এই পোস্টটি 365 বার দেখা হয়েছে
বাদ্যযন্ত্রের সুর হচ্ছে বাহন স্বরূপ, যেটিতে চড়ে পবিত্র হরিনাম আগমন করে।
শ্রীমৎ বীর কৃষ্ণ স্বামী
কৃষ্ণনাম হলো সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ এবং সমস্ত সুখের আধার। আমরা যদি যথাযথভাবে জপ করি তবে আমাদের কোনো জড় দুর্দশা থাকবে না। পক্ষান্তরে জাগতিক লোকেরা যে বিষয়টিকে দুঃখ দুর্দশা হিসেবে গ্রহণ করে অর্থাৎ কৃষ্ণ বিরহের চিন্ময় যে আনন্দ তার অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে।
যেহেতু এ ধরনের আনন্দ যথাযথভাবে জপ করার মাধ্যমে লাভ করা যায় সেহেতু আপনি জেনে বিস্মিত হবেন যে, কিভাবে আমরা গভীর মনযোগ সহকারে জপ করি এমনকি আমরা কৃষ্ণের শুদ্ধ ভক্ত না হওয়ার পরও। কিভাবে বহুবিধ চিন্তার মাঝেও মনকে নিয়ন্ত্রণ করে আমরা কৃষ্ণ নাম চিন্তন করতে পারি।
যথাযথ জপ করার জন্য অনুশীলন প্রয়োজন এবং প্রথম ধাপটা হচ্ছে ইতিবাচকভাবে জপ করা। যখন আমরা অমনোযোগী জপ করি তখন প্রায়শই কিছু বাজে চিন্তা চলে আসে যা অনুচিত।
প্রচলিত আছে, আপনি যা করা উচিত নয় তা করতে পারেন না। “আমাকে এখন আমার মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করব না” এ ধরনের চিন্তার পরিবর্তে আমরা চিন্তা করতে পারি “এখন কৃষ্ণ নামের প্রতি মনোযোগী হবো, যেটা কৃষ্ণ হতে অভিন্ন। কৃষ্ণ নামে মনোযোগী হলে কৃষ্ণ আমাকে পূর্ণ বুদ্ধি দান করবেন এবং তাঁকে আরও বেশী ভালবাসতে পারব”।
ইতিবাচক চিন্তার পাশাপাশি কৃষ্ণ নামের প্রতি মনোনিবেশ করার আরো উপায় রয়েছে। সাধারণত আমরা দু’ভাবে কৃষ্ণ নাম করে থাকি: সমবেত কীর্তন এবং সমবেত জপ বা ব্যক্তিগত জপ। আমরা একে অন্যের মতো জপ করি না। একটু ভিন্নতা আছে। কীর্তনের সুরের গুণগত মানের ওপর নির্ভর করে পবিত্র হরিনামের প্রতি আমাদের মনযোগ অর্পন করা প্রয়োজন। যেমন একসময় আমাকে এটা সত্যি বিরক্ত করতো যদি কীর্তনকারী সুমধুরভাবে না গাইত কিংবা গায়ক হিসেেব তেমন ভাল না হতো অথবা বাদ্যযন্ত্রের ছন্দ বজায় রাখত না। মাঝে মাঝে মনে হতো যে, অন্যরাও আমার মতো এরকম অনুভব করছে। মাঝে মাঝে আমি এমন কিছু স্থানে অবস্থান করতাম যেখানে প্রত্যেকেরই সুর প্রয়োগের দক্ষতার অভাব রয়েছে। তারপর আমি উপলব্ধি করলাম যে, কৃষ্ণই প্রকৃতপক্ষে এরকম প্রতিকুল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যেন আমি তার পবিত্র নামকে গ্রহণ করতে পারি।
দ্বিতীয় স্তরের স্বাদ
রুচি, যেটি পবিত্র হরিনাম আস্বাদনের গভীরতম একটি স্তর। এর রয়েছে দুটি স্তর। প্রথমটি হলো কারো কীর্তনের প্রতি স্বাদ রয়েছে বা কীর্তন ভাল লাগে তখনই যখন যে ব্যক্তিটি গাইছেন তিনি একজন দক্ষ গায়ক এবং সে সাথে যে বাদ্যযন্ত্রগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তা ছন্দময় এবং দক্ষ বাদক দ্বারা বাজানো হচ্ছে।
