দেবী ভদ্রকালী দস্যুদেরকে বলি দিলেন

প্রকাশ: ৭ নভেম্বর ২০১৮ | ৫:১১ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৭ নভেম্বর ২০১৮ | ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 992 বার দেখা হয়েছে

দেবী ভদ্রকালী দস্যুদেরকে বলি দিলেন

সনাতনগোপাল দাস ব্রহ্মচারী

এক হরিণের প্রতি আসক্ত হওয়ার ফলে ভরত মহারাজকে পরবর্তী জন্মে হরিণ-শরীরে জন্মাতে হলো। কিন্তু তিনি ভক্ত ছিলেন বলে হরিণ-জীবনেও শ্রীকৃষ্ণচিন্তা হতো। পরজন্মে এক ব্রাহ্মণের কনিষ্ঠা পত্নীর গর্ভে তিনি জন্ম নেন। জাতিস্মর হওয়ার কারণে তিনি ভাবতে লাগলেন কারও প্রতি আসক্ত হলে দুর্ভোগ ঘটে, এখন যদি আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি আসক্ত হই, তাতেও বিপদ হবে। বারংবার বদ্ধজীব হয়ে জন্ম-মৃত্যুর চক্রে ঘুরতে হবে। তাই তিনি কারও সঙ্গে মিশতেন না।সর্বদা কৃষ্ণচিন্তা করতেন। স্নেহশীল ব্রাহ্মণপিতা বহু যত্ন করলেন পুত্রকে ব্রহ্মচর্য, বেদ অধ্যয়ন, শৌচ,নিয়ম, গুরুসেবা, অগ্নিযজ্ঞ বিধি প্রভৃতি শেখাতে। কিন্তু সবই বৃথা হলো। কারণ তিনি সবার কাছে নিজেকে উন্মাদ জড় অন্ধ ও বধিরের মতো প্রদর্শন করতেন। কিছুই শিখতে চাইতেন না।

সর্বদা মূর্খের মতো আচরণ করতেন। তাই লোকেরাও কেউ তার সঙ্গে কথা বলতে চাইতো না। ব্রাহ্মণ ম্রা যাওয়ার পর কনিষ্ঠপত্নী সেই পুত্রকে সতীনের হাতে সঁপে দিয়ে সহমৃতা হলেন। জ্যেষ্ঠা পত্নীর নয়জন পুত্র কিছুতেই কনিষ্ঠার মূর্খপুত্র জড়ভরতকে আদর করতো না। তাকে গাধা, জড়, পাগল, বোকা, বোবা, কালো বলে সম্বোধন করতো। সে নিজেও শারীরিক যত্ন নেবার জন্য কিছুই করতেন না। তেল মাখা, স্নান করা, ভালো কিছু খাবার খাওয়া, শীতের দিনে গায়ে কাপড় জড়ানো, গ্রীষ্ম বৃষ্টিবাদলা সব কিছুাতেই সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলো। মাটিতে শুয়ে পড়তো। লোকেরা তাকে আজেবাজে বলতো, অপমান করতো। জড়ভরত কিছুই মনে করতো না। বৈমাত্রেয় ভায়েরা তাকে চাষের কাজে লাগাতো। কিছুই সে বুঝতে পারতো না কোথায় কিভাবে কাজ করতে হয়। মাটি খোঁড়া, মাটি ফেলা, ভূমি সমতল করা, শস্য পাহারা দেওয়া ইত্যাদি কাজ সে করতো । তাতে তার দুঃখও নেই। ভায়েরা তাকে খেতে দিতো খুদ, খইল, তুষ, পোকায় খাওয়া শস্য, রান্নাপাত্রে লেগে থাকা পোড়া অন্ন। জড়ভরত তাতে বিদ্বেষ ভাব পোষণ করা তো দূরের কথা, অমৃতের ,মতো ভোজন করতো।

