প্রতিদিন সংখ্যানাম পূরণের সংকল্প (শেষ পর্ব)

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ | ১২:৪৪ অপরাহ্ণ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ | ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 254 বার দেখা হয়েছে

প্রতিদিন সংখ্যানাম পূরণের সংকল্প (শেষ পর্ব)

সেজন্য আমরা এখানে শ্রীল হরিদাস ঠাকুর সম্বন্ধে আলোচনা করব, যিনি আজীবন নিয়মিত নির্দিষ্ট সংখ্যক মালা জপের মাধ্যমে ভক্তি প্রতিকূলতার সম্মূখীন হয়েও ঠাকুর হরিদাস সর্বদাই তাঁর নির্দিষ্ট জপ-সংখ্যা পূরণ করেছেন। একবার এক গভীর নিশীথে তাঁর নির্জন ভজন কুটীরে এক সুন্দরী বারাঙ্গনা কুপ্রস্তাব নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। নিজ শরীরের কিছু অংশ তাঁর দৃষ্টির সামনে অনাবৃত করে সে হরিদাস ঠাকুরের ভজন-কুটীরের দরজায় বসল, তারপর অত্যন্ত মিস্টস্বরে ঠাকুর হরিদাসকে বলল, “ঠাকুর, তুমি এত সুদর্শন সুঠামদেহী নবীন যুবক, সবে তুমি যৌবনে পদার্পন করেছ। তোমাকে দর্শন করে কোন যুবতী স্থির থাকতে পারে? আমি তোমার সঙ্গে মিলিত হতে আগ্রহী। এজন্য আমার মন অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। আমি যদি তোমাকে না পাই, তাহলে আমার পক্ষে প্রাণ ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে!”
“হরিদাস ঠাকুর তখন তাকে বললেন, ‘আমি মাসে এক কোটি নাম জপের ব্রত গ্রহণ করেছি। এখন ঐ ব্রত পালন শেষ হবার পথে। আমি ভেবেছিলাম যে আজ আমি আমার হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন-রূপ যজ্ঞ সমাপন করতে পারবো। আমি সারা রাত্রি নামজপ করে সংখ্যা পূর্ণ করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু তা শেষ হল না। আগামীকাল নিশ্চয়ই আমার নাম সংখ্যা সমাপ্ত হবে, আমার ব্রতও পূর্ণ হবে।”
–শ্রীনামামৃত -১/১৪
অন্য এক সময়েও হরিদাস ঠাকুর তাঁর অসাধারণ সংকল্প শক্তি প্রদর্শন করছেন। এক দুষ্ট কাজী হরিদাস ঠাকুরকে প্রচুর নির্যাতন করে, তাঁকে ২২টি বাজার নিয়ে গিয়ে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেয়। যদিও হরিদাস ঠাকুরকে অবিশ্রান্তভাবে মারাত্মক আঘাত করা হচ্ছে, তবু সেই সময় হরিদাস ঠাকুর বলেন,