২য় স্তরটি হলো কোন ব্যক্তি গাইছেন বা কীর্তনের সাথে কে জড়িত রয়েছেন এইসবের চেয়েও যে সমস্ত ভক্তরা নিষ্ঠার সহিত কৃষ্ণের প্রতি ভক্তিমূলক সেবা অনুশীলন করছেন তাদের গাওয়া কীর্তনের প্রতি তার প্রকৃত রুচি রয়েছে। কথিত আছে যে, প্রভুপাদের গুরুদেব শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর মাঝে মাঝে সবচেয়ে অদক্ষ গায়ক কর্তৃক কীর্তন পরিচালনা করতেন এবং তিনি এটি করতেন শুধুমাত্র ভক্তদেরকে উৎসাহিত করার জন্য যাতে করে তারা হরিনাম কীর্তনের উচ্চতর স্তরে উপনীত হতে পারে। আমার গুরুদেব শ্রীল প্রভুপাদ ও আমার পারমার্থিক পিতামহ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের কৃপায় আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে, আমি পবিত্র হরিনাম গ্রহণের সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত হতে প্রয়াস করছি। অবশেষে আমি শরণাগতি হয়েছিলাম এবং সেসাথে উপলব্ধি করছিলাম, যে সুর ও সুরসংশ্লিষ্ট বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে পবিত্র হরিনামের আগমন ঘটে তা শুধুমাত্র একটি বাহন স্বরুপ এবং আমার সে বাহনের প্রতি আসক্ত হওয়া উচিত নয়। আমার আসক্ত হওয়া উচিত বাহনের যাত্রীর প্রতিঃ নামরুপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি। তাই অনুশীলনের মাধ্যমে আমি হরিনামের প্রতি মনোনিবেশ করতে সমর্থ হয়েছিলামঃ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে। আমি কীর্তনের সময় সুরসংশ্লিষ্ট সক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হই না।
এর মাধ্যমে আমি প্রতিটি কীর্তনে চিন্ময় স্বাদ আস্বাদন করতে শুরু করেছিলাম এভাবে কেউ হরিনামের আশ্চর্য শক্তি উপলব্ধি করতে পারে। যে ভক্তরা প্রকৃতই পবিত্র হরিনামকে আস্বাদন করে তারা অনুভব করে যে, এটি যথেষ্ট নয়। যেরকম শ্রীল রূপ গোস্বামী লিখেছেন, পবিত্র হরিনাম জপ কীর্তন ও শ্রবণের জন্য কেউ লক্ষ লক্ষ জিহ্বা ও কর্ণ প্রাপ্ত হওয়ার প্রার্থনা করবে। বাহনের প্রতি আমার পূর্বের আসক্তিটি ছিল এরকম, যে কেউ সুস্বাদু প্রসাদের চেয়ে যে থালায় সেবা করা হচ্ছে সে থালার প্রতিই আসক্ত থাকা। ভাবুনতো এটা কেমন হয় যখন দামী থালায় প্রসাদ সেবার পরিবর্তে পত্র থালায় প্রসাদ অর্পণ করায় সুস্বাদ প্রসাদ গ্রহণ পরিত্যাগ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে থালার বিষয়টি কোনো মূখ্য বিষয় নয়।
