পূর্ণ মনোযোগ সহকারে জপ

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ | ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ | ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 64 বার দেখা হয়েছে

পূর্ণ মনোযোগ সহকারে জপ

স্বাভাবিকভাবে আমাদের মন অত্যন্ত চঞ্চল যা প্রতিনিয়ত সর্বত্র ঘুরে বেড়ায়। মনে সবসময় আমাদেরকে প্রতারণা করে চলে। পরচর্চা ও পরনিন্দায় অত্যন্ত পারদর্শী। যাঁরা ভগবদ্ভক্তিতে উন্নত তাঁদের জন্যও মনকে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত দুষ্কর। তাই শ্রীমদ্ভাগবতে উল্লেখ করা হয়েছে – “মন হল বেগবান ঘোড়ার মতো। যারা তাঁদের ইন্দ্রিয় ও প্রাণকে জয় করেছেন তাঁরাও মনরূপ ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।” (ভা. ১০/৮৭/৩৩)

শ্রীল প্রভুপাদ মনকে একটি ছোট শিশুর সঙ্গে তুলনা করেছেন, যে সবসময় কিছু গ্রহণ করে আবার ত্যাগ করে, সংকল্প-বিকল্প। অর্থাৎ, কোন কিছুতে স্থির থাকতে পারে না। আমাদেরকে অনিয়ন্ত্রিত মনের দাবী অগ্রাহ্য করা শিখতে হবে। “মনকে জয় করার একটি সহজ অস্ত্র হচ্ছে – উপেক্ষা। মন আমাদের সর্বদা উপদেশ দিচ্ছে – এটা কর, ওটা কর; তাই মনের আদেশ অবজ্ঞা করতে আমাদের খুব দক্ষ হতে হবে। ধীরে ধীরে মনকে আত্মার আদেশ পালন করার শিক্ষা দিতে হবে”। (ভা. ৫/১১/১৭ তাৎপর্য) যদি আমরা অনিয়ন্ত্রিত মনের সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করি তাহলে আমাদের বিপদ অনিবার্য ।

বৈষ্ণব আচার্যবর্গ অনিয়ন্ত্রিত মনকে জুতো এবং ঝাড়ু দ্বারা শাসন করার অনুমোদন করেছেন। মন কেবলমাত্র তখনই শান্ত এবং নিয়ন্ত্রিত হতে পারে যখন সে কৃষ্ণসেবায় নিযুক্ত হয়। মনকে খুব সহজেই প্রশিক্ষিত করা যায়, যদি মন কৃষ্ণতে আবিষ্ট হয়। যার ফলে, মায়া তাতে প্রবেশ করতে পারে না।

কৃষ্ণ সূর্যসম : মায়া হয় অন্ধকার।
যাহাঁ কৃষ্ণ, তাহা নাহি মায়ার অধিকার।।
                                                                                 (চৈঃ চঃ)

কৃষ্ণের প্রতি মনোনিবেশ করার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে হরিনাম জপ। মনোনিবেশ করার এক সুন্দর উদাহরণ আমরা মহাভারতে পাই। একসময় দ্রোণাচার্য তার শিষ্য পাণ্ডব এবং কৌরবগণকে আহ্বান করলেন তাদের পারদর্শিতা প্রদর্শন করার জন্য। তিনি একটি কাঠের পাখিকে গাছের ওপর উপস্থাপন করে প্রথমেই দুর্যোধনকে সেই পাখির চোখে তীর নিক্ষেপ করার আদেশ দিলেন। তারপর যুধিষ্ঠির এবং অন্যান্যদেরও একই আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি এক এক করে সবাইকে জিজ্ঞেস করছিলেন অভীষ্ট লক্ষ্যে তীর নিক্ষেপ করার পূর্বে তারা কি দেখতে পাচ্ছে?
এক এক করে তারা বলতে লাগলো- গাছ, পাতা, পাখি এসবই দেখতে পাচ্ছে। দ্রোণাচার্য অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের তীর নিক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে বললেন। অবশেষে তিনি অর্জুনকে আহ্বান করলেন। তীর নিক্ষেপ করার পূর্বে তিনি অর্জুনকেও একই প্রশ্ন করেছিলেন। উত্তরে অর্জুন বলেছিলেন, “আমি পাখির চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।” দ্রোণাচার্য জিজ্ঞেস করলেন, “গাছ, পাতা ইত্যাদি কিছুই দেখতে পাচ্ছো না?” অর্জুন উত্তরে বললেন, “এই মুহূর্তে আমি কেবল পাখির চোখই দেখতে পাচ্ছি।” দ্রোণাচার্য বললেন, “তীর নিক্ষেপ করো।”

এই কাহিনীর মাধ্যমে মনোনিবেশের গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। জপের সময় মনকে কেবলমাত্র জপেই নিবিষ্ট রাখতে হবে। যদিও মন যত্রতত্র যাওয়ার চেষ্টা করে তৎক্ষণাৎ তা ধরে নিয়ে আসতে হবে।

যতো যতো নিশ্চলতি মনশ্চঞ্চলমস্থিরম্।
ততস্ততো নিয়ম্যৈতদাত্মন্যেব বশং নয়েৎ।। (গীতা ৬/২৬)

অনুবাদ: চঞ্চল ও অস্থির মন যে যে বিষয়ে ধাবিত হয়, সেই সেই বিষয় থেকে নিবৃত্ত করে আত্মার বশে আনতে হবে।

পরিচ্ছন্ন জপথলি

আমরা প্রতিদিন পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করি। কিন্তু আমরা কি প্রতিদিন পরিষ্কার জপথলি ব্যবহার করি? হয়তো না। প্রভুপাদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জপথলির বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। একদিন সকালে জপের সময় শ্রীল প্রভুপাদ তৎপর দাসের জপের থলি দেখে বললেন- এটি কি পরিষ্কার জপের থলি? তৎপর দাস উত্তর দিলেন – না। প্রভুপাদ জিজ্ঞেস করলেন – ‘তোমার কয়টি জপের থলি আছে?’ উত্তরে তিনি বললেন – ‘আমার কেবল একটি জপের থলি আছে।’ প্রভুপাদ নির্দেশ দিলেন, ‘তোমার কমপক্ষে দুটো জপথলি অবশ্যই থাকা উচিত। একটি ধৌত করবে, একটি ব্যবহার করবে। দিনের শেষে একটি ধৌত করবে, আরেকটি ব্যবহার করবে। যার ফলে প্রত্যেকদিন সকালবেলা তুমি পরিষ্কার জপথলিতে জপ করতে পারবে’।


মাসিক চৈতন্য সন্দেশ নভেম্বর ২০২৩ হতে প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।