একদিন শূদ্রজাতির দস্যুসর্দার পুত্রকাসনায় ভদ্রকালীর কাছে নরবলী দিতে উদ্যোগ করেছিলো। দস্যুপতি একজনকে বলি দেওয়ার জন্য বেঁধে রেখেছিলো। কিন্তু দৈবক্রমে সে বন্ধনমুক্ত হয়ে পালিয়ে যায়। তাখে খুঁজে ধরে আনতে দস্যু-অনুগামীরা চারিদিকে ছুটে যায়। ঘোর অন্ধকারে বেড়িয়েও কোথাও তাকে পাওয়া গেলো না। শেষে হঠাৎ ফসলের ক্ষেতে জড়ভরতকে একটি উঁচু চিবির উপর বসে থাকতে তারা দেখলো। জড়ভরত শেয়াল শূকর প্রভৃতি পশুদের থেকে ফসল রক্ষা করতে সেখানে পাহারা দিচিছলো। তাকেই দস্যুপতির অনুজরেরা দড়ি বেঁধে আনন্দিত হয়ে দেবীমন্দিরে নিয়ে গেলো। জড়ভরত কোনও প্রতিবাদ কিংবা আত্ম রক্ষারও চিন্তা করলো না। বলি দেওয়ার বিধিমতো তারা জড়ভরতকে স্নান করালো, নতুন কাপড় পরালো,তেল তিলক চন্দন মালা পারালো। তারপর ধূপ, ধীপ, মালা, খই, দূর্বাঘাস, আমপাতা, ফল ফুল দিয়ে তারা দেবীর পূজা করলো।

নরবলি দেওয়ার আগে তারা গীত, স্তুতি, মৃদঙ্গ, প্রণব, প্রভৃতি উচ্চ নিনাদ শুরু করলো। তারপর জড়ভরতকে দেবীমূর্তির সামনে বসালো। দস্যুদের পুরোহিত দেবী কালীকে নররক্ত নিবেদন করার বাসনায় ভদ্রকালী-মন্ত্র উচচারণ করে ভয়ঙ্কর তীক্ষ্ন ধার একটি খড়গ তুলে স্থির করে জড়ভরতকে বলি দিতে উদ্যত হলো। জড়ভরত এই জাগতিক কোনও বিষয়ে বিচলিত ছিলো না। পূর্বজন্মর সংস্কারবশত সর্বদা শ্রীকৃষ্ণচিন্তা করতো।দেবীর সামনে তাকে হত্যা করা হচেছ সেটা বুঝেও সে আর্তনাদ বা অন্থির হয় নি। এমনকি শত্র বা মিত্র জ্ঞানও করে নি। সে ছিলো এক মহান ব্রাহ্মণের পুত্র। সে ছিলো সবদা ভগবদ্ চিন্তায় মগ্ন। জগতের সুখ-দুঃখ নিয়ে সে প্রভাবিত নয়। কখনো কাউকে দুঃখ বা আঘাত সে দিতো না।

সেই মহাত্মাকে পাপচারী দস্যুরা বলি দিতে উদ্যত হলে ভদ্রাকালী তা সহ্য করতে পারলেন না। সহসা প্রতিমা বিদীর্ণ করে প্রদর্শিতা হলেন। তাঁর শরীরে প্রচণ্ড অসহ্য তেজ জ্বালতে লাগলো। ক্রোধান্বিতা হয়ে তাঁর ভ্রকুটি সঞ্চালিত হচ্ছিলো, ভয়ংকর করাল দাঁত বেরিয়ে আসছিলো, তাঁর রক্তলোচন ঘূর্ণিত হচ্ছিলো। সারা জগৎ সংহার করতে যেন তিনি উদ্যতা হয়েছেন। বেদী থেকে লাভ দিয়ে নেমে ভদ্রকালী দস্যু পুরোহিততের সেই খড়গটি তুলে নিয়ে পরোহিতকে, এবং সব দস্রু তস্করদের মুণ্ড ছেদন করতে লাগলেন। সেই সময় দেবী তাদের গলা থেকে নির্গত তাজা তাজা রক্ত পান করলেন। ডাকিনী যোগিনীরা তাদের সহচরদের সঙ্গে এসে প্রচুর রক্ত পান করতে লাগলো। তারপর দস্যুদের ছিন্ন মুণ্ডগুলোকে নিয়ে পরীক্ষিৎ মহারাজকে শুকদেব বললেন, ভক্ত কারও অনিষ্ট চিন্তা করেন না। বরং তাঁরা সব জীবের মঙ্গল সাধনে রত থাকেন। পরমেশ্বর ভগবান ভক্তদের সুরক্ষা দান করেন। শিরোচ্ছেদকাল উপস্থিত হলেও ভক্ত অবিচলিতভাবে কৃষ্ণচিন্তা করেন। যারা মহাত্মাদের প্রতি হিংসা করে, তারা নিজেরাই দণ্ডিত হয়ে শাস্তি ভোগ করে। হরেকৃষ্ণ!


(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ নভেম্বর ২০১৮ তে প্রকাশিত)

এরকম চমৎকার ও শিক্ষণীয় প্রবন্ধ পড়তে চোখ রাখুন ‘চৈতন্য সন্দেশ’‘ব্যাক টু গডহেড’

যোগাযোগ: ০১৮৩৮-১৪৪৬৯৯

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।