যখন কেউ কীর্তনে অংশগ্রহণ করেন তিনি শুধুমাত্র মহামন্ত্র শ্রবণ এবং এর অর্থ সম্পর্কে চিন্তা করতে পারেন ঃ আমরা শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করছি যাতে তারা আমাদেরকে তাদের শ্রী চরণে আশ্রয় প্রদান করেন। কিভাবে শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণের কাছে তাদের অনুকম্পা ও অন্যান্য ভক্তিমূলক গুণাবলী প্রাপ্ত হওয়ার প্রার্থনা করছি তার ওপর যদি আমরা ধ্যান করি তখন কীর্তন মানসম্মত সুরসংশ্লিষ্ট বিষয়ের চেয়ে একটি আনন্দপূর্ণ প্রার্থনাতে রূপান্তরিত হয়।
এভাবে কিছুদিন শ্রবণ অনুশীলনের পর, যখন কেউ বলে যে, “ঐ কীর্তনটি অপ্রাকৃত কীর্তন ছিল!” (অর্থাৎ অন্য সব কীর্তন অপ্রাকৃত ছিল না), অথবা কেউ মনে করে যে, অপ্রাকৃত কীর্তনের অভিজ্ঞতা লাভ করার জন্য তাকে বহু দূরে ভ্রমণ করতে হবে, এভাবে গ্রহণ করা দুরুহ ছিল। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেকের কাছেই সর্বদা অপ্রাকৃত কীর্তনের অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ রয়েছে।
অবশ্যই যখন আমরা বাইরের ব্যক্তিদের কাছে কৃষ্ণভাবনা উপস্থাপন করি তখন সুর সংশ্লিষ্ট উপাদানগুলি প্রথম শ্রেণীর হওয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং যারা এই প্রকার উর্ধ্বস্তরের চিন্তাভাবনা গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয় তাদেরকে এই উপলব্ধির পথে ঠেলে দেয়া অনুচিত।
জপে মনোনিবেশ
মেরুদণ্ড সোজা করে বসা জপের সময় মনোযোগ সহায়ক। নরম কোনো বস্তুর ওপর পা জোড় করে বসাও জপে মনযোগ আনয়নে সহায়ক। শরীরের সমস্ত পেশীকে শিথিল করে দিতে হবে যাতে করে শুধুমাত্র পবিত্র হরিনামে মনোযোগ দেয়া যায়। শুধুমাত্র শান্ত ও নির্মল মন দিয়ে পবিত্র কৃষ্ণনামে মনোনিবেশ করা যায়।
কীর্তন বিভাগে পূর্বোল্লিখিত শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণের প্রতি প্রার্থনাসমূহ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার বিষয়টিও অত্যন্ত উত্তম। শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণের কাছে প্রার্থনার ভাবটি আবেগের সহিত হওয়া উচিত। যখন আমরা জপ করি তখন আমাদের সর্বদাই একটি সংকল্প থাকা উচিতঃ একটি পারমার্থিক বাসনা বা উদ্দেশ্য।
অতঃপর পবিত্র হরিনাম প্রবাহিত হোক। কোনো রকম জোর জবরদস্তি নয়। মনের সাথে কোনো যুদ্ধও নয়। শুধুমাত্র শান্তভাবে কৃষ্ণনাম জপ করা। যখন আপনি শরীরকে শান্ত করার জন্য বসবেন এবং জপ করবেন তখন মনকে ইতিবাচকভাবে বলুন শব্দের প্রতি মনোনিবেশ করতে। মনকে যদি এভাবে কয়েকবার পুনঃ পুনঃ বলা হয় তবে মন আপনার কথা শুনবে। যথার্থ বাসনা ও উপলব্ধির মাধ্যমে আমাদের মন স্বভাবতই পবিত্র নামের প্রতি আসক্ত হবে এবং আমরা তখন অমৃতের মহাসাগরে সাঁতার কাটব। স্থান, কাল আর অন্য কিছুই এর ওপর প্রভাব ফেলতে পারবে না।
