এই পোস্টটি 1105 বার দেখা হয়েছে
কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ
প্রতিটি ব্যক্তিই কলুষিত হন শৈশবে তথাকথিত খেলাধুলায় মজে থেকে। -প্রহ্লাদ মহারাজের অপ্রাকৃত শিক্ষf
এই কলিযুগে মানুষ কেবল বিভিন্ন রাজনৈতিক সংস্থা এবং দলের শিকারই হচ্ছে না, ইন্দ্রিয় তৃপ্তির বিভিন্ন রকমে প্রলোভনের দ্বারাও বিপথগামী হচ্ছে। যেমন সিনেমা, অনর্থক খেলাধুলা, জুয়া, ক্লাব, জড় জাগতিক গ্রন্থাগার, অসৎ সঙ্গ, ধূমপান, আসব পান, প্রতারণা, চুরি, বাটবাড়ি ইত্যাদি। তাদের মন এই ধরনের বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে সর্বদাই বিচলিত এবং উৎকন্ঠায় পূর্ণ। (ভা. ১/১/১০তাৎপর্য)
সাধারণত মানুষ মনে করে যে, শৈশব জীবনে খেলাধুলয় মত্ত থাকার সময়, যৌবনে যুবতী রমণীদের সঙ্গসুখ উপভোগ করার সময় , এবং বার্ধক্যে বা মৃত্যুর সমযে ভগবদ্ভক্তি বা যোগ সাধন করার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিষ্ঠাবান ভক্তদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় । ধ্রুব মহারাজকে মহর্ষি নারদ এই উপদেশ দিয়েছিলেন কেবল তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য প্রকৃতপক্ষে, প্রত্যক্ষ উপদেশ হচ্ছে , জীবনের যে কোন সময় থেকেই ভগবদ্ভক্তি শুরু করা উচিত। কিন্ত গুরুদেবের কর্তব্য হচ্ছে ভগবদ্ভক্তি সম্পাদনে শিষ্যের ঐকান্তিক বাসনা পরীক্ষা করে দেখা। (ভা.৪/৮/৩২তাৎপর্য)
জীবের জড় জগতে আসার বাসনা হৃদয়ঙ্গম করা খুব একটা কঠিন নয়। কেউ হয়তো আর্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করতে পারে, যেখানে আমিষাহার, আসবপান , দ্যূতক্রীড়া এবং অবৈধ স্ত্রীসঙ্গ নিষিদ্ধ, তবুও মানুষ এই সমস্ত নিষিদ্ধ বস্তু ভোগ করতে চাইতে পারে। সবসময় কেউ না কেউ অবৈধ স্ত্রীসঙ্গ করার জন্য বেশ্যালয়ে যেতে চায় অথবা মাংসাহার এবং সুরাপান করার জন্য হোটেলে যেতে চায়, কিংবা জুয়া খেলার জন্য নাইট ক্লাবে যেতে চায়। জীবের হৃদয়ে এই সমস্ত প্রবণতাগুলি রয়েছে, কিন্তু কোন কোন জীব এই সমস্ত জঘন্য কার্যকলাপ থেকে বিরত হতে চায়। (ভা.৪/২৯/৪ তাৎপর্য)
প্রকৃতিগতভাবে শিশুরা চঞ্চল এবং খেলামতি স্বভাবের, তাই কিন্ডার গার্টেনে তাদের শেখার তাগিদে খেলনা বা খেলাধূলা ইত্যাদি রাখা হয় । একইভাবে একজন নবীন ঋক্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়ে পারমার্থিক দিকনির্দেশনা অনুসারে বিগ্রহ অর্চনে উৎসাহিত হয়। অভিজ্ঞ বৈষ্ণব কৃষ্ণভাবনার শিক্ষা বর্ণনার মাধমে এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদিত প্রসাদ দেওয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তাকে শুদ্ধ ভক্তির স্তরের দিকে অগ্রগামী করে।
শিশুদের জন্য কৃষ্ণ গেইম
