এই পোস্টটি 1101 বার দেখা হয়েছে
“এটি একটি অত্যন্ত বিস্ময়কর আবিষ্কার। ভারতবর্ষ, যেখানে অনেক দিগি¦জয়ী এবং মহান মুনিগণ তাদের পদচিহ্ন রেখে গেছেন; কিন্তু সময় এবং প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবীর আদি এই ভাষা এখনও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। এই ভাষা সকল ভাষার জনক এবং ইউরোপিয়ারনরা যাকে “ক্লাসিক্যাল” এর উৎস নামে জানো যেটির দর্শন অতি উন্নত, যে ভাষা মহাজাগতিক হিসাব নিকাশ সমাধানের ক্ষমতা রাখে।”-রয়েল এসিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত উপরোক্ত বক্তব্যে যে ভাষার কথা বলা হচ্ছে তা হচ্ছে দৈবী ভাষা ‘সংস্কৃত’। “অরিজিন অব হিউমেন স্পিস এন্ড এফলপাকেট” নামক গ্রন্থে বিখ্যাত ভাষাবিদ মরিস ফিলিপ বলেছেন, “ভাষাতত্ত্বের ইতিহাস এবং ধ্বনিতত্ত্বের উপর সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে আমরা এ কথা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করিতে পারি যে, “ঋগবেদ” হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থ। শুধুমাত্র আরিয়ান গোষ্ঠির জন্য সত্য।” সুতরাং উপরোক্ত রক্তব্যে আমরা এ কথা বলতে পারি যে, ঋগবেদ হচ্ছে ভগবান কর্তৃক প্রদত্ত প্রথম এবং প্রধান ধর্মগ্রন্থ। ঋগবেদ যেহেতু ভগবান প্রদত্ত তাই এটি ত্রুটিহীন। ঋগবেদে বলা হয়েছে যে, পরমেশ্বর ভগবান সর্বপ্রথম ব্রহ্মা মানবজাতিকে জ্ঞান বিতরন করেছেন, সংস্কৃত বর্ণ ও ভাষা প্রদান করেছেন। এছাড়া বহু পাশ্চাত্য ভাষাবিদ বিজ্ঞানীগণ বেদ এবং সংস্কৃত ভাষাকে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন শাস্ত্রীয় ভাষা বলে স্বীকার করেছেন। সর্বপ্রথম ভাষার উৎস সন্ধানে গবেষণা করেন ডেনমার্কের ভাষাতত্ত্ববিদ রাসমাস রাসক (১৮১৮), জার্মানীর ফ্যাঞ্জ বোপ(১৭৯১-১৮৩৭). ফিক অ্যাস্ট, জেকব গ্রীম সহ আরো অনেকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ১৯১৪ সালে। সে বছর থমাস ইয়ং ঘোষণা করেন যে, পৃথিবীর সকল ভাষা মূলত ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা থেকে এসেছে। পরবর্তীতে আধুনিক ভাষাবিদের মতে ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা গোষ্ঠী মূলত একটি মাত্র প্রোটো ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা থেকে এসেছে এবং তারা গবেষণা করে মত প্রকাশ করেন যে, এই প্রোটো ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষার উৎপত্তি এশিয়া তথা এশিয়া মাইনরে এবং এটি ৭০০০ খ্রীষ্টপূর্বেও ব্যবহৃত হত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভাষাতত্ত্ববিজ্ঞানীরা কিভাবে বুঝলেন যে, সকল ভাষা মূলত একটি ভাষা হতে এসেছে। প্রথমত বিজ্ঞানীরা সকল ভাষার মধ্যে কিছু একই ধরনের শব্দ পরিলক্ষিত করলেন। এছাড়া তাঁরা শব্দের