এই পোস্টটি 404 বার দেখা হয়েছে
সম্পদ এবং সুযোগ – দুই ভাই একসাথে গ্রামে বড় হয়েছে। বড় ভাই সম্পদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শহরে চলে আসে। সুযোগও ডিসেম্বরের ছুটিতে ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে আসে। বন্ধ প্রায় শেষ। ৩১ ডিসেম্বর রাতে তারা দু’জনই গভীর নিদ্রায় মগ্ন। হঠাৎ বিশাল আতশ বাজির শব্দ! আতঙ্কে ঘুম ভেঙ্গে যায় সুযোগের। চোখ মুছতে মুছতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে, রাত তখন ঠিক বারোটা।
ছোট ভাইয়ের বিস্মিত চোখ দেখে সম্পদ বলে উঠে, ”হ্যাপি নিউ ইয়ার! ওরা ইংরেজি নববর্ষের আনন্দ করছে। রাতের ১২টা থেকে ডিজে গান চলবে, নাচানাচি, ড্রিংক্স চলবে নতুন সূর্য না উঠা পর্যন্ত। তারপর সবাই ঘুমাবে।” সুযোগ জানে তার দাদা সবসময় আশেপাশের ঘটনাগুলোর সাথে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার সংযোগ স্থাপন করে দারুণ সব শিক্ষা উপস্থাপন করে। তাই সে জিজ্ঞাসা করে “তুমি এই ঘটনাটিকে গীতার ভিত্তিতে কিভাবে ব্যাখ্যা করবে? সম্পদ তখন হাসতে হাসতে আনন্দে বলতে থাকে “আমি তিনটি বিষয় নিয়ে বলব-অন্ধকার রাত্রি, নতুন সূর্য ও নববর্ষের প্রস্তুতি। ”
রাত্রিশেষে
হনুমান যখন দিনের বেলায় লঙ্কা নগরীতে পৌঁছান তখন তিনি অবাক হয়ে যান। রাস্তাঘাট শূন্য, দোকানপাট বন্ধ, সবাই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু ধীরে ধীরে সূর্য অস্ত যেতে শুরু করলে সবাই হাই তুলে শয্যা ত্যাগ করে। যত রাত গভীর হয় লঙ্কা তত জমজমাট এক কর্মব্যস্ত নগরীতে রূপান্তরিত হয়। এটিই ভগবান কৃষ্ণ ভগবদ্গীতায় (২/৬৯) বলছেন- ‘সমস্ত জীবের পক্ষে যা রাত্রিস্বরূপ, স্থিতপ্রজ্ঞরা সেই রাত্রিতে জাগরিত থেকে আত্ম-বুদ্ধিনিষ্ঠ আনন্দকে সাক্ষাৎ অনুভব করেন। আর যখন সমস্ত জীবেরা জেগে থাকে তখন তত্ত্বদর্শী মুনির নিকট তা রাত্রিস্বরূপ।’
সুযোগ: বুঝলাম না। এটি কি বাংলাদেশে রাত হলে আমেরিকাতে দিন- এরকম কিছু?
সম্পদ: না, এই শ্লোকে রাত্রি বলতে কার্যবিহীন অবস্থা এবং দিন বলতে কার্যক্রম অবস্থাকে বুঝাচ্ছে। আসুরিক সভ্যতায় লঙ্কা নগরীর মত পুরো রাত ধরে মানুষ জেগে থাকে, আর সেই সময়ে সত্ত্বগুণ সম্পন্ন সাধুরা নিদ্রা যাপন করে এবং যখন সবাই ঘুমাতে যায় রাত তিনটা থেকে চারটার দিকে তখন সাধুরা জেগে উঠে এবং হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপের মাধ্যমে ভগবানের সাথে যুক্ত হওয়ার অসীম আনন্দ উপভোগ করে।
সুযোগ: বাঃ খুব সুন্দর তো !
সম্পদ: অযোধ্যার বৈদিক সংস্কৃতির ঠিক বিপরীত চিত্র হচ্ছে লঙ্কায় সংস্কৃতির বিকৃতি। যেমন: বৈদিক সংস্কৃতিতে মানুষ গাভী পালন ও রক্ষা করত, তারা গাভীর দুধ পান করে পরিপুষ্ট হত। কিন্তু আধুনিক বিকৃত সংস্কৃতিতে মানুষ গাভীর দুধকে ভেজাল করছে এবং গাভীকে হত্যা করে এর মাংস ও রক্তকে উপাদেয় ও পুষ্টিকর মনে করছে। আরেকভাবে বলতে গেলে, সাধারণ মানুষের কাজ করা স্পৃহা এবং ভক্তদের কাজ করার স্পৃহার মধ্যে দিন-রাতের মতোই পার্থক্য বিরাজমান।
সুযোগ: কিভাবে?