জপের সময়টা অন্য কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ভক্তকে জপের সময় সামাজিক বা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজ করত দেখা যায়। এক্ষেত্রে কোনো জরুরি অবস্থা ব্যতীত আমি আমার জপে বিঘ্নতা সৃষ্টি করি না ।
আমাদের জপের সময়টি একটি সামাজিক কাজকর্মের অবসর স্বরূপ গ্রহণ করতে চাই না। আমাদের উচিত এটিকে একনিষ্ঠভাবে গ্রহণ করা। ব্যাপারটি এরকম যেন আমরা যখন কীর্তন পরিচালনা করি তখন কেউ আমাদের সাথে কথা বলতে চায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই আমরা তখন কোনো জরুরি অবস্থা ব্যতীত কীর্তন বন্ধ করি না। আমাদের জপ ও শ্রবণ করা উচিত যেরকম শ্রীমদ্ভাগবতে (২/৩/১০) উল্লেখ করা হয়েছে, তীব্রেণ ভক্তিযোগেন……: গভীর মনোনিবেশ সহকারে ভগবানের আরাধনা করা উচিত।
সকালে ভাল জপের শুরুটি হয় পূর্বের রাত্রি থেকে। রাতে নিদ্রায় যাওয়ার পূর্বে আমরা যা যা করি তা আমাদের চেতনাকে প্রভাবিত করে। শুধুমাত্র বিশ্রামের সময় নয় বরং পরবর্তী দিনেও বিশেষত সকালে বেশ প্রভাব রাখে।
মেরুদণ্ড সোজা করে বসা জপের সময় মনোযোগ সহায়ক। নরম কোনো বস্তুর ওপর পা জোড় করে বসাও জপে মনযোগ আনয়নে সহায়ক। শরীরের সমস্ত পেশীকে শিথিল করে দিতে হবে যাতে করে শুধুমাত্র পবিত্র হরিনামে মনোযোগ দেয়া যায়। শুধুমাত্র শান্ত ও নির্মল মন দিয়ে পবিত্র কৃষ্ণনামে মনোনিবেশ করা যায়।
বেদে দুই স্তরে নিদ্রার কথা বর্ণিত হয়েছে একটি অবচেতনমূলক ও স্বপ্নজাত এবং এগুলোতে মনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড জড়িত রয়েছে। যেমন যখন আমরা স্বপ্ন দেখি আমরা প্রক্রিয়া সাধন করি (যেটি আমরা পূর্বে প্রাপ্ত হয়েছিলাম), ভবিষ্যৎবাণী করি, (যা আমরা ভবিষ্যতে করব সেরকম কিছু মাধ্যমের মধ্য দিয়ে কার্য সম্পাদন করি) এবং অভিব্যক্তি (অপ্রয়োজনীয় কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ডাটা বর্জন করা) এই কর্মকাণ্ডগুলো অবচেতন মনের সাথে জড়িত। অতএব দৃষ্টান্ত স্বরূপ যদি আমরা রাতে ঘুমানোর পূর্বে যে সমস্ত কর্মকাণ্ডের ভাবনায় মনোনিবেশ করি তখন রাতে ঘুমানোর সময় সেই ভাবনাগুলোকে প্রক্রিয়া সাধন করি এবং পরবর্তী দিন যখন সকালে ঘুম থেকে উঠি তখন তা আমাদের চেতনায় প্রভাব বিস্তার করে।
অনেক বছর পূর্বে যখন আমি কিশোর ছিলাম আমার পিতা আমার জন্য একটি কার কিনে এনেছিল। কিন্তু আমি জানতাম না সেটি কিভাবে চালাতে হয়? আমার প্রতিটি প্রচেষ্টা বিফলে যাচ্ছিল। তখন আমি গাড়িটি চালানোর কলাকৌশল সম্পর্কে গবেষণা করি, এর ওপর ধ্যান করি, এর স্বপ্ন দেখি এবং পরবর্তী সকালে আমি ম্যানুয়েল মোতাবেক গাড়িটি যথাযথভাবে চালাতে সমর্থ হয়েছিলাম।
