এই পোস্টটি 1178 বার দেখা হয়েছে
গান্ধর্বিকা প্রেম দাসী: আমরা হয়তো অনেকেই জানি যে ইস্কন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের তাৎপর্যকৃত শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথ হল পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বিক্রিত ভগবদগীতা এবং এটি পৃথিবীর প্রধান প্রধান ভাষাসমূহে অনুদিত হয়েছে। তাই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী আজ সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি নগর এবং গ্রামে বিস্তৃত হয়েছে।
শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথ হাঙ্গেরীয়ান ভাষায়ও অনুদিত হয়েছে। প্রথমবারের মত হাঙ্গেরীর বুদাপেস্টে বিখ্যাত লিব্রি বুকস্টোরে শোভা পাচ্ছে শ্রীল প্রভুপাদের “শ্রীমদ্ভগবদগীতা যথাযথ”। এই উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শ্রীমৎ শিবরাম স্বামী মহারাজ সকলের উদ্দেশ্য বক্তব্য রাখেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মোট ৬০ জন অতিথি। সকলেই শ্রীল প্রভুপাদের এই দিব্য গ্রন্থ সংগ্রহ করেন এবং সর্বশেষে মহারাজ সকলের কপিতে তাঁর আশির্বাণী লিখে দেন।
বহুবছর পূর্বে এই গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশিত হলেও এতদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র মন্দির ও ভ্রমণকারী ভক্তদের কাছে এই গ্রন্থ পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে বিখ্যাত লাইব্রেরী ও বুকস্টোরসমূহ এই গ্রন্থ তাদের সংগ্রহে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এখন থেকে সমগ্রদেশে সব বুকস্টোরে পাওয়া যাবে এই দিব্য গ্রন্থ। এর ফলে শ্রীমদ্ভগবদগীতার বাণী সমগ্র দেশজুড়ে আরো ব্যাপকভাবে প্রচার হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে ব্যাপকভাবে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার হচ্ছে। বিশেষত অনলাইন ও অফলাইন সকল স্তরে ব্যাপকভাবে কৃষ্ণভাবনার অমৃত বিতরিত হচ্ছে। এছাড়া সমগ্র হাঙ্গেরী জুড়ে আয়োজন করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের প্রচারমুখী অনুষ্ঠান।
লিব্রি স্টোরে ভগবদগীতা প্রকাশের উদ্ভোধন করেন শ্রীমৎ শিবরাম স্বামী মহারাজ। তিনি উদ্ভোধনী প্রবচনে বলেন, “কমিউনিস্ট সরকারের সময় কিভাবে হাঙ্গেরীতে বৈদিক শাস্ত্র প্রচারে বিভিন্ন বাধার সম্মুখিন হন। তিনি বলেন তাঁর গুরুদেব পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণীকে যথাযথভাবে উপস্থাপনের পাশাপাশি তাৎপর্যে সত্য, জ্ঞান, প্রত্যেকের জীবনের নানা বাস্তবিক দিক ও জীবনের পরম উদ্দেশ্য সাধনের পথ বর্ণনা করেছেন এই গ্রন্থে।”
শ্রীমদ্ভগবদগীতাকে অনেকে বলেন ভারতের বাইবেল। এটি রচিত হয় ৫ হাজার বছর আগে। মূলত ভারতের ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রের ময়দানে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর সখা অর্জুনের মধ্যকার জগতের সর্বোচ্চ জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় হল পবিত্র শ্রীমদ্ভগবদগীতা যা যুগ যুগ ধরে মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শ্রীমদ্ভগবদগীতা যুগ যুগ ধরে মানুষের চর্চার মধ্যে রয়েছে এবং বহু প-িত ও সাধু মুনিবর্গ এর তাৎপর্য করেছেন। ১৫ শতকে বাঙ্গালী বৈষ্ণবগণ একে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পারমার্থিক গ্রন্থরূপে প্রতিষ্ঠা করেন এবং হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রকে সর্বশ্রেষ্ঠ মহামন্ত্র রূপে প্রতিষ্ঠা করেন।
ভগবদ্গীতা রচিত হয়েছে সংস্কৃত ভাষায় এবং পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ও ভাষাবিদ এর অনুবাদ করেছেন। যেমন হাঙ্গেরী বিখ্যাত কবি মিহাই বেবিটস চেষ্টা করেছেন, কিন্ত শুধুমাত্র সংস্কৃত ব্যাকরণ ও শব্দার্থ জানলেই শ্রীমদ্ভগবদগীতার মমার্থ উপলব্ধি সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন একটি সদ্পরম্পরা ধারায় থাকা একজন যুগাচার্য।
শ্রীল এ.সি.ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ হলেন গৌড়ীয় পরম্পরার একজন আচার্য। যিনি শ্রীকৃষ্ণ কৃপায় সমগ্র বিশ্বে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করেছেন। তিনি ভগবদ্গীতার প্রকৃত অর্থ যথাযথভাবে সমগ্র বিশ্বে প্রচার করে বহু পতিত মানুষকে উদ্ধার করেছেন। ভগবদ্গীতার অনেক ভাষ্য প্রাধান্য দেওয়ার হয়েছে রাজনীতি, সমাজ নীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়। কিন্তু ভগবদগীতা মূল উপজীবি হল ভগবদ্প্রেম তথা ভক্তিযোগ।
শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীমদ্ভগবদগীতা ছাড়াও আমাদের দিয়ে গেছেন আরেকটি অমূল্য গ্রন্থ শ্রীমদ্ভাগবত। শ্রীমদ্ভগবদগীতা ও শ্রীমদ্ভাগবত হল কলিযুগের মানুষের জন্য পরমেশ্বর ভগবান প্রদত্ত অশেষ কৃপা ও দিক নিদের্শনা। হরেকৃষ্ণ!