এই পোস্টটি 469 বার দেখা হয়েছে
'টাইমস অব ইন্ডিয়া' অবলম্বনে
অজন্তা চক্রবর্ত্তী: শরীরে ক্লান্তি বা অবসাদ কমাতে ‘অউম’ মন্ত্রের প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা করে ১৪ বছর বয়সী এক মেয়ে বিজ্ঞানীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অন্বেষা রায় চৌধুরী নামের সেই মেয়েটি কলকাতার Adamas World School-এর নবম শ্রেণীর ছাত্রী। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কর্তৃক আয়োজিত সায়েন্স কংগ্রেস প্রতিযোগীতায় শীর্ষস্থান অর্জন করেছে অন্বেষা। তার গবেষণা প্রমাণ করে ‘অউম’ মন্ত্র জপ করলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও ল্যাকটিক এসিডের মাত্রা হ্রাস পায় যা ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
তার এই গবেষণালব্ধ তথ্যটি কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ও ফিজিওলজির অধ্যাপকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি বিভাগের প্রধান দেবাশীষ বন্দোপাধ্যায় ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া‘-কে বলেন, ”অন্বেষার এই প্রকল্পটি সৃজনশীল, ক্রটিহীন এবং বিশ্বাসযোগ্য।” অন্বেষা নিজের নামকে আন-উই-শা হিসাবে উচ্চারণ করতে পছন্দ করে যার বাংলা অর্থ হচ্ছে ‘অনুসন্ধান’। অন্বেষা ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া‘-কে বলেন, ”আমি দেখেছি যে, একটি নির্দিষ্ট মাত্রার (ফ্রিকোয়েন্সির) শব্দ তরঙ্গ উচ্চারণ করলে বা শ্রবণ করেল, শরীরে সেরোটনিন, ডোপামিন বা ডিএইচএ-এর মত নিউরোট্রান্সমিটার ও হরমোনের আধিক্য বেড়ে যায়, যার ফলে রক্তনালীর সম্প্রসারনের মাধ্যমে দেহে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও এটি ল্যাকটিক এসিড উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে ব্যক্তি নিরলসভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়।” পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সেক্রেটারি রিনা ভেক্টটরমন বলেন, ”গত দশকে ব্যায়ামের উপর সংগীতের প্রভাব নিয়ে ব্যাপক আকারে গবেষণা হয়েছে যা মনোবিজ্ঞনীদের সাহায্য করছে বোঝার জন্য কেন শারীরিক কসরত এবং সংগীত একে অপরের সাথে সর্ম্পকযুক্ত।”
রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী দীপঙ্কর দাস বলেন, ”পূর্বে কেউই ‘ওম’ শব্দতরঙ্গের দিকে মনোনিবেশ করেনি এবং এর ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে এইরূপ গবেষণাও করেন নি।” সম্প্রতি রাজ্যব্যাপী অনুষ্ঠিত সায়েন্স কংগ্রেসে ১৬৫ জন নির্বাচিত শিক্ষার্থীর এক কর্মশালায় তিনি এই কথা বলেন।
সমস্ত কিছুর শুরু হয় অন্বেষার উত্তরাখন্ড ভ্রমনের মাধ্যমে। তিনি লক্ষ্য করলেন যে, প্রতিদিন কয়েকজন পুরোহিত ক্লান্তিহীনভাবে ৬৪৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাগেশ্বর থেকে কেদারনাথে জল নিয়ে যাচ্ছিলেন। পাশাপাশি তারা মন্ত্র উচ্চারণ করছিলেন। পরীক্ষাগারে কোনোভাবেই তার পক্ষে ঐ একই শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি করার উপায় ছিল না। তাই অন্বেষা শব্দ তরঙ্গের অনুসন্ধান করতে লাগলেন।
অন্বেষা বললেন, ”শেষ পর্যন্ত ৪৩০ হার্জ ফ্রিকোয়েন্সির একটি শব্দ তরঙ্গ মিলে গেল। ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি পরীক্ষাগারে পাঁচবার পরীক্ষার সময় আমি ৩০ মিনিটের জন্য এই শব্দ তরঙ্গটি শোনা অবস্থায় ১৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা পরিমাপ করি (১৭ জনই বিআইটিএস-এর কর্মী)। ফলাফল দেখায় যে তাদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং সাথে সাথে কার্বন-ডাই অক্সাইডের মাত্রা হ্রাস পেয়েছিল।”