শ্রীল প্রভুপাদ এই নীতিটি ভালভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। এ কারণে তিনি সান্ধ্য ভক্তিমূলক কর্মসূচী আরোপ করেছিলেন। বিশেষত নিদ্রা যাপনের পূর্বে রাতে লীলা পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করা উত্তম। রাত্রে নিদ্রা যাপনের পূর্বে আপনি যদি নিজেকে কৃষ্ণকথায় নিবিষ্ট করেন তবে রাতের সময়টিতে দুঃস্বপ্ন দেখার আশংকা কমে যাবে। হয়তো দেখবেন সকালে আপনি কৃষ্ণচিন্তা করে জাগ্রত হয়েছেন এবং আপনার সূক্ষ্ম শরীর তখন এভাবে পরিশুদ্ধ হবে।
জাগ্রত থাকাবস্থায় হরিনাম জপ
সকালে কিভাবে নিদ্রা থেকে উঠা উচিত? সাধারণত অনেক ব্যক্তি নিদ্রা থেকে উঠে টলায়মান অবস্থায় থাকে। কিন্তু রাতে যখন কৃষ্ণকথা শ্রবণ করে আপনি নিদ্রা যাপন করবেন তখন এই টলায়মান অবস্থাটি অনেকাংশেই কম হয়। এমতাবস্থায় আমরা যেভাবেই নিদ্রা থেকে উঠি না কেন অবিলম্বেই আমরা উচ্চস্বরে হরিনাম জপ শুরু করতে পারি।
আমি স্নানাগারে গান গাই। তখন প্রায়শই নতুন নতুন সুরে কীর্তন গাই। এভাবে কীর্তন গাওয়া এত ভাল লাগে যে, মাঝে মাঝে ভুলে যাই সকালে জপ করা ছাড়াও আমার আরও অনেক কিছু করার আছে। এক্ষেত্রে এর বিকল্প হলো শ্রীল প্রভুপাদ কর্তৃক কীর্তন বা প্রবচন শ্রবণ করা। ভক্তিজীবন অনুশীলন করছেন এরকম কারো কাছ থেকে প্রবচন বা কীর্তন শ্রবণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে আমাদের অত্যন্ত পক্ষপাতমূলক হওয়া উচিত। কৃষ্ণভাবনা অনুশীলনের ক্ষেত্রে দৃঢ় নয় এমন কারো কাছ থেকে জপ কীর্তন বা কৃষ্ণকথা শ্রবণ করা আমাদের চেতনাকে জড়া প্রকৃতির গুণের দ্বারা আচ্ছন্ন করতে পারে। পদ্মপুরাণে উল্লেখ আছে,
অবৈষ্ণব মুখোদ্গীর্ণং পূতং হরিকথামৃতং।
শ্রবণং নৈব কর্তব্যং সর্পোচ্ছিষ্টং যথা পয়ঃ ॥
“অবৈষ্ণবের মুখ থেকে উদ্গীর্ণ হরিকথা শ্রবণ করা উচিত নয়। সর্পোচ্ছিষ্ট দুধ যেমন বিষাক্ত হয়ে যায়, তেমনই হরিকথা পবিত্র হলেও, অবৈষ্ণবের মুখ থেকে নির্গত হলে তা বিষাক্ত হয়ে যায়।”
অতএব, বিশ্রামে যাওয়ার পূর্বে এবং জাগ্রত হওয়ার পর কি করণীয় সে বিষয়ে উপরোক্ত দুটি বিষয় যথাযথভাবে হরিনাম জপ করার জন্য আমাদের মনকে প্রস্তুত করবে।
লেখক পরিচিতি : শ্রীমৎ বীর কৃষ্ণ দাস গোস্বামী নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা শেষ করে ফ্লোরিডাতে ১৯৭১ সালে ইস্কনে যোগদান করে অল্প সময়েই শ্রীল প্রভুপাদ থেকে দীক্ষা প্রাপ্ত হন। ১৯৭৮ সালে তিনি পেরুতে সন্ন্যাস দীক্ষা লাভ করেন। বর্তমানে তিনি জিবিসি হিসেবে ফিজি, সাউথইস্টার্ন ইউনাইটেড স্টেটস, সার্বিয়া ও স্লোভেনিয়াতে দায়িত্ব পালন করছেন।