শ্রম ক্যাম্পে প্রবেশ (পার্ট-১)

প্রকাশ: ৭ অক্টোবর ২০১৮ | ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৭ অক্টোবর ২০১৮ | ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 897 বার দেখা হয়েছে

শ্রম ক্যাম্পে প্রবেশ (পার্ট-১)

কাহিনির বক্তা: জ্যাজিক বুনিয়াটিয়ান
বি: দ্র: সল্টেড ব্রেডের কাহিনিসমূহ ইতোমধ্যে পাঠকবৃন্দের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাই পাঠকবৃন্দের অনুরোধে সল্টেড ব্রেডের বাকি কাহিনিসমূহও ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকবে।আমার জন্মদিনের তারিখ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেল হয়ে প্রায় ২৮ দিন পর রাশিয়ার একটি কুখ্যাত জেলে আমাদেরকে আনা হয়। জেলটি তৈরি করেছিলেন সম্যাজ্ঞী একাতেরিমা (১৭৬২-১৭৯৬)। অপরাধীদের নির্দয় নির্যাতনের জন্য এ জেল একসময় সবার কাছে পরিচিত ছিল। আমাদের একটি কক্ষে নেয়া হয় যেখানে শোয়ার খাট রয়েছে। খাটগুলো এতটাই সরু যে এপাশ থেকে ওপাশ ফিরতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবার জন্য এক কোণে একটি টয়লেট রয়েছে যেখানে কোন পর্দা ছিল না। কারো যদি রাথরুম আসত তবে তাকে সবার সামনেই ঐ টয়লেটে বাথরুম সারতে হত। সেই টয়লেটটি এতটাই অপরিচ্ছন্ন আর দুর্গন্ধযুক্ত ছিল যে, গন্ধের কারণে সবার রুদ্ধশ্বাস অবস্থা।
অবশেষে আমাকে শ্রম ক্যাম্পে আনা হয়। আমরা ১৫ জন অপরাধী অপেক্ষা করছিলাম ঐ জেলের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য। তিনি অপরাধীদেরকে বিভিন্ন শ্রম কাজে নিয়োজিত করান। আমি যখন তার সামনে গেলাম তিনি তার টেবিলে রাখা সব নথিপত্র দেখে অবাক হয়। তার চশমা খুলে সারা মুখে বিরাট প্রশ্নবেধক চিহ্ন দাঁড় করিয়ে আমাকে বলেন,“আমি কখনো ফাইল দেখিনি। আর্মেনিয়ানরা কি পাগল না কি?” অথার্ৎ তার দৃষ্টিতে আমার অপরাধ সাধারণ মনের ছিল । তার সঙ্গে অনেক কথা হলো। তিনি আমার কৃষ্ণভাবনা ও এর গ্রন্থ বিতরণ সম্পর্কে জানলেন। সর্বশেষ তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কেন
ঐ চুক্তিপত্রে আমি সই করিনি? সেখানে ইস্‌কন প্রভুপাদের বিরুদ্ধে লেখা ছিল। তিনি বললেন তুমি যদি সই করতে কৃষ্ণ কি তোমাকে ক্ষমা করত না? আমি বললাম ‘‘হয়ত কৃষ্ণ আমায় ক্ষমা করত না? আমি বললাম “হয়ত কৃষ্ণ আমায় ক্ষমা করত। কিন্তু আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারতাম না।” তিনি আমার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলেন। আমি বললাম আমাদের একটি সেলাই করতাম । জেলে সবাই পূর্বে বলাবলি করছিল যদি দশ গ্রুপে কেউ থাকে তবে সে লাভবান হবে। দশম গ্রুপ বলতে এখানে অপরাধীদেরকে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে বিভিন্ন শ্রম কাজে নিয়োজিত করত। সেদিক দিয়ে দশম গ্রুপে তেমন ভারী কাজ/ নোংরা কাজ করতে হয় না। সব শুনে তিনি আমাকে