ইউক্রেনিয়ান গোলরক্ষক হরেকৃষ্ণ ভক্ত

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২২ | ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২২ | ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 148 বার দেখা হয়েছে

ইউক্রেনিয়ান গোলরক্ষক হরেকৃষ্ণ ভক্ত

২০ বছরের খেলোয়াড়ী জীবনের অভিজ্ঞতা ও ভক্তিযোগের অনুশীলনের মাধ্যমে এক ভক্ত যেভাবে অন্যান্য খেলোয়াড়দের জন্য দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করে।

দিমিত্রি পোভোরোজনিয়াক একজন নিরামিশাষী ও যোগ অনুশীলনকারী। তিনি ভারতে তীর্থ ভ্রমণে অংশগ্রহণ করেছিলেন। একজন তার একটি সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন সেই সাক্ষাতকারের উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে তুলে ধরা হল ।
—তবে কি আপনাকে একজন সাধু বলে ডাকা যাবে ?
—ঠিক সত্যিকার অর্থে না। একজন সাধু বৈরাগ্যের জীবন অবলম্বন করেন। সেইক্ষেত্রে আমার তো স্ত্রী রয়েছে এবং আমি একজন গৃহস্থ, বলতে পারেন জীবনে কিছু দিক পরিবর্তন হয়েছে। সাধারণ লোকদের জন্য মনে হতে পারে এটি বৈরাগ্যের নিদর্শন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমার জীবন কিছু সীমাবদ্ধতা ও বিধিনিষেধ এর জীবন। এই জীবনের মাধ্যমে আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা ও সুখ অর্জন করতে পারি । যদিও ব্যাপারটি শুনতে একটু অদ্ভুত মনে হতে পারে। যখন থেকে আমি ভগবানের সেবা শুরু করেছি তখন থেকে জীবনে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদ অনুভব করেছি।
—প্রকৃতপক্ষে কখন নিজের মধ্যে আভ্যন্তরীণ বিপ্লবের মুহূর্ত সূচিত হয়েছিল ?
—ঠিক সেইরকম সুনির্দিষ্ট কোন মুহূর্ত নেই। মূলকারণটি হল আমার জীবনটি অসন্তোষে ভরা ছিল। অধিকাংশ ফুটবলারই কারণ বিহীন জীবন পথে পরিচালিত হয়। ১৬ বছরের মধ্যে একজন কনিষ্ঠ ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে অনেক ভাল বেতন পেতে শুরু করেছিলাম । এই বয়সে কাধেঁর উপর বোঝা থাকে না। এখনো নেই কারণ আমার পিতা মাতা থাকে অন্য একটি শহরে। এমতাবস্থায় মনে হবে আপনি পৃথিবী শাসন করছেন। সম্পূর্ণ স্বাধীন, পুরো বিশ্বটাই হাটু বরাবর অবস্থান করছে। আর তখনই আপনি যতসব আজেবাজে কাজকর্মে লিপ্ত থাকা শুরু করেন। স্টাইলিশ কাপড়-চোপড়, গাড়ি, সুন্দরী নারী, বিনোদন ইত্যাদি কতকিছুতে লিপ্ত হওয়া ।
–আমি ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যে ঠিক এই রকম অবস্থায় ছিলাম। সেইটি ছিল এক দীর্ঘ ম্যারাথন। আমি আর্সেনাল, ট্রান্সকারপাথিয়া, ওবোলন এ খেলেছিলাম। সেগুলোতে ভালই আয় হয়েছিল। কিন্তু যতই গভীরে এই পথ ধরে অগ্রসর জীবনের অসন্তুষ্টতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছিল । প্রায়ই আমি ডিসকোতে সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরতাম আর ভাবতাম : হায় ভগবান! আমার গতি কোথায় ?” জাগতিক সমৃদ্ধির সবকিছুই আমার ছিল, কিন্তু তবুও এর মাঝে ছিল না কোন সন্তুষ্টি ও সুখ। এই ভাবনা গুলো আমার মাঝে পুনঃজাগরণ শুরু করে ।
–তো এই অবস্থায় আপনি ঠিক কি করেছিলেন ?
