এই পোস্টটি 727 বার দেখা হয়েছে
পুরো রাজ্যটিই অদ্ভুদ! আর সেই রাজ্যে অলৌকিক সব কারবার। আর হবেই বা না কেন, এই রাজ্যের যিনি রাজ্যের যিনির রাজা তার জন্য এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং সাধারণ ব্যাপার মাত্র। রাজ্যের প্রজাদের নিজের অদ্ভুদ সব অলৌকিকত্ব দেখানোর ক্ষমতা একমাত্র তারই আছে এবং আজ অব্দি তার অলৌকিকত্ব সকল প্রজাদের প্রদর্শন করছে। সেরকম এক অদ্ভুদ রাজ্যের অলৌকিক চালচিত্রের একটি অংশ অলৌকিক বৃক্ষরাজির অদ্ভুদ প্রদর্শনীর ঘটনাবলী পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা হল। সেই রাজ্যের রাজা হলেন পরম প্রভু বিশ্বব্রহ্মার একমাত্র মালিক “শ্রী জগন্নাথ”। আর তারই রাজ্য অর্থাৎ শ্রীক্ষেত্র জগন্নাথ পুরী যেটি ভারতের উড়িষ্যায় অবস্থিত। আপনারা ইতোমধ্যেই অবগত আছেন যে, জগন্নাথ রথযাত্রা হল পৃথিবীর সবচেয়ে ুরাতন ও সমগ্র বিশ্বের ২য় বৃহত্তম উৎসব। বলাবাহুল্য বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম উৎসবও ভারতের ঐতিহাসিক কুম্ভমেলা। যেখানে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়ে থাকে। তার পরেই রয়েছে এই জগন্নাথ রথযাত্রা উৎসবটি। জগন্নাথ পুরীর ঐ উৎসবেও লাখ লাখ ভক্তের সমাগম ঘটে শুধুমাত্র শ্রী জগন্নাথ, বলদেব, সুভদ্রাকে দর্শনের জন্য এবং রথের দড়ি টানার জন্য। অবশ্য স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর কল্যাণে এ দৃশ্য এখন বিশ্বের সবাই দেখতে পায়। কিন্তু একটা বিষয় বোধহয় আপনারা অবগত না যে পুরীর এই বিগ্রহগুলি প্রতি ১২ বছর পর পর পরিবর্তন করা হয়। ১২ বছর সেবিত বিগ্রহগুলোকে পুরীর কোহলী বৈকুণ্ঠ (‘কোহলী’ অর্থ ‘অর্থ ‘সমাধি ভূমি’) নামক স্থানে সমাধি দেয়া হয়। কিন্তু নতুন বিগ্রহ শ্রীমন্দিরে স্থাপনের জন্য কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে থাকে। পুরীর অদ্ভুদ বৃক্ষসমূহের এসব অলৌকিক ঘটনাবলী নিম্ন তুলে ধরা হল।
অদ্ভুদ চিহ্ন : মূলত জগন্নাথ পুরীতে জগন্নাথের ভক্ত যাদেরকে পা-া নামে ডাকা হয় তারাই জগন্নাথের সকল নির্দিষ্ট সেবার অংশিদারীত্বে রয়েছেন। অর্থাৎ তাদের প্রত্যেকের জন্য একটি নির্দিষ্ট সেবা সারা জীবনের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। পা-াদের মধ্যে ‘দয়ীতাপতীর’ বংশধররায় জগন্নাথের নতুন বিগ্রহ তৈরির জন্য বৃক্ষ অনুসন্ধান করে থাকে। সেক্ষেত্রে ঐ বংশধরের সদস্যরা দলবেঁধে অনুসন্ধান করতে করতে পুরীর ৪০ কি.