উৎস, ধ্বনিগত জ্ঞান ও ভাষার চারিত্রিক পরিবর্তন সবকিছুই গবেষণা করে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন যে একটি ভাষার ইভালুয়েশনের মাধ্যমে অন্যান্যা ভাষা এসেছে। গত শতাব্দীতে এশিয়ামাইনরে অবস্থিত তুর্কিস্থানে বিজ্ঞানীরা কয়েকটি প্রাচীন শাস্ত্রলিপি আবিস্কার করেন যা আনুমানিক ৬৫০০ খ্রীষ্টপূর্বের। আশ্চর্যের বিষয় ছিল যে, সেসকল শাস্ত্রে চাকা নির্মিত রথ, পশুপালন এর কথা উল্লেখ আছে, যা মূলত বেদের কৃষি-গোরক্ষা-বাণিজ্য নীতির সম্পূরক। পশ্চিমা ভাষাতত্ত্ববিদগণ বলছেন যে, সংস্কৃত ভাষাই হচ্ছে সেই আদি অর্থাৎ প্রোটো ইন্দোইউরোপিয়ান ভাষা, যা ইন্দো উপত্যকার নিকটবর্তী অঞ্চলের মানুষেরা ব্যবহার করত।|(Source: Dravidian Origin) গবেষকগণ বলছেন যে, ইন্দোঅঞ্চলের প্রাচীন লোকসমূহ অতিপূর্বে বর্তমান ভারতের র্স্বস্বতী নদীর তীরে বাস করতেন। প্রায় ৬০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে তারা সেখানে বৈদিক সমাজব্যবস্থা চালু করে। পরে সমগ্র পৃথিবীতে তাদের বিস্তৃতি ঘটে এবং সেই সাথে ভাষা হিসেবে সংস্কৃত ভাষা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বৈদিক যুগের কয়েকটি আর্কিটেকচার দেখে ধারণা করা যায় যে এগুলো ছিল অতি প্রাচীন সময়ের এবং সেই সাথে সেই সব আর্কিটেকচারে সংস্কৃত মন্ত্রসমূহ খোদাই করা দেখে ধারণা করা যায় যে, সংস্কৃত অতি প্রাচীন ভাষা। অনেকেই মত প্রকাশ করেন যে, সংস্কৃত ভাষা সর্বস্তরের মানুষ ব্যবহার করত না। কেবল উচ্চ স্তরের ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়রাই কেবল এই ভাষা ব্যবহার করত। অন্যান্যরা প্রাকৃত ভাষা ব্যবহার করতেন। ১৯৮০ সালের ৯ জুলাই তারিখের “টাইমস অব ইন্ডিয়া”পত্রিকায় প্রকাশিত পাঞ্জাব ইউনিভাসির্টির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সকল স্তরের এমনকি সমাজের নিম্নেবর্ণের মানুষেরাও তখন সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করত। এখনও হিমালয়ে পাটান উপত্যকার নিকটে “চিনাল” নামক এক আদিবাসী সম্প্রদায় বাস করে যারা বৈদিক যুগ থেকে এখনও শুধুমাত্র সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করছেঅ এছাড়া “লোহার” নামক অন্য এক কামার সম্প্রদায়ও এখনো সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করছে। বিশ্বসেরা “এনসাইক্লোপিডিয়া অব —- এর সংস্কৃত নামক অধ্যায়ে লেখা রয়েছে যে, উইলিয়াম স্মিথ এবং অন্যান্য গবেষকগণ মন্তব্য করেছেন যে, “সংস্কৃতই হচ্ছে প্রথম ভাষা, যা ভগবান কর্তৃক প্রদত্ত”। লেখক ডেবিড ড্রিংগার তার রচিত “দি এলফাবেট” নামক গ্রন্থে দেখিয়েছেন কিভাবে প্রত্যেকটি ভাষার ধ্বনিসমূহ মূলত একটি ধ্বনি বা বর্ণ থেকে এসেছে। এই গ্রন্থে তিনি প্রতিপন্ন করেছেন যে, মূলত সংস্কৃত বর্ণই পরবর্তীতে বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন ভাষায় প্রবেশ করেছে।