–একসময় সিদ্ধান্ত নিলাম আমি ৪০ দিনের একটি ব্রত গ্রহণ করব, যেখানে আহারে কোন মাংস, মাছ ও ডিম থাকবে না। এগুলো ত্যাগ করার পর আমার ভাল অনুভব হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আমার মন শুদ্ধ হচ্ছে রবিন শৰ্মা নামে এক লেখকের গ্রন্থ “মংক” হাতে পাওয়ার পর কিছু জিনিস আবিষ্কার করলাম। গ্রন্থটিতে যথাযথ পুষ্টি ও ধ্যান বিষয়ে লিখা ছিল। সেটি আমাকে আকর্ষণ করেছিল। আর তাই চেষ্টা শুরু করলে ২০০৯ সালে সম্পূর্ণ রূপে মাংস বর্জন করে একজন নিরামিশাষীতে পরিণত হই। এর পিছনে কোন পারমার্থিক কারণ ছিল না। আমি প্রাণীদের মৃত্যু সম্পর্কে অত গভীরভাবে ভাবিনি। শুধু মনে হয়েছিল নিরামিষ খাদ্যাভাষ, ধ্যান অনুশীলন শারীরিক ও মানসিকভাবে উত্তম। কিন্তু একসময় ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে শুরু করলাম নিরামিশাষী হওয়ার সুফলতার গভীর কারণগুলো।
– কিন্তু ডাক্তারা বলে যে, ক্রীড়াবিদদের মাংস খাওয়া প্রয়োজন। তবে কি এটা কি শুধুই কথিত বিষয় ?
– অবশ্যই। আমি হচ্ছি এর জীবন্ত দৃষ্টান্ত । আমি আমার ইন্দ্রিয় উপলব্ধি, শরীর এবং কতটুকু বোঝা শরীর বহন করতে পারে সেই বিষয়ে অবগত। আর্সেনালে থাকা সময় আমাদের অবিশ্বাস্য রকমের বোঝা বহন করতে হত । প্রতি মিনিটে হৃদয় স্পন্দ ১৮০ বিটে পৌঁছাত এবং এমনকি তা কোন কোন সময় দু’শো ছাড়াতো। কিন্তু শারীরিক ভাবে আমি খুব ভাল অনুভব করেছিলাম। প্রত্যেকে বলাবলি করছিল মাংস ছাড়া কোন শক্তি অর্জন করা যায় না। কিন্তুআমার জন্য তা বিপরীত হয়ে দাড়ালো। এই রকম অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে যারা নিরামিশাষী হওয়ার পর সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি করতে পেরেছিল । এটি একটি ভাবার বিষয়। আপনি যদি শিকারী পশু যেমন বাঘের দৃষ্টান্ত দেখেন তবে তারা শিকার ধরার জন্য বেশিক্ষণ দৌড়াতে পারে না ৷ পক্ষান্তরে নিরামিশাষী পশুদের শারীরিক বল অনেক বেশি। তারা অতি সহজে দমে যায় না। বাঘ বাসনা, আগ্রাসনের দ্বারা পরিচালিত হয়। আমি যখন মাংস খেতাম তখন লক্ষ্য করতাম আমার বল ছিল আগ্রাসন ও ক্রোধে। কিন্তু আগ্রাসন ও ক্রোধের শক্তির প্রয়োজন নেই, বিশেষত গোলরক্ষকদের মধ্যে। আমাদের অর্থাৎ গোলরক্ষদের যেটি প্রয়োজন তা হল পূর্ণ মনোযোগ এবং মাঠে কি হচ্ছে সে সম্পর্কে সঠিক বিশ্লেষণের ক্ষমতা। এই জন্যে শীতল মতিষ্কের প্রয়োজন হয়। হাঙ্গেরীতে আমি প্রায় অনুশীলনের সময় ভাল ফলাফল পেতাম। মাংস হজমের জন্য শরীরের অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়। আমাদের ১২ মিটার দীর্ঘ নাড়ি-ভুঁড়ি এই হজম শক্তি খরচ করার জন্য অভ্যস্ত নয়। এর মধ্যে সেগুলো পচন ধরে রক্তে ইনফেকশন শুরু করে।
–যদি এটি বিজ্ঞানসম্মত বিষয় হয় তবে ফুটবল ক্লাবগুলো কেন তাদের খেলোয়াড়দের মাংস বর্জনের জন্য বলে না ?