মি. দূরে ‘ককটপুর’ নামক একটি গ্রামে এসে থামে। অবশেষে দয়ীতাপতী পরিবারের যিনি সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য রয়েছেন তিনি বিমলাদেবীর মন্দিরে নিদ্রা যাপন কালে দেবী বিমলাই তাকে স্বপ্নে নির্দেশনা দেন যে, কোথায় এবং কোন অঞ্চলে সে নির্দিষ্ট বৃক্ষসমূহ রয়েছে। স্বপ্নে নির্দেশ পাওয়া মাত্রই ঐ বয়োজ্যেষ্ঠ পা-াই সকল সদস্যদের নির্দেশনা দেবে ঐ অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ঐ বৃক্ষসমূহের খোঁজ করার জন্য। যখন তারা প্রত্যেকেই ঐ গাছগুলোর অনুসন্ধান করে তখন সেখানে তারা অনেক বৃক্ষ দেখতে পায় কিন্তু পবিত্র সাংকেতিক চিহ্নযুক্ত বৃক্ষসমূহের সন্ধান শুধমাত্র তাদের মধ্যে থেকে একজনই পেয়ে থাকে। যেসব বৃক্ষসমূহের সন্ধান তারা অবশেষে পেয়ে থাকে, সেসব বৃক্ষসমূহের গায়ে চক্র, গদা এবং পদ্ম ইত্যাদি চিহ্নসমূহ থাকে। উল্লেক্য, জগন্নাথ, বলদেব, সুভদ্্রা ছাড়াও সুদর্শনের জন্যও বৃক্ষের খোঁজ পাওয়া যায়। ছবিতে প্রদর্শিত বৃক্ষের সমূহের গায়ে সেসব অলৌকিক চিহ্নগুলো দেখই এবং অলৌকিক।
আশ্চর্য পাতা: পুরীর নিকটবর্তী শিব মন্দির এবং একটি পুকুর রয়েছে। ঐ অঞ্চলেই বিভিন্ন ধরনের অদ্ভুদ বৃক্ষ দেখতে পাওয়া যায়। তাদের একটি হল ‘বরুণ’ বৃক্ষ যা কিনা সাপের আক্রমন থেকে রক্ষা করে। বলা হয় থাকে যে, এই গাছের একটি অলৌকিক শক্তি রয়েছে যার সাহায্যে যে কেউ তার রাগ এবং অহংকার দূর করতে পারে। কথিত আছে এখনও পর্যন্ত ভারতের লোকের কোন বিরক্তিকর বা ভয়ংকর লোকের সঙ্গে দেখা করার সময় বরুণ গাছের ছাল সঙ্গে নিয়ে যায়। ‘সাহাদা’ নামের আরেকটি বৃক্ষ রয়েছে যার অদ্ভুদ শক্তি রয়েছে কাউকে ভুলিয়ে রাখার। অর্থাৎ আপনি যদি কাউকে ভুলে থাকতে চান সেক্ষেত্রে এ বৃক্ষটির কোন একটি অংশ ব্যবহার করতে পারেন। ‘বিলুয়া গাছ” নামে অপর একটি বৃক্ষ রয়েছে যার পাতা চিবিয়ে খেলে অনেক রোধ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। যেমন – হার্টের রোগ, যক্ষ্মা, কিংবা ক্যান্সারের মত মারাত্মক রোগ। এটা প্রমাণিত সত্য। আপনি এ পাতা ব্যবহার করে এ রোগগুলো থেকে মুক্ত হতে পারেন। যা আরেকটি অদ্ভুদ ব্যাপার।