সম্পদ: সাধারণ মানুষ কাজ করে ফেইম বা খ্যাতি লাভের জন্য আর ভগবানের ভক্তরা কাজ করেন প্রেম বা ভগবানের কৃপা লাভ করার জন্য। ভগবানের কৃপা লাভ করার ফলে সাধারণ মানুষ যেখানে রাত্রির আনন্দ-নিদ্রা এবং যৌনসঙ্গে লিপ্ত থাকে তখন মহাত্মারা ভগবানের কৃপা লাভ করে সেই আনন্দকে তুচ্ছ মনে করে। যেমনঃ ঠাকুর হরিদাসকে প্রলুব্ধ করার জন্য তৎকালীন এক ব্যক্তি লক্ষহীরা নামক এক বেশ্যাকে পাঠান। হীরা ঘোষণা করে- এই হরিদাসকে আমি আজ রাতেই হীরাদাসে পরিণত করব। কিন্তু হরিদাস ঠাকুরের হরিনামের প্রতি দৃঢ় নিষ্ঠার ফলে সেই লক্ষহীরা পরিবর্তিত হয়ে ভগবানের শুদ্ধ ভক্তে রূপান্তরিত হয়।
সুযোগ: দারুণ! হরিদাসের স্পর্শে হীরার পরিবর্তন। কিন্তু এই ঘটনাটি কখন ঘটেছিল?
সম্পদ: এই ঘটনার সময়ের সাথেও সন্ধ্যা বা রাত্রির একটি সম্পর্ক রয়েছে।
সুযোগ: তাই?
সম্পদ: সত্য-ত্রেতা-দ্বাপর-কলি প্রতিটি যুগেরই নির্দিষ্ট সময়কাল রয়েছে। যেমনঃ বর্তমান কলিযুগের স্থায়িত্ব হচ্ছে ৪,৩২,০০০ বছর। এরমধ্যে প্রথম ১০ ভাগ এবং শেষ ১০ ভাগ সময়কে বলা হয় যুগসন্ধ্যা।
সুযোগ: একটু বুঝিয়ে বলো তো?
সম্পদ: ৪৩২০০০ বছরকে এভাবে ভাগ করা হয়েছে: ৩৬,০০০+৩,৬০,০০০+৩৬,০০০। যুগসন্ধ্যার সময়কালে পূর্ববর্তী ও বর্তমান বা বর্তমান ও পরবর্তী যুগের গুণাবলীও বিরাজ করে। তাই এই কলিযুগে যদিও কোন সদ্গুণাবলী থাকার কোন প্রশ্নই আসেনা। তথাপি, যেহেতু কলিযুগের প্রথম সন্ধ্যা চলছে তাই এতে বিগত ৫০০ বছর পূর্বে ভগবান শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু অবতীর্ণ হয়ে এক আধ্যাত্মিক বিপ্লবের সূচনা করেছেন যা ‘পদ্ম পুরাণে’ বর্ণিত হয়েছে।
কলৌ প্রথমসন্ধ্যায়াং গৌরাঙ্গহহংমহীতলে।
ভাগীরথীতটে রম্যে ভবিষ্যামি শচীসূতঃ॥
”কলির প্রথম সন্ধ্যায় ভাগীরথী তীরস্থ রম্যস্থানে গৌরাঙ্গ রূপধারী শচীপুত্ররূপে আমি ভবিষ্যতে অবতীর্ণ হব।”
সুযোগ: তিনি কিভাবে বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলেন?
