(জন্মাষ্টমী) পুতনাকে হত্যার পর কৃষ্ণের পিতা-মাতার প্রতিক্রিয়া (পর্ব-৫)

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২০ | ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ | ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 520 বার দেখা হয়েছে

(জন্মাষ্টমী) পুতনাকে হত্যার পর কৃষ্ণের পিতা-মাতার প্রতিক্রিয়া (পর্ব-৫)

মাতা যশোদা, রোহিনী ও অন্যান্য বয়োজ্যেষ্ঠ গোপীগণ গাভীর লেজ নাড়ালেন যেন শ্রীকৃষ্ণ সম্পূর্ণ সুরক্ষা লাভ করেন। এছাড়া গোমুত্র দিয়ে কৃষ্ণকে স্নান করানো হয় ও গোধূলি লিপ্ত করা হয়। এরপর তার দ্বাদশ অঙ্গে ভগবানের নাম গোময় দিয়ে লেপন করা হয়। কপালে তিলক রচনা করা হয়। এইভাবে শিশুকে সুরক্ষা প্রদান করা হয়। গোপীগণ আচমণের মধ্যে দিয়ে এই আচার শুরু করেন। বিভিন্ন মন্ত্রাদি জপের মাধ্যমে সমস্ত শরীর শুদ্ধ করেন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে (১/১৩/২৩) এই মন্ত্রের কথা বলা হয়েছে। সর্বপ্রথম এই মন্ত্র ব্রহ্মা প্রদান করেন ভগবান শিবকে। ভগবান শিব তা দুর্বাসা মুনিকে প্রদান করেন, দুর্বাসা মুনি নন্দ মহারাজের আলয়ে যশোদা মাতাকে এই মন্ত্র প্রদান করেন। শ্রীল প্রভুপাদ বলেন, “আধুনিক সভ্যতার মাপকাঠিতে যারা খুব একটা উন্নত নয়, সেই কৃষকদের গৃহের রমণীরাও গোময় এবং গোমূত্রের সাহায্যে কিভাবে মন্ত্র উচ্চারণ করে শিশুকে রক্ষা করতে হয়, তা জানতেন। মহাবিপদ থেকে মহতী সুরক্ষা প্রদান করার এটি একটি সরল ও ব্যবহারিক পন্থা ছিল। কি করে তা করতে হয় মানুষের জানা কর্তব্য, কারণ এটি বৈদিক সভ্যতার একটি অঙ্গ।”

