আরব সাগরে নিমজ্জিত অবস্থায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরী আবিস্কৃত

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২২ | ৫:২০ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২২ | ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 427 বার দেখা হয়েছে

আরব সাগরে নিমজ্জিত অবস্থায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরী আবিস্কৃত

সূত্র : ইন্টারনেট-পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আজ হতে প্রায় ৫ হাজার বছর পূর্বে মথুরায় আবির্ভূত হন। ভগবানের ভক্তগণ এবং সনাতনী সমাজ দৃঢ় বিশ্বাস করে যে ভগবানের মথুরায় ও দ্বারকায় লীলাবিলাসগুলো অপ্রাকৃত এবং বাস্তব। তবুও অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে সত্যিই কি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন? অবশেষে আরব সাগরের অভ্যন্তরে নিমজ্জিত অবস্থায় ভগবানের দিব্য ধাম দ্বারকার অস্তিত্ব আবিষ্কারের মাধ্যমে সকল সন্দেহের অবসান ঘটেছে। এটি নিঃসন্দেহে সকলের জন্য এক আনন্দের সংবাদ। এখন “চৈতন্য সন্দেশ” এর পাঠকদের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেই প্রাচীন দিব্য নগরী আবিষ্কারের রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা উপস্থাপন করা হল : আরব সাগরের খনন কার্য চালিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিব্য লীলা বিলাসের স্থানসমূহ এবং মহাভারতে সংগঠিত যুদ্ধের সুস্পষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণাদী পাওয়া গেছে যা থেকে

