এই পোস্টটি 1017 বার দেখা হয়েছে
পুরীর রান্নাঘর সম্পর্কে ইতোমধ্যেই নিশ্চয়ই পাঠকরা অনেক কিছু জেনে গেছেন। কেননা জগন্নাথ পুরী এবং এ অদ্ভুত রান্নাঘর সম্পর্কে অনেক রোমাঞ্চকর তথ্য পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু জগন্নাথ পুরীর এক রান্নাঘরের লীলা যেন তবুও শেষ হয় না। শেষ হবেই বা কেন? তার নাম জগন্নাথ আর জগন্নাথ পুরীতে জগন্নাথের এরকম অদ্ভুত লীলার সংখ্যা অনন্ত অর্থাৎ যা শেষ হবার নয়। এবার পাঠকদের জন্য পুরীর অদ্ভুত রান্নাঘরের আরও কিছু চমকপ্রদ তথ্য তুলে ধরা হল যা শুনে নিশ্চয়ই আপনারাও চমকিত হবেন। পুরীর এ রান্নাঘর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রান্নাঘর এ কথা সবারই জানা তবে নতুন তথ্য এই যে, এই রান্নাঘরে বিবিধ দ্রব্য রান্না করার জন্য কোন বিদ্যুৎ বা যন্ত্র জাতীয় কিছুই ব্যবহার করা হয় না। উন্মুক্ত কাঠের আগুনের উপর অনেকগুলো তেলের ল্যাম্প বা বাতি ঝুলিয়ে রাখা হয় আর তার নিচেই সেবকরা এসেই রান্না কার্য সম্পন্ন করে। এ রান্নাঘরে এত দ্রুত রান্না করা হয় যে শুধুমাত্র একদিনের প্রস্তুতিতে একসাথে প্রায় দশ হাজার লোক বসে প্রসাদ পেতে পারে। এমনিতেই প্রতিদিন পাঁচ হাজার উর্ধ্ব দর্শনার্থী প্রতিদিন এ প্রসাদ পেয়ে থাকে। রান্নাঘরটি নয়টি ভাগে বিভক্ত। যাদের দুটি ভাগ ২,৫০০ বর্গফুট করে এবং বাকি ৭টি ভাগ এ দুটির চেয়ে একটু ছোট হবে। এ রান্নাঘরে রয়েছে ৭৫২টি মাটির তৈরি চুলা যার প্রত্যেকটি দৈর্ঘ্য তিন বর্গফুট করে এবং উচ্চতায় প্রায় ৪ ফুটেরও বেশি। চুলাগুলোতে একটির উপর একটি পাত্র বসানো হয় এভাবে প্রায় নয়টি পাত্র থাকে। শুধুমাত্র এ পাত্রগুলোর নিচে অবস্থিত আগুনের মাধ্যমেই নয়টি পাত্রের রান্না অদ্ভুতভাবেই সম্পন্ন হয়। ত্রভাবে অন্যান্য চুলাগুলোতেও একই প্রক্রিয়ায় রান্না কার্য সম্পন্ন করা হয়। প্রতিদিন এ রান্নাঘরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত রয়েছে এক হাজার লোক। এদের মধ্যে পাঁচশ সেবক রয়েছে কেবলমাত্র চুলাতে রান্না করার জন্য সহায়ককারী হিসেবে, তাদেরকে ‘যোগুনিয়া’ নামে ডাকা হয়। তাদের সেবা হল, তারা সোয়ারাদের আগুন জ্বালাতে সহায়তা করা সরোবর থেকে পানি নিয়ে আসা, ব্যবহারের পূর্বে নতুন মাটির রান্না করার পাত্রগুলোকে ধৌত এবং পরিস্কার করে অবশেষে পাত্রগুলোতে প্রয়োজনীয় রান্না করার উপকরণগুলো দ্বারা পূর্ণ করা। বাকি দু’শ জন সেবকদের ‘তুনিয়া’ নামে ডাকা হয়। তাদের নির্দিষ্ট সেবা হল স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন রকমের সবজিগুলোকে কাটে এবং মরিচ, আদা ইত্যাদি গুড়ো করা। রান্নাঘরে যেসব সেবকরা সেবা করে থাকে তাদেরকে ১২ বছর বয়স থেকে বিবিধ ট্রেনিং এর মাধ্যমে বয়োঃজ্যেষ্ঠরা শিক্ষা দিয়ে থাকে। রীতিঅনুসারে তারা বংশানুক্রমে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট সেবাই সারাজীবন ধরে অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত করে থাকে। ঐ নির্দিষ্ট সেবা ছাড়া তারা কখনো অন্য কোন সেবা করে না। প্রতিদিন একশটি ভিন্ন ভিন্ন খাবার প্রস্তুত করা হয় যেগুলোকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। এ দু’টি ভাগকে যথাক্রমে পাক্কা এবং সুক্কা নামে ডাকা হয়। পাক্কা বলা হয় সে খাবারগুলোকে যেগুলো সিদ্ধ করা যেমন ডাল, চাল, খিচুরী এবং সমস্ত রকমের সবজি। অপরদিকে সুক্কা বলা হয় বিস্কিট, মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারগুলোকে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, জগন্নাথের জন্য যেসমস্ত ফল এবং সবজি ব্যবহার করা হয় সেগুলো দু’হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি ও ফলই জগন্নাথের জন্য ব্যবহৃত হয়। অন্য কোন অঞ্চল থেকে উৎপাদিত দ্রব্য জগন্নাথের জন্য ব্যবহার করা হয় না। এভাবেই জগন্নাথ পুরীর বিভিন্ন ঐতিহ্য ও সংস্কতি হাজার হাজার বছর ধরে অপরিবর্তনীয়ভাবে টিকে আছে। এর পরিবর্তন হওয়ার কোন সম্ভাবনাও নেই কেননা স্বয়ং জগন্নাথ তার পুরীধামকে পরিচালনা করছেন। যেই রান্নাঘরে স্বয়ং মহালক্ষ্মী নিজ হাতে জগন্নাথের জন্য রান্না করে সেই রান্নাঘরের রীতিনীতি কি কখনো পরিবর্তন হতে পারে? তাইতো পুওরীর এ রান্নাঘরকে অদ্ভুত রান্নাঘর বলেই অভিহিত করা হয়। কেননা যত দিন যাচ্ছে ততই যেন এ রান্নাঘরের অদ্ভুত লীলাবিলাস শেষ হয় না। প্রায়ই নিত্য নতুন রোমাঞ্চকর তথ্য বের হয়ে আসছে। যেখানে স্বয়ং লক্ষ্মীদেবী ও জগন্নাথ উপস্থিত সেখানে এরকম অদ্ভুত লীলা প্রকাশ হওয়া খুব স্বাভাবিক তাই এ অদ্ভুত লীলার মধ্যে জগন্নাথ পুরীর এ অদ্ভুত রান্নাঘরটিই বা কেন বাদ যাবে। হরে কৃষ্ণ॥
(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ পত্রিকা সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে প্রকাশিত )