–এই বিশ্বে অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো নিয়ে বিজ্ঞানীরা ভুল করে থাকে। অনেক বছর ধরে ডারউইন তত্ত্ব বিদ্যালয়গুলোতে শিখানো হত । কিন্তু বর্তমানে সেই তত্ত্বটি যে ভ্রান্ত সেইটি প্রমাণিত হয়েছে। একসময় ম্যাকডোনাল্ডের খাবারকে বিবেচনা করা হত ভাল ও সুস্বাদু হিসেবে। পিতা-মাতারা তাদের সন্তাদেরকে সেখানে নিয়ে যেত। যতসময় গড়িয়েছে প্রত্যেকে বুঝতে পারলো যে প্রকৃতপক্ষে সেই খাবারগুলো তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। অর্থাৎ এই রকম অনেক কিছুই অজ্ঞানতার দ্বারা প্রকাশিত হয় ।
বর্তমানে লোকেরা স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য প্রয়াস করছে। আমি শুনেছি অনেক ফুটবল দল এখন গরুর মাংস ও শুকরের মাংস বর্জন করেছে। কারণ নিরামিশাষী ফুটবল খেলোয়াড়রা ৪০ থেকে ৪৫ বছর খেলে যেতে পারে। অথচ ইউক্রেনেই একজন খেলোয়াড়ের বয়স ৩০ বছর হলে বৃদ্ধ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
–এই রকম কোন কোন খেলোয়াড় রয়েছে যারা নিরামিশাষী ?
–আমি একজনকে চিনি যার নাম হল বিতালি রেবা। তিনি ৩০ বছর বয়স থেকে নিরামিশাষী ছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে নিরামিশাষী হওয়ায় তিনি ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফুটবল খেলতে পেরেছিলেন। আমার জানা মতে টটেনহামে কঠোর ভাবে যোগ অনুশীলন ব্যবহার করা হয়। ব্র্যাড ফ্রিডেল সেখানে একটি বিস্তার করেছিলেন। এইভাবে তিনিও ৪৩ বছর বয়স পর্যন্ত একইভাবে রায়ান গিগসের জীবনে যোগ অনুশীলন ছিল একটি অবধারিত অংশ, ৪২ বছর বয়স পর্যন্ত খেলেছিলেন। যোগ অনুশীলন শুধুমাত্র কোন অনুশীলন নয় বরং এটি হল যথাযথ, সহজ পুষ্টি ও আত্মসচেতনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাথেয় স্বরূপ ।
–এলেক্স ফার্গুসন তার জীবনী আলেখ্যে বলেছিলেন, গিগসের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য সপ্তাহে দুইবার একজন ব্যক্তিগত যোগ শিক্ষক আসতেন। এজন্যে দ্য ওয়েলস ম্যান অনেক দিন ধরে ভাল ফলাফল প্রদর্শন করেছে।
–অবশ্যই। আমার এক জার্মান বন্ধু বলেছিল যে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় জার্মান জাতীয় দলের সঙ্গে একজন যোগ কোচ ছিল। মারিও গোটজ এর যোগ অনুশীলনের জন্য একজন ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক ছিল ।
–আপনি আগ্রাসনহীনতার সুফল সম্পর্কে বলছিলেন। কিন্তু খেলোয়াড় যদি শান্ত থাকে তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মানসিকতা কিভাবে অর্জন করতে সমর্থ হবে ?