সম্পদ: তিনি ভগবানের অন্যান্য অবতারের মত অসুরদের হত্যা করেননি বরং হরিনামের প্রভাবে তাদের হৃদয় থেকে আসুরিক প্রবৃত্তিকে হত্যা করেছিলেন। হরিদাস ঠাকুর ছিলেন মহাপ্রভুর প্রধান অনুগামীদের মধ্যে অন্যতম যিনি লক্ষ হীরার হৃদয়ের পিশাচী বাসনাকে হত্যা করেছিলেন। আবার, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও নিত্যানন্দ প্রভু এই দু’জনকে তুলনা করা হয় উদিত সূর্য এবং চন্দ্রের সাথে। যদি আকাশে একসাথে চন্দ্র এবং সূর্য উদিত হয় তাহলে সেখানে কি অন্ধকারের কোন প্রশ্ন থাকতে পারে? কখনোই না।
সুযোগ: অন্ধকার নিয়ে অসাধারণ তত্ত্ব শুনলাম। কিছুক্ষণ পরেই নতুন বছরের সূর্য উদিত হবে। এটা নিয়ে কিছু বলো।
নতুন সূর্য
সম্পদ: সূর্য তার কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে এবং তা সর্বদাই বর্তমান কিন্তু আমাদের কাছে মনে হয় যেন সূর্য নতুনরূপে আবির্ভূত হচ্ছে। একইভাবে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর অবতারেরা নিত্য বিরাজমান কিন্তু সময়ের গতিচক্রে ভগবান তাঁর স্বীয় ইচ্ছায় যখন অবতরণ করেন তখন মনে হয় যেন তাঁর সবেমাত্র জন্ম হয়েছে। কিন্তু তা কেবল আমাদের ভ্রমই। আবার সূর্যের সাথে ভগবানের তুলনা করা হলেও সূর্য কিন্তু স্বাধীন নয়।
সুযোগ: এতদিন জানতাম চন্দ্রের কোন নিজস্ব আলো নেই তাই এটি পরাধীন। কিন্তু সূর্য?
জীবনের স্থায়িত্ব বা সার্থকতা কোনটিই বেশী দিন বেঁচে থাকার উপর নির্ভর করে না বরং তার কীর্তি বা কাজের উপর নির্ভর করে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু মাত্র ৪৮ বছর, শ্রীপাদ শঙ্করাচার্য মাত্র ৩২ বছর এবং যীশু খ্রীস্ট মাত্র ৩৩ বছর এই ধরাধামে ছিলেন। কিন্তু তাদের কীর্তির মাধ্যমে তাঁরা সারাজীবন বেঁচে থাকবেন-কীর্তি যস্য স জীবতি (চাণক্য)। কী তাঁদের কীর্তি? তা ভাগবতে (২/৩/১৭) বর্ণনা করছেন-উত্তমশ্লোকবার্তায়া বা ভগবানের গুণমহিমা কীর্তন করা।
সম্পদ: হ্যাঁ! ব্রহ্মসংহিতায় (৫/৫৩) ব্রহ্মাজী ঘোষণা করছেন ”আমি সেই আদিপুরুষ ভগবান গোবিন্দের ভজনা করি যাঁর আজ্ঞায় বাধ্য হয়ে সমস্ত গ্রহসমূহের রাজা সূর্যদেব তাঁর নিজস্ব কক্ষপথে ভ্রমণ করে।” এবং প্রতিদিন উদিত ও অস্তমিত হয়ে তিনি সকলের আয়ু হরণ করছেন। নতুন বছর মানেই আরেকটি বছর আমাদের আয়ুষ্কাল থেকে কমে গেল। কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষের আয়ু সূর্যদেব হরণ করতে পারেন না।
সুযোগ: কি বলো? কেউ কি অসীম আয়ু প্রাপ্ত হতে পারে?
সম্পদ: জীবনের স্থায়িত্ব বা সার্থকতা কোনটিই বেশী দিন বেঁচে থাকার উপর নির্ভর করে না বরং তার কীর্তি বা কাজের উপর নির্ভর করে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু মাত্র ৪৮ বছর, শ্রীপাদ শঙ্করাচার্য মাত্র ৩২ বছর এবং যীশু খ্রীস্ট মাত্র ৩৩ বছর এই ধরাধামে ছিলেন। কিন্তু তাদের কীর্তির মাধ্যমে তাঁরা সারাজীবন বেঁচে থাকবেন-কীর্তি যস্য স জীবতি (চাণক্য)। কী তাঁদের কীর্তি? তা ভাগবতে (২/৩/১৭) বর্ণনা করছেন-উত্তমশ্লোকবার্তায়া বা ভগবানের গুণমহিমা কীর্তন করা।
সুযোগ: তার মানে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করা, ভগবদ্গীতা আদি বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়ন করা এবং প্রচার করা?
