পুতনার মতো অসুর বধ ভগবান ছাড়া আর কার পক্ষে সম্ভব?

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২০ | ৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ | ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 640 বার দেখা হয়েছে

পুতনার মতো অসুর বধ ভগবান ছাড়া আর কার পক্ষে সম্ভব?

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য
কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ

তোকেন জীবহরণং যদুলূকিকায়াস্-
ত্রৈমাসিকস্য চ পদা শকটোহপবৃত্তঃ ।
যদ্রিঙ্গতান্তরগতেন দিবিস্পৃশোর্বা
উন্মূলনং ত্বিতরথার্জুনয়োর্ন ভাব্যম্ ॥

                                                          (২/৭/২৭)

অনুবাদ: শ্রীকৃষ্ণ যে পরমেশ্বর ভগবান সে সম্বেন্ধে কোন সন্দেহ নেই। মাতৃক্রোড়স্থিত ক্ষুদ্র শিশু রূপে বিশাল শরীরা পুতনা রাক্ষসীর প্রাণবধ, তিনমাসের শিশু অবস্থায় পদাঘাতে শকট ভঞ্জন, হামাগুড়ি দিয়ে গমনপূর্বক গগনস্পর্শী অতি উচ্চ অর্জুনবৃক্ষ যুগলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাদের উৎপাটন, এই সমস্ত কার্য স্বয়ং ভগবান ছাড়া আর কার পক্ষে সম্ভব?
তাৎপর্য: মনের জল্পনা-কল্পনা দ্বারা অথবা ভোট দিয়ে ভগবান তৈরি করা যায় না, যা আজকাল অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা করছে। ভগবান চিরকালই ভগবান এবং জীব সর্বাবস্থাতেই ভগবানের বিভিন্ন অংশ। ভগবান এক এবং অদ্বিতীয়, কিন্তু জীব অসংখ্য। এই সমস্ত জীবেরা ভগবান কর্তৃক প্রতিপালিত হয় এবং সেটি হচ্ছে বেদের বাণী। শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁর মাতৃক্রোড়স্ত শিশু, তখন পুতনা রাক্ষসী তাঁর মায়ের কাছে এসে শিশু কৃষ্ণকে তার কোলে নিতে চায়। পুতনা এসেছিল এক অপূর্ব সুন্দরী রমণীর রূপ ধারণ করে, তাই মা যশোদা তার কোলে শিশুটিকে দিতে কোনরকম ইতস্তত করেননি। পুতনা এসেছিল তার স্তনে বিষ মাখিয়ে শিশুটিকে হত্যা করতে। কিন্তু ভগবানকে সে যখন তার স্তন দান করে তখন ভগবান তার স্তন পান করার মাধ্যমে তার প্রাণবায়ু শুষে নেন এবং প্রচণ্ড আর্তনাদ করে সেই রাক্ষসীর দেহটি তখন ভূপতিত হয়। কথিত হয় যে তার দেহটি ছিল তিন ক্রোশ দীর্ঘ। শ্রীকৃষ্ণ যদিও তিন ক্রোশ থেকেও দীর্ঘ রূপে নিজেকে বিস্তার করতে সক্ষম ছিলেন, তথাপি পুতনা রাক্ষসীকে বধ করার জন্য তাঁকে তার মতো দীর্ঘ দেহ ধারণ করতে হয়নি। বামন অবতারে তিনি এক ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন, কিন্তু বলি মহারাজের প্রদত্ত ভূমি অধিকার করার জন্য তিনি তাঁর এক পদ লক্ষ লক্ষ মাইল বিস্তার করে ব্রহ্মাণ্ডের উপরিভাগে পদক্ষেপ করেছিলেন। তাই শ্রীকৃষ্ণের পক্ষে তাঁর দেহের গঠন বিস্তার করার মতো একটি অলৌকিক কার্য সম্পাদন করা মোটেই অসম্ভব ছিল না, কিন্তু তাঁর মাতৃপ্রেমের জন্য তিনি তা করেননি। যশোদা যদি পুতনার ক্রোড়ে তাঁর পুত্রটিকে তিনক্রোশ বিস্তৃত হতে দেখতেন তা হলে তাঁর বাৎসল্য প্রেম আহত হত, কেননা তা হলে যশোদা দেবী জানতে পারতেন যে তার তথাকথিত পুত্র কৃষ্ণ হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান। কৃষ্ণকে ভগবানরূপে জানতে পারলে যশোদা মায়ের কৃষ্ণের প্রতি স্বাভাবিক বাৎসল্য প্রেম বিনষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ সর্ব অবস্থাতেই ভগবান। তাঁকে কঠোর তপস্যা করে ভগবান হতে হয় না, যদিও কিছু মানুষ সেইভাবে ভগবান হতে চায়। কঠোর তপস্যা করে কখনো ভগবান হওয়া যায় না বা ভগবানের সমকক্ষ হওয়া যায় না, তবে ভগবানের দিব্য গুণাবলী বহুলাংশে অর্জন করা যায়। জীব বহুল পরিমাণে দিব্য গুণাবলী অর্জন করতে পারে, কিন্তু সে কখনো ভগবান হতে পারে না। অথচ শ্রীকৃষ্ণ কোনরকম তপস্যা না করেই তাঁর মাতৃক্রোড়ে শিশুরূপেই হোন অথবা পরিণত বয়সে অথবা তাঁর বুদ্ধির যে কোন স্তরেই সর্বাবস্থাতেই ভগবান। তাঁর বয়স যখন মাত্র তিনমাস তখন তিনি শকটাসুরকে বধ করেছিলেন, যে যশোদা মায়ের গৃহে একটি শকটের মধ্যে লুকিয়ে ছিল। আর তিনি যখন শিশু অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়াতেন, সেই সময় একদিন তাঁর মাকে গৃহকার্য সম্পাদনে বিরক্ত করার ফলে তাঁর মা তাঁকে একটি উদুখলে বেঁধে রেখেছিলেন;
কিন্তু সেই উদুখলটিকে টানতে টানতে যশোদা মায়ের অঙ্গনে দুটি অতি উচ্চ অর্জুন বৃক্ষের মাঝখানে নিয়ে যান এবং সেই উদুখলটি গাছ দুটির মাঝখানে যখন আটকে যায় তখন তার টানে প্রচণ্ড শব্দ করে সেই গাছ দুটি ভূপতিত হয়।

