এই পোস্টটি 44 বার দেখা হয়েছে
রাধানাথ স্বামী
সংস্কৃত ভাবানুসারে ‘স্বভাব’ মানে হল কারও দ্বিতীয় কোন প্রকৃতি। আমরাই আমাদের বিভিন্ন ধরনের অভ্যাস তৈরি করি এবং তারপর আমাদের অভ্যাসগুলো আমাদেরকে তৈরি করে। অভ্যাস হল এমন একটি ক্রিয়া যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি আমাদের স্থায়ী আচরণে রূপ না নিচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এ ক্রিয়া পুনঃ পুনঃ করে যাওয়া। মানুষের কত ধরনের অভ্যাস রয়েছে। কারও খারাপ অভ্যাস কারো আবার ভাল রুচিসম্পন্ন অভ্যাস। সেক্ষেত্রে যদি কেউ যেকোন একটি অভ্যাসে জড়িয়ে পড়ে এবং তা যদি স্থায়ী আচরণে রূপ নেই তবে তা ছাড়াটা খুবই কষ্টসাধ্য হয়। এরকম কিছু অভ্যাসের বিবরণ তুলে ধরা হল।
ধূমপান : কয়েক বছর আগে আমেরিকার একটি বৃহৎ সিগারেট কোম্পানীতে তদন্ত চালিয়ে কিছু তথ্য বেরিয়ে আসে। দেখা গেছে যেসব বিজ্ঞাপনগুলো তারা সম্প্রচার করে সেগুলো বিশেষত ১২ থেকে ১৯ বছরের টিন এজারদের লক্ষ্য করেই। তাদের লক্ষ্যবস্তু বৃদ্ধরা নয় কেননা সাইকোলোজিস্টদের তথ্যানুসারে এটি প্রমাণিত যে, টিনেজাররা যদি এই অভ্যাসে জড়িয়ে পড়ে তবে তারা সিগারেট কোম্পানীগুলোকে অর্থ দিতে পারবে একেবারে মৃত্যু পর্যন্ত। কিন্তু বৃদ্ধরা অত্যন্ত স্বল্পমেয়াদী। আমেরিকার পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রতি বছর ৪লাখ মানুষ মারা যায় সিগারেট গ্রহনের ফলে যাদের মধ্যে ২৭৬ হাজার পুরুষ এবং ১৪২ হাজার মহিলা। প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর মধ্যে একটি মৃত্যুর কারণ হল ধূমপান। কিন্তু তবুও লোকেরা ধূমপান করে। প্রতিটি সিগারেটের প্যাকেটেই সতর্কবার্তা দেওয়া থাকে যে, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক। তবুও লোকেরা নিজেদেরকে হত্যা করছে এ ধূমপান গ্রহণের মাধ্যমে। কেন? এর কারণ হল কেউ যদি একবার এতে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে তবে তার পক্ষে এটি ত্যাগ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। পারপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে একজন ব্যক্তি ধূমপানের চেষ্টা করে এবং যখন সে প্রথমবারের মত তা গ্রহণ করে তখন কাঁশি দেখা দেয়। শরীর এই অস্বাভাবিক অবস্থার জন্য সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। হলিউডের একজন বিখ্যাত অভিনেতা তার মুখে জলন্ত সিগারেটের একটি অভিনয় প্রদর্শন করেছিল এবং তখন তাকে সবাই অনুসরণ করে। বয়স্করা, টিনেজাররা এবং মাঝে মাঝে এমনকি কিশোররাও জলন্ত সিগারেট মুখে নিয়ে নিজেদের ফ্যাশন/ বাহাদুরি প্রদর্শন করে। কিন্তু কয়েক বছর পর সেই অভিনেতাই ঠোঁঠ এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। কিন্তু যারা তাকে অনুকরণ করেছিল তাদের প্রত্যেকেই সিগারেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। তখন কেউই এটি ত্যাগ করতে পারে নি।
অবৈধ যৌন সঙ্গ: ভারতে গত দুই দশক পূর্বে ডিভোর্স ছিল একটি বিরল ঘটনা, কেননা সে সময়কার লোকদের পারমার্থিক মূল্যবোধ উপলব্ধি ছিল। বর্ণাশ্রম পদ্ধতিতে ৪টি বিভাগ ব্রহ্মচর্য, গৃহস্থ, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস ভিন্ন ভিন্ন পথে লোকদের পরিচালনা করে। যতই অবৈধ যৌন সঙ্গে কেউ জড়িয়ে পড়ে ততই সে এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। পরিসংখ্যান মতে আমেরিকায় তিন মিলিয়ন টিনেজার প্রতি বছর যৌন রোগে আক্রান্ত হয়। যৌন রোগের ফলে ১৫ থেকে ২৪বছর বয়স্ক লোকদের মৃত্যু হল সপ্তম সর্বোচ্চ মৃত্যু। NEDC ফাউন্ডেশন ১৯৯৯ এর তথ্য মতে ২০ বছরের পূর্বে আমেরিকাতে ৩০% টিনেজ মেয়ে গর্ভবতী হয়। শুধুমাত্র টিনএজ গর্ভবতীর জন্য আমেরিকাতে প্রতিবছর ৭ বিলিয়ন ডলার খরচ হয় ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়স্ক ছেলেমেয়েরা প্রতি দশজন জেলবাসীর মধ্যে ৯ জনই এই অবৈধ যৌনসঙ্গ থেকে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যার কারণে জেলে প্রেরিত হয়। যত বেশি টেলিভিশন এবং অন্য মাধ্যমে থেকে প্রেমের কাহিনী নিয়ে গঠিত ফিল্ম দেখা হয় ততই টিন এজরা যৌনসঙ্গের দিকে ঝুকে পড়ে। ফলশ্রুতিতে অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে শেষ পর্যন্ত ঐ অভ্যাসের দাসত্বকে বরণ করতে হয়। কিছুকাল পূর্বে শিকাগোতে এক প্রবল ঝড় হল এবং বজ্রপাতের কারণে ক্যাবল নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে পড়ে। এটা ছিল সে অঞ্চলে একটি মারাত্মক ধ্বংসযজ্ঞ। অন্যন্য সুবিধাসমূহ যেমন বিদ্যুৎ এবং পানি সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। ফলশ্রুতিতে লোকজন শুধুমাত্র টিভি দেখতে না পারায় চারদিক চরম অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে মানুষ টিভির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। আসক্তির অন্যতম উৎস হল টি.ভি দেখার অভ্যাসকে প্রশ্রয় দেওয়া। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় একজন ছেলে ১৮ বছরের মধ্যে ২০০০০০ ভায়োলেন্স কার্যকলাপ দর্শন করে। আমেরিকাতে একজন ছেলে দশ বছর বয়সের মধ্যে ৯০০০ হত্যা ও ১০০০ টি যৌন কুরুচিপূর্ণ দৃশ্য টেলিভিশনে দেখে। এ সমস্ত কিছু তাদের চেতনার উপর প্রভাব ফেলে। যার ফলশ্রুতিতে তারা টি.ভি দেখার অভ্যাসটি ছাড়তে পারে না এমনকি অবৈধ যৌন সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
অতএব, আমরা যদি আমাদের খারাপ অভ্যাসগুলো জয় করতে না পারি তবে আমাদের খারাপ অভ্যাসগুলোই আমাদের জয় করে নেবে।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , আগস্ট ২০১০ ইং
২য় পর্বের লিংকঃ