সম্পদ: এই তিনটি কাজ অত্যন্ত শক্তিশালী। অজ্ঞানের অন্ধকারে সবকিছুকে এক মনে হয়। তাই বৈদিক শাস্ত্রসমূহকে ভাগবতে (১.৩.৪৩) অর্ক বা সূর্যের সাথে তুলনা করা হয়েছে যার মাধ্যমে আমরা সংস্কৃতি এবং বিকৃতির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারব এবং বৈদিক সংস্কৃতির পুনঃস্থাপন করতে পারব।
সুযোগ: বৈদিক সংস্কৃতির পুনঃস্থাপন হলে কি লাভ হবে?
সম্পদ: জগতের সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে। আইনস্টাইন বলেছিলেন ”একটি সমস্যা যে স্তরে সৃষ্টি হয়, সেই চেতনার স্তর থেকে তা সমাধান করা যায় না।” সমস্ত জাগতিক সমস্যা যেমন নৈতিকতার অবক্ষয়, সন্ত্রাস, দূর্নীতি, ধর্ষণ, দূষণ প্রভৃতি ভোগবাদ জাগতিক চেতনারই ফসল তা সমাধান করতে হলে প্রয়োজন আধ্যাত্মিক চেতনা। বৈদিক সংস্কৃতির সম্পূর্ণ কাঠামোর লক্ষ্যই হচ্ছে সারা জগতে আধ্যাত্মিক চেতনা জাগরণ।
সুযোগ: কোন একটি ঘটনা বা গল্প বলবে কি? অনেকক্ষণ তত্ত্বকথা শুনতে শুনতে একটু একঘেঁয়ে লাগছে।
সম্পদ: হ্যাঁ ! শ্রীল প্রভুপাদের কাছে একজন ভদ্রলোক এসে আপত্তি করলেন, কেন আপনি যারা ভগবানের ভজনা করে না তাদেরকে মূর্খ বলে গালি দেন? যিনি পণ্ডিত, তিনি সকলের প্রতি সমদর্শী।
সুযোগ: তখন শ্রীল প্রভুপাদ কি বললেন?
(সম্পদ বলতে থাকে)
প্রভুপাদ: ভগবদ্গীতা অনুযায়ী আপনি কি একজন মুচিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মত সম্মান করেন?
ভদ্রলোক: এই শাস্ত্রগুলো কোন্ পুরোনো আমলে লেখা হয়েছে, এগুলো কি আর এখন অনুসরণ করা যায়?
প্রভুপাদ: আপনি প্রথমে সাধু নিন্দা করলেন, এখন আপনি শাস্ত্র বা ভগবানের নিন্দা করলেন। কিন্তু আমার সমদর্শীতা হচ্ছে আমি দেখি পৃথিবীর প্রত্যেকটি প্রান্তের মানুষেরই ক্ষমতা রয়েছে আধ্যাত্মিকতা অনুশীলন করার। তাই আমি কৃষ্ণভাবনামৃত সারা পৃথিবী জুড়ে প্রচার করছি।”
সম্পদ: কৃষ্ণভাবনামৃতই হচ্ছে সর্বোচ্চ বৈদিক সংস্কৃতির ব্যবহারিক রূপ। তাই তা পূর্ণরূপে অনুশীলনের সংকল্প গ্রহণ করার জন্য নতুন বছরই হচ্ছে সর্বোত্তম সময়।
আপনি কি প্রস্তুত?
সম্পদ: ”আধুনিক মানুষ চাঁদে পৌঁছানোর জন্য অনেক পরিশ্রম করে চলেছে কিন্তু তারা পারমার্থিক উন্নতির জন্য কোন রকম চেষ্টাই করেনি।”
(ভগবদ্গীতা যথাযথ মুখবন্ধ)
যদি জাগতিক উন্নতির জন্য দৈনিক ৮-১২/১৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে পারি তবে আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য নয় কেন? জাগতিক সম্পদ সম্পর্কে যীশু বলতেন ”যদি অধিক সম্পদ সঞ্চয় করো তাহলে তা চোরের দ্বারা চুরি হয়ে যাবে বা পোকামাকড় খাবে।” অপরপক্ষে, আধ্যাত্মিক সুকৃতি অব্যয়। তাই শ্রীল প্রভুপাদ আমাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন চাঁদ যাত্রার মতো কৃষ্ণভাবনায় উন্নতিও সহজ কোন বিষয় নয়। যেহেতু আমরা চন্দ্র অভিযানে কঠোর প্রচেষ্টা করছি, তবে কৃষ্ণভাবনার জন্য কেন নয়?
