এই পোস্টটি 999 বার দেখা হয়েছে
সদাপূত দাস: শ্রীমদ্ভাগবতমে উল্লেখিত ভূমণ্ডল যদি কোন সমতল পৃথিবী না হয়ে থাকে তবে প্রশ্ন আসে যে এটি কি? এটি সম্ভবত কোন সৌর জগৎ হতে পারে। আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যা মতে প্রত্যেকটি গ্রহের কক্ষপথে সূর্যের চতুর্দিকে গ্রহের কক্ষপথে সূর্যের চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করে । এই সকল কক্ষপথসমূহ প্রশস্থ সমতল এবং একে অন্যের সাথে ছোট ডিগ্রি কোণে আলাদা হয়ে থাকে । আর এই কারণেই সকল কক্ষপথ সমৃহ প্রকৃতপক্ষে একই সমতলে একে অন্যের সন্নিকটে অবস্থান করতে পারে । গবেষকগণ পৃথিবীর সমতল ঘূর্ণায় কক্ষপথ এবং সূর্যের কক্ষপথের মধ্যে সমগ্র সৌরজগতকে সমতল বলে মনে হবে । ভূমণ্ডলের ব্যাসার্ধ ২৫০ মিলিয়ন যোজন । যদি ৮ মাইলে এক যোজন হয় তবে সমগ্র ব্যাসার্ধ হবে ২ বিলিয়ন মাইলের সমান । উদাহরণস্বরূপ আমরা দেখতে পাই যে, ইউরেনাস নামক গ্রহের সম্পূর্ণ ব্যাসার্ধ প্রায় ১.৮ বিলিয়ন মাইল । ভূমণ্ডলের উপরিভাগে লোকালোক পর্বত রয়েছে যার ব্যাসার্ধ ১২৫ মিলিয়ন যোজন অর্থাৎ ১ বিলিয়ন মাইল । একইসাথে আমরা ইউরেনাস এর নিকটবর্তীগ্রহের শনি এর মধ্যে কক্ষপথের ব্যাসার্ধ প্রায় ০.৯ বিলিয়ন মাইল হিসেবে দেখতে পাই । সুতরাং এক্ষেত্রে বৈদিক শাস্ত্র বর্ণনার সাথে অনেক সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে । ভূমণ্ডল পৃথিবী কেন্দ্রিক যার অভ্যন্তরে জম্ভদ্বীপ রয়েছে । এই জম্ভুদ্বীপের মধ্যে রয়েছে ভারতবর্ষ যেটি পৃথিবী গ্রহ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন শ্রীল প্রভুপাদ । যেহেতু সমগ্র সৌরজগৎ সূর্য কেন্দ্রিক ঘুরছে তাহলে কিভাবে অমরা পৃথিবীকেন্দ্রিক ভূমণ্ডল বা সৌরজগতের ধারণা কল্পনা করতে পারি? এর সমাধান হল আমরা সাধারণত দুইভাবে সৌরজগতের ধারণা লাভ করতে পারি । একটি হল আমাদের ভূকেন্দ্রিক সৌরজগত বা জিওসেন্ট্রিক এবং অন্যটি হল সূর্যকেন্দ্রিক বা সানসেন্ট্রিক । একটি গোলাকার বিশাল আয়তনের কোন বৃত্তের মধ্যে যেমন যেকোন একটি কেন্দ্র ধরে বৃত্তাকার রেখা পাওয়া যাবে তেমনি আমরা বিশাল সৌরজগতের যেকোন একটি গ্রহ উপগ্রহকে কেন্দ্র ধরে সমগ্র সৌরজগতের কক্ষপথ বা রেখা কল্পনা করতে পারি । তাহলে আমরা এখন ভূকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারণা বিবেচনা করি । ভূকেন্দ্রিক সৌরজগতের ক্ষেত্রে আমরা পৃথিবীকে কেন্দ্রে রেখে সূর্যের গমনপথ চিহ্নিত করতে পারি । এতে দেখা যায় যে, সূর্যকে পরিক্রমণরত গ্রহগুলো প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীকেও পরিক্রমণ করছে এবং এতে দুইটি সীমারেখা পাওয়া যায় যা চিত্রে ক ও খ নামে চিহ্নিত হয়েছে।
ভূমণ্ডলের কতিপয় গ্রহ সমূহের ব্যাসার্ধ ছক। ক দ্বারা ভূকেন্দ্রিক এবং খ দ্বারা সূর্যকেন্দ্রিক কক্ষপথ বিন্দু বোঝানো হয়েছে। প্রাচীন বৈদিক গণনায় সৌরজগত এবং পৃথিবীর ব্যাসার্ধ যে যোজন পদ্ধতিতে পরিমাপ করা হয়েছে তা অধিকাংশ বর্তমান আধুনিক পৃথিবীর ব্যাসার্ধের পরিমাপের প্রায় অনুরূপ। সুতরাং এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে বৈদিক পন্থায় বহু পূর্বেই সৌরজগতের ব্যাসার্ধ সঠিকভাবে পরিমাপ করা হয়েছে। এছাড়াও ৮.৫৭৫ মাইলে যে প্রতি যোজন হবে সেটি আধুনিক পরিমাপের ক্ষেত্রেও প্রমাণ করা যায় এবং ভূমণ্ডল বলতে যে সৌর জগত বুঝায় তা পরিমাপ করা সম্ভব। এছাড়া শ্রীমদ্ভাগতমে বর্ণিত সৌর জগতের ধারণায় গ্রহগুলোর গতিপথ এবং সমতলে সমান্তরালে ঘূর্ণায়মান গ্রহগুলোর গতিপ্রকৃতির ধারণা লাভ করা যায়। তাই বলা যায় ভূমণ্ডলের মানচিত্র হচ্ছে এই সৌরজগতের সর্বাপেক্ষা সঠিক মানচিত্র এবং ধারণা যা শুধুমাত্র বৈদিক শাস্ত্র থেকে পাওয়া যায়। এটি সুস্পষ্ট যে উন্নত জ্যোতির্বিদ্যার ধারণা এবং অনুশীলন প্রাচীন যুগে শুরু হয়েছিল যা পরবর্তীকালে হারিয়ে যায়। জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক এই ধরণের ধারণা বিগত ১৮ শতকেও ছিল যখন গ্রীক বিজ্ঞানী ক্লডিয়াস টলেমী ছিলেন এবং সক্রেটিস যুগেও সেই জ্ঞানের চর্চা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে এই ধরণের যুগান্তরকারী উন্নত জ্যোতির্বিদ্যার অনুশীলন অনেকটা স্তিমিত। হরে কৃষ্ণ।
(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ ২০১২ সালে মে মাসে প্রকাশিত)