–সনাতন ধর্মের প্রধান পবিত্র গ্রন্থ হল শ্রীমদ্ভবদ্‌গীতা, আমি এই গ্রন্থটি অধ্যয়ণের জন্য সবাইকে বলে থাকি । গ্রন্থটিতে প্রধান চরিত্র হল একজন যোদ্ধা এবং সেই যোদ্ধা হলেন অর্জুন যিনি যুদ্ধ করতে চান নি। কিন্তু কৃষ্ণ তাকে বলেছিলেন একজন যোদ্ধার কর্তব্য হল যুদ্ধ করা। তাই ফুটবলারের কোমল হওয়া উচিত নয়। তার কর্তব্য হল মাঠে করা। এইক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল কি রকম মনোভাব নিয়ে সে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে? একজন ফুটবল খেলোয়াড়কে কি প্রেরণা দেয়? নাম যশ, অর্থলাভের তৃষ্ণা আপনার অহংকারকে প্রণোদিত করছে নাকি দল বা ক্লাব ও এর সমর্থকদের সম্মান রক্ষার্থের বাসনা আপনার মধ্যে প্রণোদনা যোগাচ্ছে? যখন আপনি সঠিক থাকবেন তখন কোমলতার কোন প্রশ্ন থাকে না, তখন আপনার কর্তব্য হল ভাল খেলে যাওয়া এবং এই লক্ষ্যটি অর্জনের জন্য আপনার যা করা প্রয়োজন তা
–এছাড়া একজন খেলোয়াড়ের আর কি কি করা উচিত ?
–প্রথমত একজন ব্যক্তির সঠিক সঙ্গের অনুসন্ধান করা উচিত। যদি একজন ব্যক্তি শুদ্ধ ব্যক্তিদের সঙ্গ করে তবে সে তার মাধ্যমে শুদ্ধ জ্ঞান প্রাপ্ত হতে পারে। এর মাধ্যমে তার জীবনের অগ্রগতি সাধিত হয় এবং সে সব কিছু অর্জন করতে পারে। যেমন ধরুন কেউ চাই একটি শুদ্ধ জীবনের নীতি আদর্শ অনুসরণ করতে অর্থাৎ, অবৈধ যৌন সঙ্গ, নেশা, দ্যুত ক্রীড়া, ক্রোধ, প্রতারণা, ঈর্ষা ইত্যাদি বর্জন করা। অনেক লোক মনে করে যে, শুধুমাত্র পবিত্র ব্যক্তিরাই বর্জন করতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটি তা নয়, আপনি যদি সঠিক সঙ্গ করেন তবে আপনিও সেগুলো বর্জন করতে পারেন। আমরা যার সঙ্গ করি, আমাদের প্রকৃতি বা মনোভাব তাই হয়ে উঠে।
–আপনি ২৭ বছর বয়সে ফুটবল খেলা ছেড়ে দিয়েছেন। কেন ছাড়লেন?
–আমি এখনো বলিনি যে আমার ক্যারিয়ার শেষ – করে দিয়েছি। সর্বশেষ গত জুলাই মাসে বল ধরে ছিলাম। সমগ্র জীবন ধরে আমি আমার লক্ষ্য অর্জনের দিকে ছুটেছি কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে কিছুটা একটা কাজ করেনি। বোধহয় আমাকে নিয়ে ভগবানের অন্যকোন পরিকল্পনা রয়েছে।
–ঠিক কি হয়েছিল?
