এই পোস্টটি 2995 বার দেখা হয়েছে
পতিতপাবন করুণাময় শ্রীজগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা মহোৎসব ১৭ জুন সোমবার ২০১৯
গরুড় পুরাণে বলা হয়েছে –
তুলষী মিশ্র তোয়েন স্নাপয়ন্তি জনার্দনঃ । পূজয়ন্তি চ ভাবেন ধন্যাস্তে ভূরি মানবাঃ ।।
এই পৃথিবীতে সেই সমস্ত মানুষ ধন্য যারা তুলসী মিশ্রিত পবিত্র জলে শ্রীভগবানকে স্নান ও
ভক্তিভরে তাঁর পূজা করেন ।
অগ্নি পুরাণে বলা হয়েছে –
মহাস্নানেন গোবিন্দং সম্যক্ সংস্নাতস্য মানবৎ । যং যং প্রার্তয়েত কামং তং তং প্রাপ্নোত্যসংশয়ঃ।।
মানুষ শ্রীগৌবিন্দকে সম্যক রুপে মহাস্নান করিয়ে যে যেমন কামনা করে তার তাই
সিদ্ধ হয় তাতে সন্দেহ নেই । সাধারণতঃ জনসাধারন মন্দিরে অর্চা বিগ্রহকে স্নান
করাতে পারে না। সাধারন নিয়মে জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথ এর
স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় । কিন্তু মল মাস প্রবেশ হেতু স্নান পূর্নিমা তিথিতে আষাঢ় মাসে হয় ।
স্বায়ম্বুব মনুর রাজত্বকালে এক মহতী যজ্ঞানুষ্টান হয় । জ্যৈষ্ঠী পূর্ণিমার ঐ সময়ে যজ্ঞকুণ্ডে জগদীশ্বরের আবির্ভাব হয়। তাই এই স্নান পূর্ণিমা শ্রীজগন্নাথদেবের আবির্ভাব দিবস রূপে পরিগণিত হয়। শ্রীজগন্নাথের আদেশে স্বায়ম্ভুব মনু এদিন একটি স্নানবেদীতে ভগবানকে নিয়ে গিয়ে মহাস্নান উৎসব করেন। কালক্রমে শ্রীইন্দ্রদ্যুম্ন মহারাজও নীলাচল ধামে শ্রীজগন্নাথের নির্দেশে শ্রীবলরাম, সুভদ্রা দেবীও সুদর্শনকে স্নানবেদীতে নিয়ে মহাস্নান অনুষ্ঠান করেন। প্রচুর ভক্ত সমাগম ঘটে। শ্রীমায়াপুরের পাশে ইস্কন রাজাপুর জগন্নাথ মন্দিরে স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে ছোট ছোট ঘটে করে গঙ্গা থেকে জল নিয়ে হাতি সঙ্গে সংকীর্তন শোভাযাত্রা করে মঙ্গলারতির পরে পরেই বেরিয়ে পড়েন মন্দিরের ভক্ত, অতিথি এবং স্থানীয় বাসিন্দাগণ। সারিবদ্ধভাবে একে একে নিজ হাতে উন্মুক্ত স্নানবেদীতে উপবিষ্ট শ্রীবলরাম, শ্রীসুভদ্রা, শ্রীজগন্নাথ ও শ্রীসুদর্শনকে স্নান করাতে থাকেন। সেই সময় শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, জয় জগন্নাথ গান, হরিনাম ও বৈদিক মন্ত্র উচ্চারিত হতে থাকে। খোল, করতাল ও অন্যান্য বাদ্য ধ্বনি তরঙ্গে স্নানযাত্রা অনুষ্ঠানটি জমজমাট হয়। ২-৩ ঘন্টা ব্যাপী মহা স্নানের পর জগন্নাথ বলদেবও সুভদ্রা দেবীকে স্নানবেদী থেকে মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর মহা আরতি কালে জগন্নাথ বলদেব গজবেশ এবং দেবী সুভদ্রা পদ্মবেশ ধারণ করেন। এই অনুষ্ঠানে সমবেত ভক্তগণ জগন্নাথের মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেন। ভক্তগণ জগন্নাথের মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেন। ভক্তগণ জগন্নাথের লীলা মহিমা শ্রবণ করেন, জগন্নাথ স্তুতি গীতি গান করেন। সন্ধ্যায় আরতির পর ঐদিন থেকে এক পক্ষকাল (১৫) দিন মন্দিরের দ্বার বন্ধ থাকে। ঐ সময় শ্রীজগন্নাথ জ্বর লীলা করে থাকেন, এই সময়কে অনবসর কাল বলা হয়। এই সময়ে দু’একজন সেবক জগন্নাথকে পাচন (মিষ্টি পানা) ও মিষ্টান্ন ভোগ নিবেদন করে থাকেন।
মিছরি গুলো, ছানা, মাখন এলাচ গুঁড়ো, গোলমরিচ গুঁড়ো মিশ্রিত এক সুস্বাদু ভোজ্য নিবেদিত হয়। এই সময় আমি কাঁঠাল কলা প্রভৃতি ভোগ সন্ধ্যাকালে নিবেদিত হয়।
যাই হোক, স্নানযাত্রা মহোৎসবে ভক্তগণের ভক্তিপ্লুত মনোভাব শ্রীজগন্নাথ বলদেব ও সুভদ্রা দেবী গ্রহণ করে সবাইকে কৃপাদৃষ্টি দান করে থাকেন। স্নানযাত্রার পরেই অনবসর কালে তাঁদের অঙ্গরাগ করা হয়। ১৫ দিন পরেই জগন্নাথ নব সাজে দর্শন দেন ও সেই দিনকে নেত্রোৎসব বলে। সেই সময় গুণ্ডিচা মন্দির মার্জন করা হয়।
গুণ্চিা মন্দিরের রথে করে সবার আনন্দ বর্ধনকারী জগন্নাথ বলদেব সুভদ্রাকে মহা কীর্তন ও নৃত্য শোভাযাত্রা সহযোগে গুণ্ডিচা মন্দিরে আনয়ন করা হয়। সেখানে নয়দিন ব্যাপী মহোৎসব মহানন্দের পরই আবার মূল মন্দিরে জগন্নাথদেব প্রত্যাবর্তন করেন। শ্রীজগন্নাথদেবের এই সমস্ত মহোৎসব অনুষ্ঠান জগজ্জীবের কলুষতা, গ্লানি, বৈষম্য, বিভেদ ও কুণ্ঠা বিধৌত করে।
মানুষের মনে আশার সঞ্চার করে যেখানে মানুষ ভগবৎ কৃপা নিয়ে জীবন ভক্তিপূর্ণভাবে অতিবাহিত করবে। বিশেষত স্নানযাত্রা উদ্যাপন করে মানুষ নিজ হৃদয়কে ভক্তিপ্লুত করে। হরেকৃষ্ণ!
(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ জুলাই ২০১৮ প্রকাশিত)