বৃক্ষ কাটার অদ্ভুদ নিয়ম : পুরীর বিগ্রহগুলো তৈরির জন্য যে বৃক্ষ ব্যবহার করা হয় সেটি হল ‘নিম’ বৃক্ষ। নিমকে দারু বৃক্ষও বলা হয়ে থাকে আর তাই জগন্নাথকে ‘দারু-ব্রহ্ম’ বলেও ডাকা হয়ে থাকে। যে বৃক্ষ দিয়ে বিগ্রহ তৈরি করা হয় সেটির প্রায় ৩০ বছর পর্যন্ত অক্ষত অবস্থায় থাকার ক্ষমতা রাখে। পা-া কর্তৃক ঐ অদ্ভুদ বৃক্ষসমূহের অনুসন্ধানের পর এদের চারপাশে একটি ছোট খুড়েঘর আকারে তৈরি করা হয়। এরপর অগ্নিযজ্ঞের মাধ্যমে সব দেবদেবীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয় এবং পরবর্তীতে গাছগুলো কাঁটা শুরু হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে স্বর্ণের কুঠার ২য় বার সিলভারের কুঠার এবং ৩য় অর্থাৎ সর্বশেষে লোহার কৃঠার ব্যবহার করা হয় এসব বৃক্ষসমূহকে কর্তন করার জন্য। কর্তন করার সময় ১০৮ বার ভগবানের শ্রীনাম জপ করা হয়। এরপর যথারীতি দয়ীতাপতির পরিবার এ কাঠগুলো নিয়ে আসে এবং পা-াদের মধ্যে যে পরিবার বংশগত ধারায় জগন্নাথ বিগ্রহ খোঁদাই করে থাকে তারা শুধুমাত্র জগন্নাথ, বলদেব, সুভদ্রাসহ সুদর্শনের বিগ্রহ খোঁদাই করে থাকে।
রথ তৈরিতে বৃক্ষসমূহের অদ্ভুদ ব্যবহার ঃ জগন্নাথের রথ তৈরির ক্ষেত্রেও অদ্ভুদ কার্যাবলী সম্পাদন করা হয় যা আমাদের সাধারণ জ্ঞানের বোধগম্যতার বাইরে। ‘মহানদী’ নামক একটি নদীর পাশ ঘেঁয়ে একটি বৃহৎ বল অবস্থিত। ঐ বন থেকে প্রায় ৬০০ এর অধিক সংখ্যক বৃক্ষ কেটে নিয়ে আসা হয় রথ তৈরির জন্য। গাছগুলির প্রতিটি প্রায় ৪০০ ঘনমিটারের হয়ে থাকে। রথ তৈরির পুরো কার্যক্রমটি শুরু হয় উৎসবের দু’মাস আগে থেকেই। রথ নির্মাণকারীরা তাদের শত শত বছর পূর্ব থেকে যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছিল সে একই যন্ত্রপাতি দিয়ে পাদের নির্দিষ্ট একটি বংশধরেরা এগুলো তৈরি করে থাকে, যা অনেকটাই অদ্ভুদ। উৎসবের কয়েক সপ্তাহ আগে আপনি দেখতে পাবেন শুধুমাত্র রথের চাকাগুলোই তৈরি হয়েছে। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরে অর্থাৎ উৎসবের আগের দিনেই দেখা যায় প্রায় ৪৫ ফুট লম্বা ৩২ টি চাকাবিষিষ্ট ৬৫ টন ওজনের তিনটি সুবিশাল রথ তৈরি হয়ে গেছে। যা পুরীর আরেকটি অলৌকিক নিদর্শন। এত কম সময়ে কিভাবে এটি সম্ভব! তা আঁচ করতেই আপনার দুঃসাধ্য মনে হবে। পরবর্তীতে রথযাত্রা সম্পূর্ণ হলে রথের কাঠগুলোকে বিশ্বের বৃহত্তম রান্নাঘর অর্থাৎ জগন্নাথপুরীর রান্নাঘরে জ্বালানী কাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয় যা দিয়ে এই রান্নাঘরটি প্রায় ৯ মাস পর্যন্ত অতিবাহিত করতে পারে।
শ্রী জগন্নাথের রাজ্য এই পুরীধাম সত্যিই অদ্ভুদ এবং অলৌকিকত্বে ভরা। এসব অদ্ভুদ এবং অলৌকিকত্বের জন্যেই আমরা নিশ্চয়ই বলতে পারি এ যেন ‘অদ্ভুদ রাজ্যে অলৌকিক বৃক্ষ’ হরে কৃষ্ণ।