এই পোস্টটি 196 বার দেখা হয়েছে
যুধিষ্ঠির গোবিন্দ দাস
জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (UNESCO) যেটি ১৯২টি দেশের সদস্যপদ সম্বলিত জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাগুলির মধ্যে একটি, সম্প্রতি ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত সদর দপ্তরে এর দ্বিবার্ষিক পূর্ণাঙ্গ বৈঠকের আয়োজন করে। যেখানে এটির সদস্য রাষ্ট্র এবং সহযোগী সদস্য, সদস্য নয় এমন রাষ্ট্র, আন্তঃসরকারী সংস্থা, বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) এবং ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষকরাও ছিলো। তিন সপ্তাহের বৈঠকে, ২০২৪ এবং ২০২৫ সালের জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাগুলির স্বীকৃতি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত ৫৩টি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব এবং ঘটনা ছিলো। এর মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের জন্মবার্ষিকী, নভোদেভিচি কনভেন্টের (মস্কোর একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান) প্রতিষ্ঠার ৫০০তম বার্ষিকী, আজমি নাখচিভানির ৯০০তম জন্মবার্ষিকী (নাখচিভান স্কুল অফ আর্কিটেকচারের প্রতিষ্ঠাতা)। তবে, প্রধান হাইলাইট ছিল শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর প্রভুপাদের ১৫০তম আবির্ভাব তিথি উদ্যাপনের জন্য ভারত সরকারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) যে প্রস্তাব দেয় সেটির গ্রহণযোগ্যতা, যা হবে ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ এ। এই প্রস্তাবটি রাশিয়া, কাজাখাস্তান, কিউবা, ভিয়েতনাম সমর্থন করেছিলো। থাইল্যান্ডে এবছরের শুরুতে তাদের কার্যনির্বাহী সভায় এবং গত মাসে প্যারিসে সকল সংস্থা স্বীকৃতি দেয়। সম্ভবত এই প্রথম কোনো বৈষ্ণব নেতাকে জাতিসংঘের স্বীকৃতি দেওয়া হল। ইস্কন কমিউনিকেশন আশা করে যে এই ঘটনা শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর এবং শ্রীল প্রভুপাদের গৌরবের মালা গাঁথাতে সংযোজন হবে। এটির প্রধান কৃতিত্ব ইউনেস্কোতে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি বিশাল শর্মা, যিনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
এক নজরে শ্রীভক্তিসিদ্ধান্ত গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদের জীবনী ও অর্জন
১৮৭৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী, বাংলা ১২৮০ সালের মাঘী কৃষ্ণাপঞ্চমী তিথি শুক্রবারে, শ্রীপুরুষোত্তম ক্ষেত্রের শ্রীজগন্নাথদেবের মন্দিরের সন্নিকটে ‘নারায়ণ ছাতা’ নামক স্থানে সরস্বতী ঠাকুর প্রভুপাদ (বিমলা প্রসাদ দত্ত) আবির্ভাব হন।
১৮৮১ সালে বিমলা প্রসাদের বয়স যখন মাত্র সাত বৎসর তখন ভক্তিবিনোদ ঠাকুর কোলকাতায় রামবাগানস্থ “ভক্তিভবন” এর ভিত্তি খননকালে মৃত্তিকার মধ্য হতে শ্রীকুর্মদেবের (শ্রীবিষ্ণু) বিগ্রহ প্রাপ্ত হন।
১৮৮৪ সালে ১ এপ্রিল বিমলা প্রসাদ শ্রীরামপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়ন করতেন তখন “Bicanto” নামক এক প্রকার সহজ লিখন প্রণালী (Short Hand) আবিষ্কার করেন।