–আমার বয়স যখন ১৭ আমি তখন ট্রান্সকারপাথিয়া দিয়ে ট্রেনিং ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। পিওটার কুশলিক ভলিনের বিরুদ্ধে দুটি খেলায় দ্বিতীয়ার্ধে আমাকে মাঠ থেকে তুলে নিয়েছিল। আমি খুব ভাল খেলেছিলাম, একটা প্যানাল্টি বাঁচিয়ে ছিলাম এবং সে সাথে অনেকগুলো গোল বাঁচিয়ে ছিলাম। একসময় শাখতার-টু এর প্রধান কোচ ফেডোরেনকো বললো, আমি নতুন বছরের পরেই কমনওয়েলথ কাপে অংশগ্রহণ করার জন্য নির্বাচিত। কিন্তু আমার এজেন্ট আমাকে চুক্তিতে সই করতে দেইনি। যাই হোক এভাবে আমি অনেক দলের সাথে গোলরক্ষক হিসেবে চুক্তি বদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু এমন এক সময় একটা ভাল চুক্তির প্রস্তাব আসল যখন আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম। আমার নিউমোনিয়া বা সারকইডসিস হয়েছিল। আমার এই রোগ দেখে প্রশিক্ষকরা একটু থমকে গিয়েছিল। তারা আমাকে দু’সপ্তাহ সময় দিয়েছিল সেড়ে ওঠার জন্য কিন্তু ডাক্তাররা অনতিবিলম্বে বলে উঠল সারকইডসিস নিয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার অব্যাহত রাখা অসম্ভব। এটি শোনার পর আমি হতবাক হই । এই অবস্থায় আমি ভাবছিলাম হয়তো ভাগ্য আমাকে অন্যদিকে ধাবিত করছে। মাঝে মাঝে আমরা কোনো উচ্চতর শক্তির দ্বারা পরিচালিত হই। আপনি যতই প্রয়াস করুন না কেন ভাগ্য আপনাকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করে। এটি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। এটি কোন দুর্বলতা নয় বরং যাই ঘটুক না কেন যেকোনো পরিস্থিতিতে দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হতে হবে। ২০১০ সালে আমি ভিনিথসানিভাতে এন্ড্রি পিলিয়াভস্কি এর সাথে ছিলাম। যিনি ইউক্রেন ও রুবিন-এর জাতীয় দলে খেলেছিলেন। একটি খেলায় মাক্কাবি হাইফা থেকে কিছু এজেন্ট এসেছিল তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন খেলোয়াড়ের অনুসন্ধান করছিল। আচমকা এন্ড্রু নামে একটা ছেলে ঐ ম্যাচে দুটো গোল করেছিল এবং মাক্কাবি তাকে ১৫ হাজার ডলারে চুক্তি বদ্ধ করেছিল। এটি হলো ভাগ্যের একটি দৃষ্টান্ত। মাঝে মাঝে একজন ব্যক্তি কোন প্রচেষ্টা ব্যতীত বড় কিছু অর্জন করে আবার হারিয়ে ফেলে। প্রত্যেকেরই একটি নির্দিষ্ট গতি রয়েছে। আমি আমার ক্যারিয়ার ও ভাগ্য নিয়ে এজন্যে কোনো অভিযোগ করি না। অভ্যন্তরীণভাবে আমি সুখী ও প্রসন্ন অনুভব করি কেননা জীবনে আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং সে অভিজ্ঞতা আলোকে আজকের এই আমি যার জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। যে পারমার্থিক জ্ঞান ও শ্রদ্ধা আমার মধ্যে রয়েছে তা আমি কখনো পরিবর্তন করবো না। এমনকি আমার যদি প্রচুর অর্থ ও প্রাচুর্য কিংবা মহিমাও থাকে তবুও না। যেরকম যীশু খ্রিস্ট বলেছিলেন, “নিত্য বা শাশ্বত আত্মাকে হারিয়ে সমগ্র জগতও যদি অর্জন করা হয় তবে তার কি মূল্য রয়েছে?” হয়তো আমি ফুটবল খেলবো কিন্তু সেটি নির্ভর করছে পরমেশ্বর ভগবানের ইচ্ছার উপর।
–দলের হয়ে খেলার সময় অন্যান্য খেলোয়ারদের সাথে কিভাবে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন? কেননা আপনি তো অন্য ভাবধারা বা আদর্শ অনুসরণ করেন। তারা বিষয়টি কিভাবে দেখে?