আরব সাগরে নিমজ্জিত
পাঁচহাজার বছর পূর্বের উন্নত সংস্কৃতি ও সমাজ ব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। শ্ৰী শ্ৰী দ্বারকাধীশ মন্দিরের উদ্যোগে জাতীয় মহাসমুদ্রবিদ্যা ইনিস্টিটিউট ও ভারত প্রত্নতত্ত্ব পর্যবেক্ষণ টিম মিলিত হয়ে মেরিন আর্কিয়োলোজী ইউনিট (MAU) গঠন করার মাধ্যমে এই রোমাঞ্চকর অভিযানটি পরিচালনা করে। একজন বিখ্যাত মেরিন আর্কিয়োলোজিস্ট ডাঃ রাও এর তত্ত্বাবধানে উক্ত টিমে ছিলেন অভিজ্ঞ সমুদ্র তলদেশ পর্যবেক্ষক, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সুদক্ষ ফটোগ্রাফার, এবং বহু প্রত্নতত্ত্ববিদ। তাদের সাথে ছিল সমুদ্রের নিম্নভাগে গবেষণা সহায়ক শক্তিশালী ইকো সাউন্ডার (তরঙ্গ নির্ভর বস্তু সনাক্তকরণ যন্ত্র), মাড পিনেট্র্যাটর (মাটি ভেদন যন্ত্র), মেটাল ডিটেকটর (ধাতু নির্নয় যন্ত্র), সাব বোটম প্রোফাইলার (পর্যবেক্ষণ সুবিধা সম্বনিত ডুবোজাহাজ)। ১৯৮৩ সাল হতে ১৯৯২ সালের মধ্যে ১২জন নৌ প্রত্নতত্ত্ববিদ কর্তৃক সংগৃহীত প্রাচীন নিদর্শনসমূহ এবং গবেষণালব্ধ কাগজগুলো পরীক্ষার জন্য ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবোরেটরীতে পাঠানো হয়। প্রাপ্ত ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহে থার্মো লুমিনিসেন্স, কার্বনডেটিং এবং অন্যান্য আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে জানা যায় যে নিদর্শনসমূহ প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-১৮০০ বছর আগের ডাঃ রাও কর্তৃক লিখিত “ দি লস্ট সিটি অব 66 দ্বারকা” গ্রন্থে তিনি উপরোক্ত আবিষ্কার এবং নিদর্শনগুলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। ১৯৮৩ হতে ১৯৯০ সালের মধ্যে সমুদ্রের তলদেশে দূর্গ দ্বারা সুরক্ষিত দ্বারকা নগরীর অর্ধমাইলেরও বেশি অংশ আবিস্কৃত হয়েছে। শহরটি সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে ৬টি বৃত্তাকার অংশ দ্বারা বিভক্ত ছিল। সমুদ্রের অভ্যন্তরে দ্বারকার বিভিন্ন প্রাসাদের দেওয়াল হতে খসে পড়া প্রস্তরখণ্ডসমূহ প্রমাণ করে যে শহরটি একসময় সমুদ্রের নিকটবর্তী ছিল। MAU কর্তৃক আবিষ্কৃত জলে নিমজ্জিত শহরের কাঠামোর সাথে মহাভারতে উল্লেখিত মূল দ্বারকা নগরীর কাঠামোয় প্রায় মিল পাওয়া গেছে। গবেষণালব্ধ প্রমাণ অনুযায়ী দ্বারকা খুবই সমৃদ্ধশালী নগরী ছিল এবং পরে এটি বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার দরুন কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছিল। জে.ডি. আনসারি ও এম.এস মেট এর মত বিখ্যাত খননবিদদের কল্যাণে বর্তমান দ্বারকার নিকটে বিস্মৃত ১ম শতাব্দী এবং নবম শতাব্দীর বহু মন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। জলের অভ্যন্তরভাগ হতে নিয়ে আসা নিদর্শনসমূহের পূঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ সহকারে পাওয়া তাদের অস্তিত্বের সময়কাল এবং জ্যোতিষ গণনায় প্রাপ্ত সময়ের মধ্যে আশ্চর্য মিল লক্ষ্য করা গেছে। তারা আরো প্রমাণ করেছেন যে, পুনঃনির্মিত দ্বারকা নগরী ছিল একটি সমৃদ্ধশালী বন্দর নগরী এবং এটি খ্রীস্টপূর্বাব্দ ১৫ শতকে ৬০ হতে ৭০ বছরের মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে এবং ১৪৪৩ খ্রীস্টপূর্বাব্দে নগরীটি সম্পূর্নরূপে জলে নিমজ্জিত হয় । (সম্পাদকের নোটঃ যদিও পশ্চিমা মতে, প্রায়োগিক বিজ্ঞান বলছে যে, দ্বারকার জলমগ্ন হওয়ায় সময় ১৪৪৩ খ্রীস্টপূর্বাব্দে অর্থাৎ প্রায় ৩,৪০০ বছর পূর্বে, কিন্তু প্রাচীন বৈদিক শাস্ত্র মতে বর্তমান কলিযুগ আরম্ভ হয়েছে ৩১০২ খ্রীস্টপূর্বাব্দে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধানের পর এবং কলিযুগ শুরু হওয়ার কিছু দিন পূর্বে দ্বারকা নগরী জলে মগ্ন হয়ে যায়।) “শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক নির্মিত দ্বারকা আবিষ্কার ভারতের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করল। এটি ঐতিহাসিকদের মহাভারতের কাহিনীগুলো নিয়ে থাকা সকল সন্দেহের অবসান ঘটাল এবং দ্বারকা নগরীর অস্তিত্বকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করল। এটি বৈদিক যুগের প্রামাণিকতার বাস্তব ভিত্তি প্রদর্শন করল।” কথাগুলো বললেন NIO এর প্রাক্তন উপদেষ্টা যিনি বর্তমানেও দ্বারকা অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মহাভারতের সাথে বতর্মান নিমজ্জিত সমুদ্রে দ্বারকার যোগসূত্রের সবচেয়ে বড় প্রমাণ পাওয়া গেছে সমুদ্রগর্ভে তিন মাথাওয়ালা প্রাণীর ছবি সমন্বিত সীলমোহর (নামমুদ্রা) আবিষ্কারের মাধ্যমে। মহাভারতে ঠিক উক্ত একই ধরনের সিলমোহরের কথা উল্লেখ আছে। শক্তিশালী মগধ রাজ্যর রাজা জরাসন্ধ যখন দ্বারকা দখল করেন তখন তিনি দ্বারকাবাসীকে তাদের পরিচিতি হিসেবে এই ধরনের সীলমোহর প্রদান করেন। ক্ষয়প্রাপ্ত শহরের দেওয়ালের প্রস্তরখন্ড উত্তোলনের পর পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, এগুলো কমপক্ষে ৩,৬০০ বছর পূর্বে পুনঃসংস্কার করা হয়েছে। মহাভারতে দ্বারকা সম্পর্কে উক্ত কার্যাবলীর . সত্যতা পাওয়া যায়। মহাভারতে উল্লেখিত ■ দ্বারকা নগরীর ৭টি দ্বীপের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়েছে আরব সাগরে ডুবন্ত ■ অবস্থায় গবেষণা করার মাধ্যমে। আবিষ্কৃত মৃৎসামগ্রীগুলোকে থার্মো লুমিনিসেন্স টেস্ট দ্বারা ৩,৫২৮ বছর পূর্বের বলে সনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বিগত ইন্দো ভ্যালি সভ্যতার প্রাচীন লিপি, লৌহ খুটি এবং ত্রিমাত্রিক তিন মাথাবিশিষ্ট নোঙ্গর আবিষ্কৃত হয়েছে যেগুলোর অস্তিত্বের কথা মহাভারতে উল্লেখ রয়েছে। এস.আর রাও বলেন “দ্বারকা নগরী আবিষ্কৃত হওয় এবং সেখানে উপস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর সাথে মহাভারতে উল্লেখিত সেই সময়কার ঐতিহ্যর মিল থেকে উপলব্দি করা যায় যে মহাভারত সত্যিই প্রামাণিক গ্রন্থ এবং আমরা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি যে শ্রীকৃষ্ণ অবশ্যই তখন উপস্থিত ছিলেন।”


চৈতন্য সন্দেশ জুন ২০০৮ প্রকাশিত
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।