সুযোগ: সহজ নয় মানে?
সম্পদ: যেহেতু কৃষ্ণভাবনা অনুশীলনের জন্য বিকৃত সমাজের গড্ডালিকা প্রবাহের বিপরীতে যেতে হয় তাই এটি সহজ নয়। এজন্যই ভগবানের ভক্ত দূর্লভ (গীতা ৭/৩) কিন্তু ভগবান সেই ধরনের ভক্তের কাছে সুলভ (গীতা ৮/৩)।
সুযোগ: ভগবৎ-ভক্তিতে উন্নতি কি আমাদের ভাগ্যের উপর নির্ভর করে না? এর জন্য প্রস্তুতি বা প্রচেষ্টার কি প্রয়োজন?
সম্পদ: ভাগ্য দ্বারা কর্মের ফল নির্ধারিত হয়, কর্মটি নয়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রারম্ভে সবাই ধৃতরাষ্ট্রকে তার পাপীষ্ট পুত্রদের শাসনের দ্বারা যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য বার বার অনুরোধ করে। কারণ, এর ফলে সম্পূর্ণ কুরুবংশ ধ্বংস হবে। তখন ধৃতরাষ্ট্র বলে উঠে, ”হায়! যদি যুদ্ধে কুরুবংশের ধ্বংস ভাগ্যে নির্ধারিত থাকে তবে সেটিই হোক।” ঠিক সেই মুহূর্তে বিদুর গর্জন করে উঠে, ”ভাগ্য দ্বারা কর্মের ফল নির্ধারিত হয়, কিন্তু কর্ম নয়।”
সুযোগ: তাহলে সিদ্ধান্তটা কি হল?
সম্পদ: আমাদের জাগতিক উন্নতির জন্য যেমনি আমরা প্রতিনিয়ত পরিকল্পনা করছি, প্রস্তুতি নিচ্ছি, ঠিক একইভাবে আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্যও আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া উচিত। নতুন বছর হতে পারে এর সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। সংকল্প গ্রহণ করার মাধ্যমে সমস্ত খারাপ অভ্যাস থেকে মুক্ত হওয়া যায় (ভাগবত ৭/১৫/১)। তাই এই নতুন বছরের প্রস্তুতি রূপে আমাদের সকলের কৃষ্ণভক্তির প্রতিকূল বিষয়সমূহ বর্জন এবং অনুকূল বিষয়সমূহ নিষ্ঠা সহকারে গ্রহণের জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা উচিত।
সুযোগ: সংকল্পের মধ্যে কি কি হতে পারে?
সম্পদ: যে কোন কিছু যেমন প্রতিনিয়ত নির্দিষ্ট সংখ্যায় জপ করা, চারটি বিধি-নিষেধ ভালভাবে পালন করা, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া এবং ব্রহ্মমুহূর্তে জেগে উঠে নিষ্ঠা সহকারে জপ করা ইত্যাদি। আচ্ছা ভাল কথা মনে পড়েছে তো, বাজির আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে এখন ৪০ মিনিট শেষ হয়ে গেল। চল ঘুমিয়ে পড়ি, ব্রহ্মমুহূর্তে উঠে মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করব এবং নতুন বছরে আরো ভালভাবে নিজের কর্তব্য বিশেষ করে পড়ালেখা এবং ভগবদ্ভক্তিতে নিষ্ঠা সহকারে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রার্থনা করব।
সুযোগ: ঠিক আছে দাদা। অনেক কিছু শিখলাম। শুভ রাত্রি। শুভ নববর্ষ।
সম্পদ: শুভ নববর্ষ।
লেখক পরিচিতি: রাঘব কীর্তন দাস, শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী গুরু মহারাজের শিষ্য। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক, সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে এম.বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করে। ভাল রেজাল্টের কারণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় হতে বৃত্তি প্রাপ্ত হন। এছাড়াও তিনি ইস্কন ইয়ূথ ফোরামের যুব প্রচারক ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার প্রদান করেন এবং তিনি ব্যাক টু গডহেড এর নিয়মিত প্রবন্ধকার।
জানুয়ারি-মার্চ ২০২১ সালে প্রকাশিত ।। ৯ম বর্ষ ।। সংখ্যা ১।।