মা যশোদা যখন সেই ঘটনাটি ঘটতে দেখেন তখন তিনি মনে করেন যে ভগবানের কৃপায় সেই বিরাট গাছ দুটি ভূপতিত হওয়া সত্ত্বেও তাঁর শিশুটি রক্ষা পেয়ে গেছে। তাঁর কোন ধারণাই ছিল না যে তাঁর শিশু সন্তানটি হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান এবং তাঁর অঙ্গনে হামাগুড়ি দিযে সে এই দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
এমনই হচ্ছে ভক্তের সঙ্গে ভগবানের প্রেমের বিনিময়। মা যশোদা ভগবানকে তাঁর পুত্ররূপে চেয়েছিলেন এবং ভগবান ঠিক একটি শিশুর মতো তাঁর ক্রোড়ে লীলা বিলাস করেছিলেন, কিন্তু যখনই প্রয়োজন হয়েছিল তখনই তিনি সর্বশক্তিমান ভগবানের ভূমিকা অবলম্বন করেছিলেন। সেই বিশাল অর্জুন লীলা মাধুর্য হচ্ছে যে ভগবান সকলেরই বাসনা পূর্ণ করেছিলেন। সেই বিশাল অর্জুন বৃক্ষ দুটি উৎপাটনের উদ্দেশ্য ছিল নারদমুনি কর্তৃক অভিশপ্ত কুবেরের দুই পুত্রকে উদ্ধার করা এবং সেই সঙ্গে মা যশোদার অঙ্গনে একট হামাগুড়িরত শিশুর মতো খেলা করা। তাঁর অঙ্গনে ভগবানের এই প্রকার কার্যকলাপ দর্শন করে মা যশোদা দিব্য আনন্দ আস্বাদন করেছিলেন। ভগবান সর্ব অবস্থাতেই সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর এবং তিনি তাঁর ইচ্ছা অনুসারে বিরাটরূপে অথবা ক্ষুদ্র রূপে লীলা-বিলাস করতে পারেন।

সূত্র: মাসিক চৈতন্য সন্দেশ 

মাসিক চৈতন্য সন্দেশ ও ব্যাক টু গডহেড এর ।। গ্রাহক ও এজেন্ট হতে পারেন

প্রয়োজনে : 01820-133161, 01758-878816, 01838-144699

 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।