃষ্ণ ॥