খন্ড খন্ড হয় দেহ যায় যদি প্রাণ।
তবুও আমি বদনে না ছাড়ি হরিনাম ॥

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সঙ্গের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ অধুনিক যুগে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার এক অনন্য অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেছেন। সত্তর বছর বয়স শ্রীল প্রভুপাদ বিদেশ করেন, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী প্রচার করার জন্য জাহাজে আমেরিকায় পৌঁছান। জাহাজে তিনি দুবার প্রাণ সংশয়কর হৃদ্রোগ আক্রান্ত হন। অবিচলিত সাহাসে শ্রীল প্রভুপাদ একাকী আমেরিকায় তুষারহিমেল শীতকালসহ একবছর ধরে বাণী প্রচারের জন্য কঠোর সংগ্রাম করে চলেন, আর বিনিময় মানুষের কাছ থেকে পান তুহিনশীতল প্রতিক্রিয়া। অবশেষে প্রবল সংকীর্তন ও প্রচারকর্মের পর শ্রীল প্রভুপাদ ১৯৬৬-র জুলাই মাসে নিউইয়র্ক শহরে স্থাপন করেন তাঁর পারমার্থিক সংঘ: আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত(International Society for Krishna Consciousness)।
এর ঠিক আট মাস পর শ্রীল প্রভুপাদ তৃতীয় বার হৃদরোগে আক্রান্ত হন, আর এতে তার শরীরের বাঁদিকটি অবশ হয়ে যায়। সাধারণতঃ তিনবার হার্ট-অ্যাটাকের পর কেউই বাঁচে না। কিছুটা অরোগ্য লাভ করে শ্রীল প্রভুপাদ বৃন্দাবনে ফিরে আসেন, সেবাকুঞ্জে রাধাদামোদরের আশ্রয়ে। স্বল্পকালের মধ্যে হৃত স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করে শ্রীল প্রভুপাদ আমেরিকায় ফিরে আসেন এবং এক কঠোর প্রচারসূরী অনুসরণ করে প্রবল প্রচারকার্য শুরু করেন।
সেইসাথে চলতে থাকে গ্রন্থ অনুবাদ-কর্ম। এর পরের দশ বছর পৃথিবীতে থাকার সময়, শ্রীল প্রভুপাদ ১৩ বার সারা পৃথিবী পর্যটন করেন, একই সাথে চলতে থাকে মন্দির স্থাপন, হাজার হাজার শিষ্যকে দীক্ষা দান, গ্রন্থ প্রণয়ণের কাজ। নিশ্চিতভাবেই, শ্রীল প্রভুপাদের দৃষ্টান্তমূলক, অনন্যসাধারণ ভক্তি-জীবন সম্বন্ধে আলোচনা এবং তাঁর অভাবনীয় উদ্যম-উৎসাহ, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা স্মরণের ফলে নিশ্চিতভাবেই -যে কোন ভক্তের সংকল্প-বল তীব্রতর হবে।
শ্রীগুরুদেব অহৈতুকী করুনা লাভের পূর্বে, তাঁর জীবন কেমন ছিল- উন্নতিকামী ভক্ত সর্বদাই তা স্মরণ করবেন। গুরুদেবের করুণা ভক্তকে নূতন আশা, সুখ-পরিতৃপ্তি, প্রশান্তি আর পূর্ণতার এক নবজীবন প্রদান করে। নিজের পূর্বজীবনের অর্থহীণ কার্যকলাপের কথা স্মরণ করলে ভক্তের অন্তর তাঁর গুরুদেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও প্রীতিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে।
এর ফলে ভক্তি অনুশীলনে দৃঢ়তা আসে, সংকল্প-শক্তি তীব্র হয়, ভক্ত রাধাগোবিন্দের দিব্য প্রেম লাভের জন্য কঠোর ও আন্তরিক প্রয়াস করতে থাকেন। নীচে প্রদত্ত শ্রীল প্রভুপাদের সরল আন্তরিক কথাগুলি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিব্য নামানুকীর্তনে সকল পাঠকবর্গকে নব সংকল্পে, নব উৎসাহে উদ্দীপিত করুক:
“আমি জীবনে বহুরকম অবস্থায় মধ্য দিয়ে গিয়েছি। সুতরাং এই জড় জগৎ সম্বন্ধে আমার পূর্ণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি একে (জড়জগৎকে) আর চাই না। এই সংকল্প আমার রয়েছে। সমাজ, পরিবার, প্রেম, বন্ধুত্ব- এইসব বাজে বিষয়- সব বিদায় নিয়েছে! এসব সুখ আমি আস্বাদন করেছি। এখন এই জড় জগতের প্রতি আমার বিন্দু মাত্রও আর আগ্রহ নেই।”
-শ্রীল প্রভুপাদের কথোপথন, ১৬/৪/৭৭

পূর্ববর্তী পর্ব: http://csbtg.org/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%aa%e0%a7%82%e0%a6%b0%e0%a6%a3-2/

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।