–আমার যে চিন্তা চেতনা সেটি আমার দল সব সময় বুঝতো না। যেরকম আর্সেনালে থাকাকালীন ট্রেনিং এ আমি একটি গোল করেছিলাম । তখন এন্ড্রি এশেনকো পরিহাস ছলে করে বলেছিলেন, “অবশেষে মাংস খাও।” কিন্তু মানুষের সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবন্ধকতাগুলো অতিক্রম করার জন্য যাতে করে আপনি আরো দৃঢ় বা শক্তিশালী হয়ে উঠেন। পারমার্থিক জীবনের মানে এই নয় যে, আপনি কোনো গুহাতে থেকে শুধুমাত্র ধ্যান করবেন। না, তা নয় বরং পারমার্থিক বিষয়গুলো আপনা-আপনি প্রকাশিত হয়। ফুটবল খেলার মাধ্যমে লোকেদেরকে আপনি বিনোদন দিতে পারেন। এটি প্রদর্শন করে যে এমনকি ফুটবল খেলার মাধ্যমে একজন সফল ও সুখী ব্যক্তি হতে পারেন। আমার কাছে যেটি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল সবার কাছে তুলে ধরা এই যে, আপনি চাইলে একই সাথে ফুটবল খেলতে পারেন এবং একটি পরিচ্ছন্ন ও শুদ্ধ জীবন যাপন করতে পারেন। শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক কর্মই ত্রুটি বা দোষ দ্বারা আবৃত, যেরকম আগুন ধুম্র দ্বারা আবৃত থাকে । কিন্তু এর অজুহাত দেখিয়ে কর্ম পরিত্যাগ করা বাঞ্ছনীয় নয়।
–তবে আপনি এখন কোথায় থাকেন আর কি করেন?
–আমি গত সাত মাস ধরে ভারতে বসবাস করছি। সম্প্রতি আমি আন্তর্জাতিক সনদ অর্জন করেছি যার মাধ্যমে আমি এখন সারা বিশ্বে যোগ অনুশীলন সম্পর্কে অফিসিয়ালি শিক্ষা দিতে পারব। শীঘ্রই হিমালয়ে একটি যোগ রিট্রিট হতে যাচ্ছে এবং আমি সেখানে যোগ ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারব।
–কোনো ফুটবল ক্লাবে আপনি কি একজন শারীরিক প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে চান না? –সেটা আমার অন্যতম লক্ষ্য আমি কোনো পেশাদার ক্লাবে একজন যোগ প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে চাই। খেলোয়াড়ী জীবনে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা ও যোগ অনুশীলন ফুটবলে অন্যমাত্রা সংযোজন করতে পারে। এভাবে খেলোয়াড়রা ৩০-৪০ ভাগ অধিক কার্যকরী হয়ে উঠবে। এটি একটি বিজ্ঞান, যাতে করে যোগ অনুশীলনের মাধ্যমে শরীরের ফিটনেস টিকিয়ে রাখা ও ইনজুরি থেকে শীঘ্রই সেড়ে উঠা যায় । তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো মন নিয়ে কাজ করা। যেটি যোগ অনুশীলনের মাধ্যমে সম্ভব। ফুটবল কি? এটি একটি অধ্যায়, মুহূর্ত মানসিক চাপ নিয়ে কাজ করা। আমি প্রায়ই দেখতাম কিভাবে অনেক ভাল ভাল খেলোয়াড়রা পর্যন্ত এই মানসিক চাপ নিতে ব্যর্থ হয়। তারা ভিতরে ভিতরে জ্বলে পুড়ে মরে। বিশ্বে অনেক চ্যাম্পিয়ান গোলরক্ষক রয়েছে যারা অনেক ম্যাচে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। শুধু তাই নয় পারিবারিকভাবে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে সমস্যা, অপর্যাপ্ত বেতন সহ কত কিছু নিয়ে মনে অসন্তোষ ও ক্ষোভ রয়েছে। এমতাবস্থায় যোগ অনুশীলন খেলোয়াড়দের সমস্ত আবর্জনা দূরীভূত করে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও প্রশান্তি যোগাতে পারে।


 

এপ্রিল-জুন ২০১৮ ব্যাক টু গডহেড

 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।