লাখো বৈষ্ণবের মিলনমেলায় খেতুরী ধাম

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২২ | ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২২ | ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 190 বার দেখা হয়েছে

লাখো বৈষ্ণবের মিলনমেলায় খেতুরী ধাম

প্রেমভক্তির মহাজন শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর মহাশয়ের তিরোভাব তিথি উদ্‌যাপন


সুলোচন কানু দাস : মূর্তিমান বৈরাগ্য শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর মহাশয় ছিলেন বিপ্রলম্ভ রস-ভাবের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ পথিক। বৈষ্ণবজগতে তাঁর আসন অনেক উঁচু স্তরে অধিষ্ঠিত। তাঁর রচিত পদাবলি গৌড়ীয় বৈষ্ণব সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ, তা যেন অপ্রাকৃত মন্ত্রশক্তির আধার। গরানহাটি ঘরানার এক নতুন মাধুর্যময় সুরের প্রবর্তন করেন তিনি। সে সুরে ভক্তি মিশিয়ে এমনভাবে তাঁর সঙ্গীতবিদ্যার প্রকাশ ঘটাতেন যে, তাতে শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর প্রকট-অপ্রকট লীলার সকল পার্ষদ সমবেত হয়ে দর্শক-শ্রোতার আনন্দ বৃদ্ধি ও বিস্তার করতেন, যার সূত্রপাত ঘটে শ্রীপাট খেতুরিতে। সুপ্রাচীন খেতুরি উৎসবের ঐতিহ্য প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরানো। প্রেমভক্তির মহাজন শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুরের উদ্দ্যেগেই গৌরপূর্ণিমাতে প্রথম খেতুরী ধামে অনুষ্ঠিত হয় মহাবৈষ্ণব সম্মেলন।ু
যে উৎসব ঠাকুর মহাশয় গৌর পূর্ণিমাতে করেছিলেন সেটি এখন তাঁর তিরোভাব তিথিতে পালিত হয়। ঠাকুর মহাশয়ের তিরোধান লীলা বেশ অলৌকিক এবং বিষ্ময়াপন্ন। শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর মহাশয় বিরহগীতির মাধ্যমে লীলা সঙ্গোপনের জন্য ব্যাকুলভাবে প্রার্থনা করতে থাকেন। তিনি খেতুরী থেকে বুধরী হয়ে গম্ভীলা এসে কিছুক্ষণ হরিনাম করে গঙ্গা স্নান করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে রামকৃষ্ণ আচার্য ও গঙ্গানারায়ন চক্রবর্তী ঠাকুর মহাশয়কে নিয়ে গঙ্গার ঘাটে গেলেন এবং ঠাকুরের আজ্ঞা পেয়ে তাঁরা ঠাকুরের দেহ মার্জন শুরু করলেন। তাঁদের স্পর্শ মাত্রই ঠাকুর মহাশয় গঙ্গার জলে দুগ্ধের ন্যায় তরল আকার ধারণ করে মিশে গিয়ে অন্তর্হিত হলেন। প্রাচীন ধারা অনুসরণ করে তাঁর এই তিরোভাব তিথি খেতুরী ধামে মহা আড়ম্বরে পালিত হয়ে আসছে যা ‘খেতুরী উৎসব’ নামে পরিচিত।
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ীতে অবস্থিত পূন্যতীর্থ শ্রীপাট খেতুরী ধামের শ্রীশ্রী রাধা ব্রজমোহন মন্দির (ইস্কন মন্দির) প্রাঙ্গনে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন)-এর আয়োজনে প্রেমভক্তির মহাজন বৈষ্ণবচূড়ামণি শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর মহাশয়ের তিরোভাব তিথি সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হল। এ উপলক্ষে গত ১৩, ১৪ ও ১৫ অক্টোবর তিনদিন ব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম ঘটে। ভক্তদের আপ্যায়নে সুবৃহৎ প্রসাদ হল সহ সুন্দর আলোকসজ্জিত সুবৃহৎ প্যান্ডেল ও স্টেজ তৈরী করা করা হয়েছিল যেখানে হাজার হাজার ভক্ত রাত্রি যাপন করেন। তিন দিন ব্যাপী মহাআয়োজনে প্রায় দুই লক্ষাধিক ভক্ত প্রসাদ গ্রহন করেন এবং আরতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে লক্ষাধিক ভক্ত ভগবান দামোদরকে প্রদীপ নিবেদন করেন।