পণ্ডিতপ্রবর শ্রীমহেশচন্দ্র চূড়ামণির নিকটে গণিত, জ্যোতিষশাস্ত্র অধ্যয়ন করতেন। তাঁর প্রতিভা দর্শনে চূড়ামণি মহাশয় স্তম্ভিত হয়েছিলেন। বিমলা প্রসাদের বিভিন্ন শাস্ত্রে, বিশেষত ভক্তিশাস্ত্রে তাঁর সুপাণ্ডিত্য লক্ষ্য করে তাঁর মহাভাগবত গুরুবর্গ তাঁকে “সিদ্ধান্ত সরস্বতী” উপাধি প্রদান করেন।
১৮৯২ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পরে শ্রীসরস্বতী ঠাকুর সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন।
১৮৯৭ সালে শ্রীসরস্বতী ঠাকুর কোলকাতা ১৮১নং মানিকতলা স্ট্রীটস্থ ভক্তিভবনে “সারস্বত-চতুষ্পাঠী” স্থাপনপূর্বক ‘জ্যোতির্বিদ’ ও ‘বৃহস্পতি’ নামক দু’খানি ও ভক্তিভবন পঞ্জিকা প্রবর্তন ও সম্পাদন এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের সূর্যসিদ্ধান্তাদি অনেক প্রাচীন গ্রন্থ প্রকাশ করেন।
১৮৯৫ সালে শ্রীসরস্বতী ঠাকুর শুক্লবৃত্তিতে জীবন-যাপনের নিমিত্ত স্বাধীন ত্রিপুরারাজ্যে রাজন্যবর্গের জীবনী “রাজরত্নাকর” প্রণয়ণে সহকারী ‘সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন। শ্রীসরস্বতী ঠাকুর ১৯০৮ সালে পর্যন্ত তা গ্রহণ করেছিলেন।
১৮৯৮ সালে গোদ্রুমদ্বীপস্থ শ্রীস্বানন্দসুখদ কুঞ্জে শ্রীগৌরকিশোর দাস বাবাজি মহারাজের সাথে শ্রীসরস্বতী ঠাকুরের প্রম সাক্ষাৎ হয়।
১৮৯৭ হতে শ্রীসরস্বতী ঠাকুর বৈষ্ণব স্মৃতি শ্রীহরিভক্তি বিলাসের বিধান অনুসারে চাতুর্মাস্যব্রত পালন করতেন।
১৯০০ সালে শ্রীসরস্বতী ঠাকুরের রচিত “বঙ্গে সামাজিকতা” নামক গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।
১৯০৫ সালে শ্রীভক্তিবিনোদ ঠাকুরের নির্দেশক্রমে শ্রীসরস্বতী ঠাকুর পরম নির্জন ধাম শ্রীমায়াপুরে হতে একান্ত ভাব ভজন করতে থাকেন।
১৯১৮ সালের ২৭ মার্চ, ৪৩১ গৌরাব্দের ৩০ গোবিন্দ, ১৩২৪ বঙ্গাব্দের ১৩ চৈত্র শ্রীগৌর আবির্ভাব তিথি ফাল্গুণী পূর্ণিমায় শ্রীসরস্বতী ঠাকুর ৪৪ বৎসর বয়ঃক্রম পর্যন্ত নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচারী লীলায় বিশেষভাবে গ্রন্থ রচনা কার্যে নিমগ্ন থেকে পরিব্রাজক রূপে ‘জগৎ উদ্ধার কার্য’-এর নিমিত্ত নবদ্বীপ কমলের কর্ণিকা স্বরূপ শ্রীধাম মায়াপুরে শ্রীশ্রীগৌর হরির ব্রজলীলা অভিনয় ক্ষেত্রে শ্রীব্রজপত্তনে তথা শ্রীচন্দ্রশেখর আচার্যের ভবনে বৈদিক ত্রিদণ্ডী সন্ন্যাস গ্রহণপূর্বক শ্রীভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী নামে অভিহিত হন।
১৩২৭ বঙ্গাব্দের ২১ ভাদ্র সোমবার শ্রীভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর প্রভুপাদ শ্রীকৃষ্ণজন্মাষ্টমী বাসরে শ্রীশ্রীগুরুগৌরাঙ্গ গান্ধর্বিকা গিরিধারীর সেবা প্রকাশ করেন। তখন শ্রীআসনের নাম হয় শ্রীগৌড়ীয় মঠ।
১৯২১ সালের ১৪ মার্চ শ্রীভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর প্রভুপাদ শ্রীধাম নবদ্বীপ পরিক্রমার পুনঃ প্রবর্তন করেন।
১৯৩৭ সালে ১ জানুয়ারি শ্রীচৈতন্যমঠ ও গৌড়ীয় মঠের সংস্থাপক শ্রীভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদ ৬২ বৎসর ১০ মাস কাল প্রকট লীলা করার পর ৩ নারায়ণ ৪৫০ গৌরাব্দ, ১৬ পৌষ ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ, প্রাতঃ ৫:৩০ ঘটিকায় কলিকাতা বাগবাজারস্থ শ্রীগৌড়ীয় মঠে শ্রীকৃষ্ণ নাম উচ্চারণ করতে করতে শ্রীরাধা গোবিন্দের নিশান্ত লীলায় প্রবেশ করেন।