আমরা কৃষ্ণভাবনায় ছোট ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দিই শুধুমাত্র নৈমিত্তিক প্রোগ্রাম অংশগ্রহণ করানোর মাধ্যমে এবং কৃষ্ণভক্তদের সঙ্গ করানোর মাধ্যমে সর্বো সিদ্ধি আজিত হয়। এই নয় যে, তাদেরকে আমরা খেলার জন্য অন্যান্য খেলার আয়োজন করি। সত্যভামাকে পত্র,মায়াপুর, ২৮ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ বের করা। তারা যা করে তা হল তাদের ব্যক্তিগথ মত, কিন্তু কোন কখনও বালকেরা ভগবান রামচন্দ্রের সৈন্যদের মধ্যে বানরের মতো লম্ফঝম্প দিতেন এবং তারপর সরোবরে অথবা পুকুরে খেলার সেতু নির্মাণ করে শ্রীলঙ্কায় সেতুবন্ধনের অভিনয় করতেন। কথনও কখনও বালকেরা ক্ষীরসমুদ্র মন্থনের লীলা অনুকরণ করতে এবং কখনও বা বল নিয়ে লোফালুফি করে খেলতেন। (ভা.১০/১৪/৬১ তাৎপর্য) শ্রীকৃষ্ণ যখন মধ্যাহ্নে বিশ্রাম গ্রহণ করতেন তখন আর একটি লীলা অনুষ্ঠিত হত। নিকটবর্তী স্থান দিয়ে কিশোরী গোপকন্যারা গান করতে করতে গেলে, কৃষ্ণের সখারা তাঁরে কাছে দুধের দাম কত তা অনুসন্ধান করার ভান করে, তাঁদের কাছ থেকে দুধি ও অন্যান্য সামগ্রী চুরি করে দৌড়ে পালাতেন। কৃষ্ণ, বলরাম ও তাঁদের সখারা নৌকা করে নদী পার হবার খেলাও খেলতেন।
ঊালকেরা ফল নিয়ে কিছু সংখ্যক শূন্যে ছুঁড়ে আর বাকিগুলি অন্যদের দিকে ছুঁড়ে খেলা করতেন। শ্লোকের ‘নেত্রবন্ধ’ শব্দটি এক রকম খেলাকে নির্দেশ করছে, যেখানে কোনও বালক কোনও চোখবাঁধা বালকের পিছনের দিক এসে তাঁর চোখের উপর হাতের তালু স্থাপন করবে, অনুভব করে চোখবাঁধা বালকটি কে। এই ধরনের সব খেলাতেই বালকেরা কে জিতবে তাঁর পক্ষে বাঁশি কিংবা ভ্রমণ করার ছড়ি বাজি ধরতেন। কখনও কখনও বালকেরা বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর যুদ্ধপ্রণালী অনুকরণ করতেন এবং অন্য সময়ে পাখিদের মতো কিচির মিচির করতেন। (ভা.১০/১৮/১৪ তাৎপর্য) কৃষ্ণের সখারা বেল এবং আমলকি নিয়ে লোফালুফি করতেন তাঁরা কানামাছি খেলতেন। কখনও আবার তাঁরা বনের ব্যাঙের ডাক ডেকে পরস্পর সঙ্গে ঠাট্টা করতেন এবং গাছের ডালে দোলনা চড়তেন। কখনও তাঁরা রাজা-প্রজার অভিনয় করতেন। এভাবে নদ-নদী, সরোবর এবং ফলে-ফুলে শোভিত বৃন্দাবনের বনে শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরাম তাঁদের সখা-পরিবৃত হয়ে নানা রকম খেলা করে বৃন্দাবনের অপূর্ব সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করতেন। (শ্রীকৃষ্ণ-১৮ অধ্যায়)
নানোদ্যানে ভক্তসঙ্গে বৃন্দাবন-লীলা।
‘ইন্দ্রদ্যুম্ন’ সরোবরে করে জলখেলা॥
“গুণ্ডিচা মন্দিরের বিভিন্ন উদ্যানে তিনি ভক্তদের সঙ্গে বৃন্দাবনলীলা বিলাস করিেছলেন, এবং ‘ইন্দ্রদ্যুম্ন’-সরোবরে জলকেলি করেছিলেন।” (চৈ.চ.-১৪/৭৫) হরে কৃষ্ণ!
(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ মার্চ ২০১২ সালে প্রকাশিত)