অবিশ্বাসভাবে দশম গ্রুপেই দিল। এটি আসলে কৃষ্ণেরই ব্যবস্থাপনা ছিল। যার মাধ্যমে তিনি আমার মত পতিত আত্মার প্রতি কৃপাবর্ষন করছেন। যার ফলে দশম গ্রুপে শুধু মাত্র সেলাই শ্রমই আমাকে দেয়া হল । পরবর্তীতে ওখানকার গার্ডরা আমার চুল শেভ করল এবং পরনের কাপড় পরিবর্তন করে দিল কারো একটি পোশাক । সেখান থেকে আমাকে আরেকটি কক্ষে নেয়া হয়েছিল। ঐ জেলে মোট ১৮০০ ভিন্ন ভিন্ন অপরাধের জন্য ১৮০০ অপরাধী ছিল। আমার জন্য যে রুম ছিল। সেসময় শচীসূতের দেয়া সেই ডায়েরীতে জেলের জীবন লিখতাম এবং লিখে ভালোই লাগত। কিছুক্ষণ পর একটি ঘন্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সবাই দৌড়ে নিচের সিঁড়িতে গেল। আমি একজনকে জিজ্ঞেস করলাম ‘‘কি ব্যাপার?” সে বলল এখন খাবার দিবে। সেখানে আমাদেরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে প্রতিদিন তিনবার করে গুণত। যার জন্য দাড়াবার যে স্থান নির্দিষ্ট থাকত তা জেল ছাড়ার আগ পর্যন্ত একই থাকত। একসময় আমার নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়ালে বেশ মোটা সোটা একজন অপরাধী এসে আমায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। ওটা ছিল আমার প্রথম পরীক্ষা। ভাবলাম যদি আমিও তার অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ না করি তবে সে আরো সুযোগ পাবে এবং তার চাকর হিসেবে চা আনানো, ডেস্ক পরিস্কার ইত্যাদি কাজে খাটাবে। এটি আমি শিখেছিলাম অন্য জেলগুলোতে থাকা অবস্থায়। তাই আমি ও পেচনে এক ধাপ সরে দৌড়ে গিয়ে ওর শরীরে সজোরে ধাক্কা দিলাম। ধাক্কার জোড়ে সে তার পেছনে থাকা বাথরুমে পড়ে গেল। আর আমিও সে সুযোগে ইচ্ছেমত শক্তি দিয়ে লাথি মারছিলাম। পরে ভান্য নামে এক অপরাধী আমাকে সরিয়ে নেয় এবং বলে তুমি প্রথম পরীক্ষায় পাশ। এখন থেকে কেউ তোমাকে বিরক্ত করবে না। এরপর আমাদের কে একটি বিরাট ডইনিং রুমে নেয়া হল যেখানে ১৮০০ অপরাধীর সবাই ছিল। একটি বিরাট টেবিলে যার যার নির্দিষ্ট স্থানে বসল। ওখানকার সবকিছু খুব নোংড়া ছিল। আমি বসলাম একেবারে শেষের চেয়ারে। খাবার হিসেবে ছিল আধাসিদ্ধ মাছ, মাংস। ওগুলো যেসব পাত্রে রাখা ছিল সেগুলো এতটাই নোংড়া ছিল যে আমি কল্পনাই করতে পারছিলাম না যে ওরা কিভাবে তা গ্রহণ করছে। আমার জন্য ২য় পরীক্ষাটি হল ওখানকার একজন পুরানো অপরাধী তাদেরকে খাবার বিতরণ করতে বলল, আমি বললাম আমি নিরামিশাষী। আমার পক্ষে এই পাত্রগুলো ছোয়াও অসম্ভব। তখন সে তার হাতে থাকা চামচ ছুড়ে মারতে প্রস্তুুত হলাম। অবশেষে সে দমে যায়। তারপর আমি শুধু রুটি নিয়ে যখন আমার রুমে যাচ্ছিলাম তখন গার্ড তা দেখে রুটিগুলো ডাস্টবিলে ছুড়ে মারে। সে বলে যা খাওয়ার ওখানেই খেতে হবে। আমি ঐ দিনটা অভুক্তই থেকেছিলাম। (চলবে…..) হরে কৃষ্ণ।

মাসিক চৈতন্য সন্দেশ ডিসেম্বর ২০১০ সালে প্রকাশিত 

 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।