১৪ অক্টোবর সকালে হরিনাম সংকীর্তন যোগে ধাম পরিক্রমা এবং পবিত্র পদ্মা নদীতে স্নান সম্পন্ন হয় যার নেতৃত্বে ছিলেন ইস্কন বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সন্ন্যাসী শ্রীমৎ ভক্তিঅদ্বৈত নবদ্বীপ স্বামী মহারাজ। তারপর সকাল ১১ ঘটিকায় শ্রীশ্রী গৌর নিতাই ও শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর মহাশয়ের শুভ মহাভিষেক এবং প্রস্তাবিত আবাসিক ভবনের পূঁজা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ইস্কন বাংলাদেশের মহারাজগণ এবং বরিষ্ঠ ব্রহ্মচারীবৃন্দসহ দেশ-বিদেশের ভক্তবৃন্দরা অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ, ভজন-কীর্তন, নৃত্য, সন্ধ্যা আরতি, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর মহাশয়ের লীলাকথা আলোচনা সহ নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ আয়োজন ছিল।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নবনিযুক্ত সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী মনোজ কুমার; রাজশাহী পুলিশ সুপার জনাব এ বি এম মাসুদ হোসেন; হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এর ট্রাস্টি শ্রী তপন কুমার সেন সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উচ্চপদস্থ নেতৃবর্গ। প্রধান আশীর্বাদকরূপে উপস্থিত ছিলেন ইস্কন বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি শ্রীমৎ ভক্তিঅদ্বৈত নবদ্বীপ স্বামী মহারাজ এবং শ্রীমৎ ভক্তিবিনয় স্বামী মহারাজ।
উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন ইস্কন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শ্রীমান চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী, ইস্কন বাংলাদেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্রীমান জগৎগুরু গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী এবং ইস্কন বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ শ্রীমান জ্যোতিশ্বর গৌর দাস ব্রহ্মচারী সহ বাংলাদেশ ইস্কন এর বরিষ্ঠ প্রচারকবৃন্দ। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রীশ্রী রাধা ব্রজমোহন মন্দির, ইস্কন খেতুরী ধামের অধ্যক্ষ শ্রীমান পার্থসারথী কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর মহাশয় শ্রীনিবাস আচার্য ও শ্যামানন্দ পন্ডিত সহ অন্যান্য পার্ষদের সঙ্গে খেতুরী সহ সমস্থ গৌরমন্ডল ভূমি, ব্রজমন্ডল ভূমি, আসাম, ত্রিপুরা, মনিপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে প্রচার কার্যক্রম শেষে তিনি বল্লভীকান্ত, রাধাকান্ত, শ্রীব্রজমোহন এর কাছে বারংবার বিলাপ, বিরহগীতির মাধ্যমে লীলা সঙ্গোপনের জন্য ব্যাকুলভাবে প্রার্থনা করতে থাকেন।
তিনি খেতুরী থেকে বুধরী হয়ে গম্ভীলা এসে কিছুক্ষণ হরিনাম করে গঙ্গা স্নান করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে রামকৃষ্ণ আচার্য ও গঙ্গানারায়ন চক্রবর্তী ঠাকুর মহাশয়কে নিয়ে গঙ্গার ঘাটে গেলেন এবং ঠাকুরের আজ্ঞা পেয়ে তাঁরা ঠাকুরের দেহ মার্জন শুরু করলেন। তাঁদের স্পর্শ মাত্রই ঠাকুর মহাশয় গঙ্গার জলে দুগ্ধের ন্যায় তরল আকার ধারণ করে মিশে গিয়ে অন্তর্হিত হলেন। তাঁর এই তিরোভাব তিথি খেতরী ধামে মহা আড়ম্বরে পালিত হয়ে আসছে যা খেতুরী উৎসব নামে পরিচিত।
উল্লেখ্য যে, প্রতি বছর এই পূণ্য তিথিতে দেশ-বিদেশ হতে লক্ষাধিক ভক্ত প্রেমভক্তি লাভের জন্য পদ্মাস্নান ও ধাম দর্শনে আসেন। আপনিও এই দুর্লভ সুযোগটি গ্রহণ করে মনুষ্য জন্মকে সার্থক করুন। হরেকৃষ্ণ।
যেভাবে ধামে যাবেন: দেশের যেকোন প্রান্ত হতে রাজশাহী শহরে বাস, ট্রেন ও বিমান যোগে আসবেন। তারপর অটোরিক্সা, মিনি বাস যোগে বসন্তপুর, বসন্তপুর থেকে ভ্যান যোগে শিয়ালায় অবস্থিত ইস্কন মন্দিরে আসতে পারবে


– -মাসিক চৈতন্য সন্দেশ নভেম্বর  মাসে ২০২২ সালে প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।