(source: Dravidian Origin) আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স (AL) নামক বিখ্যাত ম্যাগাজিনে নাস গবেষক রিক ব্রিগস বলেছেন, “বিগত ত্রিশ বছর যাবৎ আমরা কম্পিউটার প্রসেসিং করার উদ্দেশ্যে একটি প্রাকৃতিক ভাষার সন্ধানে বহু সময়, অর্থ, শ্রম দিয়েছি। অবশেষে প্রায় ১০০০বছরের প্রাচীন একমাত্র সংস্কৃত ভাষাই আমাদের প্রচেষ্ঠাকে সফল করেছে। সাম্প্রতিক তথ্যমতে, নাসার বিজ্ঞানীগণ খুব শীঘ্রই ৬ষ্ঠ প্রজন্ম এবং ৭ম প্রজন্মের দ্রুুুত গতির সুপার কম্পিউটার নির্মাণ করতে যাচ্ছে যেটি সম্পূর্ণভাবে পরিচালনা করা হবে সংস্কৃত ভাষা দিয়ে। এই প্রজেক্টটির কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালে (৬ষ্ঠ প্রজন্ম), এবং ২০৩৪ সালে (৭ম প্রজন্ম), পৃথিবীর বহু ভাষাবিদগণ ধারণা করছেন যে, নাসা এই প্রকল্প শেষ করার পর পৃথিবীতে সংস্কৃত ভাষা তুমুল জনপ্রিয় হবে এবং একটি বৃহৎ পূনর্জাগরণ ঘটবে। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, সংস্কৃত ভাষায় তৈরি ঐ সকল বৈদিক শব্দসমূহ জাদুর মত কাজ করবে। এবার আমরা কয়েকটি ইংরেজী শব্দের উৎস সম্পর্কে জানব। যেমন-সংস্কৃত ‘মাতৃ’ শব্দটি গ্রীক ভাষায় ‘মাতির’ রূপ ধারণ করে এবং পরবর্তীতে সেটি ইংরেজী “মাদার” (Mother) এ পরিবর্তিত হয়। এখানে বিশ্ববিখ্যাত অক্সফোর্ড ডিকশেনারীতে একটি ইংরেজী শব্দ Garish এর অর্থ বলা হয় Excessively bright in color, ঠিক একই গৌর(Goudy) সংস্কৃত শব্দটি ও উজ্জ্বলতা অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে, এছাড়া সংস্কৃত “ভ্রাতা” শব্দটি পরবর্তীতে ইংরেজীতে “ব্রাদার” শব্দে রূপান্তরিত হয়। পরিশেষে বলছি, এখনও যাদের উক্ত বিষয়গুলোর ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে তারা ফিলোসোপিক্যাল রিসার্স সোসাইটির বিখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর ডেন ব্রাউন কর্তৃক পরিবেশিত একটি প্রতিবেদন অবলোকন করতে পারেন। ব্রাউজ করুন https://www.youtube.com/watch?v=yxzXxQrX2Mc পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংস্কৃত ভাষাকে নিয়ে বহু বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। যেমন: আমেরিকান সংস্কৃত ইনস্টিটিউটসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কৃত ভাষা চর্চা করে যাচ্ছেন। তথ্য সূত্র: ইন্টারনেট, জার্নাল। “সংস্কৃত হচ্ছে সকল ভাষার মাতা। স-ং-স-কৃ-ত, শব্দটির অর্থই হচেছ “ভাষা”। অতত্রব এটিই হচ্ছে প্রকৃত ভাষা যা শুধুমাত্র এই গ্রহেই নয়, সমগ্র ব্রহ্মান্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে-শ্রীল প্রভুপাদ। হরে কৃষ্ণ
(মাসিক “চৈতন্য সন্দেশ” জুন ২০০৯ সালে প্রকাশিত)