এইভাবে মন্ত্র উচ্চারণ করে শিশুর রক্ষাক্রিয়া সম্পাদন করে, মা যশোদা তাঁকে স্তন্যপান করিয়েছিলেন এবং তারপর তাঁকে শয্যায় শয়ন করিয়েছিলেন।
শিশু যখন মায়ের স্তন্যপান করে, তখন সেটি সুস্বাস্থ্যের একটি শুভ লক্ষণ। গোপীরা কেবল শ্রীকৃষ্ণের রক্ষামন্ত্র উচ্চরণ করেই সন্তুষ্ট হননি; শিশুটির স্বাস্থ্য সুস্থ কি না তাও তাঁরা পরীক্ষা করেছিলেন। শিশুটি যখন মাতৃস্তন্য পান করেছিল তখন সকলেই আশ্বস্থ হয়েছিলেন তার স্বাস্থ্য এখন সুস্থ আছে দেখে। এইভাবে গোপীরা যখন পূর্ণরূপে আশ্বস্থ হয়েছিলেন, তখন তাঁরা শিশুটিকে শয্যায় শয়ন করিয়েছিলেন।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারে কেন কৃষ্ণ নিজেকে পুতনার মত বিশাল শরীর ধারণ করে যুদ্ধ করেনি। শ্রীমদ্ভাগবতের (২/৭/২৭) তাৎপর্যে শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করেছেন:
পুতনার দেহ ছিল তিন ক্রোশ দীর্ঘ। শ্রীকৃষ্ণ যদিও তিন ক্রোশ থেকেও দীর্ঘরূপে নিজেকে বিস্তার করতে সক্ষম ছিলেন, তথাপিও পুতনা রাক্ষসীকে বধ করার জন্য তাঁকে তার মতো দীর্ঘ দেহ ধারণ করতে হয়নি।
বামন অবতারে তিনি এক ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন, কিন্ত বলি মহারাজের প্রদত্ত ভূমি অধিকার করার জন্য তিনি তাঁর এক পদ লক্ষ লক্ষ মাইল বিস্তার করে ব্রহ্মাণ্ডের উপরিভাগে পদক্ষেপ করেছিলেন। তাই শ্রীকৃষ্ণের পক্ষে তাঁর দেহের গঠন বিস্তার করার মতো একটি অলৌকিক কার্য সম্পাদন করা মোটেই অসম্ভব ছিল না, কিন্তু তাঁর মাতৃপ্রেমের জন্য তিনি তা করেননি। যশোদা যদি পুতনার ক্রোড়ে তাঁর পুত্রটিকে তিনক্রোশ বিস্তৃত হতে দেখতেন তা হলে তাঁর বাৎসল্য প্রেম আহত হত, কেননা তা হলে যশোদা দেবী জানতে পারতেন যে তাঁর তথাকথিত পুত্র কৃষ্ণ হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান।
সেই সময়ে নন্দ মহারাজ সহ সকল গোপেরা মথুরা গিয়েছিলেন শুল্ক প্রদান করার উদ্দেশ্য কিন্তু তারা ফিরে এসে যখন দেখলেন ৬ মাইল ব্যাপী পুতনার একটি বিশাল দেহ পড়ে আছে। তারা যখন সকল ঘটনা শ্রবণ করলেন তারা খুবই আশ্চর্যান্বিত হলেন সকলেই কৃষ্ণকে আশির্বাদ করলেন। নন্দ মহারাজ তাঁর এমন স্নেহে কোলে নিলেন যেন সে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছে। নন্দ মহারাজ ভেবে পেলেন না কিভাবে বিশালদেহী পুতনা বৃন্দাবনে প্রবেশ করতে সক্ষম হল। কিন্তু উপলব্ধি করতে পারলেন না, কৃষ্ণই পুতনাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন এবং যোগমায়ার দ্বারা সবকিছুই সাধিত হয়েছিল। নন্দ মহারাজ এতই সরল ছিলেন, তিনি ভাবলেন বাইরে থেকে কেউ এসে সকল উপদ্রব সৃষ্টি করেছে।
ব্রজের সকল গোপগণ কুঠার দ্বারা পুতনার বিশাল দেহকে টুকরো টুকরো করলেন এবং কাঠ দ্বারা পোড়ালেন।
যেহেতু কৃষ্ণ পুতনার রাক্ষসীর দুগ্ধ পান করেছিলেন, তাই তাকে মাতৃস্থান প্রদান করেছিলেন। তার দেহ ত্যাগ মাত্রই তিনি সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন ও ভগবদধামে গমন করেছিলেন। তিনি পাপকর্ম থেকে মুক্ত হয়েছিলেন বলেই তার শরীর যখন অগ্নিদগ্ধ করা হচ্ছিল তখন অগুরু সুগন্ধি বের হচ্ছিল। পুতনার শরীর থেকে দিব্য সুগন্ধী বের হচ্ছে দেখে ব্রজবাসীগণ অত্যন্ত অবাক হয়েছিলেন। এই সুগন্ধ আসছে কোথা থেকে? শ্রীল জীব গোস্বামী বলেছেন – “এই ধোয়াটি ছিল অগুরুর চাইতে অধিক সুগন্ধ সৃষ্টিকারী। তার কারণ ছিল, শ্রীকৃষ্ণ যেহেতু পুতনার দুগ্ধ পানের মাধ্যমে পুতনার দেহ ভোগ করেছিলেন তাই কৃষ্ণ তার অপরিসীম শক্তির দ্বারা তার দেহের সুগন্ধ ও সৌন্দর্য পুতনার দেহে প্রদান করেছিলেন। এভাবে কৃষ্ণের উচ্ছিষ্টের মহিমা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। যদি হিংসার মাধ্যমেও ভগবানকে কিছু অর্পনের মাধ্যমে এইরকম সদগতি হয় তবে যদি কৃষ্ণকে ভক্তিভরে কোন পবিত্র দ্রব্য অর্পণ করা হয় তবে সেই অর্পনের মূল্য কতখানী!”

সূত্র: মাসিক চৈতন্য সন্দেশ 
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ ও ব্যাক টু গডহেড এর ।। গ্রাহক ও এজেন্ট হতে পারেন
প্রয়োজনে : 01820-133161, 01758-878816, 01838-144699
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।